চিয়া সিডে আছে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড, যা চুল দুর্বল ও ভঙ্গুর হতে দেয় না। চুল পড়া রোধেও কাজ করে অতিপ্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানটি। খানিকটা প্রোটিনও আছে চিয়া সিডে, যা চুলের গঠনগত প্রোটিন, অর্থাৎ কেরাটিন তৈরির কাজে আসে। চিয়া সিডে আরও আছে ম্যাগনেশিয়াম, কপার, জিংক ও সামান্য আয়রন। মজবুত, প্রাণবন্ত চুলের জন্য তাই আপনি চিয়া সিড খেতে পারেন রোজ। এ সম্পর্কে বলছিলেন গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আকতার

পানীয় বা খাবার গ্রহণের সময় মেশালে যা হবে

স্মুদি বা অন্য কোনো পানীয়ে চিয়া সিড মিশিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা খেয়ে নিলে খানিকটা উপকার আপনি নিশ্চয়ই পাবেন। তবে চিয়া সিডের বাইরের আবরণটা বেশ শক্ত। তাই পরিপাকের পরও এই আবরণের ভেতরে সঞ্চিত সব পুষ্টি উপাদান সম্পূর্ণভাবে দেহের কাজে না লাগার আশঙ্কাই বেশি। তাই সরাসরি কোনো পানীয়ে চিয়া সিড মিশিয়ে দুয়েকবার নেড়েচেড়ে খেয়ে নিলে আদতে আপনার চুলের জন্য তা খুব একটা উপকারে আসবে না। পুডিং বা অন্য কোনো খাবারে চিয়া সিড ছড়িয়ে দিয়ে খাওয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

আরও পড়ুনচুলের বৃদ্ধিতে শজনে এত কার্যকর, জানতেন? ২৫ নভেম্বর ২০২৪তাহলে কি চিবিয়ে খাবেন

চিবিয়ে খেতে পারলে চিয়া সিডের পুষ্টি উপাদানগুলো আপনি নিশ্চয়ই পাবেন। কারণ, চিবানোর সময় শক্ত আবরণটা ভেঙে যাবে। এ ক্ষেত্রে পুষ্টি উপাদানগুলো সহজেই দেহের কাজে লাগবে। তবে সমস্যা হলো, চিবিয়ে খাওয়ার জন্য চিয়া সিড খুব একটা উপযোগী নয়। চিবাতে গেলে বিস্বাদ লাগে। তা ছাড়া এর অনেকটাই দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে আটকে থেকে যায়। আর এভাবে কেবল চিয়া সিড চিবিয়ে খেলে পেটে অস্বস্তিও হতে পারে। তাই এটিও চিয়া সিড গ্রহণের ভালো উপায় নয়।

আরও পড়ুনঅকালে চুল পেকে যাওয়া কিসের ইঙ্গিত১০ মার্চ ২০২৫সেরা পদ্ধতি

চিয়া সিডের সব পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে পেতে চাইলে পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখলেই হলো। এর বেশি সময় ভিজিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে অনায়াসেই আপনি খেতে পারেন রোজ। পানির বদলে দুধ কিংবা অন্য কোনো পানীয়ও যোগ করতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, চিয়া সিডে থাকা আয়রন আমাদের দেহে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য চাই ভিটামিন সি। এই আয়রনটুকু পেতে তাই আপনি কোনো টক ফল দিয়ে তৈরি পানীয়ে এই বীজ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রেখে খেতে পারেন। অথবা পানি বা অন্য কোনো পানীয়ে ভিজিয়ে চিয়া সিড গ্রহণ করার মিনিট কুড়ি আগে বা পরে কোনো টক ফল খেতে পারেন।

খেয়াল রাখুন

চিয়া সিড খেলে রাতারাতি আপনার চুল পড়া কমবে না। দীর্ঘদিন খেলে তবেই উপকার মিলবে। আর কেবল চিয়া সিডের জন্যই যে আপনার চুল সুস্থ ও ঝলমলে থাকবে, তেমনটাও নয়। সুষম খাদ্যভ্যাস ও মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপনের চর্চা করাও খুব জরুরি।

আরও পড়ুনচিয়া সিড কীভাবে পেটের মেদ কমায়০৫ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন য ক ন র জন য উপ দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভোগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেছেন, “বাংলাদেশে কম বয়সী শিশুদের সামগ্রিক পুষ্টি পরিস্থিতি এখনও আশঙ্কাজনক। শিশু ও নারীদের মধ্যে ভিটামিন, আয়রন, জিঙ্ক ও আয়োডিনের ঘাটতি ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে।” 

তিনি বলেন, “অন্যদিকে নারীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ জিঙ্ক এবং ৪২ শতাংশ আয়োডিন ঘাটতিতে আক্রান্ত। অপুষ্টি ও ভিটামিন-খনিজ ঘাটতি বর্তমানে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই লবণ ছাড়াও অন্যান্য খাবারে এসব পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধকরণ (ফর্টিফিকেশন) জরুরি হয়ে পড়েছে।”

আরো পড়ুন:

পায়রা নদীর তীর থেকে শিশুর মরেদেহ উদ্ধার

রাজশাহীতে পুকুরে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় ‘বাংলাদেশে খাদ্য সমৃদ্ধকরণের (ফুড ফর্টিফিকেশন) গুরুত্ব’ শীর্ষক এক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি এসব তথ্য তুলে ধরেন। বাকৃবির কৃষি অনুষদীয় সম্মেলন কক্ষে কর্মশালাটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাকৃবির প্রফেসর মুহাম্মদ হোসেন কেন্দ্রীয় গবেষণাগার (পিএমএইচসিএল) এবং গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (জিএআইএন)।

মূল প্রবন্ধে ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেন, ‘ফুড ফর্টিফিকেশন হলো খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। এতে খাদ্যের সঙ্গে এক বা একাধিক ভিটামিন বা খনিজ উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশিয়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বাড়ানো হয়। বর্তমানে চালের ফর্টিফিকেশনে ছয়টি পুষ্টি উপাদান সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে— ভিটামিন এ, বি-১, বি-১২, ফলিক এসিড, আয়োডিন, আয়রন ও জিঙ্ক। এছাড়া ভোজ্যতেলে ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে নারী ও শিশুর ভিটামিন-ডি ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।”

তিনি করেন, “এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ইতোমধ্যেই বাধ্যতামূলক খাদ্য সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করেছে। যেমন— চীন, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় লবণে আয়োডিন সমৃদ্ধকরণ চালু রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনে গমের আটা, তেল, চাল ও চিনি সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কেবল লবণ আয়োডিনেশন কার্যকর রয়েছে। গমের আটা বা অন্যান্য খাদ্যে সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।”

পিএমএইচসিএল-এর পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. শরিফুল হক ভূঁইয়া।

কর্মশালায় ‘বাংলাদেশে বৃহৎ আকারের ফুড ফর্টিফিকেশন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিএআইএন-এর লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন অ্যান্ড ভ্যালু চেইনের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ।

তিনি বলেন, “খাদ্য সমৃদ্ধকরণের জন্য আমাদের দেশে কোনো কেন্দ্রীয় হাব নেই। আমরা বর্তমানে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়ায় এ নিয়ে কাজ করছি। গবেষণার জন্য দেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যার একটি হলো বাকৃবি। আমরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফর্টিফিকেশন নয়, বরং বায়োফর্টিফিকেশন নিয়ে কাজ করছি। বায়োফর্টিফিকেশন সমৃদ্ধ ধান চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি ডাল জাতীয় ফসলে জিঙ্ক ও আয়রন সমৃদ্ধ করার কাজ চলছে।”

তিনি আরো বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে তেলে ভিটামিন-এ এবং লবণে আয়োডিন যোগ করা হচ্ছে। তবে সাধারণ ভোক্তা আসলে কতটুকু ভিটামিন-এ ও আয়োডিন পাচ্ছেন, সেটিও গবেষণার বিষয়।”

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “খাদ্যের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধকরণের উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এ বিষয়ে জাতিকে সচেতন করা জরুরি, যাতে সবাই সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। সচেতনতার অভাবে আজ অনেক মানুষ ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ নানা মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ উদ্যোগকে সফল করতে আমার পক্ষ থেকে যেকোনো সহযোগিতা দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্য পুষ্টিগুণ বিষয়ে সচেতনতা তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তবে বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প আলাদা আলাদাভাবে বাস্তবায়নের পরিবর্তে সমন্বিতভাবে পরিচালনা করা হলে ফলাফল আরো দ্রুত ও কার্যকর হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে ২২ শতাংশের বেশি শিশু ও নারী ভিটামিন-ডি ঘাটতিতে ভুগছে