ভারত–পাকিস্তান সংঘাত যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র–চীনেরও লড়াই
Published: 7th, May 2025 GMT
পশ্চিমারা সামরিক সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে ভারতকে। আর চীন দিচ্ছে পাকিস্তানকে। এই সামরিক সাহায্য দিন দিন বাড়ছে। এসব লক্ষণ দেখে বোঝা যাচ্ছে আন্তর্জাতিকভাবে কে কার পাশে থাকবে, সেই সমীকরণ বদলে যাচ্ছে।
শেষবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত ঘটেছে ২০১৯ সালে। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশের আণবিক অস্ত্রভান্ডারে অনেক ছোটাছুটি লক্ষ করেছিল। এই নড়াচড়ার পরিমাণ আতঙ্কিত হওয়ার মতো ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওকে মাঝরাতে ঘুম থেকে ডেকে তোলা হয়েছিল। তিনি ভারত আর পাকিস্তানের নেতাদের সেই মাঝরাতেই ফোন করে আশ্বস্ত করেছিলেন যে কোনো পক্ষই পারমাণবিক অস্ত্রের হামলা করছে না।
ছয় বছর পর দুই দেশ আবার সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক মিত্রদেশের হিসাব-নিকাশ পাল্টে গেছে।
এশিয়ার এই অংশ এমনিতেও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনটি দেশ এখানে পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী—চীন, ভারত ও পাকিস্তান। এদের মধ্যে অস্ত্র সরবরাহের প্রবাহ বদলে গেছে।
আরও পড়ুনভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ নিয়ে ৫ ভবিষ্যদ্বাণী১২ ঘণ্টা আগেভারত ঐতিহ্যগতভাবে নিরপেক্ষ দেশ ছিল। এখন তারা স্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বলয়ে ঢুকে গেছে। সেখান থেকে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র খরিদ করছে। আরও অস্ত্র কিনছে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে। সেই সঙ্গে কমিয়ে দিয়েছে রাশিয়া থেকে সস্তা অস্ত্র কেনা। এই রাশিয়া শীতল যুদ্ধের সময় ভারতের মিত্র ছিল।
ওদিকে আফগানিস্তান যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা আর আগের মতো নেই। পাকিস্তান এখন আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনছে না। পাকিস্তান এখন ঝুঁকেছে চীনের দিকে। সেখান থেকে কিনছে তাদের অধিকাংশ অস্ত্র।
এসব সম্পর্ক বদলের ফলে দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশের সবচেয়ে পুরোনো দুশমনি এক নতুন মোড় নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র একদিকে চীনকে মোকাবিলা করতে ভারতকে আশকারা দিচ্ছে। অন্যদিকে চীন নিজের বিনিয়োগ ও পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের জন্য।
একই সময়ে সীমান্তে জায়গা নিয়ে চীন আর ভারতের মধ্যে সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই দুই দেশের সেনারা জড়াচ্ছে সংঘাতে। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কযুদ্ধ শুরু করার পর দুই পরাশক্তি চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক স্মরণকালের মধ্যে খারাপ অবস্থার মধ্যে গিয়ে ঠেকেছে।
আরও পড়ুনভারতের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য কতটা সক্ষম২৮ এপ্রিল ২০২৫সব মিলিয়ে এ অঞ্চলে শত্রু আর মিত্রের হিসাব একেবারে পাল্টে গেছে। ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে এখন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। অন্যদিকে পাকিস্তানের জন্য একই ভূমিকা নিচ্ছে চীন। ভারত যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র এতটা জোরালোভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেখা যায়নি।
কাশ্মীরে ২২ এপ্রিলের জঙ্গি হামলার পরপরই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে। তখন ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের নেতারা ভারতের প্রতি শক্তিশালী সমর্থন জানান। অনেক ভারতীয় কর্মকর্তার কাছে তা যেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ‘সবুজসংকেত’ বলেই মনে হয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সংযম দেখাতে বলেছিল।
ভারত ও পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আকাশসীমায় বিপজ্জনক ঘন ঘন উপস্থিতি—সব মিলিয়ে যেকোনো সামান্য ভুল বা সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, এতে জড়িত দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দৃশ্যপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন চোখে পড়ে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তাৎক্ষণিকভাবে মোদির সঙ্গে কথা বলেননি। অথচ ওই সময় বিশ্বের এক ডজনের বেশি নেতার সঙ্গে মোদি যোগাযোগ করেছেন। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন হামলার এক সপ্তাহ পর। আর মোদি ও পুতিনের ফোনালাপ হয় আরও পরে। আর এই সময় চীন সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয়।
এই নতুন জোটকাঠামোর প্রভাব ভবিষ্যতের সামরিক সংঘাতে পড়বে বলেই ধারণা। যদি আমরা ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যতের কোনো যুদ্ধের কথা ভাবি, তাহলে দেখা যাবে যে ভারত লড়ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় অস্ত্র নিয়ে, আর পাকিস্তান চীনা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে।
এক দশক আগেও এই সম্পর্কগুলো এমন ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ভারতের ঘনিষ্ঠতা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে। তখন ভারতের দুই-তৃতীয়াংশ সামরিক অস্ত্রই আসত মস্কো থেকে।
আরও পড়ুনতালেবান সরকার কেন ভারতের দিকে ঝুঁকছে ২৯ এপ্রিল ২০২৫অন্যদিকে, পাকিস্তান তখন যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের পরাজয়ে ফ্রন্টলাইন ভূমিকা নিয়েছিল। ১৯৮০-এর দশকে সেই ঘনিষ্ঠতার সুযোগে পাকিস্তান বহুল প্রতীক্ষিত এফ-১৬ জঙ্গিবিমান সংগ্রহ করেছিল, যা ভারতের আকাশ দখলের সক্ষমতা খানিকটা কমিয়ে দেয়।
কিন্তু ১৯৯০-এর দশকে উভয় দেশ পরমাণু পরীক্ষা করায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাকিস্তান তখন এফ-১৬ বিমান কেনার টাকা দিয়েও তা পায়নি।
পরিস্থিতি পাল্টায় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর। তখন পাকিস্তান আবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফ্রন্টলাইন’ সঙ্গী হয়ে ওঠে সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে। যদিও পাকিস্তান তালেবানের নেতাদের আশ্রয় দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করছিল, তবু যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক খাতে কয়েক দশক ধরে ডলার ঢালতে থাকে। সে সময় পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী ছিল যুক্তরাষ্ট্র, আর দ্বিতীয় ছিল চীন।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পাকিস্তানের গুরুত্ব কমে যেতে থাকে, আর তখন চীন তাদের পূর্ণ সমর্থন দিতে শুরু করে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাকিস্তানের ৩৮ শতাংশ অস্ত্র আসত চীন থেকে। গত চার বছরে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশে।
এ সময়ে ভারত রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনে। ২০০৬ থেকে ২০১০-এর মধ্যে ভারতের ৮০ শতাংশ অস্ত্র এসেছিল রাশিয়া থেকে। আর গত চার বছরে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে। বর্তমানে ভারতের অধিকাংশ অস্ত্র আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইসরায়েলের মতো মিত্রদেশগুলো থেকে।
তবে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যতিক্রমী সম্পর্ক এখনো রয়ে গেছে। তা হলো এফ-১৬ বিমান কর্মসূচি। পাকিস্তান গত দুই দশকে এফ-১৬ বিমান বহর সম্প্রসারণ করেছে। সর্বশেষ বাইডেন প্রশাসন ৪০০ মিলিয়ন ডলারের সার্ভিস ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি অনুমোদন করেছে।
২০১৯ সালে পাকিস্তান একটি রুশ তৈরি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। এর জন্য তারা এফ-১৬ ব্যবহার করেছিল। ভারত তখন অভিযোগ তোলে যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী এসব বিমান কেবল সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের জন্য ব্যবহারের অনুমতি ছিল, যুদ্ধের জন্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্র তখন ভারতকে শান্ত করার চেষ্টা করেছিল। আসলে কূটনৈতিক দলিলপত্রেই দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র জানত যে পাকিস্তান এফ-১৬ সংগ্রহ করছে মূলত ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যবহারের লক্ষ্যেই।
২০১৯ সালের সেই সংঘর্ষে ভারতের একটি হেলিকপ্টারও ভুলবশত ভারতীয় বাহিনীই গুলি করে নামায়, ছয়জন সেনা নিহত হন। এ ঘটনার পর ভারতের সামরিক দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরপর থেকে ভারত সামরিক খাতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে। তবে পাকিস্তানকে চীন যেভাবে সাহায্য করছে, তা ভারতের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
২০১৯ সালের সেই উত্তেজনা পর্যবেক্ষণ করা অনেক মার্কিন কর্মকর্তা মনে করেন, তখন মানবীয় ভুল পরিস্থিতি ভয়ানক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারত।
যুক্তরাষ্ট্র এখন আশঙ্কা করছে, ভারত ও পাকিস্তানে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদ, পারস্পরিক অবিশ্বাস এবং আকাশসীমায় বিপজ্জনক ঘন ঘন উপস্থিতি—সব মিলিয়ে যেকোনো সামান্য ভুল বা সীমা লঙ্ঘনের ঘটনা থেকে ভয়াবহ সংঘর্ষ শুরু হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। কারণ, এতে জড়িত দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর।
মুজিব মাশাল টাইমসের সাউথ এশিয়া ব্যুরো চিফ
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল পর স থ ত র জন য কর ছ ল ভ রতক ই সময়
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই বিরোধিতা: ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী ও ৩৩ ছাত্রলীগ নেতার ‘শাস্তি’
জুলাই গণঅভ্যুত্থান বিরোধী তালিকায় থাকা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ৩০ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সাময়িক বরখাস্ত এবং একই অভিযোগে ৩৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার বা সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরো পড়ুন:
আ.লীগে যোগ দেওয়া মুবিনকে আইনজীবী ফোরাম থেকে বহিষ্কার
ববির ৪ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
সিন্ডিকেট সভা সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় থাকা ইবির ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে ‘শাস্তি নির্ধারণ কমিটি’ করবেন উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
এদিকে একই অপরাধে জড়িত থাকায় ৩৩ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিন্ডিকেট। যাদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, সেই শিক্ষার্থীদের সনদ বাতিল করা হবে। আর যারা অধ্যয়নরত, তাদের বহিষ্কার করা হবে।
এর আগে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিরুদ্ধে ভূমিকায় অবতীর্ণ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের চিহ্নিতকরণে গত ১৫ মার্চ আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আকতার হোসেনকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রশাসন।
এই কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীদের দেওয়া লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ, বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ভিডিও এবং পত্রিকার খবর পর্যালোচনা করে তালিকায় থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানবিরোধী এবং নিবর্তনমূলক কার্যকলাপের সংশ্লিষ্টতা পায়।
কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিন্ডিকেট সভায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সাময়িক বরখাস্তের তালিকায় থাকা শিক্ষকরা হলেন: ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মন, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ ও অধ্যাপক ড. রবিউল হোসেন, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যপদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আখতার হোসেন ও অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন, ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. এইচ. এম আক্তারুল ইসলাম ও অধ্যাপক ড. মিয়া রাশিদুজ্জামান।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরফিনসহ আরো রয়েছেন, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহজাহান মণ্ডল ও অধ্যাপক ড. রেবা মণ্ডল, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল হক, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আফরোজা বানু, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেহেদী হাসান এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী সেন।
সাসপেন্ড হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকায় রয়েছেন প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার আলমগীর হোসেন খান ও আব্দুল হান্নান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার ও কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দফতরের উপ-রেজিস্ট্রার আব্দুস সালাম সেলিম, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-রেজিস্ট্রার ড. ইব্রাহীম হোসেন সোনা।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শাখা কর্মকর্তা উকীল উদ্দিনসহ তালিকায় নাম রয়েছে ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের শাখা কর্মকর্তা তোফাজ্জেল হোসেন, তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তরের উপ-রেজিস্ট্রার (ফটোগ্রাফি) শেখ আবু সিদ্দিক রোকন এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার মাসুদুর রহমানের।
বহিষ্কার ও সদন বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৩-১৪ বর্ষের বিপুল খান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের মেহেদী হাসান হাফিজ ও শাহীন আলম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের রতন রায়।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৪-১৫ বর্ষের মুন্সি কামরুল হাসান অনিকসহ তালিকায় রয়েছেন, মার্কেটিং বিভাগের ২০১৫-১৬ বর্ষের হুসাইন মজুমদার, বাংলা বিভাগের ২০১৬-১৭ বর্ষের তরিকুল ইসলাম।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের মৃদুল রাব্বী, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের ফজলে রাব্বী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শাকিল, ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের শিমুল খান, আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের কামাল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মাসুদ রানা, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মেজবাহুল ইসলাম বহিষ্কার ও সনদ বাতিলের তালিকায় রয়েছেন।
সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের অনিক কুমার, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আব্দুল আলিম, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বিজন রায়, শেখ সোহাগ ও শাওনও এই শাস্তি পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করায় শাস্তি পেয়েছেন অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের তানভীর ও শেখ সাদি, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মাজহারুল ইসলাম, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের মনিরুল ইসলাম আসিফ, সমাজকল্যাণ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের মারুফ ইসলাম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ বর্ষের পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ফারহান লাবিব ধ্রুব, আল-ফিকহ অ্যান্ড ল বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের প্রাঞ্জল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের নাবিল আহমেদ ইমন।
ফিনান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ বর্ষের রাফিদ, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের আদনান আলি পাটোয়ারি, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের লিয়াফত ইসলাম রাকিব এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের ইমামুল মুক্তাকী শিমুলও শাস্তির তালিকায় রয়েছেন।
এদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে প্রকাশ্যে বিরোধিতাকারী হিসেবে এই ৬৩ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও তাদের উস্কানিদাতা এবং পেছন থেকে আন্দোলন দমনকারী অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই অভিযোগ অভিযুক্তদেরও। তবে তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
ঢাকা/তানিম/রাসেল