বাঁধের নিচে চলে গেছে বিদ্যালয়। ঝুঁকিতে পড়েছে ভবন। বিপাকে শিক্ষক ও কমলমতি শিশুরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড  অপরিকল্পিতভাবে মনু নদের বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের কারণে এমনটা হয়েছে।

বিদ্যালয়টির নাম চাটিগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নদী পারের চাটিমেলাগর গ্রামে অবস্থিত।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের ভূমি দখল করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করায় বিদ্যালয়টি আজ ঝুঁকিতে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে বিদ্যালয়ের গা ঘেঁষে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বিভাগ বলছে, তারা পুরাতন বাঁধের মেরামত কাজ হিসেবে বাঁধ নির্মাণ করেছে। নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। যা হয়েছে তা জনস্বার্থে হয়েছে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে বিদ্যালয় ভবনের ছাদ বরাবর বাঁধের অবস্থান। বিদ্যালয় ভবনের পশ্চিম দিকের একটি রুমের জানালা পর্যন্ত মাটি ভরাট হয়েছে। বাঁধে ধস নামার শঙ্কায় ওই রুমে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাঁধের উচ্চতা ৮ ফুট হওয়ায় কমলমতি শিশুরা উঠানামা করতে পারছে না। হালকা বৃষ্টি আসলে পা পিছলে যায় তাদের। শিক্ষকরাও ঝুঁকি নিয়ে চলছেন। 

কথা হয় ওই এলাকার সাবেক শিক্ষক মো.

হারুনুর রশিদের সাথে। তিনি বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি  সরকারি হওয়াতে এলাকাবাসি কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।” 

এলাকার শিক্ষানুরাগি প্রদীপ চন্দ্র দে বলেন, “প্রথমে এলাকাবাসি বাধা দিলে তা উপেক্ষা করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধের কারণে বিদ্যালয়টি নদীর পেটে চলে গেছে। এখন নদীতে পানি বাড়লেই বিদ্যালয় নিমজ্জিত হয়ে যাবে। ভবনের ছাদ আর নদীর বাঁধ সমান হয়ে গেছে। এখন বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করার প্রয়োজন।” 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিপনা রানী দে বলেন, “বৃষ্টি দিলে শিক্ষার্থীরা বাঁধের উপর থেকে নিচে নামতে পারে না। মাটির সিঁড়ি দেওয়া থাকলেও তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। বাঁধের কারণে একটা বিপজ্জনক অবস্থায় আছি। আমরাও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছি না।” 

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে রাজনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শরীফ মো. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, “বিদ্যালয়ের সীমানা নির্ধারণ না করে জমি দখল করেই পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করেছে। তারা  বিদ্যালয়ের পাশ থেকে দুরে সরিয়ে বাঁধ নির্মাণ করলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা পেতো। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতির কারণে বিদ্যালয়ের কমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ঝুঁকিতে পড়েছে। তারা আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ না করে বাঁধ নির্মাণ করেছে। আমরা সরেজমিনে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। বাঁধের পাশের একটি রুমে মাটি ধসের শঙ্কার কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।”  

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, “জমি অধিগ্রহণ করার কোন সুযোগ ছিল না আমাদের হাতে। এতে বাঁধ সরানোর কোন ব্যবস্থা করা যায়নি। যে ভাবে পুরাতন বাঁধের অবস্থান ছিল সেভাবে আমরা মেরামত করেছি। বিদ্যালয়ের কোন জমি আমরা দখল করিনি।” 

ঢাকা/আজিজ/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ধ ন র ম ণ কর ব দ য লয়ট অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

শাড়িতে স্কার্টে বর্ষা

ফ্যাশনের অনুষজ্ঞ হিসেবে নকশা বা শিল্পকর্মের গুরুত্ব অনেক। পোশাকে স্থান পাচ্ছে ষড়ঋতুর নানা রূপ। বৃষ্টিদিনের পোশাকের নকশায়ও দেখা যায় বৈচিত্র্য। শিল্পকর্মে যদি ফুটে ওঠে মেঘ, বৃষ্টি আর পাতার গল্প, তাহলে সাজও হয় হৃদয়ছোঁয়া। এ বছরের বর্ষার পোশাকে কোন ধরনের নকশা চলছে তা নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন আশিকা নিগার

‘বর্ষা শুধু আকাশে নামে না/ সে নামে সুতি আর সিল্কের গায়ে/ নকশায়, বুননে, রঙের তালে
/ সে হাসে, কাঁদে, মুগ্ধতায় ভাসায় চুপিসারে।’
বর্ষা মানেই ভেজা ভেজা আবহাওয়া, আকাশজুড়ে ধূসর মেঘ, টুপটাপ বৃষ্টির শব্দে মন ভরে যাওয়া, ভেজা মাটির ঘ্রাণ আর বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভেজা ভেজা কদমের মাতাল করা সুবাস।  
বৃষ্টিমুখর দিনে বারান্দায় বসে হাওয়ার তালে দোলে যাওয়া ভেজা পাতার দৃশ্য দেখতে দেখতে মানুষ যেন কেবলই নিজের কাছে ফিরে যায়। কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হয়ে যায় স্মৃতিকাতর। তাই কেউ কেউ বলেন, বর্ষা নাকি বিষণ্নতার ঋতু। তবে ফ্যাশন দুনিয়ায় বর্ষা কিন্তু বেশ রঙিন। এই রঙিনতার পেছনে বড় ভূমিকা রাখে পোশাকে বৈচিত্র্যের শিল্পকর্ম। 
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে মানুষের রুচি, ফ্যাশনের সংজ্ঞা। তাই বর্ষার আবহ আর মেজাজকে পোশাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এখন অনেকেই নকশা বা থিমভিত্তিক পোশাক পছন্দ করেন। মেঘ, বৃষ্টি, কদম-শাপলা-বেলি-জবা ফুল, পাতা, জলের ঢেউ, নৌকা, নদী, ছাতা কিংবা ছোট্ট কোনো পাখির নকশা যখন কাপড়ে জায়গা পায়, তখন সাজও হয়ে ওঠে বর্ষার মতো আকর্ষণীয়। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মানেই বর্ষার গল্প।
আমাদের চারপাশের প্রকৃতি থেকেই ধারণাগুলোর জন্ম। যেমন–
মেঘ ও বৃষ্টির গল্প 
সাদা মেঘ, নীল আকাশ, বৃষ্টির ফোঁটার শিল্পকর্ম এখন কুর্তি, ওড়না, স্কার্ট, টপ– এমনকি শাড়িতেও দেখা যায়। দেখতে যেমন সুন্দর, পরতেও তেমনি আরামদায়ক।
কদম ফুলের শিল্পকর্ম
বর্ষায় বৃষ্টিতে কদম ফুলের ভেজা গন্ধ সবার মনে রোমান্টিক আবহ এনে দেয়। কদম ফুলও যেন বর্ষার নিজস্ব প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেই আবেগকে ধারণ করেই এখন ফ্যাশনে জায়গা করে নিচ্ছে কদম ফুলের শিল্পকর্ম। শাড়ি, কুর্তি, স্কার্ফ বা কামিজে কদম ফুলের নকশা যেন এক অন্যরকম নান্দনিকতা তৈরি করে। কখনও হাতে আঁকা, কখনও ব্লক প্রিন্ট আবার কখনও ডিজিটাল প্রিন্টে ফুটে ওঠে হলুদ-সাদা কদমের কোমল সৌন্দর্য। বিশেষ করে সাদা বা হালকা রঙের পোশাকে কদম ফুলের নকশা নজরকাড়া।
এ শিল্পকর্ম শুধু নান্দনিকই নয়, বরং বর্ষার আবেগ পোশাকে ফুটিয়ে তোলার এক অনন্য উপায়। যারা ঐতিহ্য আর চলতি প্রবণতাকে একসঙ্গে ধারণ করতে চান, তাদের জন্য কদম ফুল ধারণা হতে পারে বর্ষার ফ্যাশনে এক দারুণ সংযোজন।
শুধু পোশাকে নয়, সঙ্গে মিলিয়ে কদম ফুলের নকশায় ব্যাগ, জুতা বা অ্যাকসেসরিজ থাকলে দেখতে হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। এই বর্ষায় আপনিও চাইলে বৃষ্টিভেজা কদম ফুলকে ধারণ করতে পারেন আপনার স্টাইলে, একটু আলাদাভাবে নিজেকে প্রকাশের জন্য।
পাতা বা লতাপাতা 
বৃষ্টিতে ভেজা পাতা কিংবা ছোট লতাগাছের নকশা বর্ষার প্রকৃতিকে চোখের সামনে তুলে ধরে। এগুলো কটন বা লিনেন পোশাকে বেশি মানায়।
পাখি, প্রজাপতি বা ছাতা 
বর্ষার দিনে পাখির ডানামেলা ওড়া বা রঙিন ছাতার ছাপ– সবই যেন বৃষ্টির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজের কথা বলে।
স্থানীয়তার ছাপ
আমাদের দেশীয় পোশাকে বর্ষা নিয়ে শিল্পকর্ম বরাবরই ছিল। জামদানি বা নকশিকাঁথার পুরোনো শিল্পকর্মেও দেখা মেলে বৃষ্টির ছায়া। এখনকার নকশাকাররাও এই ঐতিহ্যকে নতুনভাবে সাজিয়ে আনছেন। বুটিক ঘরানার জামা বা শাড়িতে বৃষ্টির ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে হাতে আঁকা শিল্পকর্মের মাধ্যমে।
স্টাইল টিপস
হালকা প্রিন্টের কুর্তির সঙ্গে সাদামাটা প্যান্ট, আর একটি ছাতার নকশা দেওয়া ওড়না বর্ষার আদর্শ স্টাইল। ডেনিম স্কার্ট বা পালাজ্জোর সঙ্গে রঙিন ছাপা টপ যেন অনন্য কম্বিনেশন। এ ছাড়া ছাতায়, ব্যাগে বা জুতাতেও মিলিয়ে ছোট নকশার কাজ করলে দেখতে ভালো লাগে। 
হরিতকীর ডিজাইনার ও কো-ফাউন্ডার অনিক কুণ্ডু বলেন, ‘আমরা এই বর্ষায় পদ্ম ফুল ও স্টারি নাইটের একটি নতুন ভার্সন শাড়িতে নিয়ে এসেছি। পাশাপাশি পলো শার্টেও স্টারি নাইট থাকছে নীল রঙের মধ্যে। বর্ষাকালে নীল রংই সবার কাছে আকর্ষণীয় লাগে এবং এই রং যেন বর্ষার সঙ্গে মানানসই। এ ছাড়া নৌকার থিমেও শাড়ি রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্ষার আসল সৌন্দর্য বহন করে কদম ফুল। তাই কদম ফুলের শিল্পকর্ম তো থাকবেই। বর্ষার আমেজকে প্রাণবন্ত রাখতে আমাদের সংগ্রহে থাকা শাড়ি, কুর্তি, ওড়না, টি-শার্ট, পলো শার্ট সবকিছুতেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বর্ষার একেকটি আকর্ষণীয় শিল্পকর্ম।’
পোশাকে বর্ষার ভাবনা নিয়ে ‘লা রিভ’-এর ডিজাইনার মারুফা শিল্পী বলেন, ‘এবার বর্ষায় আমরা ফুলের শিল্পকর্মকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি ৷ ফুলগুলো বড় আকারের নকশায় ফুটে উঠবে। এ ছাড়া পাতা ও পদ্ম দিয়ে ডিজাইনও থাকছে।’
পোশাকের রঙের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘নীল, জলপাই এবং সবুজ রয়েছে। এ ছাড়া বর্ষার ফুলের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে হলুদ আর মেরুনকেও প্রাধান্য দিয়েছি আমরা।’
মারুফা বলেন, ‘ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে ভিসকোস এবং জর্জেটকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে কিছু সিনথেটিক ফেব্রিক, যেগুলো বৃষ্টিতে ভিজে গেলেও দ্রুত শুকিয়ে যাবে। শাড়ির মধ্যে কটনই বেশি থাকছে।’
কোথায় পাবেন
রাজধানীসহ দেশের যে কোনো প্রান্তের শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসে মিলবে বর্ষার শিল্পকর্মের পোশাক। স্থান ও মানের ওপর ভিত্তি করে দেখা যায় দামের ভিন্নতা। 
বসুন্ধরা সিটি, জামান টাওয়ার (গুলশান), প্লাজা এ আর (বনানী), সীমান্ত স্কয়ার (ধানমন্ডি), যমুনা ফিউচার পার্ক, জমজম টাওয়ার (উত্তরা)– এসব শপিংমলে প্রায় সব ব্র্যান্ডের বর্ষা কালেকশন পাওয়া যায়।
এ ছাড়া আজিজ সুপারমার্কেট (শাহবাগ), নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটে স্থানীয় ডিজাইনার বা কাস্টম টেইলারদের কাছে থিমেটিক প্রিন্ট ও হ্যান্ডপেইন্ট করা কামিজ, ওড়না, শাড়ি পাওয়া যায় বর্ষা মেজাজে।
ফ্যাশন হাউসগুলোতেও মিলছে বর্ষা-ভাবনার ভরপুর কালেকশন। হরিতকী, লা রিভ, রঙ বাংলাদেশ, বিশ্ব রঙ ইত্যাদিতে পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের নকশার পোশাক। 
অনলাইন পেজগুলো তো আছেই, যেখান থেকে আপনি ঘরে বসেই পছন্দের পোশাকটি কিনে নিতে পারবেন। 

মডেল: আসিন জাহান; পোশাক: হরিতকী; মেকওভার: রাজিয়া’স মেকওভার ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

সম্পর্কিত নিবন্ধ