বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ এআই সম্মেলন হয়েছে। আকিজ রিসোর্স ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির উদ্যোগ এবং ব্র্যাক বিজনেস স্কুলের সহযোগিতার বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের ফ্ল্যাগশিপ আয়োজন এটি।

সম্মেলনে দেশি-বিদেশি ব্যবসায়িক নেতা, টেক ও এআই বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারক ও উদ্ভাবকরা অংশ নেয়। বিশেষজ্ঞ আলোচকরা এআই প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনের সঙ্গে এআই প্রযুক্তির দূরদর্শিতা নিয়ে আলোচনা করেন।

ইন্ডাস্ট্রি সংশ্লিষ্ট খাতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো ও বাংলাদেশে এআই ট্যালেন্ট তৈরির ভিত্তি গড়তে সম্ভাব্য সুযোগের কথা জানালেন বক্তারা। এমন আয়োজনের লক্ষ্য হচ্ছে এআই প্রযুক্তির সম্ভাবনায় জনসচেতনতা তৈরি, সরকারি-বেসরকারি-একাডেমিক অংশীজন হওয়া, দক্ষ পেশাজীবীদের বৃহৎ পুল তৈরি ও জাতীয় এআই নীতি গঠনে দিকনির্দেশনা দেওয়া।

বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম এবং বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফুল ইসলাম বলেন, চারপাশের বিশ্বকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিনিয়ত বদলে দিচ্ছে। পরিবর্তনের অংশ হতে হলে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রশাসন, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প– প্রতিটি খাতে এআই জরুরি। সামিটের মাধ্যমে জানার চেষ্টা করব কীভাবে এআই শিল্পকে রূপান্তর করতে পারে, প্রশাসনে দক্ষতা আনতে পারে, মানুষের জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নৈতিক সমাজ গড়ে তুলতে পারে। এআই হ্যাকাথনের সূচনা করেছি, যা দেশের মেধাবী তরুণদের জন্য উদ্ভাবনী সমাধান উপস্থাপনের প্ল্যাটফর্ম হবে।

বিশেষজ্ঞরা শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ফিনটেক ও শিল্প খাতে এআই অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে কথা বলেন। বক্তাদের আলোচনায় প্রাধান্য পায় বাংলাদেশে এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ, বৈশ্বিক এআই প্রবাহ ও প্রভাব, স্বাস্থ্য খাতে এআইর সম্ভাবনা ও সমাজের সমান সুযোগ তৈরির ক্ষেত্র। নৈতিক নীতিমালার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে এআইর ভূমিকা ও আর্থিক সেবায় অধিকতর অন্তর্ভুক্তি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের আরেকটি উদ্যোগ এআই হ্যাকাথনের বিজয়ীদের সম্মাননা দেওয়া। সিটি ম্যানেজমেন্ট, ম্যানুফ্যাকচারিং, এডুকেশন, এগ্রিকালচার, ফিনটেক ও হেলথকেয়ার– ছয়টি খাতে ছয়টি উদ্ভাবনী এআই সমাধানকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এআই

এছাড়াও পড়ুন:

কোয়ারি চালুর দাবিতে একতা বিএনপি-জামায়াত-এনসিপির

বিগত সরকারের আমলে বন্ধ থাকা সিলেটের পাথর কোয়ারি ও বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর হাতে। সরকার পতনের পর এর হাতবদল হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংরক্ষিত এলাকাসহ নির্বিচারে জাফলং, সাদাপাথর, বিছনাকান্দি, লোভাছড়া, উৎমাসহ অন্যান্য স্থান থেকে বালু-পাথর লুট করা হয়। পাথর উত্তোলন করে ধ্বংস করা হয়েছে রেলের সংরক্ষিত এলাকা ভোলাগঞ্জ বাঙ্কার ও শাহ আরেফিনের টিলা। অভিযোগ রয়েছে, কোয়ারিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে দেড় হাজার কোটি টাকার পাথর লুট করা হয়েছে। তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার কোয়ারি বন্ধে অটল থাকায়, তা চালুর দাবিতে একাট্টা হয়েছেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারাও। 
গত ১৪ জুন সরকারের দুই উপদেষ্টা জাফলং পরিদর্শনকালে পাথর কোয়ারি চালু না হওয়ার ঘোষণা দেন। এতে বন্ধ হয়ে যায় জাফলং ও ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে লুটপাট। স্টোন ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে প্রশাসন। গত দুই সপ্তাহে আড়াইশ মিলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। গত সোমবার খনিজ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল কোম্পানীগঞ্জে পাথর ভাঙার ১৭টি মিল ধ্বংস ও ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে। 

কিন্তু কোয়ারি খোলার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন পাথর ব্যবসায়ী, ক্রাশার মিল মালিক ও পাথর-সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ক্রাশার মিল মালিকরাও। গতকাল মঙ্গলবার সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের টুকেরবাজার এলাকায় ধর্মঘট চলাকালে পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে একটি সাদাপাথর পর্যটক বাস,  দুটি কার ও দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা রয়েছে।
চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে মাঠে দেখা গেছে সিলেট নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদি ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ফখরুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরীকে। 
জেলা পাথর-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, মালিক, শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আব্দুল জলিল সমকালকে বলেন, সব দলের সমর্থন রয়েছে আন্দোলনে। কিন্তু সরকার তা আমলে নিচ্ছে না।
সিলেটের পাথর ও বালুমহাল লুটপাটের সঙ্গে শতাধিক লোক জড়িত। শুরুতে লুটের সঙ্গে সাধারণ মানুষ জড়িত থাকলেও পরবর্তী সময়ে নেতৃত্ব দেন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও শ্রমিক দলের কিছু নেতাকর্মী। ইতোমধ্যে জাফলংয়ে লুটের অভিযোগে পদ হারান জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শাহপরান। বহিষ্কার হন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খান ও যুবদল নেতা আবুল কাশেম। 
কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ, শারফিন, উৎমা এলাকা বালু-পাথর উত্তোলনে জড়িতদের আশ্রয়ের অভিযোগ ওঠে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তাঁকে নোটিশ দিয়েছে জেলা বিএনপি। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাহাব উদ্দিনসহ ২০-২৫ জন জড়িত রয়েছেন। 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহাব উদ্দিন জানান, তিনি প্রথম বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে দাবি তোলেন। যারা জড়িত, তারাই অপপ্রচার করছে। ‘ডেভিলরা’ এখনও বহাল রয়েছে। 
গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন তাঁর সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। 
মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি শাহজাহান আলী বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে একমত। বিএনপি-জামায়াত সবাই চাচ্ছে পাথর কোয়ারি খুলে দেওয়া হোক। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে আমরা একই দাবি করেছি। পাথরের উত্তোলন বন্ধ থাকায় নির্মাণ কাজসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থেমে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক-ব্যবসায়ী বেকার। সরকার সহযোগিতা না করে উল্টো কঠোর হয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, দলের যারা জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দল কোনো অনৈতিক কাজকে সমর্থন করে না।
ঐতিহ্য, পরিবেশ ও নদী বাঁচাও আন্দোলনকর্মী আব্দুল হাই বলেন, লুটপাটের চেয়ে সরকারি সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। না হয় একেবারে বন্ধ করতে হবে। 
পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা জানান, পরিবেশ রক্ষায় তারা সোচ্চার। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলা করেছেন। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা প্রশাসক শের মোহাম্মদ মাহবুব মুরাদ সমকালকে বলেন, কাউকে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। এখন আগের চেয়ে অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। স্টোন ক্রাশার মিলের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ