কেবল দেখার জন্যই যে আলো চাই, তা নয়। আলোর প্রয়োজন আরও বহু কাজে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানান শাখায় আলোকশক্তির ব্যবহার বহুমাত্রিক। রোগনির্ণয় ও রোগের চিকিৎসায় আলোর প্রযুক্তিগত ব্যবহার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মানবকল্যাণে আলোর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক:

অণুবীক্ষণযন্ত্রে আলো

রোগের ধরন ও জীবাণু শনাক্ত করার কাজে অণুবীক্ষণযন্ত্র বা মাইক্রোস্কোপ প্রয়োজন। মাইক্রোস্কোপে লেন্সের সাহায্যে ক্ষুদ্র বস্তুকে বড় করে দেখা যায়। ধরা যাক, কারও দেহে একটি টিউমার হয়েছে। টিউমারটি অস্ত্রোপচারের সাহায্যে অপসারণ করা হলো। ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াজাত করে মাইক্রোস্কোপের নিচে এ টিউমারের ধরন পরীক্ষা করা যাবে। এ টিউমারের ভেতর যে কোষ রয়েছে, তা স্বাভাবিক কি না, এতে কোনো ক্যানসার কোষ আছে কি না কিংবা কোষের বিন্যাস কেমন—সবই জানা যাবে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে। কফ, প্রস্রাব, ক্ষতস্থানের রস প্রভৃতি নমুনায় জীবাণুর উপস্থিতি ও জীবাণুর ধরন নিশ্চিত করার জন্যও মাইক্রোস্কোপ আবশ্যক।

দর্পণে রোগনির্ণয়

দর্পণ বা আয়নায় আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগানো হয়। মুখের ভেতরের অংশ পরীক্ষা করে দেখতে দন্তচিকিৎসকেরা দর্পণের সহায়তা নেন। মুখগহ্বরের একেবারে ভেতর পর্যন্ত বা শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সহজেই দেখা যায় এসব দর্পণের সাহায্যে। রোগীও খুব একটা অস্বস্তি বোধ করেন না। নাক কান গলা বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজেও দর্পণ ব্যবহার করা হয়।

এন্ডোস্কোপ ও কোলোনোস্কোপ

এন্ডোস্কোপ ও কোলোনোস্কোপে ব্যবহার করা হয় লেন্স। অর্থাৎ এখানেও রয়েছে আলোকপ্রযুক্তি। খাদ্যনালি বা পাকস্থলীর ভেতরটা দেখতে চিকিৎসককে সহায়তা করে এন্ডোস্কোপ। অন্যদিকে বৃহদান্ত্রের ভেতরটা দেখার জন্য কাজে আসে কোলোনোস্কোপ।

রোগনির্ণয়ে আলোর আরও ব্যবহার

রক্তে নানান কিছুর মাত্রা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় স্পেকট্রোফটোমিটার নামের একটি যন্ত্র। একটি নমুনায় কোনো একটি নির্দিষ্ট উপাদান ঠিক কী পরিমাণে আছে, তা আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকেই জানতে পারা যায় এ যন্ত্রের সাহায্যে। অন্যদিকে আবার এক্স–রে, সিটি স্ক্যান বা এমআরআইয়ের ফিল্ম স্পষ্টভাবে দেখার জন্য যে বক্সে রাখা হয় (ভিউ বক্স), সেখানেও থাকে আলো।

চিকিৎসায় লেজার ও ফটোথেরাপি

নানান রোগের চিকিৎসায় লেজারপদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। এটিও আলোকশক্তিরই এক রূপ। চোখের সমস্যা সমাধানে যে ল্যাসিক করানো হয়, সেটি লেজারভিত্তিক একটি পদ্ধতি। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যারও সমাধান হয় লেজারের সাহায্যে। নবজাতকের জন্ডিসের চিকিৎসায় ফটোথেরাপি দেওয়া হয়। সেখানে ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোকরশ্মি।

চোখের জন্য আরও আলো

চোখ পরীক্ষার সময় দূরের লেখা পড়তে বলা হয়। একজন ছয় মিটার দূর পর্যন্ত ঠিকভাবে পড়তে পারলে বলা হয়, তাঁর ‘ভিশন ৬/৬’। তাহলে কি সব চক্ষুবিশেষজ্ঞের চেম্বারের দৈর্ঘ্য ছয় মিটার হতেই হয়? না। একদমই তা নয়। তিন মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ঘরেই একজন চক্ষুবিশেষজ্ঞ এ পরীক্ষা করে ফেলতে পারেন অনায়াসে। কীভাবে, জানেন? আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে। তিন মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ঘরের দৈর্ঘ্য বরাবর এক প্রান্তে বসে থাকা একজন তাঁর পেছন দিকের দেয়ালে থাকা বর্ণগুলোকে তাঁর সামনে ঠিক বিপরীত দিকে রাখা আয়নায় কতটা স্পষ্টভাবে দেখতে পান, তা থেকেই বোঝা যায়, ছয় মিটার দূরত্বে তাঁর দৃষ্টিশক্তি কেমন। কারণ, তাঁর পেছনের দেয়াল থেকে সামনের আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আলো আবার তাঁর চোখে ফেরত আসছে। অর্থাৎ আলোর অতিক্রান্ত পুরো পথের দূরত্ব ছয় মিটারই হচ্ছে। চোখের ভেতরকার বেশ কিছু পরীক্ষা করার জন্য চক্ষুবিশেষজ্ঞরা একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করেন, যার নাম স্লিট ল্যাম্প। এতেও আছে আলোর ব্যবহার। আবার ধরুন, কারও রেটিনা, অপটিক ডিস্ক বা রক্তনালি দেখা প্রয়োজন। তখন একজন চিকিৎসক অফথ্যালমোস্কোপ নামে আরও একখানা ছোট যন্ত্রের সাহায্য নেন। এতেও হয় আলোর ব্যবহার।

অস্ত্রোপচারে আলো

অস্ত্রোপচারের টেবিলে এমনভাবে আলোর ব্যবস্থা করা হয়, যাতে ছায়া না পড়ে। এর ফলে শল্যচিকিৎসক কাজটি করেন নির্বিঘ্নে। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে শল্যচিকিৎসা করার ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয় ক্যামেরাযুক্ত আলোক সরঞ্জাম। পেটে ছোট ছোট ছিদ্র করে এ সরঞ্জামের সাহায্যেই পেটের ভেতরকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাইরে থেকে দেখতে পান একজন শল্যচিকিৎসক।

ইনফ্রারেড বা অবলোহিত রশ্মি

ব্যথা সারাতে ইনফ্রারেড রশ্মির সাহায্য নেওয়া হয়। এটি আলোর এক বিশেষ রূপ। নির্দিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যমে দেহের নির্দিষ্ট অংশে এ রশ্মি প্রয়োগ করা হয় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য।

অতিবেগুনি রশ্মি

কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করার কাজে অতিবেগুনি আলোকরশ্মি কাজে লাগানো যায়। নমুনায় নির্দিষ্ট জিনের উপস্থিতিও নির্ণয় করা যায় অতিবেগুনি রশ্মির সাহায্যে।

ডা.

রাফিয়া আলম: ক্লিনিক্যাল স্টাফ, নিউরোমেডিসিন বিভাগ,
স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর র ব যবহ র খ র জন য ছয় ম ট র চ ক ৎসক আল র প পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র

প্রাচীন গল্পে আছে, ইকারাস মোমের ডানা নিয়ে সূর্যের খুব কাছে উড়ে গিয়েছিল। তখন মোম গলে গেলে ইকারাস নিচে পড়ে যায়। সৃজনশীল এক ফটোগ্রাফার সম্প্রতি সূর্যের দারুণ এক ছবি তুলে সেই দৃশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় একজন স্কাইডাইভার মাত্র এক সেকেন্ডের ভগ্নাংশের জন্য সূর্যের সামনে দিয়ে নেমে যান। ঠিক তখনই তাঁকে ক্যামেরাবন্দী করেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি। জ্বলন্ত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে যেন এক মানব প্রতিকৃতি নিচে নেমে গেল, এমন দৃশ্য ধরা পড়ে ক্যামেরা লেন্সে। দৃষ্টিবিভ্রমের এক অসাধারণ কীর্তি তৈরি করেছেন অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি নিখুঁতভাবে তাঁর ক্যামেরা দিয়ে একজন স্কাইডাইভারকে ক্যামেরার সংকীর্ণ ফিল্ড অব ভিউয়ের মধ্য দিয়ে নেমে যাওয়ার সময় ধারণ করেন। ছবিটি বেশ পরাবাস্তব এক অনুভূতি তৈরি করেছে। ইকারাসকে নিয়ে প্রাচীন মিথের সঙ্গে ছবিটি তুলনা করেছেন অনেকেই।

অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি চাঁদ ও সূর্যের অত্যন্ত সূক্ষ্ম ছবি তোলার জন্য পরিচিত। তিনি সূর্যের সামনে স্কাইডাইভারের এই একটি মাত্র ছবির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সূর্যের ছবি তোলা এমনিতেই কঠিন কাজ। সেখানে সূর্যের সামনে গতিশীল একটি বিমান বা একজন পতিত মানবকে একই ফ্রেমে আনা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিমানটির গতিপথ, সূর্যের কোণ, ক্যামেরার অবস্থান ও স্কাইডাইভারের অবতরণের মতো সব বিষয়কে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে এক করে কাজটি হয়েছে।

অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার অ্যান্ড্রু ম্যাককার্থি বলেন, ‘বলা যায়, একেবারে অযৌক্তিক একটি কাজ করেছি। যদিও চূড়ান্ত ছবিটি দারুণ এক অনুভূতি দেয়। স্কাইডাইভার ছিলেন ইউটিউবার ও সংগীতজ্ঞ গ্যাব্রিয়েল সি ব্রাউন। সে সূর্যের উত্তাল হলুদ পৃষ্ঠের বিপরীতে একটি কালো সিলুয়েট বা ছায়ামূর্তি হিসেবে ছবিতে চলে এসেছে। সূর্যের অবস্থান ৯ কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে হলেও ক্যামেরায় দারুণভাবে দেখা যাচ্ছে সব। ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করা ছবি অসম্ভব বলে মনে হয়। আগুনের মতো সৌর ক্রোমোস্ফিয়ারের আবহের বিপরীতে একটি সত্যিকারের মানব চিহ্ন আমাদের মুগ্ধ করে। দেখে মনে হবে যেন, মহাকাশে কেউ নিচে পড়ে যাচ্ছে।’

স্কাইডাইভাররা ব্রাউনের ৩ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে পতন শুরু করলে প্রায় ১০ সেকেন্ড সময় ব্যয় করে প্যারাসুট খোলার আগে ছবি তোলার সুযোগ মেলে। ম্যাককার্থি একটি লুন্ট ৬০ মিলিমিটার এইচ–আলফা ক্যামেরায় তার ফ্রি ফলের ছবি তোলেন। একটি এএসআই ১ হাজার ৬০০ মিলিমিটারে একক এক্সপোজার ধারণ করা হয়। আসলে এই বিভ্রমের মূল কারণ হচ্ছে দূরত্বের সামঞ্জস্য। ব্রাউন একটি ছোট বিমান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ ফুট ওপর থেকে লাফ দেন। আর ম্যাককার্থি প্রায় আট হাজার ফুট দূরে অবস্থান করেছিলেন। স্কাইডাইভার অবশ্যই সূর্যের কাছে ছিলেন না। শুধু ক্যামেরার দৃষ্টিকোণ থেকে নিখুঁত অবস্থানের কারণে স্কাইডাইভারকে অসম্ভব কাছাকাছি দেখাচ্ছিল। আসলে লাফ দেওয়ার আগে বিমানটিকে সঠিক অবস্থানে আনার জন্য ছয়বার চেষ্টা করতে হয়েছে। স্কাইডাইভারকে ফ্রেমে ধরার জন্য মাত্র একবারের সুযোগ ছিল। ম্যাককার্থি তাঁর মনিটরে সেই ক্ষুদ্র অবয়বটিকে সূর্যের আলোর সঙ্গে মিলিয়ে একটি নিখুঁত অবয়ব ধারণ করেন।

এই ছবিকে অনেকেই পৌরাণিক রূপকথার সঙ্গে তুলনা করছেন। গ্রিক মিথের ইকারাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ম্যাককার্থির এ ছবিটি সেই আখ্যানকেই একটি আধুনিক ও স্পষ্ট রূপে যেন তুলে ধরছে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘১৫ হাজার সেফটিপিন শাড়িতে লাগালেও, তারা খুঁত বের করবে’
  • এপস্টেইনের নথি প্রকাশের পক্ষে হঠাৎ কেন অবস্থান নিলেন ট্রাম্প
  • এশিয়ার প্রভাবশালী নারী ব্যবসায়ী কারা, কীসের ব্যবসা তাঁদের
  • করদাতা মারা গেলেও যে কারণে কর দিতে হয়, কীভাবে দেওয়া হয়
  • ৩ কোটি টাকা, ব্যক্তিগত উড়োজাহাজসহ আরও যা যা পান একজন মিস ইউনিভার্স
  • গায়িকা থেকে বিধায়ক, মৈথিলীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুসারী চমকে ওঠার মতো
  • সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিলেন উপদেষ্টার এপিএস
  • বিএনপি নেতা খুন: অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফেসবুকে লিখলেন ‘আউট’
  • সাজা হলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্টের’ আবেদন করা হবে
  • সূর্যের সামনে স্কাইডাইভার, তৈরি হয়েছে এক অলীক আলোকচিত্র