‘আপনার সরকারের দুইজন উপদেষ্টা এনসিপির প্রতিনিধি’
Published: 17th, May 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসেরনেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘এনসিপি মার্কা সরকার’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “আপনার সরকারের দুইজন উপদেষ্টা এনসিপির প্রতিনিধি। তাদের পদত্যাগ করতে বলেন অথবা বিদায় করে দেন।” সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকেও তিনি পদত্যাগ করার আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আপনাকে ম্যান্ডেট দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন করার জন্য। রোজ কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া হয়নি। জরুরি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হয়েছিল। আপনি আশ্বস্ত করেও সে কথা রাখেননি।”
শনিবার (১৭ মে) খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে অনুষ্ঠিত তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দেন।
আরো পড়ুন:
‘জুলুম না করা আ.
‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে আরো ১০ হাজার মানুষ হত্যায় প্রস্তুত ছিলেন’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাকিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছরে সাত হাজারেরও বেশি মানুষকে অপহরণ, গুম এবং সীমাহীন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে হত্যা করেছে। তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে।”
তিনি বলেন, “ক্ষমতায় থাকাকালীন গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারসহ মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। লুটপাট করে ব্যাংকিং খাতও ধ্বংস করেছে। এসব কারণে আওয়ামী লীগ নিজেরাই নিজেদের রাজনৈতিক মৃত্যু ডেকে এনেছে। ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের মৃত্যু হয়েছে, আর দাফন হয়েছে দিল্লিতে।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “২০১৪ ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে যারা ভোটার হয়েছেন ‘আমি আর ডামি’ নির্বাচনে তারা ভোট দিতে পারেননি। এভাবে হওয়া তিনটি নির্বাচনে পাঁচ কোটি যুবক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে দেশে সংগঠিত হয়েছে রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থান। এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকারের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আর রক্ত দিতে হবে না, মিছিল করতে হবে না এ প্রত্যাশা সবার।”
আওয়ামী লীগ দেশে খুনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জাতিসংঘের রিপোর্ট বলছে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ১৪০০ মানুষকে হত্যা করেছে। হেলিকপ্টার দিয়ে মানুষ মেরেছে, তারপরেও তিনি (শেখ হাসিনা) অনুতপ্ত হননি, ক্ষমা চাননি। উল্টো দিল্লিতে বসে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।”
সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিএনপি ঘোষিত ৩১ দফার মাধ্যমে একটি আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে মানুষ। দাবিগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে একটি মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ দেশের তরুণরাই ৩১ দফা বাস্তবায়নের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে।”
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না। বিশেষ বক্তা ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
আজ শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হলেও সকাল ১১টা থেকেই খুলনা এবং বরিশালের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও মহানগর থেকে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে খুলনার সার্কিট হাউস ময়দানে আসতে শুরু করেন। তাদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে খুলনা মহানগরী।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ দল র ক ন দ র য় স ব এনপ র ছ ত রদল উপদ ষ ট র র জন সরক র য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।
আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।
প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।
প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।
দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।
তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।
অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।
সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।
ইসরাত জাহান
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়