ছবি: এএফপি

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়োগের কথা সাত শিক্ষক ২০ জনকে নিতে সুপারিশ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, পাঁচ বিভাগে মোট সাত শিক্ষক নিয়োগের কথা থাকলেও সুপারিশ করা হয়েছে ২০ জনকে।

এ ছাড়া প্রার্থী বাছাইয়ে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ উঠেছে। এতে বাদ পড়েছেন মেধাক্রমে এগিয়ে থাকা প্রার্থীরা। এ নিয়ে চলছে আলোচনা। ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টির ব্যাখ্যা চেয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কিন্তু আজও সেই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর একসঙ্গে বেশ কিছু বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলা, নৃবিজ্ঞান, ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি (এফইটি) ও লোকপ্রশাসন বিভাগে একজন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা। এর পর ৭ জানুয়ারি আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বন ও পরিবেশ বিদ্যা (এফইএস) বিভাগে তিন প্রভাষক নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এসব পদের বিপরীতে নিয়োগ বোর্ড বাংলা বিভাগে তিন, নৃবিজ্ঞানে তিন, এফইটি বিভাগে তিন, লোকপ্রশাসনে পাঁচজন এবং এফইএস বিভাগে ছয়জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে। নিয়োগ বোর্ড থেকে সুপারিশ করা অধিকাংশ পদ ইউজিসি থেকে  ছাড়কৃত নয়। 

এ বিষয়ে ২৯ এপ্রিল ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপপরিচালক জামাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, কমিশন থেকে ছাড় দেওয়া হয়নি– এমন পদে বিজ্ঞাপন দিয়ে এর বিপরীতে ইচ্ছামতো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলা বিভাগে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়া বিজ্ঞাপন দিয়ে তিন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নৃবিজ্ঞান বিভাগে একজনের বিপরীতে তিনজন, পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে একজনের বিপরীতে পাঁচজন এবং ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে তিনজনের বিপরীতে ছয় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এফইএস বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩ সালের দিকে একটি পদে প্রভাষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তিনজন নেওয়া হয়। এ নিয়ে ওই বিভাগে বর্তমানে ২৮ শিক্ষক আছেন। তবে ওয়েবসাইটে ২৫ জনের তালিকা পাওয়া গেছে, যার মধ্যে এক শিক্ষক ছুটিতে আছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ অবস্থায় তিনটি পদে কমিশন থেকে শিক্ষক নিয়োগের অনুমতি পেলেও শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড প্রভাষক পদে ছয়জনকে সুপারিশ করেছে। এফইটি বিভাগের বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত একজনের বিপরীতে তিনজনকে সুপারিশ করা হয়েছে। যাদের মেধাক্রম– ১৭, ১৯ ও ২০।

এদিকে বাংলা, এফইটি, লোকপ্রশাসনসহ বেশ কিছু বিভাগের নিয়োগ বোর্ডে সুপারিশপ্রাপ্ত কয়েক প্রার্থী নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ করেছেন একাধিক শিক্ষক। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, কয়েকজনকে রাজনৈতিক বিবেচনায় সুপারিশ করা হয়েছে, যারা জামায়াত-শিবিরের সমর্থক। 
এসব বিষয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. খালিদুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা, যোগ্যতা এবং ন্যায্যতার সর্বোচ্চ মানদণ্ড অনুসরণ করা একান্তভাবে প্রত্যাশিত। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যেসব আলোচনা, গুঞ্জন ও প্রশ্ন উঠেছে, তা একজন শিক্ষক হিসেবে আমাকে উদ্বিগ্ন করেছে। যোগ্য ও মেধাবীদের যথার্থ মূল্যায়ন না হলে তা কেবল একটি প্রজন্ম নয়, বরং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘ইউজিসির চিঠির জবাব কর্তৃপক্ষ দেবে। আমি বাছাই বোর্ডের সভাপতি। সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হওয়ার আগে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারি না। সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেটে যাবে এবং সেখানে যা হবে, তা পাবলিক করা হবে।’ আগামী ১৭ মে সিন্ডিকেট সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ