Samakal:
2025-10-03@05:36:34 GMT

কমছে আবাদি জমি, শঙ্কা কৃষিতে

Published: 11th, May 2025 GMT

কমছে আবাদি জমি, শঙ্কা কৃষিতে

মন্নাফ মিয়া ও কালন মিয়া দুই ভাই। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার কালিকুণ্ডা গ্রামে। মন্নাফ পেশায় কৃষক, কালন অটোরিকশাচালক। সম্প্রতি তারা বাড়ি নির্মাণের জন্য এক বিঘা আবাদি জমি ভরাট করেছেন। তারা জানিয়েছেন, দুই শতকের ভিটায় নির্মিত বাবার ঘরেই দুই ভাই এতদিন ধরে থাকছেন। এখন দু’জনেরই আলাদা সংসার হয়েছে। যে কারণে একটি মাত্র ঘরে দুই পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই তারা সড়কের পাশে এক বিঘার মতো আবাদি জমি ভরাট করেছেন। সেখানেই দুই ভাইয়ের বাড়ি নির্মিত হবে। 
ঐতিহ্যগতভাবে ধান-পাটসহ মৌসুমি ফসল উৎপাদনের পরিচিতি রয়েছে নাসিরনগরের। গুরুত্বপূর্ণ এই কৃষিপ্রধান অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে আবাদি জমি কমতে শুরু করেছে, যা ঝুঁকিতে ফেলেছে খাদ্য নিরাপত্তাকে। মন্নাফ-কালনের মতো বহু মানুষ অপরিকল্পিতভাবে কৃষিজমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করছেন। অনেকে করছেন পুকুর ভরাট। এতে কৃষকের জীবিকা নির্বাহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সরকারি হিসাবেই গত পাঁচ বছরে উপজেলায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমেছে। উপজেলাবাসীর দাবি, কৃষিজমি হ্রাসের প্রকৃত পরিমাণ এর কয়েক গুণ।
কৃষিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ভাষ্য, গত ৫ থেকে ১০ বছরে নাসিরনগরে ৫ হাজার হেক্টরের বেশি আবাদি জমি ভরাট হয়েছে। তারা কৃষিজমি কমার কারণ হিসেবে কিছু বিষয়ে আলোকপাত করেন। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদনের পর ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, জলবাযু পরিবর্তন, নদীভাঙন, যত্রতত্র ইটভাটা, সরকারি বিভিন্ন আশ্রয়ণ ও গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প, আবাসন সংকট ও বাণিজ্যিক পুকুর খনন। তারা বলছেন, কৃষিজমি রক্ষায় আইন ও সরকারি বিধিবিধান রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তায় এসব জমি ভরাট থামছে না।
কৃষিজমি যারা ভরাট করছেন, তাদের প্রায় সবার আলাপেই উঠে এসেছে পরিবারের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি। কুন্ডা এলাকার শরাফত আলী ও তাঁর চার ভাই যৌথ পরিবারে থাকেন। সবাই বিয়ে থা করে আলাদা সংসার পেতেছেন। শরাফত বলেন, পরিবার নিয়ে এক বাড়িতে থাকতে পারছেন না। তাই রাস্তার পাশে ভাইয়েরা মিলে দুই বিঘা জমি কিনেছেন। সেই জমি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করবেন তারা। 
উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ধান ও মৌসুমি শস্য বেশি উৎপাদন হয় বুড়িশ্বর ও গোকর্ণ ইউনিয়নে। অথচ এ দুটি ইউনিয়নের সড়কের পাশের প্রায় ৯০ শতাংশ আবাদি জমিই ভরাটের পর বসতবাড়ি নির্মিত হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আবাদি জমি কেটে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের জন্য পুকুর তৈরি করা হয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, দুটি ইউনিয়নেই প্রায় এক হাজার হেক্টর আবাদি জমি পাঁচ বছরে কমেছে।
সম্প্রতি উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক এলাকায় খননযন্ত্র দিয়ে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব চলছে। ৩০ জনের মতো স্থানীয় দালাল এসব ভরাটে জড়িত। এর মধ্যে উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নে ১৫টি, চাপড়তলায় ১০টি, ধরমণ্ডলে ৬টি, বুড়িশ্বরে ৫টি, নাসিরনগর সদর ইউনিয়নে ৫টি, গোকর্ণে ৬টি, কুন্ডায় ৫টি ও গোয়ালনগর ইউনিয়নের ৬টি স্থানে খননযন্ত্র দিয়ে আবাদি জমি ভরাট করতে দেখা যায়। স্থানীয় কৃষকরা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে দালালরা জমি ভরাট করছে। একাধিকবার অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। 
সদর ইউনিয়নের কলেজ মোড় এলাকায় ফসলি জমি ও খাল দিবালোকে ভরাট হচ্ছে জানিয়ে জয়কুমার নামের এক ব্যক্তি বলেন, ভূমি অফিসে একাধিকবার বলার পরও ভরাটের কাজ থেমে 
নেই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের আন্তরিকতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিলো ২৬ হাজার ২৫০ হেক্টর। ২০২৫ সালে এই পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৩২৬ হেক্টরে। ৫-৬ বছরে এ উপজেলায় আবাদযোগ্য জমি কমেছে ২ হাজার ৯২৪ হেক্টর।
ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সদর ইউনিয়নে ছিল ২ হাজার ৪৪৯ হেক্টর জমি, বর্তমানে আছে ২ হাজার ২০৩ হেক্টর; কমেছে ২৪৬ হেক্টর। ভলাকুটে ছিল ২ হাজার ৬২৭ হেক্টর, আছে ২ হাজার ৩৫৪ হেক্টর; কমেছে ২৭৩ হেক্টর। চাতলপাড়ে ছিল ২ হাজার ৮ হেক্টর, আছে ১ হাজার ৭৬৭ হেক্টর; কমেছে ২৪১ হেক্টর। গোয়ালনগরে ছিল ২ হাজার ১২৭ হেক্টর, আছে ১৯৬০ হেক্টর; কমেছে ১৬৭। কুন্ডায় ছিল ২ হাজার ৪৮৯ হেক্টর, আছে ২৩৩৯ হেক্টর; কমেছে ২৫০ হেক্টর। বুড়িশ্বরে ছিল ২ হাজার ৮৪৬ হেক্টর, আছে ২৫৬০ হেক্টর; কমেছে ২৮৬ হেক্টর। চাপড়তলায় ছিল ১ হাজার ৮২ হেক্টর, আছে ৯৭৪ হেক্টর; কমেছে ১০৮ হেক্টর। ফান্দাউকে ছিল ১ হাজার ৪৮৭ হেক্টর, আছে ১ হাজার ৩৩৮ হেক্টর; কমেছে ১৪৯ হেক্টর। ধরমণ্ডলে ছিল ১ হাজার ৪৬৯ হেক্টর, আছে ১ হাজার ৩২৩ হেক্টর; কমেছে ১৪৬ হেক্টর। পূর্বভাগে ছিল ১ হাজার ৪১৮ হেক্টর, আছে ১ হাজার ২৭৪ হেক্টর;  কমেছে ১৪৪ হেক্টর। হরিপুরে ছিল ১ হাজার ৫১৯ হেক্টর, আছে ১ হাজার ৩৬৬ হেক্টর; কমেছে ১৫৩ হেক্টর। গুনিয়াউকে ছিল ১ হাজার ৫৩৮ হেক্টর, আছে ৯১৩ হেক্টর; কমেছে ৬২৫ হেক্টর। এ ছাড়া গোকর্ণ ইউনিয়নে ৩ হাজার ২৯১ হেক্টর কৃষিজমি ছিল। ৩৩৬ হেক্টর কমে বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৫৫ হেক্টরে। 
নাসিরনগর সদরের মতিউর রহমান ভূঁইয়া উত্তরাধিকার সূত্রে কৃষক। তাঁর বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখার উপায় নেই বলে জানালেন। মতিউর বলেন, ‘নিজের জমিও নাই অন্যের জমিও দিন দিন কমতাছে। তাই বাপ-দাদার পেশা বাদ দিয়া শহরে যাইতে হইতাছে।’
একই এলাকার লোকমান হোসেন নামের এক যুবক বলেন, এক সময় জমিতে ধান আবাদ করে তাদের সংসার চলত। সাম্প্রতিক সময়ে ধানের ন্যায্যমূল্য বাজারে মিলছে না। যে কারণে তাদের সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে জমি ভরাট করে উচ্চ দামে বিক্রি করে দিয়েছেন।
মেঘনা নদীর তীরে জমি ও বসতভিটা চাতলপাড়ের কৃষক আমান মিয়ার। তাদের এখানে জমি কমছে ভিন্ন কারণে। প্রতি বছর এই এলাকায় শতবিঘা জমি ও ঘরবাড়ি মেঘনায় বিলীন হয়। আমান বলেন, ‘নদীভাঙনে যে পরিমাণ জমি হারাইছি, তা ফিরে পাওয়ার না। আমাদের একটি বাঁধ নির্মাণ দরকার।’
উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, গত পাঁচ বছরে নাসিরনগরের কেউই জমির শ্রেণি পরিবর্তনের আবেদন করেননি। তার পরও কীভাবে এত ফসলি জমি কমল, এ বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই তাদের। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রবিউস সারোয়ারের দাবি, তিনি এখানে আসার পর থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটা ও ফসলি জমি ভরাট রোধে প্রায় সপ্তাহেই অভিযান পরিচালনা করছেন। এর পরও জমি ভরাট বন্ধ হচ্ছে না।
তাঁর এ দাবির সঙ্গে একমত নন জনসাধারণ। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনেরই কিছু অসাধু লোক ও দালালের হাত করেই উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে ফসলি জমি ভরাটের মহোৎসব চলছে। এমন একাধিক অভিযোগ পেয়ে ফান্দাউক ইউনিয়নে দেখা যায়, সেখানে ১৫টি স্থানে ফসলি জমি ভরাট চলছে। ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের আব্দুল আউয়াল রাস্তার পাশের ১৫ শতাংশ ফসলি জমি ভরাট করছিলেন। তিনি বলেন, দুই ছেলের জন্য জমিটি ভরাট করছেন। একই এলাকার জুয়েল ও সুহেলের সঙ্গে প্রশাসনের অনুমতিসহ জমি ভরাটের জন্য মৌখিক চুক্তি করেছেন। এ জন্য তাঁর খরচ হবে ৩ লাখ টাকা। প্রশাসন যদি বাধা দেয়, বিষয়টি দেখবেন জুয়েল ও সুহেল। তিনি বলেন, ‘আমি অনুমতি দিয়া কিতা করুম? যারা টাকা নিছে তারাই প্রশাসনের হিসাব বুঝব।’
এই অভিযোগ অস্বীকার করেন জুয়েল। তাঁর ভাষ্য, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য জমির মালিক মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন।’ সুহেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খননযন্ত্রের একাধিক মালিক স্বীকার করেন, তারা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই জমি ভরাট করেন। কিন্তু কেউই প্রকাশ্যে স্বীকার করতে চান না। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আব্দুন নূর নাসিরনগরে ফসলি জমি ব্যাপক হারে কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন। তিনি এর জন্য প্রধানত দায়ী করেন অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনকে। আব্দুন নূরের ভাষ্য, নদীভাঙন ও জলাশয় ভরাট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনও জমি কমার অন্যতম কারণ। এ থেকে রক্ষা পেতে ভূমি সংরক্ষণ নীতি কার্যকর, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ, নদীভাঙন প্রতিরোধ ও বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.

ইমরান হোসাইনের কাছেও ফসলি জমি এভাবে কমতে থাকা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, জমি রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তা হলে ফসল উৎপাদনে সরকারি লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে।
নাসিরনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনা নাসরিন বলেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আবাদি জমি ভরাট করা হয়েছে বা হচ্ছে, এমন তথ্য তাঁর জানা নেই। শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতিও জেলা প্রশাসন ছাড়া কেউই দিতে পারেন না। কোথাও নতুন ঘরবাড়ি বা স্থাপনা নির্মাণ করতে হলেও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিতে হয়। যদি কেউ অনুমতি না নেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত ন স রনগর উপজ ল র এক ধ ক ভর ট র অফ স র পর ব র র জন য পর ম ণ র পরও সরক র করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সামিয়া ইসলাম। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি ঝোঁক ছিল, তবে কখনো কোচিং বা প্রাইভেটের ওপর নির্ভর করেননি। বাবার হাত ধরেই তৈরি হয়েছে তাঁর শিক্ষাভিত্তি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করে এবার তিনি যাচ্ছেন পৃথিবীর অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডে। পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পাঁচ বছরের পিএইচডি প্রোগ্রামে পড়বেন সেখানে।

ঢাবি থেকে জাবি, সেখান থেকে অক্সফোর্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন সামিয়া ইসলাম। কিন্তু তাঁর মনে ছিল অর্থনীতি নিয়ে পড়ার স্বপ্ন। তাই এক বছর পর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে। শুরু থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্বের প্রথম সারির কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার। স্নাতকোত্তরের ফলাফল হাতে পাওয়ার আগেই তৈরি করতে শুরু করেছিলেন নিজের প্রোফাইল। অক্সফোর্ড ছাড়াও ইয়েল, ওয়ারউইক ও ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডাক দিয়েছিল। তবে তত্ত্বীয় অর্থনীতিতে বিশেষ আগ্রহ ও গবেষণার পরিবেশ বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত অক্সফোর্ডকেই বেছে নেন।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

শুরু থেকেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়েছেন সামিয়া ইসলাম। স্নাতকে ৩.৯২ ও স্নাতকোত্তরে ৩.৯১ সিজিপিএ অর্জন করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি খুব পড়ুয়া শিক্ষার্থী ছিলাম না। পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়তাম। তবে ক্লাস কখনো মিস করিনি। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করাই আমাকে ভালো ফল করতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছে।’

একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি যুক্ত গবেষণা কার্যক্রমেও। ইন্টার্নশিপ করেছেন, ভাষাগত পরীক্ষা (আইএলটিএস এবং জিআরই) প্রস্তুতিও নিয়েছেন আগেভাগেই। সব মিলিয়ে আবেদনপ্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি তাঁকে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে ৬০ দিন হচ্ছে: মহাপরিচালক নূর মো. শামসুজ্জামান২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম

গবেষণার ক্ষেত্রেও এগিয়ে ছিলেন সামিয়া ইসলাম। ইতিমধ্যে তাঁর একটি গবেষণাপত্র ও কনফারেন্স পেপার প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে। এ ছাড়া সানেমে ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতাও রয়েছে। পড়াশোনার বাইরে সক্রিয় ছিলেন সহশিক্ষা কার্যক্রমেও। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির (জিইউডিএস) সহসাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় ছাত্র সংসদের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মতে, এসব কার্যক্রম ব্যক্তিগত দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়, পাশাপাশি নতুন সুযোগ তৈরি করে।

আরও পড়ুনকেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে অনলাইন কোর্স, নেই বয়সের সীমা২২ ঘণ্টা আগে

পরিবারের প্রেরণা

শৈশব থেকেই কোচিং-প্রাইভেটের বদলে বাবার কাছে পড়াশোনা করেছেন সামিয়া ইসলাম। বাবাকেই তিনি জীবনের সবচেয়ে বড় প্রেরণা মনে করেন। সামিয়া বলেন, ‘বাবা আমাকে সব সময় নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাহাঙ্গীরনগরে আসার ব্যাপারে প্রথমে তাঁর আপত্তি ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার সিদ্ধান্তকেই সম্মান করেছেন। এতে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছি।’

নিজ বিভাগের শিক্ষকদের সহায়তাও সামিয়ার কাছে বিশেষ প্রাপ্তি। সামিয়া বলেন, ‘আমার শিক্ষকেরা পড়াশোনা ও গবেষণার প্রতিটি ধাপে পাশে থেকেছেন। তাদের সহযোগিতা না পেলে এত দূর আসা কঠিন হতো।’

আরও পড়ুনবেসরকারি স্কুল-কলেজে কর্মচারী নিয়োগে ক্ষমতা হারাল পরিচালনা পর্ষদ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তরুণদের জন্য শিক্ষা

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য সামিয়ার অভিজ্ঞতা একটি পথনির্দেশের মতো। তিনি মনে করেন, আগে ঠিক করতে হবে কোনো বিষয়ে পড়তে চান, তারপর সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও প্রস্তুতি নিতে হবে। একাডেমিক ফল ভালো হলে সুযোগ অনেক বেড়ে যায়, তবে গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত থাকা জরুরি। আবেদনপ্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো এসওপি–স্টেটমেন্ট অব পারপোজ, যা মনোযোগ দিয়ে লিখতে হবে। আর ভাষাগত পরীক্ষাগুলো আগেভাগেই দিয়ে রাখা উচিত, নয়তো শেষ মুহূর্তের তাড়াহুড়োতে সমস্যা হতে পারে।

আরও পড়ুনজুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের জন্য ১০টি বিশেষ পরামর্শ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভবিষ্যৎ লক্ষ্য

সামিয়া ইসলাম এখনো চূড়ান্তভাবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করেননি। তবে তিনি অর্থনীতির জগতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করতে চান। স্বপ্ন দেখেন একজন সফল অর্থনীতিবিদ হওয়ার। পরিকল্পনা, অধ্যবসায় ও পরিবারের সমর্থনে সামিয়ার এ অর্জন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ-তরুণীর কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাহাঙ্গীরনগরের সামিয়া ইসলামের তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কেন অক্সফোর্ডকেই বেছে নিলেন