উপকূলীয় জেলা বরগুনা, পটুয়াখালী কিংবা ঝালকাঠির কোনো গ্রাম্য পথ ধরে হেঁটে গেলে হঠাৎ চোখে পড়তে পারে ঝুলন্ত একঝাঁক হলুদ ফুল। যেন সোনা ঝরছে গাছ থেকে। ফুলের ঘনত্ব, রঙের উজ্জ্বলতা আর বাতাসে দোল খাওয়া সৌন্দর্যে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে না থেকে পারা যায় না। এটিই সোনালু–সোনাঝরা এক অপরূপ ফুল, যার পেছনে আছে ইতিহাস, নামের বাহার ও ঔষধি গুণের সমাহার।
গ্রীষ্মের প্রখরতা যখন প্রকৃতিকে ক্লান্ত করে তোলে, তখনই সোনালুর আবির্ভাব ঘটে প্রকৃতির নিজস্ব এক পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে। গাছে গাছে দুলতে থাকে ঝাড়বাতির মতো হলুদ ফুলের থোকা। নাম চমকপ্রদ–সোনালু, সোনারু, সোনাইল, বাঁদরলাঠি, রাখালনড়ী, কানাইনড়ী প্রভৃতি। সংস্কৃত নামগুলো যেন আরও কাব্যময়–আরগ্বধ, অমলতাস, রাজবৃক্ষ, স্বর্ণাঙ্গ, হেমপুষ্প। ইংরেজি নাম গোল্ডেন সাওয়ার ট্রি। বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাশিয়া ফিস্টুলা। এটি ক্যাসিয়ালপিনিছেচ পরিবারের সদস্য। গাছটির আদিনিবাস পূর্ব এশিয়া। তবে হাজার বছর আগেও এ গাছ উপমহাদেশে ছিল। মহাকবি ব্যাসের ‘ভগবত’ কিংবা কালিদাসের ‘মেঘদূত’-এ রয়েছে এ ফুলের গুণকীর্তন।
সোনালু গাছ আকারে ছোট। ডালপালা ছড়ানো ছিটানো। দীর্ঘ মঞ্জরিদণ্ডে ঝুলে থাকা ফুলগুলোর পাপড়ির সংখ্যা পাঁচটি। সবুজ রঙের একমাত্র গর্ভকেশরটি কাস্তের মতো বাঁকা। এ গাছের ফল বেশ লম্বা, লাঠির মতো গোল। গাঢ় সবুজ রঙের পাতাগুলো যৌগিক, মসৃণ ও ডিম্বাকৃতির। ফুল এক থেকে দেড় ইঞ্চি পর্যন্ত চওড়া হয়।
এ ফুলের গাছ কাঠ হিসেবে তেমন মূল্যবান নয়। তাই এর চাষ হয় না বললেই চলে। নিজে থেকেই বেড়ে ওঠে পথের ধারে, জঙ্গলে বা গ্রামের কোনে। যখন ফুল ফোটে, তখন তার সৌন্দর্যের কাছে হার মানে সবকিছু। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গাছগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত।
গাছটি অবহেলিত হলেও এর ঔষধি গুণ অপরিসীম। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে এই গাছকে ‘রাজবৃক্ষ’ বা ‘রাজকীয় বৃক্ষ’ বলা হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড.
আমতলী পৌর শহরের ব্যবসায়ী ফয়সাল জানান, লাকড়ি ছাড়া গাছটির খুব একটা ব্যবহার নেই।
হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, গাছটি দেখতে তেমন আকর্ষণীয় নয়, কিন্তু ফুল ফোটার সময় এর রূপই আলাদা। মন জুড়িয়ে যায়।
এক সময় গ্রামবাংলার পথেপ্রান্তরে সোনালু গাছ ছিল প্রকৃতির স্বাভাবিক দৃশ্য। আজ তা হারিয়ে যাচ্ছে। মূলত কাঠের কোনো অর্থনৈতিক মূল্য না থাকায় কিংবা গাছটির ধীরলয়ে বাড়ার জন্য কেউ আর আগ্রহ দেখায় না রোপণে। এই সোনালি সৌন্দর্যের ঝরনা কেবল প্রকৃতির দয়ায় টিকে আছে।
তবুও প্রকৃতি মাঝে মাঝে আমাদের মনে করিয়ে দেয়–প্রকৃত সৌন্দর্য সোনার দামে মেলে না, মেলে নির্জন পথের ধারে সোনালুর মতো এক অবহেলিত ফুলের হাসিতে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চালিতাবুনিয়ায় নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ঢাকায় মানববন্ধন
নদীভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার বেলা ১১টায় এ কর্মসূচি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে নেতৃত্ব দেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম। উপস্থিত ছিলেন চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাহাউদ্দীন হাওলাদার, সিনিয়র সহসভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন, ঢাকার চালিতাবুনিয়া সমিতির সহসভাপতি রাজিব জুবায়ের ও বাদল ফরাজী এবং বিশিষ্ট শিল্পপতি রাকিবুল হাসান আলমাস।