কাজের ব্যস্ততায় মুঠোফোন ব্যবহার করেননি কয়েক ঘণ্টা। এরমধ্যে ফোনে মেসেজ আসে, সেগুলোও চেক করা হয়নি। তিন ঘণ্টা পর ফোন চেক করে দেখেন এসেছে দশটি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। আর টাকা লেনদেনের মেসেজ। মেসেজ পড়ে দেখেন, অগ্রণী ব্যাংকে তার থাকা অ্যাকাউন্ট থেকে পূবালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। নিজের অজান্তেই টাকা খুইয়ে হতবাক ভুক্তভোগী এক তরুণী।

আইটি বিশেষজ্ঞের ধারণা, কোনো আনঅথোরাইজড অ্যাপে ঢোকার কারণে হয়তো এমনটি ঘটতে পারে। ভুক্তভোগীরও সন্দেহ একই। তার ভাষ্য, ঘটনার আগের দিন টেলিগ্রামে পাওয়া লিংকে ঢোকার পর থেকেই মুঠোফোনে অস্বাভাবিকতা টের পাচ্ছিলেন।

এ ঘটনায় বুধবার (৭ মে) আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন তিনি। ভুক্তভোগী তরুণী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘‘২০২৩ সালের ২৯ মে অগ্রণী ব্যাংকের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখায় অ্যাকাউন্টটি চালু করি। এরপর থেকে নিয়মিত এই আ্যাকাউন্টে লেনদেন করি। গত দুই বছর ধরেই অগ্রণী ব্যাংকের স্মার্ট ব্যাংকিং অ্যাপ নিয়মিত ব্যবহার করি। সবশেষ গতকাল ৬ মে দুপুরের দিকে ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে বিকাশে ১৫ হাজার টাকা পাঠাই।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এরপর বিকেল ২টা ৪৫ থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত টানা ১০টি লেনদেন হয়। এরমধ্যে ৮টি ছিল ২০ হাজার করে। এইভাবে লেনদেনের কারণ, সর্বোচ্চ মাত্রাই রয়েছে ২০ হাজার টাকার। এছাড়া আরও ২৯০০ টাকা ও ১২,৮০০ টাকার আরও দুটি লেনদেন হয়।”

ওই ছাত্রী বলেন, “সবগুলো লেনদেনই হয় পূবালী ব্যাংকের খুলনা শাখার বাটিয়াঘাটা শাখার বাঁধন এন্টারপ্রাইজ (BADHON ENTERPRISE- 1300901033436) নামে একটি হিসাব নম্বরে।’’

টেলিগ্রামে পাওয়া লিংকে ঢোকার পরেই অস্বাভাবিকতা
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘গত ৫ মে টেলিগ্রাম আ্যাপে একটা অ্যাকাউন্টে একটি মেসেজ আসে। যেখানে একটি রেস্তোরাঁর ইতিবাচক মন্তব্য করতে অনুরোধ করেন। সেখানে একটা ম্যাপের লিংক দেওয়া ছিল। আমি সেটিতে ঢুকি। সেখানে একটা ইমেইল চায়, আমি আমার ইমেইল দেই। তারপর ম্যাপে ঢুকে ইতিবাচক মন্তব্য দেই। এরপর রাত ১২-১টার দিকে দেখি, আমি ২-৩টি ক্রিপ্টো গ্রুপে যুক্ত হয়ে গেছি। আমি সেভাবে বিষয়টি গুরুত্ব দেইনি। গতকাল মনে হয়েছে, ফোন হ্যাং করছে। সেটিংস বদলাচ্ছে। এরমধ্যেই বিকাশের ওই লেনদেন করি। ওই দশটি লেনদেনের সময় ফোন আমার কাছেই ছিল। ওই সময় ফোনটি চেক করা হয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘‘সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমি আমার কাজ থেকে ফিরে ফোন চেক করে দেখি, দশটি লেনদেন হয়েছে। এবং ওই আ্যকাউন্টে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকাগুলো পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি লেনদেনেই ওটিপি এসেছে এবং লেনদেনগুলো সফল হয়েছে। দশটি লেনদেনই হয়েছে এনপিএসবি ট্রান্সফার। আর বেনিফিশিয়ারিতে দেখিয়েছে, আমার ফোন নম্বরটি।’’

‘‘এরমধ্যে সন্দেহ হওয়ায় গতকালের টেলিগ্রাম মেসেজ চেক করতে গিয়ে সেই মেসেজগুলো আর খুঁজে পাইনি, ওই ইনবক্সের মেসেজও আর খুঁজে পাইনি। তবে গ্রুপগুলো রয়েছে। সেগুলো চেক করতে গিয়ে ওই গ্রুপে দেখি প্রচুর মেসেজ। টাস্ক আসছে, রিভিউ যাচ্ছে। রিভিউ অনুযায়ী টাকা দিচ্ছে। আমার ধারণা ওই রিভিউ দেওয়ার সময়ই হয়তো তারা আমার ইমেইল নিয়ে নেয় ও এক্সেস পায়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এরমধ্যে শামসুল হক নামে একটি আইডি থেকে টেলিগ্রামে মেসেজ আসে। সেখানে আইডি লক হয়ে গেছে এমন একটি মেসেজ আসে। আমি আমার সমস্যার কথা জানাই। তখন সে আমাকে একটা লিঙ্ক দিয়ে ২ লাখ ১৪ হাজার টাকা স্থগিত রয়েছে বলে জানায়। এরপর সেটায় ঢুকে দেখি এই এমাউন্ট স্থগিত রয়েছে। সেখানে আমার আ্যাকাউন্ট দিয়ে একটা অ্যাকাউন্ট খোলা দেখতে পাই।

‘পরে আমি অগ্রণী ব্যাংকে কল দেই। সমস্যাটি জানাই। পরে তাদের আ্যাকাউন্টটি স্থগিত করতে বলি। তারা আমাকে সব পাসওয়ার্ড বদলাতে বলে। আমি সেটি করি। এরপর এ ঘটনায় আমি আশুলিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করি।’’

খোয়ানো টাকা ফেরত পাওয়া ও জড়িতদের শাস্তির আওতায় এনে আর কেউ যেন ইন্টারনেটের মাধ্যমে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তার।

আনঅথোরাইজড অ্যাপের কারসাজি, সন্দেহ আইটি বিশেষজ্ঞের

আইটি ও আইসিটি বিশেষজ্ঞ মো.

শাকেরুজ্জামান বলেন, ‘‘যদি এ ধরনের কিছু ঘটে থাকে, তাহলে অবশ্যই ফোনটিতে কোনো আনঅথোরাইজড অ্যাপ আছে। যেটার মাধ্যমে যিনি ওটিপি পাঠাচ্ছেন, তিনি ফোনের এক্সেস পাচ্ছেন। উনি যখন এক্সেস পাচ্ছেন, তখন মূল ব্যবহারকারী হয়তো জানেন না, বুঝতে পারছেন না। কিন্তু উনার ফোন বা টেক্সট ওই এক্সেসকারী পড়তে বা দেখতে পাচ্ছেন। হয়তো উনি উনার অজান্তে কোনো অ্যাপ বা কোনো কিছু ডাউনলোড করে নিয়েছেন ফোনে। এইজন্য আমরা কোনো আনঅথোরাইজড অ্যাপ বা কোনো ফিশিং লিংকে ক্লিক না করার জন্য বলি।’’

তিনি বলেন, ‘‘ফোনের ডেটা ক্লোনিং করার এ ধরনের অনেক অ্যাপই রয়েছে। এটা হয়। যখন হয়, ভুক্তভোগী নিজেও জানে না, তার অজান্তে এমন একটা ক্লোনিং বা ফিশিং উনি ডাউনলোড করে নিয়েছেন।’’

‘সোশ্যাল মিডিয়া বা যে কোথাও যখন ব্রাউজ করছেন, যে সাইটে ব্রাউজ করছেন, একটু সচেতনভাবে সেগুলো যাচাই করে আনঅথোরাইজড কিছুতে না প্রবেশ করা, করলেও সন্দেহ হলে ফোনের অ্যাপ ডাউনলোডের সিকিউরিটি রাখা। যেন কোনো অ্যাপ ডাউনলোড না হয়।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক প্রলোভন আসে, ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায়। ঘরে বসে কাজ করুন, এমন প্রলোভন দিয়ে কাজ করা হয়। এগুলো ছোট ছোট কাজ দেবে, টাকাও দেবে। তারপর অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলবে বা কোনো লিংকে ঢুকতে বলবে। ম্যাপের মতো লিংক দেবে, সেটা দিয়েই মূলত ক্লোনিংয়ের ফাঁদে পা দিয়েছেন তিনি। রেস্তোরাঁর রিভিউয়ের লিংকে ঢুকে তিনি আসলে ক্লোনিংয়ের শিকার হয়েছেন।’’

বিষয়টি অনুসন্ধান করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘‘এই বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এই ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড উনল ড ব যবহ র এরমধ য চ ক কর এক স স ল নদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিপি নেতাকে ‘প্রস্তুত হ রাজাকার’ চিরকুটের সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি

রাজশাহীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেতার বাড়ির সামনে ‘প্রস্তুত হ রাজাকার’ লেখা একটি চিরকুটের সঙ্গে কাফনের কাপড় ফেলে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার রাতে জেলার মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

ওই নেতার নাম খালিদ হাসান ওরফে মিলু। তিনি এনসিপির রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক। জেলার মোহনপুর উপজেলার ধুরইল গ্রামে তাঁর বাড়ি।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘প্রস্তুত হ রাজাকার। বাপ-মায়ের দোয়া নে। তোদের দিন শেষ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’ ওই রাতে খালিদ হাসানের বাড়িতে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয় বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এনসিপি নেতা খালিদ হাসান জানান, শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাড়িতে যান। এরপর ঘরের মধ্যে বসে ছিলেন। হঠাৎ জানালার পাশ দিয়ে অপরিচিত একজন বলেন, ‘বাইরে বের হয়ে দেখ।’ এরপর তিনি বারান্দায় গিয়ে দেখেন, টিনের সঙ্গে থাকা কাঠের আড়ায় আগুন জ্বলছে। এ সময় তিনি পেট্রলের গন্ধ পান।

খালিদ হাসান বলেন, এ ঘটনার পর তিনি বাড়ি থেকে বের না হয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন। ধুরইল বাজারের নৈশপ্রহরীও আসেন। ইতিমধ্যে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। এরপর তিনি বাড়ি থেকে বের হলে সামনে একটি পলিথিন দেখতে পান। পলিথিনে কী আছে না জেনে তাঁরা সেটিতে হাত দেননি। পুলিশ আসার পর সেটি দেখে। তখন ভেতরে একটি কাফনের কাপড় ও চিরকুট পাওয়া যায়। পরে চিরকুট ও কাফনের কাপড়টি পুলিশ নিয়ে যায়।

খালিদ হাসান বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে বাড়ি ভেজা অবস্থায় আছে। এ জন্য পেট্রল ঢাললেও আগুন ছড়িয়ে পড়েনি। যেটুকু আগুন লেগেছিল, সেটা আমরা নিভিয়ে ফেলতে পেরেছিলাম। এখন এমন হুমকি পাওয়ায় আমি উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। চিরকুটে জয় বাংলা লেখা আছে। তাতে বোঝা যায়, কারা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করব।’

মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘রাত পৌনে ১২টার দিকে খবর পেয়েই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। আমি খালিদ হাসানকে অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পাওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি।’

এনসিপির রাজশাহী জেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত থানায় একটি জিডি করা হবে। তারপর পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বিদায় দেওয়ার সময় বলেছেন, দুজন গাড়িতে ঘুমাবেন, আর ফোন ধরেননি’
  • স্মার্ট হোম ডিভাইস হ্যাক করে ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে গুগলের জেমিনি এআই
  • প্রেমের টানে চীনা যুবক দিনাজপুরে, মুসলিম হয়ে করলেন বিয়ে 
  • ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
  • শ্রেণিকক্ষে বিষমিশ্রিত পানি খেয়ে ৫ শিক্ষার্থী হাসপাতালে
  • ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা
  • নেই মেসি, হারল মায়ামি
  • প্রত্যন্ত গ্রামের তরুণের কাছে কোহলি-ডি ভিলিয়ার্সের ফোন, এরপর যা ঘটল
  • ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে: শফিকুল আলম
  • এনসিপি নেতাকে ‘প্রস্তুত হ রাজাকার’ চিরকুটের সঙ্গে কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হুমকি