ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) প্রেসিডেন্ট এডনাল্ড রদ্রিগুয়েজকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেছেন আদালত। তত্ত্বাধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে রিও ডি জেনিরোর বিচারিক আদালতের বিচারপতি গ্যাব্রিয়েল ডি অলিভেইরা ফার্নান্দো সার্নিকে দায়িত্ব নিয়েছেন।

পদচ্যুত হওয়ার মাত্র তিনদিন আগে এডনাল্ড রদ্রিগুয়েজ ব্রাজিল জাতীয় দলের হেড কোচ হিসেবে কার্লো আনচেত্তিকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমনকি লা লিগা মৌসুম শেষ হওয়ার আগে এবং রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের আগে ইতালিয়ান কোচ ডন কার্লোকে নিয়োগের বিষয়ে বিবৃতিও দিয়েছে সিবিএফ।

এডনাল্ডকে অপসারণ করায় ব্রাজিলের ডাগ আউটে কার্লো আনচেলত্তির দাঁড়ানো নিয়ে কোন শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নে পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন ফার্নান্দো সার্নি। তিনি জানিয়েছেন, এডনাল্ডের অপসারণের সঙ্গে আনচেলত্তির চুক্তির কোন দ্বন্দ্ব নেই। কোন সমস্যা ছাড়াই আনচেলত্তি ব্রাজিলের ডাগ আউটে দাঁড়াবেন।

ব্রাজিলের সংবাদ মাধ্যম গ্লোবো আরও জানিয়েছে, ফার্নান্দো সার্নি বলেছেন- কার্লো আনচেলত্তির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সিবিএফের, এডনাল্ড রদ্রিগুয়েজের সঙ্গে নয়, ‘আমি এটা নিয়ে কোন ঝামেলা করতে যাচ্ছি কিনা? না, ফুটবল চলবে ফুটবলের মতো। আমি কেবল সাময়িক সময়ের জন্য দায়িত্ব পেয়েছি।’

এডনাল্ডকে অপসারণ করা হলেও সিবিএফের সমন্বয়ক রদ্রিগো কায়তানো এবং টেকনিক্যাল সমন্বয়ক হুয়ানকে তাদের দায়িত্বে রেখে দেওয়া হচ্ছে। তারা দু’জন বর্তমানে মাদ্রিদে আছেন। এডনাল্ডকে অপসারণ এবং এতে কাজে বাধা নেই; এই বার্তা আনচেলত্তির কাছে তারা দু’জনই পৌঁছে দিয়েছেন।

দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হলেও এডনাল্ড পুনরায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। সিবিএফকে আগামী ৬ জুনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বলেছেন আদালত। এর আগেও তাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। পুনরায় নির্বাচন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এডনাল্ড। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে- স্বাক্ষর জালিয়াতি করে তিনি সিবিএফের চেয়ারে বসেছেন। যে কারণে পুনরায় অপসারণ হলেন।

ব্রাজিলের কোচ হিসেবে কার্লো আনচেলত্তি ২৬ মে কাজ শুরু করবেন। তার আগে সিবিএফের মাধ্যমে ডন কার্লো প্রথমবার ব্রাজিলের দল ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। অবশ্য কিছু সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে, ফিফার কাছে সিবিএফ প্রাথমিক দল পাঠিয়ে দেবে। এরপর রিয়ালের দায়িত্ব ছাড়ার পর ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচের জন্য দল ঘোষণা করবেন কার্লো আনচেলত্তি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র জ ল ফ টবল স ব এফ র

এছাড়াও পড়ুন:

চার কিশোরীর ধর্ষণ, হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি ৩৩ বছরেও

১৯৯১ সালের ৬ ডিসেম্বরের রাত। টেক্সাসের অস্টিন শহরের ব্যস্ত এক বাণিজ্যিক এলাকায় ছোট্ট এক দইয়ের দোকান। সেখানেই ঘটে গেল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। দোকান থেকে উদ্ধার হলো চার কিশোরীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। ১৩ বছরের অ্যামি এয়ারস, ১৫ বছরের সারা হারবিসন, ১৭ বছরের জেনিফার হারবিসন ও এলিজা থমাসকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছিল নির্মমভাবে। তাদের গলা টিপে ধরা হয়েছিল, শরীর বেঁধে রাখা হয়েছিল দড়ি দিয়ে, মাথায় গুলি করা হয়েছিল—এরপর প্রমাণ নষ্ট করতে দোকানেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

তিন দশকের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এই হত্যাকাণ্ড আজও অস্টিনবাসীর মনে এক দুঃসহ স্মৃতি। এইচবিও তাই চার পর্বের তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ নির্মাণ করেছে, যেখানে আর্কাইভ ফুটেজ, তদন্তকারীদের বক্তব্য, আর নিহত ব্যক্তিদের পরিবার-বন্ধুদের সাক্ষাৎকারে ফুটে উঠেছে শোক, ক্ষোভ আর অসহায়তার চিত্র।
প্রথম পর্বেই নিহত অ্যামি এয়ারসের বাবা বব এয়ারস বলেন, ‘৩০ বছর, ৭ মাস, ৫ দিন হয়ে গেল—তবু আজও বিশ্বাস করতে পারি না।’ প্রতি রবিবার রাত ১০টায় এইচবিওতে সম্প্রচারিত হচ্ছে এই তথ্যচিত্র সিরিজ। যারা ‘ট্রু ক্রাইম’ ধরনের তথ্যচিত্রে আগ্রহী, তাঁদের কাছে এটি দেখা, নিঃসন্দেহে এক ভয়ংকর আর হৃদয়স্পর্শী অভিজ্ঞতা।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর পর ভেতরে যা দেখেছিলেন, তা বর্ণনা করতে গিয়ে সেই সময়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন—‘চারদিকে ধোঁয়া, ভেজা সিলিং, গলে যাওয়া আসবাবের মধ্যেই দেখা যাচ্ছিল লাশগুলো। তিনটি একসঙ্গে, আরেকটি একটু আলাদা।’

এই হত্যাকাণ্ডে অস্টিন শহর শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। নিহত কিশোরীদের পরিবার ও স্থানীয় ব্যক্তিরা ন্যায়বিচারের দাবিতে মিছিল করেছিলেন, শহরের রাস্তায় টাঙানো হয়েছিল পোস্টার ও বিলবোর্ড, স্থানীয় সংগীতশিল্পীরা গান লিখেছিলেন তাঁদের স্মরণে। তবু ৩৩ বছর পরেও রহস্যের জট খোলেনি।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে এইচবিওর নতুন তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’। গত ৩ আগস্ট মুক্তি পেয়েছে চার পর্বের তথ্যচিত্রটি। মুক্তির পর থেকে সমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে তথ্যচিত্রটি।

‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ পরিচালনা করেছেন মার্গারেট ব্রাউন। তবে ব্রাউনের আগে আরও একজন নির্মাতা এই ঘটনাকে তথ্যচিত্রে রূপ দিতে চেয়েছিলেন। প্রায় এক দশক আগে চলচ্চিত্র নির্মাতা ক্লেয়ার হুই ঘটনাটির ওপর কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু কিশোরীদের ওপর চালানো নির্যাতনের ভয়াবহতা ও তদন্তপ্রক্রিয়ার অন্ধকার তাঁকে এতটাই মানসিকভাবে আঘাত করেছিল যে তিনি পুরো প্রজেক্ট ছেড়ে দেন, এমনকি চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারও ত্যাগ করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করা কয়েকজন ক্রু সদস্যকেও মানসিক আঘাত সামলাতে থেরাপির আশ্রয় নিতে হয়েছিল।

তদন্ত ও ভেঙে পড়া বিচারপ্রক্রিয়া
ঘটনার অল্প কিছুদিন পরই মেক্সিকোয় দুজনকে আটক করা হলেও তাঁরা জোর করে স্বীকারোক্তি নেওয়ার অভিযোগ করলে মামলা এগোয়নি। ১৯৯৯ সালে অস্টিন পুলিশ আবারও চার তরুণকে গ্রেপ্তার করে—রবার্ট স্প্রিংস্টিন জুনিয়র, মাইকেল স্কট, মরিস পিয়ার্স ও ফরেস্ট ওয়েলবর্ন।

‘দ্য ইয়োগার্ট শপ মার্ডারস’ তথ্যচিত্রের দৃশ্য। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ