সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের পুনর্বহালের দাবি
Published: 7th, May 2025 GMT
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত হওয়া সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বহাল ও ব্রিটিশ আইন সংস্কারের দাবি জানিয়েছে ‘সহযোদ্ধা’।
বুধবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘সহযোদ্ধা’ (সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চাকুরিচ্যুত সদস্যদের প্ল্যাটফর্ম) আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নৌবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সদস্য মো.
“আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সরকারের আমলে চাকরিচ্যুত অনেক পুলিশ কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদেরকে আর্থিক সুবিধাসহ পদোন্নতি দিয়ে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছে। আপনারা জানেন, চাকরিচ্যুত সদস্যরা অনেকেই রোষানলে পড়ে সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রনে সাজানো অভিযোগের মাধ্যমে চাকরি হারিয়ে আজ পরিবার ও শিশু সন্তানদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। অথচ, সরকার আমাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশের সেবায় নিয়োজিত করেছিল।”
তিনি বলেন, “আমরা নিজ নিজ বাহিনীর প্রধানের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের সকলকে সাধারণ ক্ষমা করে চাকরিচ্যুত পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের মতো পুনরায় দেশসেবায় নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে চাকরিতে পুনর্বহাল বা পেনশন সুবিধা দেওয়া হোক। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্য আমাদের দাবি মেনে না নিলে আমরা পরিবার নিয়ে আমরণ অনশন করতে বাধ্য হব।”
মো. মাহতাব বলেন, “একটি অপরাধের ক্ষেত্রে একটি সাজা প্রয়োজ্য। অথচ, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর পরেও আমাদের ব্রিটিশ আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে চাকরি থেকে বরখাস্তের পাশাপাশি আরো একটি সাজা হিসেবে পেনশন থেকেও বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই, আমরা উক্ত কালো আইনি ‘ডিসমিজাল ফ্রম সার্ভিস’ সাজার সাথে সাথে পেনশন থেকেও বঞ্চিত করার মতো কালো আইনের সংশ্লিষ্ট রুলস/সেকশন/ধারা সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
সহযোদ্ধার তিন দাবি হলো: চাকরিচ্যুতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল করতে হবে। যদি কোনো সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা সম্ভব না হয়, তাহলে তাকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ পেনশনের আওতাভুক্ত করতে হবে। যে আইনি কাঠামো ও একতরফা বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর শত শত সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, সেই বিচার ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে।
সহযোদ্ধার যৌথ সংবাদ সম্মেলন সেনা বাহিনীর সাবেক সৈনিক মো. হানজালা, নৌ বাহিনীর সাবেক পিও (পিসিজিএম) মো. আব্দুল হাকিম, বিমান বাহিনীর সাবেক সার্জেন্ট মো. আলী রেজাসহ বিভিন্ন সময়ে সশস্ত্র বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সশস ত র ব হ ন সহয দ ধ চ কর ত আম দ র প নশন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিবিড় পর্যবেক্ষণে ঢাকা
পাকিস্তানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ভারতে গোলাবর্ষণের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা। দুই দেশের উত্তেজনাকর অবস্থা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি যাতে খারাপের দিকে না যায়, সে জন্য দু’পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অবস্থান জানায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আঞ্চলিক শান্তি, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার চেতনায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। আর তা হবে এ অঞ্চলের জনগণের শান্তি ও কল্যাণের জন্য।
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার মধ্যে গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি-সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে বসেন। সে বৈঠক ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা, জানতে পারেনি সমকাল। তবে সভা শেষে ড. খলিলুর রহমান ভারত-পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পড়ে শোনান।
এদিকে, দুই দেশের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নয়, শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে সামরিক হামলার নিন্দা জানিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান লেখেন, ‘প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা সামরিক হামলার নিন্দা এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে সংযম প্রদর্শন এবং সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই। অভিন্ন স্বার্থ ও আকাঙ্ক্ষার ওপর নির্মিত একটি স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ অঞ্চল সবার সর্বোত্তম স্বার্থে কাজ করে।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলার মতো ঘটনা কারও জন্য মঙ্গলজনক হবে না। এ ঘটনার গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া উচিত। উভয় পক্ষকেই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। দিনশেষে যুদ্ধ কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। বিবৃতিতে কাশ্মীরবাসীর সমস্যার স্থায়ী সমাধান আন্তরিকভাবে কামনা করেছে দলটি।
এদিকে, পাকিস্তানে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে, এ হামলা দুই দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতায় সরাসরি আঘাত। উভয় পক্ষকে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতির স্বার্থে ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
দলটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে অবস্থান করা পলাতক ফ্যাসিবাদী ও গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী বাংলাদেশের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই দুর্বৃত্ত গোষ্ঠী বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিতে চক্রান্তে লিপ্ত। তারা সীমান্তে অনুপ্রবেশ ও নাশকতার মাধ্যমে বাংলাদেশের নাগরিকদের জানমালের ক্ষতিসাধনে সক্রিয় রয়েছে। সরকার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি এনসিপি সীমান্তে নজরদারি ও সক্ষমতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গতকাল রাতে ভারত থেকে পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ, বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত করা এবং যুদ্ধ-উন্মাদনা পরিস্থিতিতে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধ-উন্মাদনা দুই দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। উল্টো এই যুদ্ধের বলি হবে উভয় দেশের সাধারণ মানুষ।
ভারত থেকে পুশইন করা ঠিক নয়
গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠকের পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বলেন, ভারত সীমান্ত দিয়ে পুশইনের খবর আমরাও পাচ্ছি। প্রতিটি ঘটনা আলাদাভাবে নিরক্ষণ করছি। আমরা শুধু বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রমাণসাপেক্ষে গ্রহণ করব। আর এ প্রক্রিয়া হতে হবে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে। এভাবে পুশইন করাটা ঠিক নয়।