ভারত গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে এক নাটকীয় অভিযানে চালানোর পর জানায়, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মোট নয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি ‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যে’র ভিত্তিতে ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘাঁটি চিহ্নিত করে এ হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতীয় সময় গভীর রাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট (গ্রিনিচ সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে ৮টা) পর্যন্ত মাত্র ২৫ মিনিট স্থায়ী হয় এই হামলা। এর ফলে পুরো অঞ্চল কেঁপে ওঠে এবং বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায় স্থানীয় বাসিন্দাদের।

পাকিস্তান দাবি করেছে, মাত্র ছয়টি স্থানে হামলা হয়েছে। ভারতের পাঁচটি যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোনগুলো করে ভূপাতিত করেছে তারা। তবে ভারত এ দাবির সত্যতা স্বীকার করেনি।

ইসলামাবাদ জানায়, নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর ভারতীয় বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণে ৩১ জন নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন। নিয়ন্ত্রণরেখা হলো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা, যেটিকে কার্যত সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, পাকিস্তানের গোলাবর্ষণে তাদের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ১৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার পর এই তীব্র উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে উত্তেজনা এক নতুন বিপজ্জনক উচ্চতায় পৌঁছেছে। ভারতের দাবি, এই হামলার সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও বিদেশি কুশীলবদের সরাসরি সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে।

তবে পাকিস্তান এই দাবি সরাসরি অস্বীকার করেছে। ইসলামাবাদ বলেছে, ভারত এখনো পর্যন্ত তাদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেনি।

এই হামলা কি নতুন সংঘাতের সূচনা

২০১৬ সালে উরিতে ১৯ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছিল।

২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটাই ছিল প্রথম সামরিক অভিযান। এরই ধারাবাহিকতায় পাল্টিপাল্টা হামলা ও যুদ্ধবিমানের লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েছে দুই দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পেহেলগাম হামলার জবাবে পাকিস্তানে এবার যে পাল্টা আঘাত হানা হয়েছে, বিস্তৃত পরিসরের কারণে তা ছিল ব্যতিক্রমী। একসঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠনের অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।

ভারতের দাবি, তারা পাকিস্তান ও পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরজুড়ে নয়টি ‘সন্ত্রাসী’ ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। লস্কর-ই-তৈয়্যেবা, জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে এসব হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে তারা।

ভারতীয় মুখপাত্রের মতে, সীমান্তের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থিত লক্ষ্যবস্তু ছিল শিয়ালকোট সীমান্ত থেকে মাত্র ৬ ও ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দুটি ঘাঁটি।

ভারতের দাবি অনুযায়ী, সবচেয়ে গভীরে আঘাত হানা হয়েছে পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে জইশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান ঘাঁটিতে। জায়গাটি পাকিস্তানের প্রায় ১০০ কিলোমিটার ভেতরে অবস্থিত। এ ছাড়া পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী এবং নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মুজাফফরাবাদে লস্কর-ই-তৈয়্যেবার একটি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক হামলার সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করেন ভারতীয় মুখপাত্র।

তবে এবার ভারত সরাসরি আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হামলা চালিয়েছে। বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈয়্যেইবার স্থাপনা, সদর দপ্তর, ও ঘাঁটি ছিল এ হামলার লক্ষ্য।

পাকিস্তান দাবি করছে, তাদের ভূখণ্ডের ছয়টি স্থানে ভারত হামলা চালিয়েছে। তবে সেখানে সন্ত্রাসী ঘাঁটি থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা।

দিল্লিকেন্দ্রিক ইতিহাসবিদ শ্রীনাথ রাঘবন বিবিসিকে বলেন, এবার হামলায় লক্ষণীয় বিষয় হলো, ভারতের লক্ষ্যগুলো অতীতের ধারা ছাড়িয়ে গেছে। আগে বালাকোটে হামলা শুধু নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরে একটি সীমান্তরক্ষিত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল।

শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, এবার ভারত সরাসরি আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে হামলা চালিয়েছে। ভারতের দাবি অনুযায়ী, বাহাওয়ালপুর ও মুরিদকেতে লস্কর-ই-তৈয়্যেইবার স্থাপনা, সদর দপ্তর ও ঘাঁটি ছিল এ হামলার লক্ষ্য। এ ছাড়া জইশ-ই-মোহাম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদিনের অবকাঠামোতেও আঘাত হেনেছে ভারত।

রাঘবন বলেন, ‘ভারতের এবারকার জবাব আরও বিস্তৃত ও ভৌগোলিকভাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ইঙ্গিত দেয়। একাধিক গোষ্ঠী এখন ভারতের নিশানায় রয়েছে এবং এটি একটি বৃহত্তর বার্তা দিচ্ছে।’

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হলো দুই দেশের সরকারিভাবে স্বীকৃত সীমানা, যা গুজরাট থেকে জম্মু পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভারতে পাকিস্তানের সাবেক হাইকমিশনার অজয় বিসারিয়া বিবিসিকে বলেছেন, ভারত এবার যা করেছে, তাকে ‘বালাকোট প্লাস’ হিসেবে অভিহিত করা যায়। এর লক্ষ্য ছিল পরিচিত সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হেনে ভারতের প্রতিরোধক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তবে একই সঙ্গে উত্তেজনা না বাড়ানোর শক্ত বার্তাও দিয়েছে তারা।

বিসারিয়া আরও বলেন, এবারের এসব হামলা ছিল আরও নিখুঁত, নির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক এবং অধিক দৃশ্যমান। এ কারণে তা পাকিস্তানের পক্ষে অস্বীকার করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ভারতীয় সূত্রগুলো বলছে, এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল ‘প্রতিরোধক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ করা।

অধ্যাপক রাঘবনের মতে, ভারত সরকার মনে করে, ২০১৯ সালে বালাকোট অভিযানের মাধ্যমে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা এখন অনেকটা ক্ষয়প্রাপ্ত এবং তা নতুন করে আবার গড়ে তোলা প্রয়োজন।

ভারতের এমন হামলা অনেকটা ইসরায়েলের কৌশলের মতো উল্লেখ করে রাঘবন বলেন, ‘তারা মনে করে, প্রতিরোধ বজায় রাখতে হলে পর্যায়ক্রমে বারবার হামলা চালাতে হয়। তবে আমরা যদি ধরে নিই যে শুধু পাল্টা হামলা চালালেই সন্ত্রাসবাদ থেমে যাবে, তাহলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যখন পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হবে। আর তখন পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।’

উত্তেজনা কি আরও বড় সংঘাতে রূপ নিতে পারে

অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই এ বিষয়ে একমত যে পাকিস্তানের পাল্টা জবাব অনিবার্য এবং সে ক্ষেত্রে কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

বিসারিয়া বলেন, পাকিস্তান অবশ্যই জবাব দেবে। আসল পরীক্ষা হবে পরবর্তী পর্যায়ের উত্তেজনা কীভাবে সামাল দেওয়া যায়। এখানেই সংকটকালীন কূটনীতির গুরুত্ব প্রমাণিত হবে।

সাবেক এই ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, পাকিস্তানকে সংযম দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হবে। তবে মূল লক্ষ্য হবে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়ার পর এমন কূটনৈতিক পরিবেশ তৈরি করা, যেন দুই দেশ দ্রুত বড় সংঘাতের দিকে চলে না যায়।

লাহোরভিত্তিক রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক ইজাজ হুসেনের মতো পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে মুরিদকে ও বাহাওয়ালপুরের মতো স্থানে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ (নির্বাচিত লক্ষ্যবস্তুতে সামরিক আঘাত) প্রায় প্রত্যাশিতই ছিল।

ড.

হুসেন মনে করেন, পাল্টা হামলার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিবিসিকে এই পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞ বলেন, গণমাধ্যমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বক্তব্য আর প্রতিশোধ নেওয়ার দৃঢ় ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন দিনগুলোতে সীমান্তপারে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে ড. হুসেন আশঙ্কা প্রকাশ করেন, উভয় পক্ষের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক ‘পরিস্থিতিকে সীমিত পর্যায়ের গতানুগতিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’

মঙ্গলবার শ্রীনগরের একটি সড়কে পাহারা দিচ্ছেন ভারতীয় আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ব ক র কর ন ত রণর খ র লক ষ য ক টন ত

এছাড়াও পড়ুন:

জিনিসপত্রের দাম নিয়ে ৭০% মানুষের উদ্বেগ: পিপিআরসির জরিপ

সমাজের নানা আর্থিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক উদ্বেগের কারণে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা হারিয়েছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ। ঘুষ আগের চেয়ে কমলেও হয়রানির শিকার মানুষেরা বলছেন, ৭৪ শতাংশ ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কিছু হয় না।

বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। ‘পরিবার পর্যায়ে মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় সংস্থাটির সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয়। গত মে মাসে দেশের ৮ হাজার ৬৭টি খানার মধ্যে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

জরিপের পারিবারিক মনস্তত্ত্ব অংশের ফলাফল তুলে ধরে বলা হয়, প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ আর্থিক সংকটের মধ্যে আছে। এদের মধ্যে ৬৭ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় এবং ২৭ শতাংশ ঋণ পরিশোধ নিয়ে সংকটে আছেন।

হয়রানি ও ঘুষ

ঘুষের বিষয়ে বলা হয়, সরকারি কার্যালয় ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা কমেছে।

জরিপে এই প্রথম হয়রানির দিকটি তুলে আনা হয়েছে। এতে দেখা যায়, হয়রানির শিকার ৭৪ শতাংশ মানুষ বলছেন, টাকা না দিলে কিছুই হয় না। সরকারি সেবা নিতে হয়রানির শিকার হন ৭১ শতাংশ মানুষ। স্বাস্থ্যসেবায় এই হার প্রায় ৪৯ শতাংশ।

জরিপে মানুষের উদ্বেগের কারণগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এতে দেখা যায়, প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। সন্তানের শিক্ষা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন ৬৫ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া কিশোর অপরাধ এবং মাদক নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৫ এবং ৫৬ শতাংশ মানুষ।

ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা

ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষার বিষয়ে মানুষ ৫৩ শতাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক সম্মানের কথা বলেছেন। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি চান তাঁরা। রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষর বিষয়ে ৫৬ শতাংশ মানুষ দুর্নীতি প্রতিরোধের কথা বলেছেন।

সার্বিকভাবে নানা সংকট ও উদ্বেগের কারণে প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা হারালেও ৫৪ শতাংশ মানুষ এখনো হাল ছেড়ে দিতে নারাজ।

সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, রাষ্ট্রকে কাঠামোগতভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করা হয়েছে। এখানে যারা সংগঠিত তারা সুবিধা নিচ্ছে, কিন্তু জনগণ অসংগঠিত থাকায় তাদের ভাগ পাচ্ছে না। আগে সমাজে অর্থ উপার্জন তৃতীয় প্রধান বিষয় থাকলেও এখন মানুষ যেকোনো উপায়ে অর্থ উপার্জনে প্রাধান্য দিচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া বাংলাদেশের চেয়ে বেশি লড়াকু মনোভাব কারও নেই। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই মনোভাবই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ প্রশ্ন তোলেন, ‘এত বড় বিপ্লবের পর ৪৬ শতাংশ মানুষ কেন ভরসা রাখতে পারছে না।’ তিনি আরও বলেন, নারী ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে ভয় বাড়ছে। সমাজে প্রতিনিয়ত সংঘাতমূলক মনোভাব ছড়াচ্ছে। একদিকে দেশে কর্মসংস্থান নেই, অন্যদিকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগও কমছে। শিক্ষার্থীদের ঠিকভাবে ক্লাসে আনা যায়নি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনো গুমোটভাব আছে।

সমস্যা জিইয়ে রাখা হচ্ছে অভিযোগ করে আলতাফ পারভেজ বলেন, ৭ কলেজ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় করার কার্যক্রম এক বছরেও সমাধান করা যায়নি। এটি নিয়ে অনবরত রাস্তা, অবরোধ হুমকি–ধমকি চলছে। উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষ নিয়ে প্রতিদিনকার বিবাদ টেলিভিশনের মাধ্যমে ভুরুঙ্গামারী পর্যন্ত ছড়িয়ে যাচ্ছে।

জনতুষ্টিবাদী রাজনীতি

বাংলাদেশ জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির উর্বর ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ফেলো আসিফ বিন আলী। তিনি বলেন, তরুণদের বড় অংশ এখন আশাবাদী নয়। জুলাই তরুণদের ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে, এবং সেটা নেপালের মতো সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যেতে পারে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের স্বপ্নকে মানুষের অর্থনৈতিক সুবিধায় পরিণত করার আলাপ নেই। ফলে সমাজে যেকোনো চরমপন্থা জায়গা করে নিতে পারে। সেটা হতে পারে ধর্মীয় চরমপন্থা। দেশ এখন জনতুষ্টিবাদীর জন্য প্রস্তুত, যেখানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা বেশি সমর্থন পাচ্ছে।

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিকসের (দায়রা) গবেষক ভূঁইয়া মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, তরুণদের ক্ষোভ বাড়লেও সেটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করবে না। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অপ্রাতিষ্ঠানিক পরিচালনা পদ্ধতির কারণেই ক্ষোভ বাড়ছে। কেন বারবার অভ্যুত্থান হলেও সংস্কার করা যায়নি, সেটি বড় প্রশ্ন। হয়রানির বিষয়গুলো অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, বরং কাগজে–থাকলেও বাস্তবে সেবা না পাওয়ার কারণে তা হচ্ছে। শহরাঞ্চলে হয়রানির প্রবণতা বেশি। শহরে ভাসমান মানুষ বেশি থাকায় এটা হতে পারে। এটার কারণ আরও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। এই জরিপ প্রতিবছর পরিচালনার আহ্বান জানান তিনি।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের বড় অংশ আশাবাদী নয়, এটা হতাশাজনক। কেন এত দ্রুত মানুষের একটি বড় অংশের আশা চলে গেল, সেটা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।

এই জরিপ প্রতিবছর পরিচালনা করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ