ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন সচরাচর দেখা যায়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনে নেতৃত্ব নির্বাচনের সাথেও সবাই পরিচিত। কিন্তু শুনলে অবাক হবেন কবরস্থান পরিচালনা কমিটি নিয়ে নির্বাচন এবং ভোট গ্রহণ হবে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য উত্তরের জেলা পাবনার চাটমোহরে এমনই এক ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় একটি কবরস্থান কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে।

ইতোমধ্যে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে গঠন করা হয়েছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষণা করা হয়েছে তফশিল। শুধু কী তাই? দুইজন প্রার্থী মনোনয়ন কেনার পর তা দাখিলও করেছেন। সেই সাথে দেওয়া হয়েছে প্রতীক বরাদ্দ। দুই প্রার্থী নিজেদের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য চষে বেড়াচ্ছেন ভোটার এলাকা। 

বিষয়টি পুরো উপজেলা জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে বেশ উৎসাহ ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নে বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের সমাজ নিয়ে গঠিত ‘জান্নাতুল বাকি’ কবরস্থান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর স্থানীয়ভাবে সভাপতিসহ কমিটি গঠনের জন্য তোড়জোড় শুরু হয়। স্থানীয় বিএনপি'র নেতারা সভাপতির পথ দখল করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। 

তাহলে সভাপতি কে হবেন? এমন প্রশ্নে দুই পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় উত্তেজনা। পরে বিষয়টি থানা পর্যন্ত গড়ায়। এলাকাবাসী থানার ওসির কাছে দাবি জানান ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচন করা হোক। 

এদিকে, কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টারকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ঘোষণা করা হয় তফশিল। বালুদিয়ার, মহরমখালী ও জগতলা (আংশিক) তিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন পুরুষকে ভোটার করে ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোট ৮০০ জন ভোটার গোপন ব্যালটে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য কবরস্থান কমিটির ‘সভাপতি’ নির্বাচিত করবেন। 

আগামী ২৪ মে (শনিবার) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কবরস্থান সংলগ্ন ঈদগাহ্ ময়দানে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনের মতোই এই নির্বাচন এলাকায় উৎসাহের আমেজ সৃষ্টি করেছে। চলছে প্রার্থীদের প্রচারণা আর আপ্যায়ন। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন কবরস্থান উন্নয়নের বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।

নির্বাচন কমিশন প্রধান ও কবরস্থান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাষ্টার বলেন, “জান্নাতুল বাকি কবরস্থান পরিচালনা কমিটি গঠনে ‘সভাপতি’ পদ নিয়ে স্থানীয় বিএনপির মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকজন সভাপতি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা চাটমোহর থানার অফিসার ইনচার্জের (ওসি) স্মরণাপন্ন হই। তিনি নির্বাচনের পরামর্শ দেন। অতঃপর আমাকে নির্বাচন কমিশন প্রধান করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিটি গঠন করা হয়।”

তিনি জানান, নির্বাচনী তফশিল ঘোঘণা করার পর সভাপতি পদের জন্য ৩০ হাজার টাকা জমা দিয়ে দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র ক্রয় করার পর তা দাখিলও করেছেন। বাছাই শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী দুজন হলেন আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা মার্কা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার মার্কা)। মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ প্রাপ্ত ৬০ হাজার টাকায় নির্বাচন পরিচালনা করা হবে। 

এ ব্যাপারে চাটমোহর থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, “কবরস্থানের সভাপতি নির্বাচন করা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ হয়। পরে পূর্বের কমিটি বিষয়টি আমাকে জানায়। তবে, এখনো দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে জেনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

এদিকে সভাপতি পদের দুই প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস (ছাতা) এবং শরিফুল ইসলাম (চেয়ার) নিজেদের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের দিন প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দাবি করেন তারা।

ঢাকা/শাহীন/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সাম্যর গ্রামে শোকের ছায়া, মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যের (২৫) মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সড়াতৈল গ্রামে বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজনসহ এলাকাবাসী। সাম্যের মরদেহের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। 

নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য সড়াতৈল গ্রামের ফরহাদ সরদারের ছেলে। ঢাবির শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের  শিক্ষার্থী। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। 

বুধবার (১৪ মে) খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য উল্লাপাড়ার মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। মেধাবী ছাত্র ছিলেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। তার মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করেন।

নিহত সাম্যের চাচা কাউসার আলম বলেন, ‘‘চার সন্তান নিয়ে তার ভাই ঢাকাতেই বাস করেন। সাম্যদের পরিবারের সবাই ঈদ ও বিশেষ কোনো আয়োজনে গ্রামে আসতো। গত মঙ্গলবার (১৩ মে) রাত ১টার দিকে জানতে পারি সাম্যকে খুন করা হয়েছে। জানি না কোন অপরাধে আমার ভাতিজাকে খুন করা হলো?’’

ভাতিজার মরদেহের অপেক্ষা করছেন জানিয়ে কাউসার আলম বলেন, ‘‘ঢাকায় জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। আমরা সবাই শেষবারের মতো তাকে দেখার অপেক্ষায় আছি।’’

স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘সাম্য অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। সড়াতৈল জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে সাম্যর জন্য কবর খোড়া হচ্ছে।’’

এদিকে, শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারসহ ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।

অদিত্য//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কবরস্থান কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্ব, সভাপতি পদে ভোট
  • মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত শিক্ষার্থী সাম্য
  • নিজ গ্রামের কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য
  • সাম্যকে নিজ গ্রামে দাফন করা হবে
  • সাম্যর গ্রামে শোকের ছায়া, মরদেহের অপেক্ষায় স্বজনেরা