ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পাকিস্তানি শিল্প ও সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে বড় পদক্ষেপ নিল দিল্লি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে পাকিস্তানি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, গান, পডকাস্টসহ সব ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতির স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি দেশের সব ওটিটি এবং ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যেসব গ্রাহক আগে সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

আরও পড়ুনভারতে মুক্তি পেল না সেই পাকিস্তানি সিনেমা২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এর আগে ভারত সরকার সীমান্ত উত্তেজনার সময় একাধিকবার পাকিস্তানি শিল্পীদের কাজ থেকে বিরত রাখতে বলেছিল। এবার তা আরও বড় পরিসরে কার্যকর হলো। জানা গেছে, চলমান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন জনপ্রিয় পাকিস্তানি শিল্পী ফাওয়াদ খান, মাহিরা খান, আতিফ আসলাম, হানিফ আমিরসহ আরও অনেকে। ফাওয়াদ খান অভিনীত ও বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুরের সঙ্গে অভিনীত আসন্ন ছবি ‘আবির গুলাল’-এর মুক্তি এই নিষেধাজ্ঞার জেরে স্থগিত হয়ে গেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার  বলেন, ‘কাশ্মীরের পেহেলগামে যে ধরনের জঘন্য হামলা হয়েছে, তাতে সরকারের মনোভাব পরিষ্কার—যেসব ক্ষেত্র দিয়ে ভারতের জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে পাকিস্তানি প্রচারযন্ত্র, সেসব পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিনোদন সেই মাধ্যমগুলোর একটি।’
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ২৭ জন সাধারণ মানুষ। হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয় ভারত। তারই ধারাবাহিকতায় ৬ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালায় ভারতের সেনাবাহিনী।

এরই মধ্যে ভারতীয় প্রশাসনের নজরে আসে পাকিস্তানি কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এমনকি কিছু পাকিস্তানি শিল্পীর ইউটিউব চ্যানেল ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ভারতে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বড় প্রভাব ফেলবে। বলিউড ও লাহোরের চলচ্চিত্র জগতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অদৃশ্য একটি সেতুবন্ধ কাজ করত, বিশেষ করে সংগীত ও অভিনয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু বর্তমানে তা সম্পূর্ণ ছিন্ন করার পথে এগোচ্ছে ভারত।

এদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি অংশ জানিয়েছে, সরকার থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সরকারি সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে যদি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে, তবে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। তবে আপাতত পাকিস্তানি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, গান এবং পডকাস্ট—কোনো কিছুই ভারতে দেখা যাবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার

প্রথম আলো ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল, সেদিন যে শিশু জন্মগ্রহণ করেছিল, এখন তার বয়স ২৭ বছর। ভাবা যায়! আর ধরা যাক, প্রথম আলো প্রকাশের প্রথম সপ্তাহে ৭ বছরের যে শিশু গোল্লাছুটের ছবির ধাঁধা মিলিয়েছিল, এখন তার ৭ বছরের একটা সন্তান আছে। মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

দেশে কিংবা বিদেশে, ঢাকায় কিংবা চট্টগ্রামে, রাজশাহী কিংবা যশোরে, যেখানেই যাই, কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন, হয়তো কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ করপোরেট অফিসার, কেউ এনজিও নেতা, কেউ অধ্যাপনা করছেন; এসে বলেন, ‘আমি তো প্রথম আলো পড়ি, শুধু তা-ই নয়, আমি বন্ধুসভার সদস্য ছিলাম।’ কেউ বলেন, ‘আমি তো আপনাদের জিপিএ–৫ সংবর্ধনায় গিয়েছিলাম।’ বিদেশ থেকে আসেন এমআইটি থেকে পাস করা উদ্যোক্তা বা বিজ্ঞানী, এসে বলেন, ‘আমি তো গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতাম, সে কারণেই আজ আমি এই জায়গায়।’

মজার কথা হলো, এমন পাঠক আমরা পাই, যিনি বলেন, ‘আমি প্রথম আলো পড়ে আসছি সেই প্রথম দিন থেকে, আমার মা–ও পড়তেন। তিনি আজ আর বেঁচে নেই। এখন আমার সন্তানেরা বড় হয়েছে, তারাও এই প্রথম আলো পড়ে। প্রথম আলো তো আমাদের পরিবারেরই একজন। এমনকি আমার নাতিও অনলাইনে প্রথম আলো পড়ছে।’

আনন্দ-বেদনার ঘটনাও ঘটে। বুয়েটের এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, লেখাপড়া তো অনিশ্চিত হলোই, জীবনই হয়ে গেল এলোমেলো। তাঁকে নিয়ে তাঁর মা আসতেন প্রথম আলো ট্রাস্টের মাদকবিরোধী পরামর্শসভায়। শিক্ষার্থী মাদকমুক্ত হলেন। পাস করে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারলেন। তাঁর মা এসে আমাদের বলেছিলেন, ‘প্রথম আলোর জন্য দোয়া করি, প্রথম আলো যেন বেহেশতে যায়।’ আবার প্রথম আলো ট্রাস্টের অদম্য মেধাবী বৃত্তি পেয়ে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের মেধাবী সন্তানেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা হয়েছেন। অদ্বিতীয়া শিক্ষাবৃত্তি পেয়ে দরিদ্রতম পরিবারের প্রথম স্নাতক হিসেবে মেয়েরা চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তাঁদের কেউ কেউ পড়াশোনা শেষ করে আবার প্যারিস কিংবা মন্ট্রিয়লে উচ্চশিক্ষা নিয়েছেন, চাকরিও করছেন।

কিন্তু সবার আগে প্রথম আলো করতে চেয়েছে সাংবাদিকতা। দলনিরপেক্ষ থাকব, স্বাধীন থাকব, জনগণের পক্ষে থাকব, সত্য কথা সাহসের সঙ্গে বলে যাব—২৭ বছর আগে থেকেই এই ছিল আমাদের নীতি। প্রথম আলো প্রকাশের আগেও গল্প আছে। আমরা আরেকটা সংবাদপত্রে ছিলাম অনেকেই। সেই পত্রিকার উদ্যোক্তা তখনকার সরকারের এমপি নির্বাচিত হলেন। আমরা ভাবলাম, আমরা তো দলনিরপেক্ষ কাগজ করতে চাই। তখনই ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয় ডেইলি স্টার–এর সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের মধ্যস্থতায়। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানকে সব সময় স্মরণ করি। তিনি প্রথম আলোর সম্পাদকীয় বিষয়ে কোনো দিন হস্তক্ষেপ করেননি, কোনো দিনও জানতে চাননি কী ছাপা হবে বা এটা কেন ছাপা হলো। শুধু উৎসাহ দিয়ে গেছেন।

মতিউর রহমান, সম্পাদক, প্রথম আলো

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আমাকে পাঠিয়ো না’, ৯ বছরের শিশু কেন স্কুল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করল
  • দেখে এলাম চক্ষু মেলিয়া (শেষ পর্ব) 
  • পাঠকের ভালোবাসাই পুরস্কার