বিদ্রোহ, বেদনা ও বীরত্বের ডিজিটাল আর্কাইভ
Published: 13th, May 2025 GMT
২০২৪ সালের জুনের শেষ ভাগ থেকে আন্দোলনটা দানা বাঁধে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসে সেই আন্দোলনে রক্ত ঝরে। গুলি চালায় পুলিশ, শহীদ হন রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ছয়জন। সেই শুরু। এর পর থেকে তরুণদের সেই আন্দোলনে চলতে থাকে নির্যাতন–নিপীড়ন, গুলি, চলে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
শুরু থেকেই প্রথম আলো জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছে। রেখেছে মৃত্যুর হিসাব, করেছে মানবিক ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন। গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বিদ্রোহ–বেদনা ও বীরত্বের কথা উঠে এসেছে সেসব প্রতিবেদনে। দমন–পীড়নের সাহসী ছবি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ও পত্রিকায়।
প্রথম আলোতে প্রকাশিত সেসব প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার, মতামত, ছবি, ভিডিও জড়ো করা হয়েছে এক জায়গায়। যেখানে পাওয়া যাবে অভ্যুত্থান সময়ের খুঁটিনাটি তথ্য ও বিশ্লেষণ। প্রথম আলোর বিশেষ এই আর্কাইভ সাইটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ২০২৪’। সাইটটির ঠিকানা: https://services.
আর্কাইভ সাইটটি সবার সামনে উপস্থাপন করতে গত শনিবার বিকেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ কর্মীদের নিয়ে এক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। শুরুতেই প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান সাইটটি নির্মাণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে বহু কাজ আমরা করেছি। আমরা আমাদের সেরা কাজ করেছি সে সময়। আমাদের সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক তাঁরা তাঁদের সেরা কাজটুকু দিয়েছেন। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন।’
জুলাই জাগরণ নিয়ে প্রথম আলোর অনেক কাজের একটি ছিল ক্রোড়পত্র নিয়ে। প্রথম আলোর সম্পাদক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পরপর গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথম ক্রোড়পত্র করল প্রথম আলো। নাম ছিল ‘বিদ্রোহে–বিপ্লবে’। এরপর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গত নভেম্বরে একে একে আরও চারটি ক্রোড়পত্র করা হলো।
জুলাই জাগরণ নিয়ে পাঠকের তোলা ছবি ও ভিডিও নিয়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে প্রথম আলো। সেই প্রতিযোগিতার নাম ছিল ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’। সেখান থেকে বাছাই করে ২০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। বাছাই করা সেসব ছবি রাখা আছে প্রথম আলোর এই আর্কাইভ সাইটে।
জুলাই জাগরণের ছবি নিয়ে ফটো জার্নাল করা হয়েছে। প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশ করা হয় ছয়টি বই। বানানো হয় তিনটি তথ্যচিত্র। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করে প্রথম আলো। সেখানে আট শহীদের নানা স্মারকও ছিল। যে কেউ চাইলে সাইটটিতে ঢুকে গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে প্রথম আলোর এ আয়োজন দেখে আসতে পারেন।
সম্পাদক মতিউর রহমান বললেন, এই সাইটটি জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে করা প্রথম আলোর সব কাজের পূর্ণাঙ্গ এক উপস্থাপনা।
বৈঠক শেষে সাইটটি সবাইকে দেখানো হয়।
কী কী আছে সাইটে
আর্কাইভ সাইটটিতে মোট ১৪টি সেকশন ও সাব–সেকশন আছে। শুরুতেই আছে ৩৬ দিনের আন্দোলনের দিনপঞ্জি। কবে, কোথায় উল্লেখযোগ্য কী কী ঘটনা ঘটেছে, ছবিসহ তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে। সেসব দিনে উল্লেখযোগ্য কী কী ঘটনা ঘটেছিল এবং সেসব নিয়ে প্রথম আলো যে প্রতিবেদন ও ছবি ছেপেছিল, তা–ও দেখা যাবে ওই সেকশনে। তার নিচে একনজরে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন জুলাই জাগরণে হতাহতের তথ্য–উপাত্তে।
আন্দোলনের শুরুর দিকে প্রথম যে স্লোগানটি স্বৈরাচার সরকারের ভিত নাড়িয়ে দেয়, সেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছিল সবার মুখে মুখে, ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার।’ এমনি আরও স্লোগান তখন হয়ে উঠেছিল গণমানুষের কথা। ঘটনার ক্রমানুসারে বাছাই করা সেসব স্লোগান নিয়ে করা হয়েছে একটি সাব–সেকশন, নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তির স্লোগান’। আছে প্রথম আলোর সংবাদকর্মীদের করা তিনটি তথ্যচিত্র।
মৃত্যুঞ্জয়ীদের বাছাই করা ২৪টি গল্প রয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে মুগ্ধ, ফারহানদের কথা আছে সেখানে। আছে দেশের বিজ্ঞজন ও প্রাগ্রসর চিন্তার মানুষদের চিন্তাভাবনা ও তাঁদের মতামত। আছে নবীন–প্রবীণদের কিছু সাক্ষাৎকারও।
৩৬ দিনের আন্দোলনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনাপ্রবাহের ছবিও রাখা আছে এই সাইটে। পৃথক বাটনে ক্লিক করে অনেকগুলো গ্রাফিতির ছবিও দেখতে পাবেন। যেগুলো প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিকদের ক্যামেরায় উঠে এসেছিল। ভিডিও আছে কিছু।
সাইটটির শেষ ভাগে আছে জুলাই জাগরণ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রদর্শনী। গত জানুয়ারিতে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে জুলাই জাগরণের শহীদদের নানা স্মৃতি স্মারক ঠাঁই পায়। এসবই কম্পিউটারের সামনে বসে দেখা যাবে। প্রদর্শনীর ৩৬০ ডিগ্রি ভার্চ্যুয়াল উপস্থাপনাটিও বেশ দৃষ্টিনন্দন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল র স জ ল ই জ গরণ ব ছ ই কর স ইটট স কশন
এছাড়াও পড়ুন:
খনিজ ও তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতার পরিসর বাড়াতে আগ্রহী। পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও।
গত মাসে ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদ বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে শুল্ক কমবে ও বিনিয়োগ বাড়বে। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল জানান, ইসলামাবাদ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে খনন প্রকল্পে স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগের সুযোগ দেবে এবং ইজারা চুক্তিতে ছাড়ের মতো নানা ধরনের সুবিধা দেবে। খবর রয়টার্স
বেলুচিস্তান প্রদেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সোনা ও তামার খনি আছে বলে ধারণা করা হয়। রেকো ডিক নামের এক খনিপ্রকল্প সেখানে চলমান; এই প্রকল্প পরিচালনা করছে ব্যারিক গোল্ড নামের একটি খনিপ্রতিষ্ঠান।
রুবিও বুধবার রাতে বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও তেল-গ্যাস খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও বাণিজ্য সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
ট্রাম্প প্রশাসনের আগে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কিছুটা শীতল ছিল। এর পেছনে একটি কারণ হলো, পাকিস্তানের চিরশত্রু ভারতের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঝুঁকে পড়া। মূলত চীনের উত্থান মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের দিকে ঝুঁকেছে। এ ছাড়া আফগানিস্তানের বিষয়েও ওয়াশিংটনের ক্ষোভ ছিল, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের সময় আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের সময় তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ঘটনায়। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, পাকিস্তান এই কাজে তালেবানদের সহযোগিতা করেছে, যদিও পাকিস্তান এই অভিযোগ অস্বীকার করে।
সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কে উন্নতি হয়েছে। ট্রাম্পের উদ্যোগে মে মাসে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি হয় বলে দাবি করা হয়। পাকিস্তান ট্রাম্পের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে, যদিও ভারত জানিয়েছে, সমস্যা সমাধানে দুই দেশকে সরাসরি আলোচনায় বসতে হবে, বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া তা হতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার ইসলামাবাদে সন্ত্রাসবিরোধী তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আবার পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের ওয়াশিংটন সফরের সময় ‘বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মিকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংস্থা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।’
দুই দেশের বাণিজ্যইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ বা ইউএসটিআরের তথ্যানুসারে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পণ্য ও সেবা–বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১ হাজার ১০ কোটি ডলার; ২০২৩ সালের তুলনায় যার ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের পণ্যবাণিজ্য (রপ্তানি ও আমদানি) ছিল মোট ৭ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ৭২০ কোটি ডলার। গত বছর পাকিস্তানে মার্কিন পণ্যের রপ্তানি হয়েছে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি ডলার, আগের বছরের তুলনায় যা ৩ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৫১০ কোটি ডলারের; ২০২৩ সালের তুলনায় যা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। ফলে ২০২৪ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন পণ্যবাণিজ্যের ঘাটতি ছিল ৩ বিলিয়ন বা ৩০০ কোটি ডলার—২০২৩ সালের তুলনায় যা ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সেবা–বাণিজ্য ছিল প্রায় ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বা ২৯০ কোটি ডলারের। পাকিস্তানে মার্কিন সেবা রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ২০ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। পাকিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সেবা আমদানি হয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ১১০ কোটি ডলারের, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেবা–বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত ৬১০ মিলিয়ন বা ৬১ কোটি ডলার; ২০২৩ সালের তুলনায় যা ১৪৭ শতাংশ বেশি।