শাবি শিক্ষককে মারধর-হেনস্তা, প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ
Published: 19th, May 2025 GMT
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) এক শিক্ষক হেনস্তা ও মারধরের শিকার হয়েছেন। রোববার রাত সোয়া ৮টার দিকে আখালিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। এদিকে ওই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রায় আড়াই ঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
মারধরের শিকার ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্বালানি ও খনিজ প্রকৌশল (পিএমই) বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান। তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি মো.
জানা যায়, রোববার রাত সোয়া আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা আখালিয়ায় মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলামের গাড়ির সঙ্গে এক ব্যক্তির মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগে। তখন ওই ব্যক্তি মোটরসাইকেল থেকে নেমে তাঁকে মারধর ও হেনস্তা করে। পরে আহত শিক্ষক পাশের হাসপাতালে ভর্তি হন। এদিকে এই ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা মাউন্ট এডোরার সামনে এসে বিক্ষোভ করে। প্রায় আধাঘণ্টা সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এসে আবারও সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে।
অন্যদিকে আহত শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে তখন মাউন্ট এডোরা থেকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় অবস্থায় সেনাবাহিনী আসে এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ থেকে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করেন- ১. অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এবং শিক্ষকের নিকট উক্ত ঘটনার জন্য ক্ষমা চাওয়া। ২. শিক্ষকের মানহানি ও শারীরিক লাঞ্ছনার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং ৩. ঘটনার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল জব্দ করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।
রাত দুইটার দিকে সিলেট শহরে অভিযান চালিয়ে হামলাকারী ব্যক্তি মো. রাসেলকে গ্রেপ্তার করেন সিলেট কোতোয়ালি থানা পুলিশ। কোতোয়ালি থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাকে ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। এক পর্যায়ে সিলেট নগরী থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ স ল ট স ন মগঞ জ সড়ক ব ক ষ ভ কর ম রধর
এছাড়াও পড়ুন:
‘মুক্তবুদ্ধি ও যুক্তির সাধক ছিলেন লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরী’
লেখক, প্রাবন্ধিক ও চিন্তাবিদ মোতাহের হোসেন চৌধুরী সারা জীবন মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার চর্চা করে গেছেন। প্রকৃত মানবতাবাদী দার্শনিক ছিলেন তিনি। এ কারণে তাঁর লেখা, সৃষ্টিকর্ম ও চিন্তা এখনকার মানুষের জন্যও সমান প্রাসঙ্গিক।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে লেখক মোতাহের হোসেন চৌধুরীর ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণসভায় বক্তারা এ কথা বলেন। লেখকের নিজ জেলা লক্ষ্মীপুরে তাঁকে নিয়ে প্রথম স্মরণসভা ছিল এটি।
রামগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত এ স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ। প্রধান অতিথি ছিলেন লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার। বক্তব্য দেন প্রবন্ধিক, গবেষক ও শিক্ষক ড. কুদরত-ই-হুদা, যুগান্তরের সাহিত্য সম্পাদক কবি জুননু রাইন, লেখকপুত্র ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন, লক্ষ্মীপুর সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক গাজী গিয়াস উদ্দিন।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন বাংলার একজন উজ্জ্বল প্রাবন্ধিক, মুক্তচিন্তার আলোকবর্তিকা। তাঁর লেখায় যেমন মানবতার বোধ রয়েছে, তেমনি যুক্তি ও প্রগতিশীল চিন্তার শক্ত ভিত্তি রয়েছে। তরুণ প্রজন্মকে তাঁর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
বাবার স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ক্যাপ্টেন সৈয়দ জাহিদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা। অথচ দুঃখজনক হলো, এত দিন বাবাকে নিয়ে এ জেলায় আলোচনা বা স্মরণসভা হয়নি। তাঁর মতো মহান প্রাবন্ধিকের জীবন ও দর্শন নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষক ড. কুদরত-ই-হুদা বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী ছিলেন চিন্তার দিক থেকে ব্যতিক্রমধর্মী এক ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন মুক্তবুদ্ধির সাধক, মানবতাবাদী দার্শনিক ও সাহিত্যপ্রেমী। তাঁর প্রবন্ধ আজও পাঠককে সত্য, সুন্দর ও ন্যায়ের পথে চলার প্রেরণা দেয়।
সাহিত্য, দর্শন ও সমাজচিন্তায় মোতাহের হোসেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলে জানান কবি জুননু রাইন। তিনি বলেন, মোতাহের হোসেন চৌধুরীর লেখনী আজও প্রজন্মকে চিন্তার খোরাক জোগান।
মোতাহের হোসেন চৌধুরী ১ এপ্রিল ১৯০৩ সালে তৎকালীন নোয়াখালী জেলা এবং বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার কাঞ্চনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল হুসেন, কাজী মোতাহার হোসেন, আবুল ফজল, আবদুল কাদিরের সঙ্গে যৌথভাবে বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। বের করেন ‘শিখা’ নামের পত্রিকা। তাঁর রচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘সংস্কৃতি কথা’ পাঠকমহলে সমাদৃত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।