দেশের চার জেলায় রোববার বজ্রপাতে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৃথক স্থানে বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন পাঁচজন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জে কলেজছাত্রসহ তিনজন এবং নওগাঁ ও হবিগঞ্জে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃতরা হলেন– জাকিয়া আক্তার (৮), শামসুল হুদা (৬৫), আব্দুর রাজ্জাক (৪০), সেলিম মিয়া (৬০) ও জমির খান (২২)। তাদের মধ্যে তিনজন নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা। জানা গেছে, বিকেলে ধানক্ষেত দেখতে গিয়ে গোকর্ণ গ্রামের শামসুল হুদা, টেকানগর এলাকায় ধান কাটতে গিয়ে সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামের রাজ্জাক মিয়া এবং ফুপুর বাড়িতে খেলার সময় চাতলপাড় ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের শিশু জাকিয়া প্রাণ হারায়। এ সময় ভলাকুট ইউনিয়নের হামিদা বেগম (৪৫) নামে এক নারী ধান শুকাতে গিয়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন। তাঁর কণ্ঠনালি পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হামিদা বেগম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নাসিরনগরের ইউএনও শাহিনা নাসরিন বলেন, বজ্রপাতে এক দিনে উপজেলায় তিনজনের মৃত্যুর ঘটনা দুঃখজনক। এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণকে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

নাসিরনগর থানার ওসি খায়রুল আলম জানান, মৃতদের পরিবারের অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে আখাউড়ায় বজ্রপাতে দু’জন মারা গেছেন। তারা হলেন ধরখার ইউনিয়নের রুটি গ্রামের সেলিম মিয়া ও বনগজ এলাকার জমির খান। বিকেলে নিজ জমিতে ধান কাটার পর খড় শুকিয়ে গুছিয়ে রাখার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সেলিম। এদিন দুপুরে বনগজ এলাকায় মাঠে গরু চরানোর সময় বজ্রপাতে জমির খানের মৃত্যু হয়।

কিশোরগঞ্জে প্রাণ গেল তিনজনের
কিশোরগঞ্জে পৃথক স্থানে রোববার বজ্রপাতে তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে ভৈরবে দু’জন ও কুলিয়ারচর উপজেলায় একজন প্রাণ হারান। মৃত ব্যক্তিরা হলেন ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার আফসার উদ্দিন মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া (৬০), শ্রীনগরের ইউনুছ মিয়ার ছেলে ফয়সাল মিয়া তৌহিদ (২৮) ও কুলিয়ারচরের হাজারীনগর এলাকার সফিক ইসলাম সফু মিয়ার ছেলে কলেজছাত্র কবির মিয়া (২৫)।

ফারুক মিয়ার ভাতিজা খোকন মিয়া বলেন, রোববার বাড়ির পশ্চিম পাশে জমিতে কাজ করছিলেন তাঁর চাচা। আকাশ মেঘলা দেখে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাড়িতে আসার আগে তিনি বজ্রপাতে আহত হন। স্থানীয়রা তাঁকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

মৃত ফয়সালের স্বজন জানান, বাড়ির পাশের জমিতে বিকেলে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আহত হন তিনি। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

কবির মিয়ার ফুপাতো ভাই ডা.

এমাদ সরকার বলেন, আমার ভাই বাড়ির পাশে মাঠ থেকে ধানের খড় আনতে গিয়েছিল। হঠাৎ বিকেল সাড়ে ৩টায় বজ্রপাতে সে আহত হয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। কবির এ বছর ভৈরব সরকারি হাজী আসমত কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

এদিকে নওগাঁর মান্দা উপজেলায় মাঠে শুকানো ধান জড়ো করার সময় বজ্রপাতে জিল্লুর রহমান (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে কুসুম্বা দিয়াড়াপাড়া গ্রামে এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরেক কৃষক। তাঁর নাম শফিকুল ইসলাম। দু’জনই কুসুম্বা দিয়াড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় বাড়ির পাশে জমিতে পানি দেওয়ার নালায় গোসলের সময় বজ্রপাতে সাজু মিয়া (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে কাকাইলছেও ইউনিয়নের ডেমিকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সাজু ওই গ্রামের তজম আলী মিয়ার ছেলে। 
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও সংবাদদাতা)

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল য় চ ক ৎসক ত নজন

এছাড়াও পড়ুন:

ভাঙা সড়ক মেরামতে ৫০০ কোটি টাকা চান চসিক মেয়র

এক বর্ষায় চট্টগ্রাম নগরে ভেঙেছে ৩৮৮ সড়ক। আবার অরক্ষিত নালা-নর্দমা ও খালে পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এখন এসব ভাঙা সড়ক সংস্কার ও নিরাপত্তাবেষ্টনী দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র শাহাদাত হোসেন।

সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকটের কারণে এ অর্থ বরাদ্দ দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে গত মঙ্গলবার চিঠি দেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। তবে আর্থিক বরাদ্দ চাইলেও তা পাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কেননা এর আগে সিটি করপোরেশনের জলাবদ্ধতা নিরসন, বর্জ্য অপসারণে যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্প অনুমোদনসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ চাইলেও তা মেলেনি বলে খোদ মেয়রই অভিযোগ করেছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরে পাঁচ বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি রাস্তাঘাট ভেঙে বেহাল হয়েছে। ৩৮৮টি সড়কের ১৪২ কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর ভেঙেছিল ১০০ কিলোমিটার। ২০২৩ সালে ৫০ কিলোমিটার, ২০২২ সালে ১০০ কিলোমিটার ও ২০২১ সালে ৩৬ কিলোমিটার সড়ক নষ্ট হয়েছিল।

গত ছয় বছরে অরক্ষিত খাল ও নালায় পড়ে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২৫ সালে দুজন, ২০২৪ সালে তিনজন, ২০২৩ সালে তিনজন, ২০২১ সালে পাঁচজন ও ২০২০ সালে দুজনের প্রাণহানি হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ জুলাই হালিশহরের আনন্দপুর এলাকায় তিন বছর বয়সী হুমায়রার মৃত্যু হয় মায়ের কর্মস্থলের পাশের নালায় পড়ে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল নগরের কাপাসগোলায় হিজড়া খালে রিকশা উল্টে পড়ে গেলে মায়ের কোল থেকে পড়ে মৃত্যু হয় ছয় মাসের শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরীশের।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের ভাঙা সড়ক, নালার ঝুঁকিপূর্ণ স্ল্যাব এবং অরক্ষিত নালা ও খালের তালিকা করেছে। তালিকা অনুযায়ী ১৪২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে প্রয়োজন হবে ৪২৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ১৮ হাজার ৬৬৩ বর্গমিটার স্ল্যাব ঠিক করতে লাগবে ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। অরক্ষিত নালা ও খালে নিরাপত্তাবেষ্টনী দিতে হবে ২১ কিলোমিটার। এতে খরচ হবে ২১ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

সড়কে সৃষ্ট বড় গর্তে জমে আছে পানি। গাড়ি চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন চালকেরা। গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ