অস্ত্রবিরতিতে রাজি ভারত-পাকিস্তান: ট্রাম্প
Published: 10th, May 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তান অস্ত্রবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে চলা উত্তেজনা ‘পুরো ও তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি’তে সম্মত হয়েছে।
আজ শনিবার সামাজিক মাধ্যম ট্রুথে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা জানান। খবর আল জাজিরার
ট্রুথে আরও লেখেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাতব্যাপী আলোচনা হয়েছে। এরপর আমি আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, ভারত ও পাকিস্তান একটি ‘পূর্ণাঙ্গ এবং তাৎক্ষণিক’ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’
এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তান সবসময় এ অঞ্চলে শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য সংগ্রাম করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা নিয়ে কখনো আপস করিনি।’
গত ২২ এপ্রিল ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন। শুরু থেকে এই হামলার দায় পাকিস্তানের ওপর চাপায় ভারত। তবে পাকিস্তান এই অভিযোগ সব সময় অস্বীকার করে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে। ওই ঘটনার জেরে পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে দেশ দুটি। এমন উত্তেজনার মধ্যে মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে হামলা চালায় ভারত। এর জবাবে শুক্রবার রাত থেকে পাকিস্তান ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’ শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে সংঘাত বন্ধের ঘোষণা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ে মামার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছিল ডিজিএফআই: জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় মামার বাসা থেকে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে তুলে নেওয়া হয়েছিল। হাসনাতের সঙ্গে আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমকেও তাঁর (হাসনাত) মামার বাসা থেকে তুলে নিয়েছিল ডিজিএফআই। আজ মঙ্গলবার জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথা বলেন।
১৭ জুলাই রাত আড়াইটা পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানান হাসনাত আবদুল্লাহ।
গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ২২তম সাক্ষী হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ জবানবন্দি দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ এই জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৭ জুলাই রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় তিনি তাঁর মামার বাসায় যান। হল বন্ধ করায় সমন্বয়ক সারজিস আলমও (এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক) তাঁর মামার বাসায় যান। সেদিন রাতে তাঁর মামার বাসা থেকে তাঁকে ও সারজিসকে উঠিয়ে নিয়ে যায় ডিজিএফআই। তাঁরা যেতে অস্বীকৃতি জানালে পরিবারসহ তাঁদের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়।
জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ১৭ জুলাই রাতে তাঁদের রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় নেওয়া হয়। তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে সেখানে তৎকালীন তিন মন্ত্রী আনিসুল হক, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পদ্মায় ঢোকেন। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের সভা করতে চাপ দেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় নানাবিধ প্রলোভন, ভীতি ও চাপ দিয়ে শুধু সভা করতে বলেন।
অন্য সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের সঙ্গে কথা না বলে তাঁরা কোনো ধরনের বৈঠক করতে অস্বীকৃতি জানান। ডিজিএফআই পীড়াপিড়ি করে তাঁদের বৈঠকে বসাতে ব্যর্থ হলে তিন মন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ভবন পদ্মা থেকে বের হয়ে যান।
বৈঠক না করায় তাঁদের ওপর ডিজিএফআই ক্ষুব্ধ হয় উল্লেখ করে জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ডিজিএফআই তাঁদের বাসায় ফেরত না দিয়ে সেদিন রাতে মৎস্য ভবন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাঝামাঝি জায়গায় সেফ হাউস নামে একটি গোপন স্থানে নেওয়া হয়। তাঁদের যে বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তা বাইরে থেকে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি মনে হলেও ভেতরে ছিল আধুনিক সরঞ্জামে সজ্জিত।
জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, গত বছরের ১৮ জুলাই ভোরে (ফজরের আজানের সময়) ডিজিএফআইয়ের একজন সেনা কর্মকর্তা তাঁকে বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর বিএনপির লাখো জনতার সমাবেশ ১০ মিনিটে নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। তাঁদের আন্দোলনও একইভাবে নষ্ট করতে তাঁর সময় লাগবে না।
জবানবন্দিতে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় তাঁরা অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ডিজিএফআইয়ের সদস্যরা তাঁদের মুঠোফোন ব্যবহার করে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের (সমন্বয়ক) অবস্থা নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাঁর (হাসনাত) ফোন দিয়ে সমন্বয়ক হাসিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মুঠোফোনে তিনি হাসিবের অবস্থান জানতে চান। হাসিব জানান, তিনি চানখাঁরপুল এলাকা আন্দোলনে আছেন। ডিজিএফআই তাঁকে চানখাঁরপুল থেকে তুলে আনে এবং তাঁদের সঙ্গে আটকে রাখে। সেখানে তাঁদের নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। সমন্বয়ক হাসিব মাদ্রাসাছাত্র হওয়ায় এবং খুব সম্ভবত তাঁর বোন মাদ্রাসার ছাত্রী হওয়ায় তাঁকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়। তাঁর (হাসনাত) ফোন দিয়ে হাসিবের অবস্থান নির্ণয় করায় তাঁর মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।
আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ জন আসামি। সাবেক উপাচার্যসহ ২৪ আসামি পলাতক। অন্য ছয় আসামি কারাগারে আছেন। তাঁরা হলেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান, রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক সাবেক কর্মচারী আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।