মিডওয়াইফ বা ধাত্রীর কাজ গর্ভাবস্থা, প্রসব এবং প্রসবের পর মা ও নবজাতকের সেবা দেওয়া। কক্সবাজারে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের যত্নআত্তিতে নিবেদিত রয়েছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৯২ জন তরুণী। এসব তরুণীরা জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়োজিত রয়েছেন।
কক্সবাজারে এসব ধাত্রী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন জেলার রামুর চেইন্দা এলাকার হোপ মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট থেকে। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ১০০ শয্যার হোপ হসপিটাল ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেনের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। জেলার মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া ও উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ১৫টি হোপ বার্থ সেন্টার, ৯টি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে।
হোপ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর কে এম জাহিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হয় ২০১২ সালে। ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন ২৭৩ জন প্রশিক্ষণার্থী। ইতিমধ্যে ১৯২ জন গ্র্যাজুয়েশন (ধাত্রীবিদ্যা) সম্পন্ন করে দুর্গম উপকূল ও গ্রামগঞ্জের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ইনস্টিটিউটে তিনটি ব্যাচে আরও ৮১ জন ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
কে এম জাহিদুজ্জামান আরও বলেন, কক্সবাজারে একটা সময় মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার বেশি ছিল। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীদের হাতে গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যসেবা, প্রসব এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা নিশ্চিত হওয়ায় মৃত্যুহার অনেক কমে এসেছে। ধাত্রীবিদ্যার পাশাপাশি রোহিঙ্গা নারী শিশুদের স্বাস্থ্য তথ্য ও সেবা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি ২৪ জন রোহিঙ্গা তরুণীকে বিনা মূল্যে ৯ মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি রামুর ‘মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটে’ গিয়ে দেখা গেছে, গোলাপি রঙের পোশাক পরা তরুণীরা শ্রেণিকক্ষে পাঠ নিচ্ছেন। কেউ হোপ হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। তাঁদের একজন খাদিজাতুল কুবরা। বাড়ি মহেশখালীতে। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজাতুল কুবরা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ইচ্ছা ছিল সেবামূলক কাজে নিজেকে যুক্ত রাখব, উপকূলের গরিব–দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াব। বিশেষ করে দুর্গম উপকূলের মা ও শিশুরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাদের কথা মাথায় রেখে ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ নিয়েছি। হোপ মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউটের বৃত্তি দিয়ে আমাকে পড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।’
স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত থাকার শপথ ধাত্রীবিদ্যার শিক্ষার্থীদের.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
দলের দুই পক্ষের বিরোধ মেটাতে যাচ্ছিলেন সালিস বৈঠকে, পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু বিএনপি নেতার
দলের দুটি পক্ষের মধ্যে হাতিহাতি ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিরোধ মীমাংসায় ডাকা হয়েছিল সালিস বৈঠক। সে বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন ফেনীর পরশুরামের বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার (৫৮)। পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর এক সহযোগী।
পারভেজ মজুমদার ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রামের সাদেক মজুমদারের ছেলে। তিনি উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন।
পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোববার দুপুরে নিজকালিকাপুর গ্রামে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের চারজন আহত হন। সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরশুরাম উপজেলা সদরে সন্ধ্যায় একটি সালিস বৈঠকে উদ্যোগ নেওয়া হয়। সালিসে যোগ দিতে স্থানীয় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদার ও তাঁর সহযোগী মোহাম্মদ হারুন মোটরসাইকেলে নিজকালিকাপুর থেকে পরশুরাম যাচ্ছিলেন। তাঁদের বহন করা মোটরসাইকেলটি সুবার বাজার-পরশুরাম সড়কের কাউতলী রাস্তার মাথায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন গুরুতর আহত হন।
স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে প্রথমে পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে ফেনীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পারভেজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকের পরামর্শে পরিবারের সদস্যরা রাতে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা পারভেজ মজুমদারের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ বাড়ি নিয়ে যায় স্বজনরা।