ভারত–পাকিস্তান সংঘাত যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র–চীনেরও লড়াই
Published: 7th, May 2025 GMT
পশ্চিমারা সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে ভারতকে। আর চীন দিচ্ছে পাকিস্তানকে। এই সামরিক সাহায্য দিন দিন বাড়ছে। এসব লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে কে কার পাশে থাকবে, সেই সমীকরণ বদলে যাচ্ছে।
শেষবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত ঘটেছে ২০১৯ সালে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের আণবিক অস্ত্রভান্ডারে অনেক ছোটাছুটি লক্ষ করেছিল। এই নড়াচড়ার পরিমাণ আতঙ্কিত হওয়ার মতো ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওকে মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়েছিল। তিনি ভারত আর পাকিস্তানের নেতাদের সেই মাঝরাতেই ফোন করে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কোনো পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্রের হামলা করছে না।
ছয় বছর পর দুই দেশ আবার সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক মিত্রদেশের হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে।
এশিয়ার এই অংশ এমনিতেও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনটি দেশ এখানে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী—চীন, ভারত ও পাকিস্তান। এদের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের প্রবাহ বদলে গেছে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে ৫ ভবিষ্যদ্বাণী১২ ঘণ্টা আগেভারত ঐতিহ্যগতভাবে নিরপেক্ষ দেশ ছিল। এখন তারা স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে ঢুকে গেছে। সেখান থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র খরিদ করছে। আরও অস্ত্র কিনছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। সেই সঙ্গে কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া থেকে সস্তা অস্ত্র কেনা। এই রাশিয়া শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের মিত্র ছিল।
ওদিকে আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা আর আগের মতো নেই। পাকিস্তান এখন আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনছে না। পাকিস্তান এখন ঝুঁকেছে চীনের দিকে। সেখান থেকে কিনছে তাদের অধিকাংশ অস্ত্র।
এসব সম্পর্ক বদলের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের সবচেয়ে পুরোনো দুশমনি এক নতুন মোড় নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চীনকে মোকাবিলা করতে ভারতকে আশকারা দিচ্ছে। অন্যদিকে চীন নিজের বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের জন্য।
একই সময়ে সীমান্তে জায়গা নিয়ে চীন আর ভারতের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই দুই দেশের সেনারা জড়াচ্ছে সংঘাতে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কযুদ্ধ শুরু করার পর দুই পরাশক্তি চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে খারাপ অবস্থার মধ্যে গিয়ে ঠেকেছে।
আরও পড়ুনভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম২৮ এপ্রিল ২০২৫সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে শত্রু আর মিত্রের হিসাব একেবারে পাল্টে গেছে। ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য একই ভূমিকা নিচ্ছে চীন। ভারত যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এতটা জোরালোভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা যায়নি।
কাশ্মীরে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে। তখন ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ভারতের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন জানান। অনেক ভারতীয় কর্মকর্তার কাছে তা যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ‘সবুজসংকেত’ বলেই মনে হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সংযম দেখাতে বলেছিল।
ভারত ও পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আকাশসীমায় বিপজ্জনক ঘন ঘন উপস্থিতি—সব মিলিয়ে যেকোনো সামান্য ভুল বা সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, এতে জড়িত দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দৃশ্যপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চোখে পড়ে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে মোদির সঙ্গে কথা বলেননি। অথচ ওই সময় বিশ্বের এক ডজনের বেশি নেতার সঙ্গে মোদি যোগাযোগ করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন হামলার এক সপ্তাহ পর। আর মোদি ও পুতিনের ফোনালাপ হয় আরও পরে। আর এই সময় চীন সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এই নতুন জোটকাঠামোর প্রভাব ভবিষ্যতের সামরিক সংঘাতে পড়বে বলেই ধারণা। যদি আমরা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যতের কোনো যুদ্ধের কথা ভাবি, তাহলে দেখা যাবে যে ভারত লড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অস্ত্র নিয়ে, আর পাকিস্তান চীনা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে।
এক দশক আগেও এই সম্পর্কগুলো এমন ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারতের ঘনিষ্ঠতা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে। তখন ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ সামরিক অস্ত্রই আসত মস্কো থেকে।
আরও পড়ুনতালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে ২৯ এপ্রিল ২০২৫অন্যদিকে, পাকিস্তান তখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের পরাজয়ে ফ্রন্টলাইন ভূমিকা নিয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকে সেই ঘনিষ্ঠতার সুযোগে পাকিস্তান বহুল প্রতীক্ষিত এফ-১৬ জঙ্গিবিমান সংগ্রহ করেছিল, যা ভারতের আকাশ দখলের সক্ষমতা খানিকটা কমিয়ে দেয়।
কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে উভয় দেশ পরমাণু পরীক্ষা করায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান তখন এফ-১৬ বিমান কেনার টাকা দিয়েও তা পায়নি।
পরিস্থিতি পাল্টায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর। তখন পাকিস্তান আবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফ্রন্টলাইন’ সঙ্গী হয়ে ওঠে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। যদিও পাকিস্তান তালেবানের নেতাদের আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করছিল, তবু যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক খাতে কয়েক দশক ধরে ডলার ঢালতে থাকে। সে সময় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র, আর দ্বিতীয় ছিল চীন।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের গুরুত্ব কমে যেতে থাকে, আর তখন চীন তাদের পূর্ণ সমর্থন দিতে শুরু করে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাকিস্তানের ৩৮ শতাংশ অস্ত্র আসত চীন থেকে। গত চার বছরে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশে।
এ সময়ে ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনে। ২০০৬ থেকে ২০১০-এর মধ্যে ভারতের ৮০ শতাংশ অস্ত্র এসেছিল রাশিয়া থেকে। আর গত চার বছরে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ অস্ত্র আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মতো মিত্রদেশগুলো থেকে।
তবে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যতিক্রমী সম্পর্ক এখনো রয়ে গেছে। তা হলো এফ-১৬ বিমান কর্মসূচি। পাকিস্তান গত দুই দশকে এফ-১৬ বিমান বহর সম্প্রসারণ করেছে। সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সার্ভিস ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি অনুমোদন করেছে।
২০১৯ সালে পাকিস্তান একটি রুশ তৈরি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এর জন্য তারা এফ-১৬ ব্যবহার করেছিল। ভারত তখন অভিযোগ তোলে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী এসব বিমান কেবল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের জন্য ব্যবহারের অনুমতি ছিল, যুদ্ধের জন্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারতকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল। আসলে কূটনৈতিক দলিলপত্রেই দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র জানত যে পাকিস্তান এফ-১৬ সংগ্রহ করছে মূলত ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যেই।
২০১৯ সালের সেই সংঘর্ষে ভারতের একটি হেলিকপ্টারও ভুলবশত ভারতীয় বাহিনীই গুলি করে নামায়, ছয়জন সেনা নিহত হন। এ ঘটনার পর ভারতের সামরিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর থেকে ভারত সামরিক খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। তবে পাকিস্তানকে চীন যেভাবে সাহায্য করছে, তা ভারতের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
২০১৯ সালের সেই উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা অনেক মার্কিন কর্মকর্তা মনে করেন, তখন মানবীয় ভুল পরিস্থিতি ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারত।
যুক্তরাষ্ট্র এখন আশঙ্কা করছে, ভারত ও পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আকাশসীমায় বিপজ্জনক ঘন ঘন উপস্থিতি—সব মিলিয়ে যেকোনো সামান্য ভুল বা সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, এতে জড়িত দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।
মুজিব মাশাল টাইমসের সাউথ এশিয়া ব্যুরো চিফ
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল পর স থ ত র জন য কর ছ ল ভ রতক ই সময়
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমি অধিগ্রহণ না করেই কাজ
সাঁথিয়া উপজেলার গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়ক উন্নয়নকাজ শুরু হয়েছিল ছয় বছর আগে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগের অপ্রশস্ত সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে। সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগই ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে কাজে বাধা দেন। তারা একজোট হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে আদালতে মামলা করলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সড়কটি খুঁড়ে রাখায় খানাখন্দে ভরে গেছে। বৃষ্টিতে বেহাল সড়কটি কাদাপানিতে সয়লাব। পাটগাড়ি এলাকায় কালভার্ট নির্মাণ করে ফেলে রাখা হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেটিও কোনো কাজে আসছে না। এতে অবর্ণনীয় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ পথে চলাচলকারী ৫০ হাজার মানুষ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের পাবনা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়াই গাগড়াখালী-সোনাতলা বাইপাস সড়কের কাজ শুরু হয়। আট কিলোমিটারে ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কাজ পায় ঢাকার এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড। ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কাজের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের পাশে মাটি ফেলাসহ কয়েকটি কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে।
গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের সড়কের বর্ধিত অংশের বেশির ভাগ জমিই ব্যক্তিমালিকানাধীন। মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে কাজ শুরু করায় তারা বাধা দেন এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে আদালতে মামলা করেন। এখনও মামলার চূড়ান্ত রায় হয়নি। এ কারণে কাজ বন্ধের জন্য আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বর্ধিত অংশ অধিগ্রহণের জন্য টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। কাগজপত্র জমা দিয়ে ভূমিমালিকরা টাকা তুলে নিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নামমাত্র কয়েকজন জমির মালিক ক্ষতিপূরণ পেলেও অনেকেই পাননি। কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কাগজপত্র সঠিক নয়।
এ বিষয়ে জমির মালিক তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মওলা বলেন, ‘আমার কাগজপত্র সঠিক আছে। আমার মতো গাগড়াখালি, ফেচুয়ান ও তেঘরি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫ জনের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি।’
তেঘড়ি গ্রামের সৈয়দ গোলাম মাওলা, গোলাম রসুল, আব্দুস সাত্তার, আব্দুল ওহাব, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল বারি, আলমগীর হোসেন, রিজিয়া খাতুনসহ কয়েকজন জমির মালিক বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট ক্ষতিপূরণ চেয়ে পাবনা আদালতে মামলা করেছি। ছয় বছর পেরিয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়া পাইনি। ক্ষতিপূরণ পেলে মামলা তুলে নেব।’
মামলার বাদী ফেচুয়ান গ্রামের মকবুল হোসেন, সুজন হোসেন ও আজিজ খাঁ জানান, সড়ক হলে সবারই সুবিধা হয়। জমির মালিকরা সড়কের জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
কথা হলে সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, সোনাতলা থেকে পাটগাড়ি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঠিকাদারের সময় পেরিয়ে যাওয়াসহ কিছু জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি।
সরেজমিন পাটগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক ছাড়াই কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। এ কালভার্টের দুই পাশে মাটি ফেলে রাখায় কাদামাটিতে একাকার। এ পথ দিয়ে চলাচল এখন কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কটি দ্রুত নির্মাণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন তেঘড়ি গ্রামের গোলাম কিবরিয়া, পাটগাড়ি গ্রামের রফিকুল ইসলাম সান, স্কুলশিক্ষার্থী সিমি খাতুনসহ অনেকে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপক প্রহ্লাদ কুমার বলেন, ‘আমরা যথাসময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা এবং মামলার কারণে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। এরই মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়েছে।’
পাবনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সাদেকুর রহমান বলেন, ‘যাদের জমির কাগজপত্র সঠিক ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। যাদের কাগজ সঠিক নেই, তারা পাননি। জটিলতা এখনও কাটেনি। মেয়াদ শেষ হওয়ায় প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন প্রকল্প এলে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে। অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়কটির কাজ শুরু করা হবে।’