বায়ুদূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে দুরন্ত বাইসাইকেলের ‘বিষবায়ু’ প্রচারাভিযান শুরু
Published: 7th, May 2025 GMT
বায়ুদূষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সচেতনতামূলক ‘বিষবায়ু’ প্রচারাভিযান শুরু করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ আরএফএলের বাইসাইকেল ব্র্যান্ড দুরন্ত।
আজ বুধবার রাজধানীর বাড্ডায় প্রাণ সেন্টারে জনসচেতনতামূলক এই প্রচারাভিযানের উদ্বোধন করেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। সেখানে মাসব্যাপী এই প্রচারাভিযান সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, এই প্রচারাভিযানে থাকবে গোলটেবিল আলোচনা, অনলাইন প্রচারণা, সচেতনতামূলক র্যালি ও বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আবেদন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য থাকবে বায়ুদূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও দৈনন্দিন জীবনে বাইসাইকেল ব্যবহারে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করা।
প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় পৃথক বাইসাইকেল লেন চালুর জন্য দুরন্ত–এর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি তুলে ধরা হবে বলেও জানান বক্তারা। পাশাপাশি নাগরিকদের বাইসাইকেল ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় বাইসাইকেল লেন মার্কিং করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাবে দুরন্ত।
দুরন্ত–এর পক্ষ থেকে বাইসাইকেল ব্যবহারকারীদের জন্য ‘দুরন্ত বাংলাদেশ’ নামের নতুন একটি মোবাইল অ্যাপ চালুর কথা জানান আরএফএল গ্রুপের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল্লামা মুর্শিদ মুনীম। তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তাঁদের বাইসাইকেল রাইড ট্র্যাক করতে পারবেন এবং জানতে পারবেন তিনি কীভাবে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়নে অবদান রাখছেন।
এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা যত বেশি বাইসাইকেল চালাবেন, তত বেশি কার্বন ক্রেডিট পাবেন বলে জানান মুর্শিদ মুনীম। তিনি বলেন, কার্বন ক্রেডিট দিয়ে ব্যবহারকারীরা দুরন্ত বাইসাইকেলের আকর্ষণীয় অফার ও ডিসকাউন্ট উপভোগ করতে পারবেন।
বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার উদ্যোগ যত দিন সফল না হবে, তত দিন প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিককালে বায়ুদূষণের পরিমাণ অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা মনে করি, নাগরিকদের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো বড় পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবেশ রক্ষায় আমরা বিষবায়ু ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে দুরন্ত বাইসাইকেলের হেড অব মার্কেটিং শরিফুল ইসলাম ও ব্র্যান্ড ম্যানেজার খন্দকার আরিফ হোসেনসহ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আরএসআরএমের অর্থপাচারসহ ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি
পুঁজিবাজারে প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলের (আরএসআরএম) ব্যবসায়িক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বৈদ্যুতিক, তারল্য ও কাঁচামাল সংকটসহ বিভিন্ন জটিলতায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম পুনরায় চালু করা যাচ্ছে না- বলে দাবি কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষের।
চট্টগ্রামভিত্তিক রতনপুর গ্রুপের সহযোগী এ কোম্পানিটির বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপির অভিযোগ রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধরাবাহিকতায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান
সেন্ট্রাল ফার্মার ব্যবসায়িক কার্যক্রমে নিরীক্ষকের শঙ্কা, পরিদর্শনের নির্দেশ
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে ১০টি নির্দেশনা সাপেক্ষে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এই তথ্য দিয়েছেন।
গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শাহনোজ, সহকারী পরিচালক মাহমুদুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক ফারহানা ওয়ালেজা।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানিটির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িক অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করা হবে। এছাড়া সঠিক নথির মাধ্যমে কমিশনের বিধান অনুসারে আয় ও ব্যয় নিশ্চিত করা হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে। পাশাপাশি আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়া, সামগ্রিক বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ও ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা, প্রসপেক্টাস ও অনুমোদন অনুসারে আইপিওর অর্থ ব্যবহার, ঋণ ও মূলধন ব্যবহার, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত মামলাগুলো ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদ ও অন্যান্যদের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিষয়াদী যাচাই বাছাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।
তথ্য মতে, পুঁজিবাজার থেকে ২০১৪ সালে প্রিমিয়ামের মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ সংগ্রহ করে আরএসআরএম। পরবর্তী ২০২০ সালের শেষের দিকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তখন লোকসান, বৈদ্যুতিক জটিলতা ও কাঁচামাল সংকটকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে কোম্পানিটি আর উৎপাদনে ফিরতে পারেনি।
বিএসইসির তদন্ত আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের ১০টি বিষয়ে তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে তিনজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ প্রদান করা হলো। তদন্ত কর্মকর্তাদের ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে কমিশনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হলো।
যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
তদন্ত কমিটি দেখবে- ২০২২ সালের ৪ জুলাই কমিশনে দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদনে কোম্পানির বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা; ২০২১ সালের ৩০ জুনের পরে আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা; কোম্পানির সামগ্রিক বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এবং ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কিনা, সে বিষয়ে প্রতিবেদন করা; প্রসপেক্টাস ও অনুমোদন অনুসারে আইপিওর অর্থ ব্যবহারের অনিয়ম রয়েছে কি-না তা যাচাই করা; ঋণ ও মূলধন ব্যবহারে অনিয়ম রয়েছে কি-না তা যাচাই করা।
তদন্ত কমিটি আরো দেখবে- কোম্পানির অর্থ পাচারের সাথে জড়িত মামলাগুলো যাচাই করা এবং এর সঙ্গে জড়িত দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করা; কোম্পানিটির শীর্ষ পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদ এবং অন্যান্যদের সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনে জড়িত থাকার বিষয়াদী যাচাই করা; ২০২১ সালের ৩০ জুনের পর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে কি-না তা যাচাই করা।
এছাড়া ২০২১ সালের ৩০ জুন পরবর্তী কোনো আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করে থাকলে সেখানে রাজস্ব আয়ের সত্যতা, বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য, কর-পরবর্তী নিট মুনাফা, শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস), নিট সম্পদ মূল্য, ইনভেন্টরি, অগ্রিম, আমানত, অগ্রিম-প্রদান, হিসাবের গ্রহণযোগ্যতা, নগদ ও নগদ অর্থের পরিমাণ, শেয়ার মূলধন, দীর্ঘ মেয়াদি এবং স্বল্প মেয়াদি দায়সহ অন্যান্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। একইসঙ্গে এ সংক্রান্ত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখবে গঠিত তদন্ত কমিটি।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থ বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস। এর আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এরপর থেকে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে আর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। ফলে বিগত ৫ বছর ধরে কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি। স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে ২০২১ সালের পর প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক কোনো তথ্য নেই।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
রতনপুর স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০১৪ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানিটির মোট পরিশোধিত মূলধন ১০১ কোটি ১৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১০ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৮টি। চলতি বছরের ৩০ মার্চ পর্যন্ত কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ২৯.৯৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪.০৮ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৫.৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। সোমবার (২৩ জুন) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৮.৬০ টাকায়।
ঢাকা/মেহেদী