চেহারা দেখে মানুষের নাম জানাবে মেটার নতুন স্মার্ট চশমা
Published: 9th, May 2025 GMT
চলতি পথে পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে হঠাৎ করে নাম মনে করতে পারেন না অনেকেই। সঠিক সময়ে দ্রুত নাম মনে করতে না পারার কারণে মাঝেমধ্যেই ভীষণ অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে পরিচিত ব্যক্তিদের চেহারা দেখে নাম বলে দিতে সক্ষম স্মার্ট চশমা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে মেটা। নতুন স্মার্ট চশমাগুলোতে ‘সুপার সেন্সিং ভিশন’ সফটওয়্যার ব্যবহার করা হবে যা পরিচিত ব্যক্তিদের চেহারা দেখেই তাদের নাম ব্যবহারকারীকে জানাতে পারবে। এরই মধ্যে এ প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে মেটা।
প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ইনফরমেশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুটি স্মার্ট চশমা বাজারে আনার পরিকল্পনা করেছে মেটা। এরই মধ্যে ‘অ্যাপেরল’ ও ‘বেলিনি’ কোডনামের দুটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন প্রযুক্তিপণ্য দ্রুত বাজারে আনতে গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি মূল্যায়নের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াও নতুন করে সাজিয়েছে মেটা।
আরও পড়ুনঅগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির স্মার্ট চশমা দেখাল মেটা২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪চশমাটিতে ব্যবহৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সফটওয়্যার ‘হেই মেটা, স্টার্ট লাইভ এআই’ কমান্ডে চালু হবে। এটি ব্যবহারকারীর দৈনন্দিন চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তথ্য ও পরামর্শ দিতে পারবে। শুধু তা–ই নয়, ‘সুপার সেন্সিং’ প্রযুক্তির আওতায় চশমার ক্যামেরা ও সেন্সর সব সময় সক্রিয় থাকবে। ফলে ব্যবহারকারীর আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে জানাবে স্মার্ট চশমাটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেটা ইতিমধ্যে বাজারে থাকা কিছু স্মার্ট চশমার মডেলে পরীক্ষামূলকভাবে এই লাইভ এআই প্রযুক্তি চালু করেছে। তবে পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই সুবিধা সক্রিয় থাকলে স্মার্ট চশমাগুলোর ব্যাটারি সর্বোচ্চ ৩০ মিনিট পর্যন্ত ব্যাকআপ দিতে পারে। এই সীমাবদ্ধতা দূর করতে মেটা নতুন স্মার্ট চশমা তৈরি করছে মেটা।
সূত্র: দ্য ভার্জ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম র ট চশম ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
চুয়েটে রোবটের জমজমাট লড়াই, উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা
মাঠজুড়ে টানটান উত্তেজনা। চারপাশে দর্শনার্থীদের উল্লাস আর করতালির গুঞ্জন। কারো মুখে বিজয়ের হাসি, কারো চোখে হতাশার ছাপ। ছোট্ট এক ফুটবল মাঠে চলছে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ, যেখানে খেলোয়াড় একজন করেই। বল গড়িয়ে যায় মাঠে, বাঁশির শব্দেই শুরু হয় প্রতিযোগিতা। শুনে অবাক লাগছে? হ্যাঁ, এখানে খেলছে রোবট! চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) জাতীয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তি উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল এই রোবো ফুটবল প্রতিযোগিতা। শুধু ফুটবল নয়, পাশের আরেকটি মাঠে লাইন ধরে ছুটছে রোবোটিক গাড়িগুলো, কেউ পেরোচ্ছে বাঁক, কেউ আবার হোঁচট খাচ্ছে মাঝপথে। আজ শুক্রবার ক্যাম্পাসে এই রোবট যুদ্ধ নিয়ে জমে উঠেছিল ব্যতিক্রমী উৎসবের আসর।
উৎসব শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। প্রথম দিনেই কারিগরি সেশনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয় রোবোটিকস ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং শিল্প খাতের প্রয়োগ। এরপর শুক্রবার ছিল মূল প্রতিযোগিতার দিন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় রোবো ফুটবল, লাইন অনুসরণকারী রোবট এবং ট্যাকাথন প্রতিযোগিতা।
রোবো ফুটবলে অংশ নিয়েছিল দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা ২৬টি দল। প্রতিটি খেলা ছিল ৫ মিনিটের, যেখানে একটি রোবট খেলোয়াড়ের ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি গোলের জন্য ৩ পয়েন্ট, আর ফাউল বা রোবট বন্ধ হয়ে গেলে কেটে নেওয়া হতো ১ পয়েন্ট। ধাপে ধাপে এগিয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নেয় দুটি দল।
অন্যদিকে লাইন অনুসরণকারী রোবট প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩৭টি দল। প্রতিটি রোবটিক গাড়িকে সাদা-কালোর মিশেলে আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করতে হতো দ্রুততম সময়ে। প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে চূড়ান্ত পর্বে ওঠে ২০টি দল, যেখানে সেরা তিনটি দলকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
ট্যাকাথন প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের কম্পিউটার ল্যাবে। এখানে চূড়ান্ত পর্বে থাকা ১৮টি দলকে দেওয়া হয় বাস্তব জীবনের নানা সমস্যা সমাধানের চ্যালেঞ্জ। হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের সমন্বয়ে দ্রুত এবং কার্যকর সমাধান তৈরির ওপর ভিত্তি করে তাদের মধ্য থেকে বিজয়ী নির্বাচন করা হবে।
বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আহনাফ তাহমিদ বলেন, “অনেক হ্যাকাথনে অংশ নিয়েছি, কিন্তু এই অভিজ্ঞতা অন্যরকম। আগে শুধু সফটওয়্যারে সমাধান করতে হতো, এবার হার্ডওয়্যারও যুক্ত হওয়ায় কাজটি আরও চ্যালেঞ্জিং ছিল।”
রোবো ফুটবলে অংশ নেওয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল নাঈমা বলেন, আজকের প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে খুবই ভালো লাগছে। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে। বইয়ে যা পড়তাম, এবার সেগুলো বাস্তবে প্রয়োগ করার সুযোগ পেলাম। এমন অভিজ্ঞতা আমাদের আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।”
উৎসবের শেষ দিন অর্থাৎ শনিবার রয়েছে প্রজেক্ট প্রদর্শনী, সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকশা তৈরি এবং দাবা প্রতিযোগিতা। এরপর সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠান ও চুয়েটের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ আয়োজন।
আয়োজকেরা জানান, বুয়েট, কুয়েট, রুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৪১টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় ৭০০ প্রতিযোগী অংশ নিয়েছেন এবারের উৎসবে। এছাড়া বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকেও অতিথিরা যোগ দিয়েছেন।
চুয়েটের ম্যাকাট্রনিক্স ও শিল্প প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রসঞ্জীত দাশ বলেন, “চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করানো এবং তাদের মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দিতেই এই আয়োজন। এই প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের আরও বেশি আগ্রহী করে তুলবে রোবোটিকস ও প্রযুক্তিচর্চায়।”
উৎসবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার জন্য রয়েছে মোট ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা সমমূল্যের পুরস্কার। পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছে প্রথম আলো।
রোবোটিকসের এমন মহাযজ্ঞে শিক্ষার্থীরা যেমন বাস্তব অভিজ্ঞতার ঝুলি ভরেছেন, তেমনি তৈরি করেছেন নতুন স্বপ্নের ভিত্তি। নতুন প্রযুক্তির পথে তারা এগিয়ে যাবে আরও দৃঢ়ভাবে—এ প্রত্যাশাই এখন সবার।