মাকে নিয়ে ফেসবুকে তারেক রহমানের পোস্ট
Published: 11th, May 2025 GMT
‘মা দিবসে’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব মাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে দেওয়া পোস্টে এই শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।
ওই পোস্টে তারেক রহমান তাঁর মা খালেদা জিয়ার কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আজকের এই দিনে নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা ‘গণন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।’
তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্টটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘আজকের এই দিনে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মা’কে। আমি কামনা করি তাদের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
মা দিবস একটি সম্মান প্রদর্শনজনক আন্তর্জাতিক দিবস, এই দিবস সমাজ ও পরিবারে মায়ের গুরুত্ব ও অবদানের জন্য উদযাপন করা হয়। এই দিবসে বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়। মায়ের জন্য প্রতিদিনই সন্তানের ভালবাসা থাকে, তবু স্বতন্ত্রভাবে ভালবাসা জানাতেই আজকের এই দিন। পরিবারে মা হচ্ছেন এক বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। মহিয়সী মায়ের শিক্ষাতেই শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মিত হয়। মা দিনের সব অবসাদ, ক্লান্তি ঘুচিয়ে সব সংগ্রামের মাঝেও সন্তানকে আগলে রাখেন। সুমাতার সহচার্যে সন্তানের উৎকর্ষতা ও প্রকৃত মানব-সত্ত্বার জাগরণ ঘটে, সন্তানের আত্মাকে করে নির্মল, স্বচ্ছ ও পবিত্র। বহু দেশ ও সংস্কৃতি মা দিবসের কর্মসূচি গ্রহণ করে এক অসাধারণ মাত্রা দিয়েছে। মাতৃত্বের প্রতি উৎসর্গীত এক অনন্য দিবস-মা দিবস। পৃথিবীর মধুরতম ডাক ‘মা’। ছোট এই শব্দের অতলে লুকানো থাকে গভীর স্নেহ, মমতা, আর পৃথিবীর সবচেয়ে অকৃত্রিম ভালবাসা।
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক বিকাশ এবং অগ্রসর সমাজ বিনির্মাণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন কেটেছে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম, ত্যাগ, নিরলস পরিশ্রম, জনগণের প্রতি মমতা ও অকৃত্রিম ভালবাসায়। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় নারী শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। বিএনপি’র শাসনামলে স্কুল থেকে ছাত্রীরা যাতে ঝরে না পড়ে তার জন্য দেশনেত্রী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। আজকের এই দিনে নারী শিক্ষার আলোকবর্তিকা ‘গণন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।
শৈশব থেকে আনন্দ-বেদনা-ভয় কিংবা উদ্দীপনার প্রতিটি মানবিক অনুভুতিতে জড়িয়ে থাকে মায়ের নাম। আজকের দিনে আমার প্রত্যাশা-সকল মা যেন তার সন্তানদের যোগ্য ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হন। সন্তানকে নির্ভূল ও সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে কেবলমাত্র সুমাতা, যাতে জাতির আগামী ভবিষ্যত উজ্জল থেকে উজ্জলতর হয়।
আল্লাহ হাফেজ। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে প্রয়োজনের চেয়ে ৮২ শতাংশ নার্স কম
জনসংখ্যার বিবেচনায় দেশে এখন ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স থাকা দরকার। আছে ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। যা প্রয়োজনের চেয়ে প্রায় ৮২ শতাংশ কম। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এ তথ্য এসেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের চিকিৎসাসেবার মান অসন্তোষজনক হওয়ার অন্যতম একটি কারণ নার্স–সংকট।
এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালিত হচ্ছে। এ বছরের নার্স দিবসে নার্সদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, নার্সরা সুরক্ষিত থাকলে, তাঁদের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন ৫ মে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে জনবল সমস্যা ব্যাখ্যা করার সময় নার্স–সংকটের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন হাসপাতালে নার্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর্মীর শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দিতে হবে।
রোগগ্রস্ততা ও মৃত্যুহার কমানো, হাসপাতালে রোগীর সন্তুষ্টি, আবার হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া বা রোগের ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে নার্সদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু বাংলাদেশে সম্মানজনক পেশা হিসেবে নার্সিংকে এখনো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়নি। পাশাপাশি নার্সিং শিক্ষার ক্ষেত্রেও দেশ পিছিয়ে আছে।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিনের (নিপসম) শিক্ষার্থী মল্লিকা বানু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একমাত্র কাজ ওষুধ খাওয়ানো ও ইনজেকশন দেওয়া।মৌলিক নার্সিং সেবার তালিকা বেশ লম্বা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে রোগী সন্তুষ্ট হয় না। অন্যদিকে আমরাও বার্ন আউট (অতিরিক্ত কাজের চাপে ক্লান্ত) হয়ে যাই। সেবার মান কমে যায়। এটাই হচ্ছে।’
আমার হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না।মল্লিকা বানু, সিনিয়র স্টাফ নার্স, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটসংখ্যা কম, চাপ বেশিবিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১: ৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করবেন তিনজন নার্স। এবং তাঁদের সঙ্গে থাকবেন আরও পাঁচজন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী। এই অনুপাত ঠিক থাকলে চিকিৎসাসেবা সর্বাঙ্গীণ সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
বাংলাদেশে এই অনুপাত ঠিক নেই। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে ১ লাখ ৩ হাজার ৫০০ জন চিকিৎসক, ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স এবং ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ জন সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই জনবল কম আছে। ২০২১ সালের হিসাব তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিকিৎসক ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন (প্রয়োজনের ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কম), নার্স ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন (৮২ শতাংশ কম) এবং সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী ২ লাখ ৩০ হাজার ২১৯ জন (সাড়ে ৫৫ শতাংশ কম)। শতাংশের হিসাবে নার্সই সবচেয়ে কম। এবং চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত ১: শূন্য দশমিক ৭।
একজন নার্স নেতা প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নার্সের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে। কারণ, কমিশন পুরোনো পরিসংখ্যান ব্যবহার করেছে। দেশে সরকারি ও বেসরকারি খাতে প্রায় ৯০ হাজার নার্স কাজ করছেন। তবে এই সংখ্যাও প্রয়োজনের চেয়ে কম।
দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রয়োজনের চেয়ে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ কম, নার্স ৮২ শতাংশ কম এবং সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী সাড়ে ৫৫ শতাংশ কম বলে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।একাধিক নার্স প্রথম আলোকে বলেছেন, হাসপাতালের সেবা একটি দলবদ্ধ কাজ। প্রত্যেকের কাজই নির্দিষ্ট। জনবল স্বল্পতার কারণে অন্যের কাজও নিজের ঘাড়ে নিতে হয়। অন্যদিকে হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে একাধিক আত্মীয়স্বজন থাকেন। তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই নার্সদের কথা বলতে হয়। অকারণে সময় নষ্ট ও শক্তি ক্ষয় হয়।
কেন এই পরিস্থিতিযুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থার ‘সেজ’-এর ‘পলিসি, পলিটিকস অ্যান্ড নার্সিং প্র্যাকটিস’ সাময়িকীতে ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রবন্ধে নার্সিং পেশা পিছিয়ে বা অবহেলায় থাকার কিছু কারণ তুলে ধরা হয়েছে।
প্রবন্ধে বলা হয়, সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অসম্মান থেকে এই পেশার প্রতি একধরনের অশ্রদ্ধা লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবে নার্সিং পেশাকে নিম্নমানের কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের এই পেশায় আসতে দেখা গেছে। এমনকি এই পেশাকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে দেখার প্রবণতাও আছে। অনেকে মনে করেন, নোংরা শরীর স্পর্শ করা ভালো মানুষের কাজ না। আবার কেউ কেউ মনে করেন, মেয়েদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করা বা অন্য লিঙ্গের মানুষের শরীর স্পর্শ করা ঠিক না। এসব কারণে এই পেশা সমাজে সম্মান অর্জনে বাধা পেয়েছে।
নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, তাঁদের বেতন বাড়ানো, তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় বসানো—এগুলো সব সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত, অসন্তুষ্ট নার্সের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা ঠিক না।ইসমত আরা পারভীন, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনঅন্যদিকে হাসপাতালে বা ক্লিনিকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নার্সরা যুক্ত থাকেন না। প্রাধান্য থাকে চিকিৎসকদের। নার্সিং শিক্ষার চাহিদা কম থাকায় বেসরকারি উদ্যোক্তারা নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বিশেষ উৎসাহ পান না।
ওই প্রবন্ধে আরও বলা হয়, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিচে (ব্যতিক্রম ইউনিয়ন উপকেন্দ্র) নার্সদের জন্য কোনো পদ নেই, এবং পদায়নের কোনো ব্যবস্থাও নেই। নার্সদের চেয়ে কম ক্লিনিক্যাল প্রশিক্ষণ ও একাডেমিক যোগ্যতা থাকার পরও সাব–অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সাকমো) রোগীর চিকিৎসা দিতে পারেন এবং ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লিখতে পারেন; কিন্তু নার্সরা তা পারেন না।
গবেষকেরা কয়েকজন পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া নার্সের সন্ধান পেয়েছেন। তবে তাঁরা দেখেছেন, ডিগ্রি নেওয়ার আগে ও পরে তাঁদের পদ ও বেতন একই আছে। এর কারণ হচ্ছে এই যে, সরকার নার্সদের উচ্চশিক্ষার বিষয়টিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা রাখেনি।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইসমত আরা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, তাঁদের বেতন বাড়ানো, তাঁদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় বসানো—এগুলো সব সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত, অসন্তুষ্ট নার্সের কাছ থেকে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা ঠিক না।’