মিরাজদের বিশ্রামের দিনে প্রাপ্তি জয়াসুরিয়ার সান্ত্বনা
Published: 3rd, July 2025 GMT
গতকালে হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা বাংলাদেশ দল আজ বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেনি। পুরো দিন সবাই বিশ্রামে।
৫ রানে ৭ উইকেট! কীভাবে এ রকম একটা বিপর্যয় ঘটে গেল, তার স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই কারও কাছে। তবে এ রকম ঘটা যে উচিত হয়নি, সে উপলব্ধি বাংলাদেশ দলের সবার। কারও না কারও তো উচিত ছিল, বিপর্যয়ে বাঁধ দেওয়া।
কাল রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হার নিয়ে যত আলোচনা, তার চেয়ে বড় বিস্ময় যেন ওই ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারানো। এ রকম একটা বিপর্যয় না ঘটলে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে যেত, সেটি নিশ্চিত করে বলার উপায় নেই। তবে কখনো কখনো ম্যাচের একটা মুহূর্তও বড় হয়ে উঠতে পারে হার–জিতের চেয়ে। হতবাক করে দেওয়া রাতের বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে না পারা টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য আজ বলছিলেন, ‘এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, এ রকম কিছু হয়েছে। কী ঘটে গেল! আমরা কিন্তু এ রকম দল নই।’
গতকালে হারের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারা বাংলাদেশ দল আজ বৃহস্পতিবার অনুশীলন করেনি। পুরো দিন সবাই বিশ্রামে। বিকেলের দিকে মিটিং হয়েছে, কেউ কেউ জিমে গেছেন। দুপুরের দিকে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন টি–টোয়েন্টি অধিনায়ক লিটন দাস, কোচ ফিল সিমন্স এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের সঙ্গে হোটেলেই বসে ছিলেন টি–টোয়েন্টি দল নিয়ে আলোচনায়।
সংবাদ মাধ্যমের সামনেও আজ বাংলাদেশ দলের কেউ আসেননি। তবে মেহেদী হাসান মিরাজের দলের ব্যাটিং–বিপর্যয় নিয়ে কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কার কোচ ও সাবেক অধিনায়ক সনাৎ জয়াসুরিয়া। আজ বিকেলে টিম হোটেলে বসে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ওপরই ছাতা ধরেছেন, ‘আপনি তো প্রতিদিন এ রকম পরিস্থিতিতে পড়বেন না। এটা একদিন হতেই পারে। তাই বলে মানুষ যেন খেলোয়াড়দের অকারণে চাপে ফেলে না দেয়। এ রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরাও গিয়েছি, আমি গিয়েছি।’
টিম হোটেলে শ্রীলঙ্কা কোচ সনাৎ জয়াসুরিয়া।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরাবাস্তবতার আবেদন কি ফুরিয়েছে
অবচেতনের মানচিত্র ধরে এক অন্তহীন অভিযাত্রা কবি–সাহিত্যিকেরা যুগ যুগ ধরে করে আসছেন। সাহিত্যের দীর্ঘ যাত্রাপথে এমন কিছু বাঁক আসে, যা তার গতিপথকে চিরতরে বদলে দেয়। পরাবাস্তবতা বা সুররিয়ালিজম ছিল এমনই এক যুগান্তকারী আন্দোলন, যা কেবল শিল্পের আঙ্গিক নয়; বরং শিল্পীর বিশ্ববীক্ষা এবং আত্মবীক্ষণকে সম্পূর্ণ নতুন এক দর্শন দান করেছিল। এটি ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ। এর মূল লক্ষ্য ছিল মানব মনের সেই গভীরে প্রবেশ করা, যেখানে যুক্তির আলো পৌঁছায় না; সেই অবচেতনের অন্ধকার মহাসাগর থেকে তুলে আনা বিস্মৃত স্বপ্ন, অবদমিত ইচ্ছা আর আদিম প্রবৃত্তির মণি–মুক্তা। পরাবাস্তবতা তাই কেবল একটি শিল্পরীতি নয়, এটি চেতনার শৃঙ্খলমুক্তির এক দুঃসাহসী ইশতেহার।
১৯২৪ সালে ফরাসি কবি ও লেখক আঁদ্রে ব্রেটন তাঁর ‘পরাবাস্তবতার প্রথম ইশতেহার’ (ম্যানিফেস্টো অব সুররিয়ালিজম) প্রকাশের মাধ্যমে এই আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। ব্রেটনের সংজ্ঞায়, পরাবাস্তবতা হলো, ‘বিশুদ্ধ মানসিক স্বয়ংক্রিয়তা, যার মাধ্যমে মুখ বা লেখনী দিয়ে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে চিন্তার আসল কার্যকারিতাকে প্রকাশ করার ইচ্ছা পোষণ করা হয়। এটি যুক্তির সমস্ত নিয়ন্ত্রণ থেকে এবং সকল প্রকার নান্দনিক ও নৈতিক উদ্দেশ্য থেকে বিযুক্ত চিন্তার এক শ্রুতলিখন।’
এই দর্শনের প্রধান পাথেয় ছিল ভিয়েনার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের যুগান্তকারী মনঃসমীক্ষণ তত্ত্ব। ফ্রয়েড দেখিয়েছিলেন যে মানুষের সচেতন মনের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক বিশাল অবচেতন জগৎ, যা তার আচরণ, স্বপ্ন ও ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। পরাবাস্তববাদীরা ফ্রয়েডের এই তত্ত্বকে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁদের কাছে শিল্পসৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তির সেন্সরশিপকে ফাঁকি দিয়ে অবচেতন মনের এই লুকানো জগৎকে উন্মোচিত করা। তাঁরা চেয়েছিলেন, স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে একীভূত করে এক ‘পরম বাস্তবতা’ বা ‘সুররিয়ালিটি’ তৈরি করতে।
পরাবাস্তবতা ছিল বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের এক ক্ষতবিক্ষত সময়ের সন্তান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ, ভিক্টোরীয় যুগের শুষ্ক নৈতিকতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জগতের অতিনিয়ন্ত্রিত যুক্তিবাদ—এই সবকিছুর বিরুদ্ধে পরাবাস্তবতা ছিল এক শৈল্পিক ও দার্শনিক বিদ্রোহ।পরাবাস্তবতার পদযাত্রা প্যারিসের শৈল্পিক পরিমণ্ডল থেকে শুরু হলেও এর ঢেউ খুব দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। আঁদ্রে ব্রেটন ছিলেন এই আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা, কিন্তু তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় সমবেত হয়েছিলেন বহু প্রতিভাবান স্রষ্টা, যাঁরা নিজ নিজ ভাষায় ও সংস্কৃতিতে পরাবাস্তবতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
আঁদ্রে ব্রেটন (জন্ম: ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৬—মৃত্যু: ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৬৬)