ভারত–পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে ভুয়া পোস্টে লাখো ভিউ: বিবিসি
Published: 8th, May 2025 GMT
পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতের হামলার পর অনলাইনে ভুয়া তথ্যের ঢল নেমেছে। এ হামলার সঙ্গে সম্পর্কহীন বিভিন্ন ভিডিওকে ওই হামলার দৃশ্য বলে প্রচার করা হচ্ছে। আর এসব ভিডিও লাখ লাখ মানুষ দেখেছেন।
‘বিবিসি ভেরিফাই’ ইতিমধ্যেই কয়েকটি নাটকীয় ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেছে। একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছিল, এটি পাকিস্তানের ভারতীয় সেনাঘাঁটির ওপর হামলার দৃশ্য। আরেকটিতে বলা হয়েছিল, পাকিস্তান ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এক্সে চার লাখের বেশি ভিউ পাওয়া একটি ভিডিওকে বলা হয়েছিল, এটি পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ায় ঘটা বিস্ফোরণের দৃশ্য। আসলে সেটি ২০২০ সালে লেবাননের বৈরুত বন্দরের বিস্ফোরণের ভিডিও।
আরও পড়ুনকাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সেনাদের সঙ্গে রাতভর গোলাগুলি হয়েছে: ভারত৩২ মিনিট আগেবিবিসি ভেরিফাইকে একজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, উত্তেজনা বা নাটকীয় ঘটনার মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো অনেক বেশি ঘটে, যা জনমনে অবিশ্বাস ও বিদ্বেষ তৈরি করে।
বেলিংক্যাট ইনভেস্টিগেশনস ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা এলিয়ট হিগিন্স বলেন, ‘এটা খুব সাধারণ বিষয়—কোনো বড় ঘটনা ঘটলেই পুরোনো ফুটেজ পুনরায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। যাদের পোস্টে বেশি এনগেজমেন্ট আসে, অ্যালগরিদম তাদের পুরস্কৃত করে—সত্যভিত্তিক নয়। আর যুদ্ধ ও দুর্যোগের ফুটেজ সব সময়ই বেশি আকর্ষণীয়, তা সত্য হোক বা মিথ্যা।’
সবচেয়ে ভাইরাল ভিডিওগুলোর একটি মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ৩০ লাখের বেশি ভিউ পেয়েছে। সেখানে দাবি করা হয়েছিল, ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলার দৃশ্য। তবে গুগলে সেই ভিডিওর স্ক্রিনগ্র্যাব খুঁজে দেখা যায়, এটি ছিল ১৩ অক্টোবর ২০২৩-এ গাজায় ইসরায়েলি হামলার ভিডিও।
আরও পড়ুনতথ্যযুদ্ধ: ভারত ও পাকিস্তান কি হামলা নিয়ে সত্য বলছে২ ঘণ্টা আগেবেশির ভাগ ভুল প্রমাণিত ফুটেজ ভারতীয় হামলার তাৎক্ষণিক পরবর্তী অবস্থা দেখানোর চেষ্টা করেছে। তবে বিবিসি ভেরিফাইয়ের বিশ্লেষণ করা কিছু ক্লিপ দেখে মনে হয়েছে, যেন পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়া আসলে যতটা মারাত্মক ছিল, তার চেয়ে বেশি দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক্সে ছয় লাখ ভিউ পাওয়া একটি ভিডিওর কথা বলা যায়। সেখানে দাবি করা হয়, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় ব্রিগেড সদর দপ্তর উড়িয়ে দিয়েছে।’ কিন্তু এটি ছিল আগেই ইউটিউবে থাকা একটি ভিডিওর দৃশ্য।
একগুচ্ছ ছবিতে দাবি করা হয়েছিল, পাকিস্তান বিমানবাহিনী ২০২৫ সালের ৬ মে ভোরে ভারতীয় সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। তবে যাচাই করে দেখা যায়, এই ড্রোন ফুটেজ আসলে একটি ভিডিও গেম ব্যাটেলফিল্ড-থ্রি থেকে নেওয়া।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা বুধবার সকালে পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। এ ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে কিছু ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে, বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান আর সেগুলো ভারতীয় বলে দাবি করা হয়েছে। তবে বিবিসি ভেরিয়াই জানিয়েছে, ব্যাপকভাবে ছড়ানো দুটি ছবি পুরোনো। এর মধ্যে একটি ২০২৪ সালে রাজস্থানে এবং অন্যটি ২০২১ সালে পাঞ্জাবে ভারতীয় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা।
ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইন্দ্রজিত রায় বলেন, ‘এ ধরনের ছবি তৈরি করা হচ্ছে পাকিস্তানে সামরিক সমর্থন জোগাড় করার উদ্দেশ্যে।’
এর মধ্যে একটি ভিডিও পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজেই ছড়িয়েছিল। পরে তা সংবাদ সংস্থাগুলো সরিয়ে নেয়। কারণ, সেটি ভিন্ন ঘটনার দৃশ্য ছিল।
অধ্যাপক রায় বলেন, ‘উভয় পক্ষেই উগ্র জাতীয়তাবাদীরা রয়েছে। আর তাদের এক্সে বিশাল প্ল্যাটফর্ম আছে। আপনি দেখতে পারবেন, ভুয়া খবর এবং কিছু সত্য খবরও কীভাবে বিকৃত হয়ে, অতিরঞ্জিত হয়ে ছড়ানো হয়। যার উদ্দেশ্য হলো একে অপরের প্রতি শত্রুতা, বিদ্বেষ আর ঘৃণা ছড়িয়ে দেওয়া।’
কাশ্মীর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইনে প্রচুর ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়ছে। গত মাসে পেহেলগামে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর হামলার পর এআই দিয়ে তৈরি ছবি ঘুরেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, যেগুলো হামলার বাস্তব দৃশ্যকে অতিরঞ্জিত করে তুলেছিল।
ফ্রান্স টুয়েনটি ফোরের সাংবাদিক বেদিকা বাহল বলেন, পেহেলগাম হামলার পর অপতথ্যের প্রবণতা বেড়ে গেছে দুই পক্ষ থেকেই। তিনি আরও বলেন, বিভ্রান্তিকর বেশির ভাগ তথ্য এক্সে শুরু হয়। পরে তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে হোয়াটসঅ্যাপে, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক জনগোষ্ঠীর প্রধান যোগাযোগমাধ্যম।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে শুনানির সময় অভিযোগকারীর ওপর হামলা, বিএনপির নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ে দুই পক্ষের শুনানির সময় অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান ও অভিযোগকারীর ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে পাংশা উপজেলা বিএনপির সভাপতি চাঁদ আলী খানসহ ছয়জনকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজবাড়ী শহরের বড়পুল এলাকায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
আটক অন্যরা হলেন, অভিযুক্ত টাইলস ব্যবসায়ী পাংশার নারায়ণপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. রুহুল আমিন মুকুল, পাংশা উপজেলা বিএনপির সদস্য শেখ পাড়া গ্রামের মো. বাচ্চু বিশ্বাস, রাজবাড়ী শহরের ভবানিপুর এলাকার মামুন শিকদার, মো. ফরিদ হোসেন ও শিশির করীম। এ ঘটনায় ভোক্তার সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করেছেন।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি মো. মাহমুদুর রহমান জানান, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে ভোক্তার সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। শুক্রবার আসামিদের রাজবাড়ীর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, বালিয়াকান্দি উপজেলার একজন তরুণী পাংশার কলেজ রোডে অবস্থিত রুহুল আমিন মুকুলের মালিকানাধীন মেসার্স মুকুল ট্রেডার্স থেকে টাইলস কেনেন। যে মানের টাইলস দেওয়ার কথা তা না দেওয়ায় ওই তরুণী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজবাড়ী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কাজী রকিবুল হাসান বলেন, ‘২ জুন বালিয়াকান্দির বাসিন্দা জেসমিন সুলতানা পাংশার টাইলস ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুকুল ট্রেডার্সের বিরুদ্ধে তাদের কার্যালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে শুনানির সময় ধার্য করা হয়। তার অফিসটি তিন তলায়। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান দুই মাইক্রোবাসে লোকজন নিয়ে আসে। তার কক্ষে ছয়টি চেয়ার আছে। এ কারণে দুই পক্ষকে বলেন, তিনজন করে থাকতে। নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে তিনি অভিযোগকারীর বক্তব্য শোনেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির বক্তব্যে বিঘ্ন সৃষ্টির অজুহাতে অভিযোগকারীর ওপর চড়াও হয় অভিযুক্ত পক্ষ। ওই সময় অভিযুক্তরা ওই নারীকে বলেন, তোকে আগেই বলেছিলাম সমাধান করে নিতে। তা না করে এখানে অভিযোগ করেছিস। এ কথা বলেই ওই নারীর গায়ে হাত তোলে। এতে ওই নারী পড়ে যান। তিনি তখন চেয়ার থেকে উঠে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বাইরে যেতে বলেন। তিনি মোবাইল হাতে নিয়ে ফোন করতে গেলে তার ওপর চড়াও হয়। তাকে ধমকের সুরে তুই তোকারি করে কথা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। ওই সময় বাইরে অপেক্ষমান অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন শোরগোল শুরু করলে তাদের ভবনে দ্বিতীয় তলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা এগিয়ে আসে। অভিযুক্ত পক্ষের লোকজন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকদের ওপরও চড়াও হয়। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সদস্যরা অভিযুক্ত পক্ষের কয়েকজনকে আটকে রাখে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে জানালে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ছয়জনকে আটক করে নিয়ে যায়। রাতেই তিনি রাজবাড়ী সদর থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অভিযোগকারী ওই নারীকে নিরাপদে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’