টেলিগ্রামে পাওয়া লিংকে ঢুকে যে বিপদে পড়লেন তরুণী
Published: 8th, May 2025 GMT
কাজের ব্যস্ততায় মুঠোফোন ব্যবহার করেননি কয়েক ঘণ্টা। এরমধ্যে ফোনে মেসেজ আসে, সেগুলোও চেক করা হয়নি। তিন ঘণ্টা পর ফোন চেক করে দেখেন এসেছে দশটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। আর টাকা লেনদেনের মেসেজ। মেসেজ পড়ে দেখেন, অগ্রণী ব্যাংকে তার থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে পূবালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিজের অজান্তেই টাকা খুইয়ে হতবাক ভুক্তভোগী এক তরুণী।
আইটি বিশেষজ্ঞের ধারণা, কোনো আনঅথোরাইজড অ্যাপে ঢোকার কারণে হয়তো এমনটি ঘটতে পারে। ভুক্তভোগীরও সন্দেহ একই। তার ভাষ্য, ঘটনার আগের দিন টেলিগ্রামে পাওয়া লিংকে ঢোকার পর থেকেই মুঠোফোনে অস্বাভাবিকতা টের পাচ্ছিলেন।
এ ঘটনায় বুধবার (৭ মে) আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। ভুক্তভোগী তরুণী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘‘২০২৩ সালের ২৯ মে অগ্রণী ব্যাংকের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় অ্যাকাউন্টটি চালু করি। এরপর থেকে নিয়মিত এই আ্যাকাউন্টে লেনদেন করি। গত দুই বছর ধরেই অগ্রণী ব্যাংকের স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ নিয়মিত ব্যবহার করি। সবশেষ গতকাল ৬ মে দুপুরের দিকে ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে বিকাশে ১৫ হাজার টাকা পাঠাই।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরপর বিকেল ২টা ৪৫ থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ১০টি লেনদেন হয়। এরমধ্যে ৮টি ছিল ২০ হাজার করে। এইভাবে লেনদেনের কারণ, সর্বোচ্চ মাত্রাই রয়েছে ২০ হাজার টাকার। এছাড়া আরও ২৯০০ টাকা ও ১২,৮০০ টাকার আরও দুটি লেনদেন হয়।”
ওই ছাত্রী বলেন, “সবগুলো লেনদেনই হয় পূবালী ব্যাংকের খুলনা শাখার বাটিয়াঘাটা শাখার বাঁধন এন্টারপ্রাইজ (BADHON ENTERPRISE- 1300901033436) নামে একটি হিসাব নম্বরে।’’
টেলিগ্রামে পাওয়া লিংকে ঢোকার পরেই অস্বাভাবিকতা
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘গত ৫ মে টেলিগ্রাম আ্যাপে একটা অ্যাকাউন্টে একটি মেসেজ আসে। যেখানে একটি রেস্তোরাঁর ইতিবাচক মন্তব্য করতে অনুরোধ করেন। সেখানে একটা ম্যাপের লিংক দেওয়া ছিল। আমি সেটিতে ঢুকি। সেখানে একটা ইমেইল চায়, আমি আমার ইমেইল দেই। তারপর ম্যাপে ঢুকে ইতিবাচক মন্তব্য দেই। এরপর রাত ১২-১টার দিকে দেখি, আমি ২-৩টি ক্রিপ্টো গ্রুপে যুক্ত হয়ে গেছি। আমি সেভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। গতকাল মনে হয়েছে, ফোন হ্যাং করছে। সেটিংস বদলাচ্ছে। এরমধ্যেই বিকাশের ওই লেনদেন করি। ওই দশটি লেনদেনের সময় ফোন আমার কাছেই ছিল। ওই সময় ফোনটি চেক করা হয়নি।’’
তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি আমার কাজ থেকে ফিরে ফোন চেক করে দেখি, দশটি লেনদেন হয়েছে। এবং ওই আ্যকাউন্টে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি লেনদেনেই ওটিপি এসেছে এবং লেনদেনগুলো সফল হয়েছে। দশটি লেনদেনই হয়েছে এনপিএসবি ট্রান্সফার। আর বেনিফিশিয়ারিতে দেখিয়েছে, আমার ফোন নম্বরটি।’’
‘‘এরমধ্যে সন্দেহ হওয়ায় গতকালের টেলিগ্রাম মেসেজ চেক করতে গিয়ে সেই মেসেজগুলো আর খুঁজে পাইনি, ওই ইনবক্সের মেসেজও আর খুঁজে পাইনি। তবে গ্রুপগুলো রয়েছে। সেগুলো চেক করতে গিয়ে ওই গ্রুপে দেখি প্রচুর মেসেজ। টাস্ক আসছে, রিভিউ যাচ্ছে। রিভিউ অনুযায়ী টাকা দিচ্ছে। আমার ধারণা ওই রিভিউ দেওয়ার সময়ই হয়তো তারা আমার ইমেইল নিয়ে নেয় ও এক্সেস পায়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এরমধ্যে শামসুল হক নামে একটি আইডি থেকে টেলিগ্রামে মেসেজ আসে। সেখানে আইডি লক হয়ে গেছে এমন একটি মেসেজ আসে। আমি আমার সমস্যার কথা জানাই। তখন সে আমাকে একটা লিঙ্ক দিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা স্থগিত রয়েছে বলে জানায়। এরপর সেটায় ঢুকে দেখি এই এমাউন্ট স্থগিত রয়েছে। সেখানে আমার আ্যাকাউন্ট দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট খোলা দেখতে পাই।
‘পরে আমি অগ্রণী ব্যাংকে কল দেই। সমস্যাটি জানাই। পরে তাদের আ্যাকাউন্টটি স্থগিত করতে বলি। তারা আমাকে সব পাসওয়ার্ড বদলাতে বলে। আমি সেটি করি। এরপর এ ঘটনায় আমি আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি।’’
খোয়ানো টাকা ফেরত পাওয়া ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে আর কেউ যেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তার।
আনঅথোরাইজড অ্যাপের কারসাজি, সন্দেহ আইটি বিশেষজ্ঞের
আইটি ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ মো.
তিনি বলেন, ‘‘ফোনের ডেটা ক্লোনিং করার এ ধরনের অনেক অ্যাপই রয়েছে। এটা হয়। যখন হয়, ভুক্তভোগী নিজেও জানে না, তার অজান্তে এমন একটা ক্লোনিং বা ফিশিং উনি ডাউনলোড করে নিয়েছেন।’’
‘সোশ্যাল মিডিয়া বা যে কোথাও যখন ব্রাউজ করছেন, যে সাইটে ব্রাউজ করছেন, একটু সচেতনভাবে সেগুলো যাচাই করে আনঅথোরাইজড কিছুতে না প্রবেশ করা, করলেও সন্দেহ হলে ফোনের অ্যাপ ডাউনলোডের সিকিউরিটি রাখা। যেন কোনো অ্যাপ ডাউনলোড না হয়।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক প্রলোভন আসে, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘরে বসে কাজ করুন, এমন প্রলোভন দিয়ে কাজ করা হয়। এগুলো ছোট ছোট কাজ দেবে, টাকাও দেবে। তারপর অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলবে বা কোনো লিংকে ঢুকতে বলবে। ম্যাপের মতো লিংক দেবে, সেটা দিয়েই মূলত ক্লোনিংয়ের ফাঁদে পা দিয়েছেন তিনি। রেস্তোরাঁর রিভিউয়ের লিংকে ঢুকে তিনি আসলে ক্লোনিংয়ের শিকার হয়েছেন।’’
বিষয়টি অনুসন্ধান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘‘এই বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এই ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড উনল ড ব যবহ র এরমধ য চ ক কর এক স স ল নদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় ভাঙনের হুমকিতে দুই কিলোমিটার বাঁধ
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের পুরো দুই কিলোমিটার অংশ ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে। বাঁধের কাছে বিভিন্ন স্থানে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ভাঙন দেখা দেওয়ায় তা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আগামী বর্ষা মৌসুমে বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নদী ভেঙে বাঁধের কাছে চলে আসায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে পড়েছে পদ্মা সেতুর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, নাওডোবা-পালেরচর সড়ক, মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার ও চারটি গ্রামের অন্তত ৫৫০ বসতবাড়ি।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বরে ওই বাঁধের জাজিরা প্রান্তের নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ১০০ মিটার অংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে। এরপর ওই বাঁধটিতে সমীক্ষা চালায় পাউবো ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। সমীক্ষায় দেখা যায়, এক কিলোমিটার অংশে বাঁধের কাছে নদী গভীর। সেখানে তলদেশ থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। আর বাকি ১ কিলোমিটার অংশের বাঁধের কাছে নদী চলে এসেছে। সেখানেও মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে।
পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার বণিক প্রথম আলোকে বলেন, গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল, তা সংস্কার করা হচ্ছে। ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এর বাইরেও বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি রয়েছে।
পাউবো সূত্র জানায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদী থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া–২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ২০১২ সালের দিকে জমি অধিগ্রহণের সময় নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতুর প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল হতে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যায়ে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের সঙ্গেই পরবর্তী সময়ে নদী শাসনের বাঁধ সংযুক্ত করে দেওয়া হয়।
গত বছর নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় ওই বাঁধের ১০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে যায়। এরপর মাঝিরঘাট এলাকায় আরও ১০০ মিটার অংশর বাঁধের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। এ ছাড়া বাঁধের বাকি অংশের কাছে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের কাছে মাটি ভেঙে নদীতে পড়ছে