নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেশের বেশির ভাগ নারীকে প্রতিনিধিত্ব করে না বলে মনে করে ‘ট্র্যাডিশনাল শি (Traditional She)’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন, বৈবাহিক ধর্ষণকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, যৌন পেশাকে স্বীকৃতি দেওয়াসহ কমিশনের বিভিন্ন সুপারিশের বিরোধিতা করেছেন এই প্ল্যাটফর্মের নারী সংগঠকেরা। তাঁদের অভিযোগ, কমিশনের প্রতিবেদন দেশের সামাজিক বন্ধন, সাংস্কৃতিক পরিচিতি ও সম্মিলিত মূল্যবোধকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ট্র্যাডিশনাল শি’র সংগঠকেরা এসব কথা বলেন। নবগঠিত প্ল্যাটফর্মটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সচেতন নারী শিক্ষার্থীরা’ গড়ে তুলেছেন বলে দাবি করেন আয়োজকেরা।

গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে ৪৩৩টি সুপারিশ–সংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশনের কয়েকটি সুপারিশের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ট্র্যাডিশনাল শি। এর মধ্যে রয়েছে অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সব ধর্মের নারীদের জন্য বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার ও ভরণপোষণে সমান অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অধ্যাদেশ জারি করা, বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যে জোর করে যৌন সম্পর্ককে ধর্ষণ হিসেবে ফৌজদারি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, যৌন পেশাকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না করা এবং শ্রম আইন সংশোধন করে যৌনকর্মীদের মর্যাদা ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করা।

‘ট্র্যাডিশনাল শি’র সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেশজুড়ে বিতর্ক ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। প্রতিবেদনটি দেশের নারীবাদী আন্দোলনের মূল মূল্যবোধকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। কমিশনের প্রতিবেদন দেশের বেশির ভাগ নারীকে প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি সেই সাহসী নারীদেরও প্রতিনিধিত্ব করে না, যাঁরা জুলাই আন্দোলনের উত্তরাধিকার গড়ে তুলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, কমিশনের সুপারিশ সমাজের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, সাংস্কৃতিক শিকড় ও নারীর মর্যাদার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। একদিকে ‘পতিতাবৃত্তি’কে পেশা হিসেবে স্বীকৃতির মাধ্যমে সেই পেশায় জড়িত নারীদের শোষণের বৈধতা দেওয়া, অন্যদিকে বহুবিবাহ বাতিলের সুপারিশ করে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।

‘ট্র্যাডিশনাল শি’র আহ্বায়ক মিশকাতুল জান্নাত বলেন, কমিশনের প্রতিবেদন তৈরিতে কোনো ধর্মীয় বিজ্ঞ ব্যক্তিদের রাখা হয়নি। যাঁরা ধর্মীয় সংস্কৃতিকে বেছে নিয়েছেন, তাঁদের দাবি আসেনি। অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের সুপারিশ করার ক্ষেত্রে কোন দেশের মডেল অনুসরণ করা হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। অভিন্ন পারিবারিক আইনকে ঐচ্ছিক করা হলে একই পরিবারের মধ্যে ভাই–বোন ভিন্ন ভিন্ন আইন প্রয়োগ চাইতে পারেন। এভাবে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। ধর্মকে বারবার নারীর বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

‘ট্র্যাডিশনাল শি’র মুখপাত্র নাদিয়া মেহজাবিন বলেন, যেখানে নারীর প্রতি শোষণ হচ্ছে, সেটাকে পেশা নাম দিয়ে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইউরোপের যেসব দেশে ‘যৌন পেশা’ স্বীকৃত, সেসব দেশে এখন পেশা হিসেবে এর স্বীকৃতি তুলে নেওয়ার দাবি উঠেছে। কারণ, পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে সেখানে নারী পাচার ও সহিংসতা বেড়েছে।

আরও পড়ুননারীর জন্য ৩০০ সংরক্ষিত আসন, বিয়ে-তালাক, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার দেওয়ার সুপারিশ ১৯ এপ্রিল ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে ‘ট্র্যাডিশনাল শি’র সংগঠক তাবাসসুম নুপা বলেন, স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রচলিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না করে কমিশন ‘বৈবাহিক ধর্ষণ’ হিসেবে আইনে অন্তর্ভুক্ত করার যে সুপারিশ করেছে, তা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। ধর্ষণ একটি ভয়াবহ অপরাধ, এর সঙ্গে বিবাহকে যুক্ত করে বিয়েকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

নারী খেলোয়াড়দের জন্য নারী কোচ, নারী ফিজিওথেরাপিস্ট, নারী ব্যবস্থাপক রাখার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেন ‘ট্র্যাডিশনাল শি’র সদস্য সচিব রেজিয়া খাতুন। তিনি বলেন, একইভাবে হিজাব–নেকাব পরা নারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের ছবি তোলা এবং মৌখিক পরীক্ষার সময় আইডি কার্ড যাচাই–বাছাইয়ে নারীদের নিযুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাঁরা শিগগিরই তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা উপস্থাপন করবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল

এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, এমফিল/পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য গত ১০ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্তে ন্যূনতম নম্বর, শ্রেণির সঙ্গে যে জিপিএ/সিজিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চুয়েট ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়) তুলনায় অনেক বেশি উল্লেখ করে তা সমন্বয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দেন কয়েকজন প্রার্থী। এতে ফল না পেয়ে সালাহ উদ্দিন মোহাম্মদ উজ্জলসহ তিনজন প্রার্থী রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জুয়েল আজাদ, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন আদনান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।

পরে আইনজীবী জুয়েল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন কোনো নীতিমালা না থাকায় গ্রেডিং সিস্টেম নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে বৈষম্য দেখা যায়। কারণ, সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নীতিমালা নেই। ফলে অনেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিক্ষাসচিব, উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিবাদীদের চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এমফিল ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নে নিষ্ক্রিয়তা প্রশ্নে রুল