বই পড়ার সময় মস্তিষ্কে আসলে কী ঘটে, তা দীর্ঘদিন ধরে জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান কগনিটিভ অ্যান্ড ব্রেন সায়েন্সেসের স্নায়ুবিজ্ঞানী সাবরিনা টার্কার জানিয়েছেন, মানুষের মস্তিষ্কে ভাষার প্রভাব সম্পর্কে খুব কম তথ্য রয়েছে। আমরা যা জানি তার বেশির ভাগই অল্পসংখ্যক বিষয় নিয়ে একক গবেষণার ফলাফল।
বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীরা ৩ হাজার ৩১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান করে তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। সব মিলিয়ে ১৬৩টি পরীক্ষার ফলাফল একত্র করে নীরবে ও জোরে বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের কাজের ধরন বোঝার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এরই মধ্যে মস্তিষ্কে বই পড়ার প্রভাব জানতে পরিচালিত এ গবেষণা ফলাফল নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড বায়োবিহেভিয়রাল রিভিউস সাময়িকীতে প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, বই পড়ার সময় মস্তিষ্কের কোন কোন অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে তা শনাক্ত করা হয়েছে। আমাদের মস্তিষ্কের বাঁ পাশ ভাষা প্রক্রিয়াকরণের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। অক্ষর, বাক্য বা সম্পূর্ণ লেখা পড়লে মস্তিষ্কের এই অংশ সক্রিয় হয়। এত দিন স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের সেরিবেলাম অংশের ভূমিকা কিছুটা উপেক্ষা করেছেন। নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, সেরিবেলাম শুধু শব্দ প্রক্রিয়াকরণই নয় অর্থ তৈরিতেও জড়িত। তাই ডান পাশের সেরিবেলাম সব ধরনের পড়ার কাজে সক্রিয় থাকে। শুধু তা–ই নয়, জোরে পড়ার সময় ডান পাশের সেরিবেলামের কিছু অংশ অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। অর্থাৎ লিখিত শব্দকে কথায় রূপান্তরের জন্য এই অংশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, বাঁ পাশের সেরিবেলাম শব্দ পড়ার সময় বিশেষভাবে ব্যস্ত থাকে। তাই বই পড়ার সময় শব্দের অর্থ বের করার কাজে বাঁ পাশের সেরিবেলামের জড়িত থাকার সম্ভাবনা বেশি। ডান পাশের সেরিবেলাম মূলত সামগ্রিক পাঠ প্রক্রিয়ায় অবদান রাখে। শব্দ নীরবে পাঠ করলে বাঁ অরবিটোফ্রন্টাল, সেরিবেলার ও টেম্পোরাল কর্টিস ধারাবাহিকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের কর্মপ্রচেষ্টা ও পরিণতির পথ
সুরা লাইল, পবিত্র কোরআনের ৯২তম সুরা, মক্কায় অবতীর্ণ। এতে ২১টি আয়াত রয়েছে। ‘লাইল’ অর্থ রাত্রি, যা সুরার প্রথম আয়াতে উল্লেখিত। এই সুরা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্য, দানশীলতা ও কৃপণতার পরিণতি, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ বর্ণনা করে। সুরাটি দুই ধরনের মানুষের চিত্র তুলে ধরে: যারা দান করে ও ভালোকে গ্রহণ করে, তাদের জন্য সুখকর পথ সহজ হয়; আর যারা কৃপণতা ও অহংকারে ভালোকে প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করে।
সুরার প্রধান বিষয়
সুরা লাইল রাত, দিন এবং নর-নারীর সৃষ্টির শপথ দিয়ে শুরু হয়, যা মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার বৈচিত্র্যের দিকে ইঙ্গিত করে, ‘শপথ রাত্রির, যখন সে ঢেকে ফেলে! আর শপথ দিনের, যখন সে আলোয় উজ্জ্বল! আর শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের কর্মপ্রচেষ্টার তো বিভিন্ন গতি।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১-৪)
আরও পড়ুনবিপদের সময় বলতে হবে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাতকে জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিনকে ইমানের আলোর সঙ্গে তুলনা করা যায়। নর-নারীর সৃষ্টি সব সৃষ্টির জোড়ার বৈচিত্র্য প্রকাশ করে। এই বৈচিত্র্য মানুষের কাজেও প্রতিফলিত হয়। (মাওলানা মুহাম্মদ শফি, মা’আরিফুল কোরআন, সুরা লাইল)
দানশীলতা ও সৎকর্মের পথ
সুরায় দানশীল ও সাবধানী মানুষের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: ‘তাই কেউ দান করলে, সাবধানী হলে, ও যা ভালো তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুখকর পরিণামের পথ সহজ করে দেব।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৫-৭)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে সত্য হিসেবে মেনে নেয়, অহংকার থেকে মুক্ত থাকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে। তারা জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকবে: ‘তার থেকে দূরে রাখা হবে সেই সাবধানীকে, যে ধনসম্পদ দান করে আত্মশুদ্ধির জন্য, আর কারও প্রতি অনুগ্রহের প্রতিদানের প্রত্যাশায় নয়, কেবল তার মহান প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য। সে তো সন্তুষ্ট হবেই।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৭-২১)
কৃপণতা ও অহংকারের পরিণতি
বিপরীতে, কৃপণ ও অহংকারী ব্যক্তির পরিণতি ভয়াবহ: ‘আর কেউ ব্যয়কুণ্ঠ হলে, নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, ও যা ভালো তা বর্জন করলে, তার জন্য কঠোর পরিণামের পথ সহজ করে দেব। এবং যখন তার পতন ঘটবে, তখন ধনসম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ৮-১১)
এই ব্যক্তিরা ভালোকে মিথ্যা বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং অহংকারে আল্লাহর পথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তাদের জন্য লেলিহান অগ্নি অপেক্ষা করে: ‘আমি তোমাদেরকে লেলিহান অগ্নি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি। সেখানে সে-ই প্রবেশ করবে, যে নিতান্ত হতভাগ্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১৪-১৬)
আরও পড়ুনসুরা গা’শিয়ার সারকথা০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আল্লাহর পথনির্দেশ
সুরায় আল্লাহ স্পষ্ট করে বলেছেন যে পথনির্দেশ দেওয়ার দায়িত্ব তাঁর: ‘আর কাজ তো কেবল পথের নির্দেশ দেওয়া। আর আমিই (মালিক) ইহকাল ও পরকালের।’ (সুরা লাইল, আয়াত: ১২-১৩)
এই আয়াত মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এবং আল্লাহর হিদায়াতের মধ্যে ভারসাম্য তুলে ধরে। মানুষ তার পথ বেছে নেয়, কিন্তু আল্লাহই চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারণ করেন।
সুরার তাৎপর্য
সুরা লাইল রাত ও দিনের শপথ দিয়ে মানুষের কর্মপ্রচেষ্টার দ্বৈততা তুলে ধরে। রাত জাহেলিয়াতের অন্ধকার এবং দিন ইমানের আলোর প্রতীক। দানশীলতা, সাবধানিতা এবং ভালোকে গ্রহণ করা মানুষকে জান্নাতের পথে নিয়ে যায়, যেখানে কৃপণতা ও অহংকার জাহান্নামের দিকে ধাবিত করে। এই সুরা মানুষকে চিন্তাশীল হতে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করে। (তাফসির ইবনে কাসির, সুরা লাইলের ব্যাখ্যা)
মুহাম্মদ আসাদ, দ্য মেসেজ অব দ্য কোরআন, সুরা লাইল
আরও পড়ুনসুরা নাজিআতের সারমর্ম০২ মে ২০২৫