শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই বিদেশে ব্যবসা করতে পারবে
Published: 11th, May 2025 GMT
কোন ব্যাংকগুলো দেশের বাইরে অফিস বা শাখা খুলতে পারবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে শুধু ভালো ব্যাংকগুলোই বিদেশে ব্যবসা করতে পারবে। যদিও দুর্বল হয়ে পড়া অনেক ব্যাংকের বিদেশে শাখা কার্যক্রম রয়েছে। বিদেশে দেশীয় ব্যাংকগুলোর ব্যবসা করা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা দিয়েছে। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের প্রসার ঘটেছে। এ জন্য লেনদেন সুষ্ঠু ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার জন্য দেশের কোনো কোনো ব্যাংক ২০০১ সাল থেকে বিদেশে শাখা, ফাইন্যান্স কোম্পানি, এক্সচেঞ্জ হাউস, প্রতিনিধি অফিস ইত্যাদি স্থাপন করে বিদেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দেশের গ্রাহকদের আমানত সংগ্রহ, ঋণ বিতরণ ও অন্যান্য ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত লেনদেন সম্পন্ন করে থাকে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বিদেশে তাদের বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানি স্থাপনের মাধ্যমে বৈদেশিক বাণিজ্যের নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, দুই দশকে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় ব্যাংকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবসায়ের ধরন ও পরিধি বেড়েছে। বিশ্বায়ন ও মুক্তবাজার অর্থনীতির বাস্তবতায় ব্যাংক খাতে অবকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন পণ্য ও সেবার প্রচলন ঘটেছে। তবে বৈশ্বিক নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ওভারসিস ব্যাংকিং–সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটানোর পাশাপাশি আত্তীকরণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার রূপরেখা ও এ–সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়নের বিষয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার অবকাশ রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিদেশে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম আদর্শরূপে পরিচালনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য নীতিমালায় পরিবর্তন, সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্ধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিদেশে সেবা দিতে হলে ব্যাংকের কমপক্ষে সাত বছর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন রেটিংয়ে শক্তিশালী বা সন্তোষজনক মান থাকা প্রয়োজন। ওই ব্যাংককে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে এবং ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার হতে হবে। যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, সেগুলোতেই কেবল ব্যাংক-কোম্পানির শাখা, প্রতিনিধি অফিস ও সহযোগী কোম্পানি স্থাপন করা যাবে।
শর্তে হিসেবে বলা হয়েছে, বিদেশে কার্যক্রম পরিচালনায় বাংলাদেশি নাগরিক নিয়োগ দিতে হবে। তাঁদের অর্জিত অর্থ দেশে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের নীতিমালা বাংলাদেশের জন্য অনুকূল হতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেখানকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা মনিটরি অথরিটি তথা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকতে হবে। কোনো দেশে বা কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ইতিমধ্যে অন্য কোনো বাংলাদেশি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা কোনো সহযোগী কোম্পানি বিদ্যমান থাকলে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদনে নতুন শাখা স্থাপনের যৌক্তিকতা উপযুক্ত তথ্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বিদেশে প্রস্তাবিত শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা সহযোগী কোম্পানিতে প্রয়োজনীয় লোকবলের সর্বোচ্চসংখ্যক নিয়োগ বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্য থেকে হতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এক্সচেঞ্জ হাউস স্থাপনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় প্রেরণকারী বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা ও তাঁদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ এবং সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আর্থিক লেনদেনের মোট পরিমাণ বিবেচনায় আনতে হবে। বিদেশে শাখা, প্রতিনিধি অফিস বা সহযোগী কোম্পানি স্থাপনের প্রস্তাব আবেদনকারী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। ব্যাংকের বিদেশে শাখা বা সহযোগী কোম্পানি থেকে অর্জিত নিট মুনাফা প্রতি আর্থিক ও পঞ্জিকা বছর শেষে দেশে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রস্তাবিত শাখা বা সহযোগী কোম্পানির দৈনন্দিন পরিচালন ব্যয় এবং নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বেতন–ভাতা শাখা বা সহযোগী কোম্পানির অর্জিত আয় থেকে নির্বাহ করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য আর থ ক অফ স ব ব যবস সহয গ
এছাড়াও পড়ুন:
বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু
বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যখাতে দীর্ঘদিনের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য পুরস্কৃত করেছে দেশের শীর্ষ কৃষি উদ্যোক্তা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে।
প্রতিষ্ঠানটি গত মঙ্গলবার রাতে এক ঘোষণায় ২৭ দেশের ৩৯ জনকে ‘টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার’ হিসেবে মনোনীত করে। সেই তালিকায় রয়েছেন লাল তীর সীডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুল আউয়াল মিন্টু।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বীজ, সবজি ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় কাজ করছেন মিন্টু। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি ‘লাল তীর সীডস লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শীর্ষ বেসরকারি কৃষি প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম। বর্তমানে এটি জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণে আঞ্চলিকভাবে সপ্তম স্থানে রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন (আইএসটিএ স্বীকৃত) বীজ পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন, যা দেশে একমাত্র। মিন্টুর উদ্যোগে দেশে হাইব্রিড ও উন্নত বীজের ব্যবহার জনপ্রিয় হয় এবং সবজি উৎপাদনে বিপুল সাফল্য আসে।
উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার পাশাপাশি কৃষি অর্থনীতি, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও প্রাণিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় উচ্চতর ডিগ্রি ও গবেষণার মাধ্যমে দেশের কৃষি উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তার গবেষণার মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন হয়। পাশাপাশি উন্নত জাতের গরু মোটাতাজাকরণে সীমেন প্রযুক্তির প্রচলনও তারই হাত ধরে শুরু হয়।
পুরস্কার প্রসঙ্গে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি সবসময় কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার চেষ্টা করেছি। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় প্রযুক্তি ও গবেষণার মাধ্যমে অবদান রাখতে চাই। এই সম্মান আমাকে ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে।’
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলতি বছর ৩৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী ২১–২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া অঙ্গরাজ্যের ডেস মইনসে আয়োজিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাতিক সংলাপে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, ‘বিশ্ব এখন খাদ্য, পুষ্টি ও জলবায়ুভিত্তিক সংকটের সম্মুখীন। এই ৩৯ জন সম্মানিত ব্যক্তি সাহসী পরিবর্তনকারী, যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখছেন।’
এ বছর মনোনীতদের মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা ও মানবতাবাদীরা। যারা বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।