খুলনা মহানগর ও জেলার ১৭টি থানায় গত এপ্রিল মাসে আটটি হত্যা এবং ১১টি ধর্ষণসহ মোট ৩০৯টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে অস্ত্র ও মাদকসহ অন্যান্য ঘটনাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জেলার ৯টি থানায় ১৫৪টি এবং খুলনা মহানগরীর আটটি থানায় ১৫৫টি মামলা রেকর্ড হয়।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরে খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট দীপংকর দাশ সভায় বিগত মাসে খুলনা জেলা ও মহানগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। খুলনা জেলায় এপ্রিল মাসে রাহাজানি একটি, চুরি ১২টি, খুন ছয়টি, অস্ত্র আইনে সাতটি, ধর্ষণ পাঁচটি, মাদকদ্রব্য বিষয়ক ৩৯টি এবং অন্যান্য ৬৪টিসহ মোট ১৫৪টি মামলা হয়েছে। যা গত মার্চ মাসে দায়ের হওয়া মামলার চেয়ে ১০টি কম।
আরো পড়ুন:
চার দিনের রিমান্ডে মমতাজ
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন
মহানগরে এপ্রিল মাসে চুরি ২৩টি, খুন দুইটি, অস্ত্র আইনে পাঁচটি, দ্রুত বিচার দুইটি, ধর্ষণ ছয়টি, অপহরণ একটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ৯টি, মাদকদ্রব্য বিষয়ক ৫৪টি এবং অন্যান্য ৫৩টিসহ মোট ১৫৫টি মামলা হয়েছে। যা বিগত মার্চ মাসের চেয়ে ১৫টি কম।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এস এম আল-বেরুনী জানান, জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকায় দিনের বিভিন্ন সময় নিয়মিত টহল ও বিশেষ চেকপোস্টের মাধ্যমে পুলিশি তদারকি চলমান আছে। সাইবার অপরাধ দমনে পুলিশের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে কোনো ধরণের অবনতির চেষ্টা প্রতিহত করা হবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো.
তিনি বলেন, ‘খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তা বন্ধ করে উন্নয়ন কাজ চলায় যানজট সৃষ্টি হয়। পুরোপুরি যানচলাচল বন্ধ না করে উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা গেলে যানজটের কারণে নগরবাসীর ভোগান্তি কমতে পারে।”
সভায় জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস, মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ পৃথকভাবে এপ্রিল মাসে মাদকের বিরুদ্ধে মোট ১৫৬৩টি অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মোট ১২৭টি মামলা করা হয়। মামলাগুলোয় মোট আসামির সংখ্যা ১৪৬ জন।
সভাপতির বক্তৃতায় খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষ্যে পশুর হাট স্থাপন ও নির্বিঘ্নে পরিচালনার জন্য তদারকি বাড়ানো দরকার। একই সঙ্গে হাটগুলোয় জাল টাকার বিস্তার, ছিনতাই, গবাদি পশু হাটে আনার জন্য জোর-জবরদস্তির ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য সচেতন থাকতে হবে।”
তিনি বলেন, “ঈদে রেল ও বাসের টিকিট কালোবাজারি বন্ধে গত রোজার ঈদের সময় গৃহীত পদক্ষেপের মতো অনুরূপ ব্যবস্থা নিতে হবে। খুলনা শহরের সামাজিক শৃঙ্খলা মাদক ও মাদক সংশ্লিষ্ট অপরাধের কারণে যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা দরকার।”
সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাসহ জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রমিক সরবরাহ নিয়ে বিরোধের জেরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জেটি ঘাটে লোড-আনলোডে শ্রমিক সরবারহ নিয়ে বিরোধের জেরে শাহিন মৃধা নামে এক ব্যক্তির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১১টার দিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের মরিচবুনিয়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম শাহিন মৃধা। তিনি ধানখালী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। অভিযুক্ত আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আরো পড়ুন:
নাসিক ভবনে অটোরিকশাচালকদের হামলার অভিযোগ
রাতে আবার ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলা
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের সার্ভিস জেটি ঘাটে লোড-আনলোডের শ্রমিক সরবারহকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন ধরে শাহিন মৃধা ও আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলছে। এরই জেরে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ৫০-৬০ লোক শাহিন মৃধার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেন। এসময় শাহিন মৃধা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ছিলেন। পরে স্থানীয়রা তাকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন।
ঘটনা সম্পর্কে শাহীন মৃধার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে, তার ভাই রুবেল মৃধা বলেন, “এক নেতার নির্দেশে কিছু দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে আমার ভাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। মহসিন তালুকদার কলাপাড়া থেকে শতাধিক লোক ভাড়া করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আমরা বিচার দাবি করছি।”
কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম মহসিন তালুকদার বলেন, “আমি ১২ লাখ টাকার একটি কাজ পেয়েছি। মানে বার্জ আর পেলুডার ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়েছি। কাজ পাওয়ার পরই শাহিন মৃধা আমার কাছে চাঁদা দাবি করেন। তাকে ৫০ হাজার টাকাও দিয়েছি। পরে আরো ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছে, ওই টাকা না দেওয়ায় গতকাল সোমবার রাতে আমার লোকজনকে মেরে বার্জ আর পেলুডার ছিনতাই করেছে। সেগুলো কোথায় আছে তা জানি না।”
তিনি বলেন, “আজ সকালেও আমার লোকজনকে মারধর করা হয়েছে। আমি থানায় পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে অভিযোগ করেছি, কিন্তু পুলিশ কোনো ভূমিকা নেয়নি। আমি বর্তমানে ঢাকায় আছি। আগুনের ঘটনার সঙ্গে আমি কোনভাবেই জড়িত না। তিনি (শাহিন মৃধা) নিজেই নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছেন।”
কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম বলেন, “ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
ঢাকা/ইমরান/মাসুদ