প্রতিটি মানুষের জীবনে থাকে ভাঙা-গড়ার গল্প। চলার পথে একাধিক সম্পর্ক তৈরি হয়। সব সম্পর্ক রক্তের নয়। তেমনই এক সম্পর্কের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’। যেখানে দুই নারী একে অপরের সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠে। ভাগাভাগি করে নেয় একে অপরের যাপন। সিনেমাটি নিয়ে লিখেছেন মীর সামী।

পাঁচ বছর আগের করোনার দিনগুলো শুধু সময় নয়, পরিবেশ-পরিস্থিতিতেও ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। পুরো দেশের মানুষ ছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কের পাশাপাশি জীবন-জীবিকা নিয়েও পড়তে হয়েছিল অনিশ্চয়তায়। মুক্তজীবন থেকে সবাই হয়ে পড়েছিলেন ঘরবন্দি। সেই অচেনা, স্থবির দিনগুলোতে ঢাকার এক নির্জন অ্যাপার্টমেন্টে শুরু হয়েছিল এক অনন্য গল্প।

যে গল্পের দুই কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জয়া এবং শারমিন। একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী; অন্যজন তাঁর সহকারী। করোনা মহামারির কারণে বাইরের জগতের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা একসঙ্গে কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন দীর্ঘ সময়। প্রথমদিকে, তাদের সম্পর্ক ছিল পেশাগত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, সেই সম্পর্কের পরিধি বাড়তে থাকে। একসঙ্গে রান্না, গল্প করা, পুরোনো স্মৃতিচারণ– সবকিছুতেই তারা একে অপরের সঙ্গী হয়ে ওঠে। তারপরও এ ঘনিষ্ঠতার মধ্যে ছিল অদৃশ্য দেয়াল। জয়ার তারকাখ্যাতি এবং শারমিনের সাধারণ জীবনের ফারাক, একটা সময় তাদের সম্পর্ককে জটিল করে তোলে। এ সম্পর্কের উত্থান-পতনের গল্প নিয়েই নির্মাতা পিপলু আর খান নির্মাণ করেছেন ‘জয়া আর শারমিন’ নামে সিনেমা। যেখানে জয়া চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী জয়া আহসান এবং শারমিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মঞ্চ অভিনেত্রী মহসিনা আক্তার। যৌথভাবে সিনেমার গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পিপলু আর খান ও নুসরাত ইসলাম। প্রযোজনায় পিপলু আর খানের অ্যাপেল বক্স ও জয়া আহসানের ‘সি তে সিনেমা। 

গত ২৭ এপ্রিল জয়া আহসান তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমার একটি মোশন পিকচার শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘কিছু গল্পের মুহূর্ত খুঁজে পেতে সময় লাগে। এমন এক সময়ে চিত্রায়িত যখন পৃথিবী স্থবির ছিল, আমাদের পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘জয়া আর শারমিন’ নীরবে অপেক্ষা করছিল। পাঁচ বছর পর, অবশেষে এটি দর্শকদের সামনে আসতে প্রস্তুত। সিনেমাটি দুই নারীর গল্প যারা নিজেদের ক্ষতি, বন্ধুত্ব এবং নারীত্বের গল্পে আবদ্ধ।’

জয়া বললেন, ‘করোনা মহামারির সময় যখন সবাই নিজেদের সঙ্গে সময় কাটাতে বাধ্য হয়েছিল, তখনকার সেই অভিজ্ঞতার প্রতিচ্ছবিও বলা যায় সিনেমাটি।’ লকডাউনে মানুষের ঘরবন্দি জীবনের গল্প বলতে গিয়ে জয়া নিজেও ডুবে গিয়েছিলেন সেই আবেগে– তাঁর মতে, অতিসংকীর্ণ পরিসরে গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হওয়া এ ছবিটি দিনশেষে দর্শকের চেতনায় বহু দিন থেকে থাকা অনবদ্য অনুভূতি ফের জাগিয়ে তুলবে।’ 

জয়ার এ কথায় বোঝা যায়, ছোট্ট পরিসরে, গভীর আবেগ নিয়ে তৈরি হয়েছে ছবিটি। সেই আবেগ দেখা যায় গত ১ মে প্রকাশ হওয়া সিনেমার ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের ট্রেলারেও। যেখানে ফুটে উঠেছে সময়ের স্তব্ধতা, জীবন ও জীবিকার অনিশ্চয়তা, আবার সেই নিঃসঙ্গতার মাঝে গড়ে ওঠা এক আশ্চর্য মমতা। কভিড-১৯ মহামারির দিনগুলোতে একই ঘরে দুই নারীর অন্য জীবন। জয়া এবং তাঁর গৃহকর্মী শারমিনের জীবনের কিছু দারুণ দৃশ্য। সেখানে যেমন লুডু খেলার আনন্দ রয়েছে, তেমন রয়েছে বিষাদের ছায়া। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এবং বাইরের দুনিয়া থেকে আসা দুঃসংবাদগুলো তাদের জীবনে নিঃশব্দে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা ও ভয় ঢুকিয়ে দেয়।

লকডাউনের সময় সিনেমার কাজ শুরু প্রসঙ্গে জয়া বললেন, ‘সেই সময়ের মানসিক অস্থিরতার দিনগুলোতে যখন বাসায় বসে ভয় আর আশঙ্কায় দিনগুলো কাটাচ্ছিলাম, তখন পরিচালক পিপলু আর খান ফোনে বললেন, ‘চলেন ছোট করে একটা শর্ট ফিল্ম বানিয়ে ফেলি।’ যেহেতু আমি একজন অভিনেত্রী, অভিনয় করতে পারছিলাম না, তখন ভাবলাম কাজটি করি, শুরুতে স্বল্পদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজটি শুরু হলেও হলো একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য।’

অতিমারির মধ্য দিয়ে চলা বিশ্বের যে কোনো মানুষ এই ছবির সঙ্গে নিজেকে মেলাতে পারবেন বলে দাবি করে জয়া বলেন, ‘জীবনের খণ্ড খণ্ড না-বলা অনুভূতিজুড়ে তৈরি এই ছবি মানুষের মনের জটিল বিষয় নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে।’ 

তাঁর মতে, ছবি অনেক সময় ছবি হয়ে ওঠে, বানাতে হয় না! জয়ার কথায়, কিন্তু ১৫ দিনের শুটিংটা একটা পাগলামি ছিল, এত কম মানুষ নিয়ে একটা ছবি শুট করা যায় সেটাও জানা হলো। প্যান্ডেমিকের সময় এ চলচ্চিত্রের শুটিং আমার জন্য একান্তই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ছিল। খুব ছোট একটি টিম নিয়ে, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে, একটি মাত্র বাড়িকে আমাদের পুরো পৃথিবী বানিয়ে আমরা কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতার ভেতরেই ছবির আবেগ, অনুভূতির ছায়া ছিল। আমরা লকডাউনের সেই সময়টাকেই এখানে বন্দি করেছি। স্থবিরতা, ভয়, আবার একইসঙ্গে একঘেয়েমির ভেতর লুকিয়ে থাকা অদ্ভুত সান্ত্বনা– সবকিছুই ছবির ফ্রেমে থেকে গেছে।’ 

পাঁচ বছর আগের ছবি কেন এই সময়ে? জানতে চাইলে জয়া বলেন, ‘আমি মনে করি, এই ছবি দেখা উচিত সেই সময়কে আবার ফিরে দেখার জন্য– নস্টালজিয়ার কারণে নয়; বরং ভাবার জন্য, সেই সময় আমাদের ভেতরে কী তুলে এনেছিল, আমরা কে ছিলাম, কীভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হলাম– এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে হলে জয়া আর শারমিন দেখতে হবে। আগামীকাল সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে।’

নির্মাতা পিপলু আর খান জানান, চলচ্চিত্রটিতে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, একাকীত্ব কীভাবে দুই মেরুর দু’জন মানুষের সম্পর্ককে কেমন করে বদলে দেয় এবং ভরসা, নির্ভরতা ও টিকে থাকার প্রশ্নগুলো সামনে নিয়ে আসে। এখানে সঙ্গ, ব্যক্তিগত সীমারেখা এবং সংকটকালে মানবিক সম্পর্কের সূক্ষ্ম পরিবর্তনগুলোর গল্প ফুটে ওঠে।’ 

সিনেমাটি নিয়ে মহসিনা আক্তার বলেন, লকডাউনের সেই অন্ধকার সময়ে ৮-৯ জন মানুষের একটা দল, যারা লকডাউনের সময় একটা ঘরে থেকে কাজটা করেছি। আমরা বেশির ভাগ সময়ই এক ছাদের নিচে কাটিয়েছি। ছোট্ট ফ্ল্যাটে আমরা কাজটা করেছি, ঘর আর মানুষগুলো দ্রুতই আপন হয়ে উঠেছিল। বলা যায়, এটা সারাজীবন মনে রাখার মতো একটি সিনেমা।’

শুটিংয়ের সময়গুলো নিয়ে মহসিনা বলেন, ‘জয়া আপার সঙ্গে খুব সুন্দর সময় কেটেছে! তাঁর এত বছরের অভিজ্ঞতায় তিনি জানেন, তাঁর করণীয় কী। আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করে আনন্দিত।’ 
‘জয়া আর শারমিন’ শুধু দু’জন নারীর বন্ধুত্বের গল্প নয়; বরং করোনাকালের মানুষের একাকীত্ব, সামাজিক ভেদাভেদ এবং মানবিক সহানুভূতির প্রতিফলন। এমন গল্প আজকের দর্শকের আবেগকে ছুঁয়ে যাবে বলে আশাবাদী জয়া আহসান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জয় আহস ন আর খ ন কর ছ ন জ বন র র জ বন আহস ন র সময় অপর র

এছাড়াও পড়ুন:

সময় এখন বৃক্ষ রোপণের

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর পাশাপাশি পরিচর্যা জরুরি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ‘গাছ লাগাই, গাছ বাঁচাই’ প্রতিপাদ্যে প্রতি বছর আয়োজন করে বৃক্ষরোপণ উৎসবের। এর ধারাবাহিকতায় কুড়িগ্রাম, পাবনার ঈশ্বরদী ও  ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সুহৃদরা বিভিন্ন স্থানে ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছের চারা রোপণ করেন

কুড়িগ্রাম
সুজন মোহন্ত
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৃক্ষকে বলেছিলেন ‘মহাপ্রাণ’। ‘সৃষ্টির প্রথম বাণী তুমি, হে আলোক–/এ নব তরুতে তব শুভদৃষ্টি হোক।/একদা প্রচুর পুষ্পে হবে সার্থকতা,/উহার প্রচ্ছন্ন প্রাণে রাখো সেই কথা......।’ কবিগুরুর এ সুর ধরে সুহৃদরাও বৃক্ষ রোপণ ও সবুজ পৃথিবীর স্বপ্ন বুনেন। কেন্দ্রীয় সুহৃদ সমাবেশের নিয়মিত আয়োজন ‘বৃক্ষরোপণ উৎসব’-এর অনুসরণে কুড়িগ্রামে কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৯ জুন বিকেলে শহরে স্টেশন রোডে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপণ করেন সুহৃদরা। ‘বৃক্ষ লাগাই ভূরি ভূরি, তপ্ত বায়ু শীতল করি’ প্রতিপাদ্যে কুড়িগ্রাম রেলস্টেশনের পরিত্যক্ত জমিতে জলপাই, জাম, অর্জুন, কৃষ্ণচূড়া, আম, কাঁঠাল, নিমসহ ফলদ, বনজ ও ঔষধি চারার বিভিন্ন প্রজাতির অর্ধশতাধিক গাছ লাগানো হয়। 
এ সময় স্থানীয় রাজনৈতিক সাঈয়েদ আহমেদ বাবুসহ স্থানীয় সুহৃদের মধ্যে কার্যক্রমে অংশ নেন রিফাত হোসেন, জোবায়ের ইসলাম আকাশ, বাইজিদ মুস্তাকিম, একান্ত সেন, মার্জিয়া মেধা, তারেক খান, রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।
সাঈয়েদ আহমেদ বাবু বলেন, ‘বৃক্ষ রোপণের গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থ ও বাসযোগ্য পৃথিবীর জন্য বৃক্ষ রোপণ অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ গাছ জীবনের জন্য জরুরি। 
কর্মসূচি শেষে সুহৃদরা সাংগঠনিক সভা 
করেন। সভায় বৃক্ষ রোপণের পরবর্তী করণীয় নির্ধারিত হয়।’

 

ঈশ্বরগঞ্জ 
বিলকিস জাহান সেতু 
 ঈশ্বরগঞ্জ সুহৃদ সমাবেশ ২০ জুন সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে কয়েক প্রজাতির বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করে। নবগঠিত কমিটির সুহৃদদের উপস্থিতিতে কর্মসূচি সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন সুহৃদ সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রানা। কর্মসূচি শেষে ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজের একটি কক্ষে এ বিষয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গাছ লাগানোর উপকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে সুহৃদের বৃক্ষরোপণ উৎসব সফল করতে গাছ লাগানো ও পরিচর্যার ওপর গুরুত্ব আরোপময় করা হয়। v
সুহৃদ, ঈশ্বরগঞ্জ

 

ঈশ্বরদী
সেলিম সরদার
ঈশ্বরদী সমকাল সুহৃদ সমাবেশ ও ‘সবুজ পৃথিবী’র যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদ চত্বরের পুকুর পাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষ রোপণ করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ।
‘সবুজ পৃথিবী’ ঈশ্বরদী উপজেলা শাখার সভাপতি সেলিম সরদারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সুহৃদ ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। v
সমন্বয়ক, সুহৃদ সমাবেশ, ঈশ্বরদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ