রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, মূল বেতন ১২৬০০০ থেকে ২১০০০০ টাকা
Published: 15th, May 2025 GMT
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) অধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে জনবল নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ৪টি শূন্য পদে মোট ৪ জনকে নিয়োগ দেবে। ৮ মে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলঅ হয়েছে আগ্রহী ও যোগ্য প্রার্থীরা ম্যানেজিং ডিরেক্টর, স্টেশন ডিরেক্টর, চিফ সুপারিনটেনডেন্ট ও ডেপুটি চিফ সুপারিনটেনডেন্ট পদের জন্য আবেদন করতে পারবেন আগ্রহীরা। আগামী ২০ থেকে আবেদন শুরু হবে।
পদের বিবরণ—
১.
পদের নাম: ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
পদসংখ্যা: ১টি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং/নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।
মূল বেতন: ২,১০,০০০ টাকা।
২. পদের নাম: স্টেশন ডিরেক্টর।
পদসংখ্যা: ১টি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং/নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।
মূল বেতন: ১,৭৮,৮০০ টাকা।
৩. পদের নাম: চিফ সুপারিনটেনডেন্ট।
পদসংখ্যা: ১টি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং/ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।
মূল বেতন: ১,৪৬,৪০০ টাকা।
৪. পদের নাম: ডেপুটি চিফ সুপারিনটেনডেন্ট।
পদসংখ্যা: ১টি।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং/ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং/ নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি।
মূল বেতন: ১,২৬,০০০ টাকা।
আবেদনের জন্য কিছ শর্ত আছে। এগুলো হলো—
১. চুক্তির মেয়াদ হবে ৩ (তিন) বছর। তবে পারফরম্যান্স কর্তৃপক্ষের নিকট সন্তোষজনক বিবেচিত না হলে কর্তৃপক্ষ যেকোনো সময় চাকরির অবসান (Termination) করতে পারবেন। কোম্পানির প্রয়োজন থাকলে এবং পারফরম্যান্স কর্তৃপক্ষের নিকট সন্তোষজনক বিবেচিত হলে চুক্তি নবায়ন করা হতে পারে।
২. কর্মস্থল এনপিসিবিএল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
৩. এনপিসিবিএলের চাকরিতে যোগদানের সময় যোগদানকারীকে এ মর্মে অঙ্গীকার নামা (surety bond) দাখিল করতে হবে যে তিনি তাঁর পদের বিপরীতে কোনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর চুক্তির মেয়াদ পূর্তির আগে স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ করলে তিনি এনপিসিবিএল, সরকার বা অন্য যেকোনো কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তাঁর প্রশিক্ষণ বাবদ ব্যয়কৃত সমুদয় অর্থ এনপিসিবিএলের অনুকূলে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন।
৪. এনপিসিবিএলের চাকরিতে যোগদানের সময় যোগদানকারীকে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত একটি ঘোষণাপত্র দাখিল করতে হবে; এবং ঘোষণা মোতাবেক যোগদানকারীকে কোম্পানি বা রাষ্ট্রের বা সরকারের বা কোনো এনপিপির নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলে প্রতীয়মান হলে কর্তৃপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই চাকরির অবসানসহ যেকোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
আবেদনের পদ্ধতি—
আগ্রহী প্রার্থীরা এ লিংকে থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়: ৪ জুন, ২০২৫।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পদ র ন ম পদস খ য ব এসস
এছাড়াও পড়ুন:
পাহাড় থেকে পৃথিবীর পথে
পিঠে থুরুং (ঝুড়ি) বাঁধা এক জুমিয়া নারী। মাথায় পাগড়ির বা শিরস্ত্রাণের মতো একটা ট্যাংক। ছবির পরিসরজুড়ে বিশালাকৃতির সেই নারীর চারপাশে বন্দুকধারী অসংখ্য ছায়ামূর্তি। তাদের আকৃতি নারীর তুলনায় বহুগুণ খর্বকায়। ট্যাংকের নল দিয়ে সেসব ছায়ামূর্তির ওপর পড়ছে পাতা আর ফুল।
শিল্পী জয়দেব রোয়াজা কালি ও কলমে এই ছবি এঁকেছিলেন ২০২৩ সালে। তাঁর অন্য সব ছবির মতোই এটিও পাহাড়ের সমকালীন অবস্থাই কেবল তুলে ধরে না; বরং তাকে ভীষণভাবে ছাপিয়ে যায়। বাস্তবতা পেরিয়ে জাদুবাস্তবতার সীমায় এসে দাঁড়ায়। মানুষের জীবন, সংগ্রাম আর প্রকৃতি সব ভেঙেচুরে কবিতার একটি পঙ্ক্তির ভেতরে যেন প্রবেশ করে।
১৯৭৩ সালে খাগড়াছড়ির খামারপাড়ার একটি ত্রিপুরা পরিবারে জন্ম জয়দেব রোয়াজার। মা নীহারিকা ত্রিপুরা আর বাবা হিরণ্ময় রোয়াজা। হিরণ্ময় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে একটি হাসপাতালে চাকরি করতেন। শান্ত নিরিবিলি পাড়ার বাসিন্দা তাঁরা। পাহাড়, ঝিরি, ঝরনা আর জুমখেত দেখতে দেখতে বড় হওয়া। স্কুলে কবিতার বইয়ের ইলাস্ট্রেশন নকল করে খাতায় আঁকতেন। কবিতার চেয়ে ভালো লাগত ইলাস্ট্রেশন। শেষে এই ভালো লাগারই জয় হলো। বাংলাদেশের এই সময়কার এক উজ্জ্বল শিল্পী জয়দেব। তাঁর শিল্পকর্মের পরিচিতি ছড়িয়েছে সারা বিশ্বে।
একনজরে জয়দেবচারুকলার নতুন মাধ্যম পারফরম্যান্স আর্ট। জয়দেব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই এই মাধ্যমের প্রতি আকৃষ্ট হন। এই ধারার শিল্পীরা নিজের শরীরকেই করে তোলেন ক্যানভাস। সঙ্গে থাকে নানা প্রকাশভঙ্গি। পারফরম্যান্স করতে গিয়ে ছবি আঁকা ছাড়েননি তিনি। চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যের যেমন স্টোরিবোর্ড, তেমনি জয়দেবের পারফরম্যান্সের প্রতিটি ভঙ্গির ছবি আঁকা থাকে তাঁর স্কেচ খাতায়। এভাবেই দুই মাধ্যমকে যুক্ত করেছেন নিজের ধরনে। পাশাপাশি বড় ক্যানভাসেও ছবি আঁকেন। কালি ও কলমেই সিদ্ধহস্ত তিনি।
ভারতের কোচি বিয়েনাল, হংকং আর্ট বেজেল, অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে এশিয়া প্যাসিফিক ট্রায়েনিয়ালে অংশ নিয়েছেন তিনি। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১১টির বেশি দেশে তিনি পারফরম্যান্স করেছেন। হয়েছে চিত্র প্রদর্শনীও। যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেট মডার্ন মিউজিয়াম, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট, চীনের হংকংয়ের এম প্লাস, ফ্রান্সের প্যারিসের ক্যাডিস্ট ফাউন্ডেশন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবির গুগেনহাইম, ভারতের নয়াদিল্লির কিরণ নাদার মিউজিয়ামসহ বিশ্বের খ্যাতনামা বহু জাদুঘরে তাঁর শিল্পকর্ম রক্ষিত আছে। বাংলাদেশে তাঁর শিল্পসংগ্রহ রয়েছে সামদানি আর্ট ফাউন্ডেশন এবং দুর্জয় বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনে। শিল্পবিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রকাশনা আর্ট রিভিউ এশিয়া, আর্ট নিউজ, ফোর্বস এবং ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দু পত্রিকায় তাঁর শিল্পকর্মের সমালোচনা প্রকাশিত হয়েছে। আবুধাবির গুগেনহাইম মিউজিয়াম জয়দেবের একটি শিল্পকর্ম বেশ ভালো দামে কিনে নিয়েছে। বর্তমানে তিনি মুম্বাইভিত্তিক ঝাভেরি কনটেমপোরারি গ্যালারির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
পাহাড় আর ঝিরির পথে পথেখাগড়াছড়ি আর রাঙামাটির ঝিরি পথে বা কাপ্তাই হ্রদের নির্জনতায় সময় কাটে জয়দেব রোয়াজার। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এলেও জীবন কাটান পাহাড়ি জুমিয়াদের মতো। কখনো মাছ ধরতে চলে যান জেলেদের সঙ্গে। আবার কখনো ঝিরি পথে হেঁটে হেঁটে দিন কাটে তাঁর। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কামিলাছড়ি গ্রামে নির্জন হ্রদের ধারে গড়ে তুলেছেন স্টুডিও। সেখানে সপ্তাহের দুই দিন কাটে তাঁর। পাহাড় ও পাহাড়ের মানুষজনকে নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা বুনে তোলেন ক্যানভাসে।
জয়দেব দেশের শিল্পীসমাজ ও শিল্পবোদ্ধাদের জগৎ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করেন। তাঁর কথায়, ঢাকা তাঁকে কখনো টানে না। দু-এক দিন ঢাকা বা দেশের বাইরে থাকলে হাঁপিয়ে ওঠেন। ভাবেন, কখন ফিরবেন পাহাড়ে।
সম্প্রতি কামিলাছড়িতে তাঁর স্টুডিওতে গিয়ে দেখা গেল আট ফুট দীর্ঘ একটি ক্যানভাসে কাজ করছেন তিনি। তিনতলা স্টুডিওর বারান্দায় এসে দাঁড়ালে অবারিত নীল হ্রদের হাতছানি। হ্রদের পাড়ে ঢেউখেলানো পাহাড়ের সারি। সেদিকে তাকালে আচ্ছন্ন হয়ে যেতে হয়। বারান্দায় বসে কথায় কথায় জানালেন নির্জন এই পাহাড়ে জঙ্গল পরিষ্কার করে ছবি বিক্রির টাকায় এই স্টুডিও গড়ে তুলেছেন। স্ত্রী হাসনাহেনা পরশের সঙ্গে মিলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছেন। একটাই চাওয়া, একটু আড়াল, একটু নির্জনতা। ছবি আঁকার জন্য এটুকু পরিসর চেয়েছেন জীবন থেকে।
জয়দেব রোয়াজা