বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসেরনেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘এনসিপি মার্কা সরকার’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আপনার সরকারের দুইজন উপদেষ্টা এনসিপির প্রতিনিধি। তাদের পদত্যাগ করতে বলেন অথবা বিদায় করে দেন।” সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকেও তিনি পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনাকে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন করার জন্য। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি। জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আপনি আশ্বস্ত করেও সে কথা রাখেননি।”

শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।

আরো পড়ুন:

‘জুলুম না করা আ.

লীগের সমর্থকরা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন’

‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আরো ১০ হাজার মানুষ হত্যায় প্রস্তুত ছিলেন’

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। 

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে অপহরণ, গুম এবং সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।” 

তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। লুটপাট করে ব্যাংকিং খাতও ধ্বংস করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।”

বিএনপির এই নেতা বলেন, “২০১৪ ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি। এভাবে হওয়া তিনটি নির্বাচনে পাঁচ কোটি যুবক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সংগঠিত হয়েছে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আর রক্ত দিতে হবে না, মিছিল করতে হবে না এ প্রত্যাশা সবার।” 

আওয়ামী লীগ দেশে খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ মেরেছে, তারপরেও তিনি (শেখ হাসিনা) অনুতপ্ত হননি, ক্ষমা চাননি। উল্টো দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।” 

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মাধ্যমে একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দাবিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দেশের তরুণরাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।”

সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 

আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও সকাল ১১টা থেকেই খুলনা এবং বরিশালের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগর থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে আসতে শুরু করেন। তাদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে খুলনা মহানগরী।

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ দল র ক ন দ র য় স ব এনপ র ছ ত রদল উপদ ষ ট র র জন সরক র য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রতিস্থাপনই মূল সংস্কার

প্রায় দেড় যুগ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও জবাবদিহি বিপন্ন ছিল। শেখ হাসিনা ও তাঁর আমলাতন্ত্র দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসন ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কার্যত একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন কায়েম করেছেন। সবখানেই স্বাধীনতা ও জবাবদিহির পরিবর্তে ক্ষমতার প্রতি আনুগত্য, দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব প্রধান হয়ে উঠেছে। ফলে রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে; জনগণ রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন এবং আস্থাহীন হয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে এখন প্রধান রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্তব্য হচ্ছে– রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এ সম্পর্ক কেবল সংস্কারের কথায় নয়, বাস্তব কাঠামোয় প্রতিস্থাপন করতে হবে– যেখানে জনগণ হবে রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক এবং রাষ্ট্র হবে জনগণের সেবক। এ পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, প্রতিযোগিতামূলক ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন– যা হবে ক্ষমতার বৈধ হস্তান্তরের একমাত্র মাধ্যম এবং গণতান্ত্রিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রথম ধাপ।

রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক ভিত্তি। এই সম্পর্ক যদি পারস্পরিক আস্থা, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণের ওপর প্রতিষ্ঠিত না হয়, তবে রাষ্ট্র পরিণত হয় একচেটিয়া স্বৈরক্ষমতার যন্ত্রে– যেখানে জনগণ আর মালিক নয়, বরং হয়ে পড়ে প্রজা। তখন যে সম্পর্কের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে জনগণের ইচ্ছা ও কল্যাণে দায়বদ্ধ থাকার কথা, তা উল্টোভাবে ক্ষমতার দমনমূলক ও কর্তৃত্ববাদী প্রয়োগে রূপ নেয়। এই বাস্তবতায় রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক কেবল পুনর্গঠনের নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে নতুন ভিত্তিতে প্রতিস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে– এটাই আজকের সবচেয়ে মৌলিক ও অপরিহার্য সংস্কার।

এই প্রতিস্থাপনের ধারণা রাজনৈতিক ও নৈতিক দর্শনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। দার্শনিক বিশ্লেষণে রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক মূলত স্বাধীনতা, ন্যায়, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বৈধতার প্রশ্নের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। এটি এমন এক রাজনৈতিক ও নৈতিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন– যা জনগণের সম্মতি, অধিকার এবং মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে বৈধতা দেয়।

স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের জনগণ আশা করেছিল যে, রাষ্ট্র তাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু দীর্ঘ সামরিক শাসন, একদলীয় রাজনীতি, বিচার বিভাগের দলীয়করণ, প্রশাসনিক পক্ষপাত এবং নির্বাচনী ব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার ফলে রাষ্ট্র ক্রমেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা জনগণের প্রতিনিধিদের মধ্যে আবদ্ধ না হয়ে, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাত শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেছে। এর ফলস্বরূপ রাষ্ট্রব্যবস্থা অংশীজনবিহীন আমলাতান্ত্রিক-দলীয় যন্ত্রে পরিণত হয়েছে– যেখানে নীতিনির্ধারণ এবং সম্পদ বণ্টন জনগণের বাইরে হয়ে থাকে। এই বিচ্ছিন্নতা রাজনৈতিক অনাস্থা, নির্বাচন বিমুখতা এবং গণতন্ত্রের সংকট সৃষ্টি করেছে।


এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে একের পর এক অবৈধ, একতরফা ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি এবং প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করার পর দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন সরকারদলীয় প্রার্থীরা, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘রাতের ভোট’ বলে অভিহিত করা হয়– যেখানে আগেই ব্যালট বাক্স পূর্ণ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ছিল এক সম্পূর্ণ ‘ডামি নির্বাচন’, যার ফলাফল আগেই নির্ধারিত ছিল। বিরোধী দল ও জনগণ এই নির্বাচন বর্জন করে এবং সরকারের ওপর জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ তোলে। এরপর জনগণের চূড়ান্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে, শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হন।


এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন রাষ্ট্রদর্শন তুলে ধরেন, যার মূল ভিত্তি হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা; রাষ্ট্রকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তার বক্তব্য অনুযায়ী, ‘আমি মনে করি, একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমি তখনই কিছু অর্জন করেছি বলতে পারব, যেদিন বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে পারব।’ এটি শুধু একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার নয়, বরং একটি নতুন রাষ্ট্রচিন্তার প্রতিফলন। 
এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বা দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপের কথা বলেন। তবে এসব প্রচেষ্টা আংশিক ও উপসর্গ নিরাময় মাত্র। কারণ, যদি পুরো কাঠামোই জনগণের ইচ্ছা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে, তবে কেবল কাঠামোর যন্ত্রাংশ পাল্টে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের রাজনৈতিক সংকট ও রাষ্ট্রীয় বৈধতার প্রশ্নে যেভাবে জনগণ-রাষ্ট্র সম্পর্ককে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করেছে, তা বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয়। উদাহরণস্বরূপ, জার্মানিতে নাৎসি আমলের পর গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ১৯৪৯ সালে ‘বেসিক ল’ প্রণয়ন করা হয়। এতে জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতার একমাত্র উৎস হিসেবে সংবিধানে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয় এবং প্রশাসন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগকে জনগণের কাছে জবাবদিহির কাঠামোতে আনা হয়।

নেপালে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করে ২০০৮ সালে প্রজাতন্ত্রে উত্তরণের ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রীভূত কাঠামো ভেঙে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণে সংবিধান রচিত হয় এবং রাষ্ট্রকে জনগণের সম্মতিতে গঠিত এক সেবাদানকারী কাঠামোতে রূপান্তর করা হয়। এসব দেশ প্রমাণ করেছে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের নতুন সম্পর্ক স্থাপন করলেই কেবল গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা ও জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভব।

বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে এমন একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐকমত্যভিত্তিক একটি অন্তর্বর্তী রাজনৈতিক চুক্তি– যেখানে জনগণ হবে রাষ্ট্র কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দু। এমন একটি কাঠামো দরকার– যেখানে সংবিধান হবে জনসম্মত, প্রশাসন হবে নিরপেক্ষ, বিচার বিভাগ হবে স্বাধীন এবং নীতিনির্ধারণ হবে জনঅংশগ্রহণভিত্তিক। রাষ্ট্রকে জনগণের জন্য স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও মানবিক রূপে গড়ে তুলতে হলে গণশুনানি, নীতি পর্যালোচনায় নাগরিক অংশগ্রহণ, বাজেট প্রণয়নে জনগণের পরামর্শ এবং রাজনৈতিক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্র কেবল আইন ও প্রতিষ্ঠানের সংকলন নয়; এটি এক জীবন্ত সামাজিক সম্পর্ক, যার প্রাণ হচ্ছে জনগণ।

যতদিন রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়, ততদিন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের বৈধতা অর্জিত হবে না, সমাজে অনাস্থা ও বঞ্চনা বেড়ে যাবে। তাই এখন সময় এসেছে শুধু সম্পর্ক মেরামত নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক রূপান্তরের মাধ্যমে সম্পর্কের পূর্ণ পুনর্গঠন করার– যেখানে রাষ্ট্র হবে জনগণের এবং জনগণ হবে রাষ্ট্রের সার্বভৌম মালিক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য হবেন। কারণ, আমরা জানি কেতাবি সংস্কার বা পুঁথিগত আইন দিয়ে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদে হেজিমনি ঠেকানো যায় না। 

গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন খুব জরুরি; এটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের শাসনে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার অন্যতম উপায়। নির্বাচন ছাড়া কোনো সরকার জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধি হতে পারে না। নির্বাচনের বাইরে ক্ষমতা পরিবর্তন হলে তা অবৈধ শাসন ব্যবস্থার জন্ম দেয়– যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করে।

তাই এখন একান্তভাবে প্রয়োজন একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত। জনগণ প্রস্তুত– তারা তাদের ভবিষ্যৎ, অধিকার এবং মর্যাদার প্রতিফলন দেখতে চায় ব্যালটের মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় রাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রগতি তখনই অর্থবহ হবে, যখন তা নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা পাবে। নির্বাচন ছাড়া সংস্কারের কোনো কার্যকর ভিত্তি থাকতে পারে না। সুশাসনের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের অনিবার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে।

সাঈদ খান: সাংবাদিক; সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিইউজে
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণতন্ত্র ফেরানোর একমাত্র উপায় নিরপেক্ষ নির্বাচন: মঈন খান
  • গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন নিরপেক্ষ নির্বাচন: মঈন খান
  • প্রধানমন্ত্রীর অসীম ক্ষমতাকে সীমায় আনবে কে
  • মালয়েশিয়ায় ‘নতুন রাজনৈতিক দলের কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা
  • নিউ নরমাল ভারতের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে
  • শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেছে নয় মাসের অধিক, এখনো গণতন্ত্র ফিরে আসেনি: বিএনপি নেতা আজিজুল বারী
  • কারও দল গোছানো জন্য নির্বাচন বিলম্বিত হতে পারে না: নজরুল ইসলাম খান
  • রাষ্ট্রের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রতিস্থাপনই মূল সংস্কার
  • শাহরিয়ার হত্যায় ক্ষোভ, এমন বর্বরতা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন