কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলা ও মহানগরের তিন নেতাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর সমন্বয়করা।

শুক্রবার (১৬ মে) রাত সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত ‘জুলাই সমাবেশ’-এ কুবি প্রতিনিধিদের মঞ্চে উঠতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

অবাঞ্চিত তিন নেতা হলেন— কুমিল্লা জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো.

সাকিব হোসাইন, মহানগর কমিটির আহ্বায়ক আবু রায়হান ও সদস্য সচিব মো. রাশিদুল হাসান।

সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুবি সমন্বয়ক মো. আবরার ফাহিম বলেন, “আমরা যখন মঞ্চে উঠতে যাই, তখন আমাদের গায়ে হাত তোলা হয় এবং মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ব্যক্তিস্বার্থে রাজনীতি করছে।”

আরেক সমন্বয়ক মো. শোয়াইব হোসেন আলামিন বলেছেন, “কিছু নেতা মামলা বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে জড়িত। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেব।”

মো. এমরান হোসেন নামের এক সমন্বয়ক বলেন, “জুলাই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম। এখন কিছু দালাল টাকা দিয়ে এর ভিতরে ঢুকে আন্দোলনকে বিকৃত করছে।”

অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের আহ্বায়ক আবু রায়হান বলেন, “একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে মঞ্চে সুযোগ দিলে অন্যরাও বিশৃঙ্খলা করতে পারত। শৃঙ্খলার স্বার্থেই আমরা সীমিত রাখি। তবে, কুবি প্রতিনিধিদের বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”

তবে, কুবির সমন্বয়ক আবরার ফাহিম বলেন, “আমাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করলে কিছুটা আশ্বস্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের মঞ্চে উঠতে দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে শুরু হলেও এখন আমাদের কথা বলার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।”

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। ছাত্রদের মধ্যে বিভক্তি ও উত্তেজনা বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একই অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ঢাকা/রুবেল/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমন বয়ক আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

উপহার আদান-প্রদানের বিধিবিধান

হাদিয়া বা উপহার প্রদান করা ও গ্রহণ করা উভয়ই সুন্নত। কোনো শর্ত ও স্বার্থ ছাড়া কারও প্রতি অনুরাগী হয়ে যে দান বা উপঢৌকন প্রদান করা হয়, তাই হাদিয়া বা উপহার। হাদিয়া বা উপহার দাতা ও গ্রহীতা উভয়কে সম্মানিত করে। এটি কোনো দয়া বা দাক্ষিণ্য নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা হাদিয়া বা উপহার আদান–প্রদান করো, তোমাদের মধ্যে প্রীতির বন্ধন দৃঢ় হবে।’ (বুখারি, তিরমিজি)

হাদিয়া বা উপহার একটি সুন্নত আমল। এর জন্য কোনো উপলক্ষের বা অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা নেই। হাদিয়া বা উপহারের পরিমাণ বা মূল্যমান বড় বিষয় নয়। কারণ, প্রকৃত উপহার লৌকিকতানির্ভর নয়; বরং হাদিয়া বা উপহার হলো আন্তরিকতার বিষয়। লৌকিকতা ছাড়া আন্তরিক উপস্থিতি, শুভেচ্ছা বিনিময় ও শুভকামনা শ্রেয়তর। তাই হাদিয়া বা উপহারসামগ্রীর কারণে আমাদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে সানন্দ উপস্থিতি যেন বিঘ্নিত না হয়। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘উত্তম বাক্য ও ক্ষমাপ্রার্থনা ওই দান অপেক্ষা শ্রেয়তর, যে দানের পর কষ্ট অনুগামী হয়। আল্লাহ মহাধনবান ও চিরপ্রশংসিত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬৩)

উপহারদাতাকে ধন্যবাদ জানানো সুন্নত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি কৃতজ্ঞ হও, আমি নিয়ামত আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে আমার শাস্তি অতি কঠিন।’ (সুরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)

হাদিয়া বা উপহার একটি সুন্নত আমল। এর জন্য কোনো উপলক্ষের বা অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা নেই। হাদিয়া বা উপহারের পরিমাণ বা মূল্যমান বড় বিষয় নয়। কারণ, প্রকৃত উপহার লৌকিকতানির্ভর নয়; বরং হাদিয়া বা উপহার হলো আন্তরিকতার বিষয়

মনে রাখতে হবে, উপহার কোনো বিনিয়োগ বা ঋণদান নয়। যিনি কাউকে কোনো উপলক্ষে উপহার বা হাদিয়া দিলেন, তাঁর কখনো এমন আশা পোষণ করা সমীচীন হবে না যে ওই ব্যক্তি আমার বা আমাদের কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনুরূপ হাদিয়া বা উপহার দেবেন। উপহার বা হাদিয়া কোনো পাওনা বিষয় নয় যে কেউ না দিলে মন খারাপ করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা তাদের সম্পদ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করে, অতঃপর খোঁটা বা তুলনা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তার অনুসরণ করে না। তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে তাদের বিনিময়, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত: ২৬২)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম)

উপহার, উপঢৌকন ও হাদিয়া ছাড়া মেহমান এলে তাকে অবজ্ঞা বা অবহেলা এবং তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, তারা যেন তাদের অতিথিদের সম্মান করে।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

উপহারসামগ্রীর মালিক ও ব্যবহারকারী তিনিই হবেন, যাকে বা যাকে কেন্দ্র করে উপহার দেওয়া হয়েছে। শিশুর উপহারসামগ্রীর মালিকানাও শিশুরই। উপহারের খেলনা, পোশাক, টাকাপয়সা বা ধনসম্পদ হোক; কোনো অবস্থাতেই শিশুর অনুমতি বা সম্মতি ছাড়া কাউকে দেওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে শিশুর সাবালক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

যেসব জিনিস শিশুর ব্যবহারের অনুপযোগী, তা কাউকে দিতে হলে তার বিক্রয়মূল্য ধার্য করে তা শিশুর জন্য সঞ্চয় হিসেবে রাখতে হবে। তবে পরিবার অসচ্ছল হলে ওই অর্থ শুধু শিশুর জন্যই ব্যয় করতে পারবে। পুনরায় সচ্ছলতা ও সামর্থ্য এলে তাকে তা ফেরত দিতে হবে। এতিম শিশুর জন্য উপহার তার সম্পদ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(এতিমরা) বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত কল্যাণসাধনের উদ্দেশ্য ছাড়া এতিমদের সম্পত্তির নিকটবর্তী হয়ো না।’ (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫২)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ