অকেজো ১৫ স্লুইসগেট নতুন নির্মিত হচ্ছে একটি
Published: 17th, May 2025 GMT
সীতাকুণ্ড শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত হলেও এলাকার মানুষের বড় অংশই কৃষির সঙ্গে জড়িত। সাগর উপকূল ও পাহাড়ি এলাকায় আমন-বোরোসহ ব্যাপক সবজি চাষ হয়। কিন্তু ষাটের দশকে নির্মিত সাগর উপকূলের ১৫টি অকেজো স্লুইসগেট মেরামত না হওয়ায় নানা সমস্যায় পড়ছেন মানুষ। কৃষিজমিতে সাগরের লোনা পানি ঢুকে পড়ায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় ফসলহানি ঘটায়।
স্থানীয়রা জানান, সৈয়দপুর ইউনিয়নে প্রতিবছর পরিত্যক্ত বদরখালী খালের স্লুইসগেট দিয়ে বন্যার পানি ঢুকে পড়ে, প্লাবিত হয় কয়েকটি গ্রাম। লোকালয়ে বন্যা ও সাগরের পানি ঢোকা বন্ধে ৬৫ বছরের পুরোনো পরিত্যক্ত স্লুইসগেট ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ‘দুই-বেন্ট’ স্লুইসগেট। ৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবে) এই কৃষিবান্ধব প্রকল্পের ফলে কৃষিজমির পানি সেচ সংকট দূর হবে। নানাভাবে লাভবান হবেন কৃষক ও স্থানীয় মানুষ।
সীতাকুণ্ড উপজেলায় সাগর উপকূলে বেড়িবাঁধ এলাকায় রয়েছে ১৫টি অকেজো স্লুইসগেট। পর্যায়ক্রমে সব সংস্কার করা হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, নির্মিতব্য দুই-বেন্ট স্লুইসগেট থাকবে– একটি জল নিয়ন্ত্রণ কাঠামো যেটি নদী, খাল বা জলাশয়ের পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হবে। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশন করে বন্যার ঝুঁকি কমানো যাবে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানি প্রবেশ রোধ করে মিষ্টি পানির মান রক্ষা করতে হবে।
সৈয়দুপুর এলাকার কৃষক আলাউদ্দিন বলেন, এই স্লুইসগেট সম্ভবত ১৯৬২-৬৩ সালে তৈরি। বর্তমানে পাইপ ভেঙে দুই পাশে জমেছে মাটি। বেডিবাঁধের কিছু অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এসব কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে সৈয়দপুরের স্লুইসগেটের বাঁধ। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুনভাবে স্লুইসগেটটি নির্মাণ করছে।
গত বুধবার বদরখালী খালের স্লুইসগেট এলাকা পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.
চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বিভাগীয়-২ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উপকূলীয় বাঁধের পোল্ডার নম্বর-৬১/১-এ অবস্থিত স্লুইসগেটগুলো ষাটের দশকে নির্মিত হয়েছিল। সমুদ্রের পানি পোল্ডারের অভ্যন্তরে প্রবেশ রোধে এবং অতিবর্ষায় পোল্ডারের অভ্যন্তরের পানি নিষ্কাশনে অকেজো স্লুইসগেটগুলোর সংস্কার জরুরি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ হাবিব উল্ল্যাহ বলেন, ‘পরিত্যক্ত স্লুইসগেট ভেঙে নতুন স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলে সৈয়দপুর বারৈয়ারারঢালা ও মুরাদপুর তিন ইউনিয়নের কৃষকরা উপকৃত হবেন। এতে সরাসরি সুফল পাবেন সৈয়দপুর ইউনিয়নের হাজারো কৃষক। এলাকার ১১০ হেক্টর জমিতে হবে নিয়মিত ধান চাষ। শীতকালে ব্যাপক ফলন হবে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, তিতকরলাসহ নানা জাতের সবজির।’
পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি মোহাম্মদ তাহের বলেন, ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাশিত ছোট কুমিরা খাল খনন করা হচ্ছে। প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৪০ ফুট প্রস্থ এ খালের খননকাজ সম্পন্ন হলে হাজারো মানুষ উপকৃত হবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ স ল ইসগ ট স য়দপ র র উপক ল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আটক হয়নি কেউ আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কড়ইবাড়ী গ্রামে মা ও দুই সন্তানকে হত্যার পর এলাকা অনেকটা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। মরদেহ তিনটি গতকাল শুক্রবার রাতে দাফন করা হয়েছে। ঘটনার পর ৩৬ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।
ময়নাতদন্ত শেষে রাতে নিহতদের বাড়ির পাশের একটি কবরস্থানে পুলিশের উপস্থিতিতে মরদেহ দাফন করা হয়। এদিকে ঘটনার পর থেকে নিহতদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে বাঙ্গরা বাজার থানাধীন কড়ইবাড়ী গ্রামে একটি মোবাইল ফোন ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে হামলা করে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। ওই গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি, তাঁর ছেলে মো. রাসেল মিয়া ও মেয়ে জোনাকি আক্তারকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যদিও এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রুবির ছেলে নিহত রাসেলের স্ত্রী মীম আক্তার। তিনি বলেন, ‘একটি মোবাইল চুরির ঘটনার সূত্র ধরে আমাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর হয়। বুধবার রাতে বাছির নামে এক যুবক আমার স্বামীকে ফোন করে সকালে পুরো পরিবারকে হত্যা করে ফেলার হুমকি দেয়। তিনজন পরিকল্পিত হত্যার শিকার।’
পালিয়েছেন চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, ঘটনার দিন সকালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল ও ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে নিহতদের পরিবারের হাতাহাতি হয়। এ ঘটনাকে মারধর বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে জড়ো করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে, ঘটনার পর থেকে গতকাল শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতদের বাড়িতে পুলিশের পাহারা ছিল। বাড়ির তিনটি আবাসিক ভবন তালাবদ্ধ। বাইরে পাহারায় ছিল পুলিশ।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, শুক্রবার ওই বাড়িতে গণমাধ্যমকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজন ছাড়া আর কাউকে দেখা যায়নি। তারা আরও জানান, নিহতদের কবর খুঁড়তে পুলিশকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়েছে। অন্য এলাকা থেকে লোক এনে কবর খুঁড়তে হয়েছে। এর পর মরদেহ রাতে পুলিশের তত্ত্বাবধানে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। এ সময় থানা পুলিশ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. শারমীন সুলতানা জানান, দুপুর ১২টার দিকে তিনজনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু করা হয়। বিকেলে সেগুলো পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রাতে বাঙ্গরা বাজার থানার ওসি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিহতদের বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহত রুবির মেয়ে রিক্তা আক্তার গতকাল রাতে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে। তিনি আরও
জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।