২ / ৮লাল সোনাইল ফুল ক্যাসিয়া জাভানিকা নামেও পরিচিত

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘স্যার, ফিনিশ’ বলে নিশ্চিত করা সেই হত্যার তদন্তে এবার সিআইডি

চার বছর আগে ২০২১ সালে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে দিনদুপুরে শিশুসন্তানের সামনে সাহিনুদ্দিনকে (৩৩) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পর এক ব্যক্তি ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়ালকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘স্যার, ফিনিশ।’ এই কথোপকথনের অডিও ক্লিপ পরীক্ষা করে পুলিশ ও র‍্যাব নিশ্চিত হয়, কণ্ঠটি সুমন ব্যাপারীর। তিনি বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সহসভাপতি।

আজ ১৬ মে সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে। আলোচিত এই হত্যা মামলার অধিকতর তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, জামিনে বের হয়ে আসা মামলার আসামিরা হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।

সিআইডির আগে মামলাটি তদন্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তারা মামলার প্রধান আসামি সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক অভিযোগপত্র দিয়েছিল। তবে দুবারই মামলার বাদী সাহিনুদ্দিনের মা আকলিমা বেগম আদালতে নারাজি দেন। সবশেষ আদালত সিআইডিকে মামলার অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পিবিআই। এতে বলা হয়, আউয়ালের ইন্ধনে সাহিনুদ্দিনকে খুন করা হয়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ২০২১ সালের ১৬ মে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিকস রোডে ছয় বছর বয়সী শিশুসন্তানের সামনে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সাহিনুদ্দিন খুন হওয়ার পরদিন তাঁর মা আকলিমা বেগম আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে রাজধানীর পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন।

ডিবি ও পিবিআই দুই দফায় অভিযোগপত্র দিলেও নারাজি জানান বাদী। আদালত সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

গত বুধবার রাতে সাহিনুদ্দিনের বড় ভাই মাঈনুদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়। অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ডিবি ও পিবিআই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আবদুর রাজ্জাক, শফিকুল, কামরুল ও লিটনকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেয়। তাঁরা আউয়ালের লোক। এই হত্যায় তাঁরা জড়িত। আর আউয়ালের সহযোগী সুমন ওরফে ডিশ সুমন এই হত্যায় জড়িত থাকলেও তাঁর নাম বাদ পড়ে। অভিযোগপত্রে তাঁদের নাম না এলে তাঁরা তা মেনে নেবেন না।

মাঈনুদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন জামিনে থাকা আউয়ালসহ ২০ আসামি। এখন আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁদের। মাসখানেক আগে আউয়ালের নির্দেশে আসামিরা পল্লবীর বুড়িরটেকে তাঁদের ১২ কাঠা জমি দখল করে নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

আউয়াল জামিনে আছেন বলে মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে। গত বুধবার রাতে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হত্যার পর তাঁকে ‘স্যার, ফিনিশ’ বলে যে ফোন করা হয়েছিল বলে প্রচার করা হচ্ছে, তদন্তে তা প্রমাণ করতে পারেনি পুলিশ। জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন আউয়াল। উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, মাঈনুদ্দিনরা তাঁর প্রকল্পের জমি দখল করে নিয়েছেন।

মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) সাফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, সাহিনুদ্দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগ করে নারাজি আবেদনে যাঁদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আসামিদের হুমকিসহ বাদীর পরিবারের জমি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ বিষয়ে তিনি জানেন না। এ ধরনের কিছু হয়ে থাকলে বাদীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১৯৭৫ সালের পর বুড়িরটেক-সংলগ্ন আলীনগরে সাহিনুদ্দিনের পরিবারসহ অন্যদের জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। তবে তা দীর্ঘদিন খালি পড়ে ছিল। যাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাঁরা আউয়ালের পূর্বপরিচিত। এই সূত্রে তাঁরা জমি ফেরত পেতে আউয়ালের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলেন। তবে আউয়াল সেই জমি দখলে নিয়ে সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম হাভেলি প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড।

অভিযোগ রয়েছে, জমি দখলে রাখতে আউয়াল ১৫ থেকে ২০ জনের একটি ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ গড়ে তুলেছিলেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন সুমন ব্যাপারী।

সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়াল

সম্পর্কিত নিবন্ধ