ফাওয়াদ-মাহিরার সিনেমা দেখা যাবে না ভারতে, কঠোর পদক্ষেপ দিল্লির
Published: 9th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার পাকিস্তানি শিল্প ও সংস্কৃতিকে লক্ষ্য করে বড় পদক্ষেপ নিল দিল্লি। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে, ভারতে পাকিস্তানি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, গান, পডকাস্টসহ সব ধরনের ডিজিটাল কনটেন্ট প্রচার অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক সংহতির স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি দেশের সব ওটিটি এবং ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এমনকি যেসব গ্রাহক আগে সাবস্ক্রিপশন নিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।
এর আগে ভারত সরকার সীমান্ত উত্তেজনার সময় একাধিকবার পাকিস্তানি শিল্পীদের কাজ থেকে বিরত রাখতে বলেছিল। এবার তা আরও বড় পরিসরে কার্যকর হলো। জানা গেছে, চলমান নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন জনপ্রিয় পাকিস্তানি শিল্পী ফাওয়াদ খান, মাহিরা খান, আতিফ আসলাম, হানিফ আমিরসহ আরও অনেকে। ফাওয়াদ খান অভিনীত ও বলিউড অভিনেত্রী বাণী কাপুরের সঙ্গে অভিনীত আসন্ন ছবি ‘আবির গুলাল’-এর মুক্তি এই নিষেধাজ্ঞার জেরে স্থগিত হয়ে গেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার বলেন, ‘কাশ্মীরের পেহেলগামে যে ধরনের জঘন্য হামলা হয়েছে, তাতে সরকারের মনোভাব পরিষ্কার—যেসব ক্ষেত্র দিয়ে ভারতের জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে পাকিস্তানি প্রচারযন্ত্র, সেসব পথ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিনোদন সেই মাধ্যমগুলোর একটি।’
গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে এক সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান ২৭ জন সাধারণ মানুষ। হামলার পর থেকেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয় ভারত। তারই ধারাবাহিকতায় ৬ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে একটি সামরিক অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালায় ভারতের সেনাবাহিনী।
এরই মধ্যে ভারতীয় প্রশাসনের নজরে আসে পাকিস্তানি কনটেন্ট ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ওটিটি ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এমনকি কিছু পাকিস্তানি শিল্পীর ইউটিউব চ্যানেল ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টও ভারতে নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে বড় প্রভাব ফেলবে। বলিউড ও লাহোরের চলচ্চিত্র জগতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অদৃশ্য একটি সেতুবন্ধ কাজ করত, বিশেষ করে সংগীত ও অভিনয়ের ক্ষেত্রে। কিন্তু বর্তমানে তা সম্পূর্ণ ছিন্ন করার পথে এগোচ্ছে ভারত।
এদিকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি অংশ জানিয়েছে, সরকার থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সরকারি সূত্র বলছে, ভবিষ্যতে যদি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে, তবে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করা হতে পারে। তবে আপাতত পাকিস্তানি সিনেমা, ওয়েব সিরিজ, গান এবং পডকাস্ট—কোনো কিছুই ভারতে দেখা যাবে না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জোট গঠন দোষ হলে অধিকাংশ দলই দল দোষী: জাপা নেতা আনিসুল
জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘আজকে যেমন জামায়াত, হেফাজত, ইসলামী আন্দোলন একধরনের জোট গঠনের চেষ্টা করছে। নির্বাচন সামনে রেখে জাতীয় পার্টিও জোট গঠন করেছিল। জোট গঠন করা যদি দোষ হয়, সে দোষে বাংলাদেশের অধিকাংশ দলই দোষী।’
আনিসুল ইসলাম আরও বলেন, জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে জাতীয় পার্টির এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এ কথা বলেন। জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ চেয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি এবং চলমান জাতীয় রাজনীতি নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
আনিসুল ইসলাম বলেন, আজ যারা জাতীয় পার্টিকে দোসর হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়, তারাও একসময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন করেছে। এমনকি তারা সংসদে ছিল। ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট গঠন করেছে, তেমনি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করার জন্যও একাধিক বৈঠক করেছে জাপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনাগ্রহের কারণে সেই জোট গঠন হয়নি। জাতীয় পার্টি কোনো বিপ্লবী পার্টি নয়। জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের কৌশল হিসেবে জাতীয় পার্টির একটি জোট করে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে যায়।
জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে জামায়াতের দাবি প্রসঙ্গে জাপার এই নেতা বলেন, জাপা কিন্তু জামায়াতকে নিষিদ্ধের দাবি জানায়নি। এমনকি আওয়ামী লীগ যখন জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে, জাতীয় পার্টি তার বিরোধিতা করেছিল। তিনি মনে করেন, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দল নিষিদ্ধের দাবি আগামী দিনের রাজনীতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আরও বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে জাতীয় ঐক্য খুবই জরুরি। জাতীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ইতিমধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে দলীয়করণের অভিযোগ উঠেছে। কে বিএনপির লোক, আর কে জামায়াতের লোক, দেখা হচ্ছে। সেভাবেই লোকজন বসানো হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট দেশের রাজনীতিতে বিবর্তন হয়েছে। এখান থেকে রাজনীতিবিদদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অনেকেই এই বিপ্লবকে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলতে চান। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর অনুরোধ, একাত্তরের সঙ্গে কোনো কিছু যাতে তুলনা করা না হয়। যাঁরা বিপ্লব সংঘটিত করেছেন, তাঁরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু গত এক বছরে সারা দেশে চর দখলের মতো হাট–বাজার, টার্মিনাল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, জমি, বাড়ি দখল হয়েছে; যা বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম প্রত্যাশা করেনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, সিনিয়ার কো–চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, কো–চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ প্রমুখ।