সোনারগাঁয়ে চলছে ‘পাগলা গাছের মেলা’
Published: 16th, May 2025 GMT
সোনারগাঁয়ের ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পাগলা গাছের মেলা শুরু হয়েছে। জেলার বৈদ্যোরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামে ৩১ বৈশাখ শুরু হয়ে ২ রা জৈষ্ঠ্য (১৬ মে) পর্যন্ত এ মেলা চলবে।
একটি গাছ বা খুঁটিকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা উদযাপন হয় বলে জানান স্থানীয়রা। প্রতি বছর ৩১ বৈশাখ থেকে শুরু করে ২ জৈষ্ঠ পর্যন্ত এ মেলার আয়োজন করা হয়, যা পাগলা গাছের মেলা হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত।
মূলত ৩১ বৈশাখ দুপুর থেকে হামছাদী গ্রামের বটতলায় মেলার পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলার আনুষ্ঠানিকতা পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।
এলাকাবাসী জানান, ৫০০ বছর আগে হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ্র সেন নামের দু’ভাই ঘর তৈরির জন্য বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। বাংলা মাসের ১ জ্যৈষ্ঠ রাতে তারা দুভাই স্বপ্নে দেখেন তাদের কেনা খুঁটি থেকে ২টি খুঁটি নিজেদেরকে দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।
খুঁটি দুটি পাগল রূপ ধারণ করে তাদের উদ্দেশ্যে বলছে আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা করো। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে।
এ ঘটনার পর পরের দিন দুই ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পারে খুঁটি দুটি দেখতে পায়। তারপর থেকে তারা দুই ভাই খুটিগুলোকে দেবতা মনে করে পূজা অর্চনা করতে থাকে। সে থেকে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন গাছের খুঁটি দুটিকে প্রতিবছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে বিশেষ পূজা অর্চনা করে আসছে। পরে দুটি খুঁটি থেকে একটি হারিয়ে যায়।
এলাকাবাসী আরও জানান, খুঁটিটি পূজামণ্ডপের পার্শ্ববর্তী একটি পুকুরে সারা বছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা প্রতিবছর পুকুর থেকে খুঁটিটি উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করায়। তাছাড়া ফল ফলাদি ঘি, খাসি ও পাঠাবলি দিয়ে পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করে।
পূজা শেষে খুঁটিটি আবার ওই পুকুরে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের হাজার হাজার লোকজনের সমাগম ঘটে।
শুক্রবার সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দোকানিরা তাদের পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। তাছাড়া অনেকেই মেলায় নাগর দোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি প্লাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন সামগ্রী সাজিয়ে বসেছেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে পুণ্যার্থীরা মেলায় অংশ নেওয়ার জন্য ওই এলাকায় তাদের স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন।
হামছাদী গ্রামের শাহিন আলম জানান, এ মেলা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের মিলন মেলায় এক প্রকার উৎসবে পরিণত হয়। প্রতিবছর এ মেলার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করে থাকে।
পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কেশব চন্দ্র দাস জানান, এবারের মেলায় বিপুল সংখ্যক ভক্তদের আগমন ঘটেছে। মেলা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে এলাকায় নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।
সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেলায় গীতা পাঠ, কীর্তনসহ সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের মনের বাসনা পূরণ করার জন্যই পাগলনাথের পূজা-অর্চনা করতে ছুটে আসেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ র ল কজন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের অবৈধ শেয়ার ইস্যু, তদন্ত করবে বিএসইসি
পুঁজিবাজারে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেডের অবৈধ শেয়ার ইস্যু করার বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ লক্ষ্যে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।
সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে শর্তসাপেক্ষে এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়ে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম এবং সহকারী পরিচালক রেজাউন নূর মেহেদী।
আরো পড়ুন:
ইতিবাচক লেখনিতে ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার: ডিবিএ সভাপতি
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন, কমেছে লেনদেন
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেস ভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়। বিএসইসির তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখবে। কী উদ্দেশ্যে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে এত বড় অংকের শেয়ার ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।
কোম্পানির বোর্ড ড্যাফোডিল পরিবারের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তার বিপরীতে শেয়ারে রূপান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিটি শেয়ার ১০ টাকা করে ৪.৬৭ কোটি শেয়ার ইস্যু করার অনুমোদন দেয় ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ, যা বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে করার কথা ছিল। তবে, এর আগে কোম্পানিকে এ বিষয়ে এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, কোম্পানি তা করেনি। ফলে, অবৈধভাবে শেয়ার ইস্যু করার হয়েছে বলে মনে করছেন শেয়ারহোল্ডাররা।
বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ মর্মে অভিমত দিয়েছে যে, ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ২৭তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বেশিরভাগ শেয়ারহোল্ডারের মতামতকে মূল্যায়ন না করে অবৈধভাবে কোম্পানির পরিচালকদের আত্মীয়-স্বজনদের নামে নতুন ৪ কোটি ৬৭ লাখ শেয়ার ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে ইস্যু করার এজেন্ডা পাস করেছে। তাই, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন বলে মনে করে বিএসইসি।
এমতাবস্থায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে দুজন কর্মকর্তার সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে অনুসন্ধান পরিচালনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৬০ কার্মদিবসের মধ্যে অনুসন্ধান সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
সর্বশেষ আর্থিক অবস্থা
সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্সের পরিচালনা পর্ষদ। সর্বশেষ হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ০.০১ টাকা। আগের হিসাববছরের একই সময়ে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ০.৫৪ টাকা। গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৩.২৪ টাকা।
শেয়ার ধারণ পরিস্থিতি
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৬ সালে। বর্তমানে কোম্পানিটি ‘বি’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ৪৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সে হিসাবে কোম্পানিটির মোট শেয়ার ৪ কোটি ৯৯ লাখ ১২ হাজার ২৬২টি। ২০২৫ সালের ৩১ মে পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪১.৪০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৪.১১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.১০ টাকা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৪.৩৯ শতাংশ শেয়ার আছে। এ কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ আছে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের পরিমাণ ৮২১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। গত সোমবার (৩০ জুন) কোম্পানির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৫৪ টাকায়।
ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স ড্যাফোডিল পরিবারের একটি প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটি আইটি সলিউশন, কম্পিউটার অ্যাসেম্বলিং এবং সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ব্যবসা করে।
ঢাকা/এনটি/রফিক