ফতুল্লায় সালেহা আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূ পাঁচ তলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (১৯ মে) বিকেলে ফতুল্লার শাসনগাঁ এলাকার শহিদ মিয়ার বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানান, নিহত সালেহা আক্তারের স্বামী আল আমিন শাসনগাঁ এলাকায় শহিদ মিয়ার বাসায় স্বপরিবারে ভাড়া থাকেন। আল আমিন গার্মেন্টসে কাজ করেন।

তার স্ত্রী বাসায় থাকতেন। হঠাৎ করেই ছাদ থেকে সালেহা নিচে পড়ে যায়। এসময় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভিক্টোরিয়া হাসপালের নেওয়া হলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।

ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ হবধ

এছাড়াও পড়ুন:

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বজনীন রেশন

ছাত্রজীবনে আমাদের এক বন্ধুর লেখা একটা ছড়া ছিল এমন–‘উর্বরা ক্ষেত, খাদ্য নাই/ খাদ্য দিয়ে পেট ভরাবে, শাসকদের সাধ্য নাই’। ইতোমধ্যে কয়েক দশক চলে গেছে। দেশে খাদ্য উৎপাদনও প্রকৃত কয়েক গুণ হয়েছে। তারপরও জনগণের একটা বড় অংশ খাদ্য সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে। সমস্যা কত গভীর তা বোঝা যায় যখন মধ্যবিত্ত বহু পরিবার টিসিবির ট্রাক সেলের লাইনে দাঁড়িয়ে চাল-ডাল-তেল জোগাড়ের চেষ্টা করে। শ্রমজীবীদের মধ্যে যারা দিন এনে দিন খান, তাদের পক্ষে টিসিবির লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা দুরূহ। কারণ তাতে মজুরি কাটা যায়; ভাসমান শ্রমিকদের হয়তো দিনটাই মাটি হয়। এদের সবাই তাই টিসিবির লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। দাঁড়ালে কী হতো? সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ধরা দিত। হয়তো আধপেটা খেয়ে, তিন বেলার জায়গায় দু’বেলা খেয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। এই প্রেক্ষাপটেই সর্বজনীন রেশন ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখব, ’৪৭ থেকে ’৯৩ পর্যন্ত উপমহাদেশে যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু ছিল ‘বিধিবদ্ধ রেশনিং’ নামে, তার পটভূমি ছিল ’৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ। এর পর গ্রামাঞ্চলে চালু হয়েছিল ‘সংশোধিত রেশনিং’। ১৯৭৪-এর দুর্ভিক্ষে আমরা আরও ব্যাপক মৃত্যুযজ্ঞ থেকে রেহাই পেয়েছিলাম ‘বিধিবদ্ধ রেশনিং’ ছাড়াও কাজের বিনিময়ে খাদ্য-কাবিখা, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট-ভিজিডি একযোগে চালু ছিল বলে। বর্তমানেও সরকার সর্বজনীন রেশন কর্মসূচি চালু করতে পারলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা মানুষ একটু স্বস্তি পেত। 
নির্মম শোষণের দেশগুলোতেও তারা একটা মানবতার লেবেল দিয়ে রাখতে চায় বলেই মানুষের সামাজিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়। তাই ইউরোপের দেশগুলোতে সর্বজনীন রেশন, পেনশন, বেকার ভাতা, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি নিশ্চিত করে। আমাদের দেশে গত করোনাকালে ইউরোপের মতোই লকডাউন প্রথা জারি ছিল। ওরা রেশন কার্ডে আবশ্যকীয় খাদ্যশস্যের নিশ্চয়তা পেয়ে গৃহবন্দি ছিল। আর আমরা খাদ্য নিশ্চয়তা ছাড়াই না খেয়ে গৃহবন্দি ছিলাম। যদি করোনা আরও দীর্ঘস্থায়ী হতো, আমাদের বাইরে বের হলে করোনায় মরতে হতো; ঘরে থাকলে না খেয়ে মরতে হতো। এসব বিবেচনাতেও সর্বজনীন রেশন কার্ড আজ সময়ের জরুরি চাহিদা। 

এই দেশ স্বাধীন করার যুদ্ধ করেছিল যে গরিব মানুষ, তারা সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষত খাদ্য নিরাপত্তা কেন পাবে না? একের পর এক ১৪ প্রকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু ও বন্ধ করা হয়েছে এ দেশে শুধু দুর্নীতির কথা বলে। প্রথমত এটা দুর্ভাগ্যের যে, একটা স্বাধীন দেশে বিশ্বব্যাংক-এডিবির দুর্নীতির কারণে রেশনিং বন্ধের ভুল পরামর্শ কেন বাস্তবায়ন করতে হবে? দ্বিতীয়ত, দুর্নীতি দমন করা তো সরকারেরই দায়িত্ব। মাথাব্যথা হলে নিরাময়ের ব্যবস্থা নিন; মাথা কেটে ফেলবেন কেন? কিন্তু সরকার মাথা কেটেই রেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দুর্নীতি বন্ধ না করে রেশন বন্ধ করে দিয়েছিল। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের পর খাদ্যগুদাম খালি করার প্রশ্ন এসেছিল কৃষকদের কাছ থেকে বোরো মৌসুমের ক্রয়কৃত ধান রাখার জন্য। এই গুদাম খালি করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই খাদ্যভিত্তিক সামাজিক নানা নিরাপত্তা কর্মসূচি চালুর প্রশ্ন এসেছিল। তাই সব মিলিয়ে ১৪ প্রকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু ও বন্ধ করা হলো বটে, কিন্তু নাগরিকরা শেষ বিচারে সামাজিক নিরাপত্তা পেল না। এসব কর্মসূচি হলো– ১. কাজের বিনিময়ে খাদ্য-কাবিখা (১৯৭৫), ২. টেস্ট রিলিফ-টিআর (১৯৮০), ৩. রুরাল মেইনটেন্যান্স কর্মসূচি (১৯৮৩), ৪. ফুড ফর অ্যাসেট (২০০২), ৫. ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট- ভিজিডি (১৯৭৫), ৬. পুষ্টিবিষয়ক প্রশিক্ষণ (২০০২), ৭. শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য (১৯৯৩), ৮. স্কুল ফিডিং (২০০২), ৯. প্রাথমিক শিক্ষাবৃত্তি (২০০২), ১০. মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য অর্থ সহায়তা (১৯৯৩), ১১. কমিউনিটি পুষ্টিবিষয়ক কর্মসূচি (২০০২), ১২. ভিজিডির আওতায় ভিটামিন মেশানো আটা (২০০২), ১৩. গ্রাটুইসাম রিলিফ (১৯৮০), ১৪. ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং-ভিজিএফ (১৯৮০)। এর বাইরেও আছে বিধবা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধীদের ভাতা।

আশির দশকে বিলুপ্ত পল্লি রেশনিং আবার চালু ও হালের ওএমএস বা ওপেন মার্কেট সেল (কম মূল্যে) ও ট্রাক সেল। এত উদ্যোগের কোনোটাই আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। অথচ পাশের দেশ ভারত তাদের রেশন বন্ধ না করে আধার কার্ডে যুক্ত করে ‘দুয়ারে রেশন’ ইত্যাদি স্লোগানে বেশ সুফল পেল। তারা মাথাব্যথায় মাথা না কেটে উল্টো রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার দাঁড় করাতে আইনগত বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করেছে। আইনি অধিকারে রূপান্তর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে তারা পুরো প্রক্রিয়াই ডিজিটাইজেশন করেছে।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, কৃষকের উৎপাদনে সমস্যা নয়, সরকারের বণ্টননীতিতেই সমস্যা। তাই আমরা মনে করি, দরিদ্রের খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষকের মূল্য সহায়তা এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ– তিনটাই সম্ভব সর্বজনীন রেশন চালুর মাধ্যমে। দ্রব্যমূল্যের যে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে, তাও মোকাবিলা সম্ভব এই সর্বজনীন রেশন প্রক্রিয়াতেই। ’৯০-এর দশকে খাদ্যনীতি সংস্কারে বেসরকারি খাতের ওপর দেওয়া বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে খাদ্য আমদানি উন্মুক্ত করা হয়েছিল এবং বেসরকারি উদ্যোগে খাদ্য আমদানিতে ব্যাংক ঋণ অবাধ করা হয়েছিল। সেই পথ ধরেই আমাদের চাহিদা ছিল ১২ লাখ টন চিনির; আমদানি করেছিল পাঁচটি কোম্পানি সিন্ডিকেট করে ৩৪ লাখ টন চিনি, যাতে দেশি চিনি বিক্রি করতে না পেরে চিনিকলগুলো লোকসান গুনে বন্ধ হয়। তা-ই হয়েছে এবং পরে চিনির দাম তিন গুণ হয়েছে। এসবেরও নিয়ন্ত্রণ হবে যদি রাষ্ট্র জনগণের ন্যূনতম চাল, ডাল, চিনি, আটা, তেলের দায়িত্বটা ডিজিটাল রেশনিং পদ্ধতিতে নেয়। 

জহিরুল ইসলাম: সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন

সম্পর্কিত নিবন্ধ