‘শুধু খাবার পেলে বেঁচে যেত’–এই কথাটি এখন গাজার হাজারো শিশুর গল্প। যুদ্ধ, অবরোধ আর নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞার জাঁতাকলে পড়ে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা।
জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসেই ১৬ হাজার ৭০০-এর বেশি শিশু অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন আর জীবিত নেই।
৩ জুলাই এক বিবৃতিতে ইউনিসেফ জানায়, গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। চলমান ইসরায়েলি অবরোধ, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি, জ্বালানির সংকট এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে জরুরি সহায়তা পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, গাজার শিশুরা বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ খাদ্য সংকটের সম্মুখীন। জরুরি সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দিলে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য বিপর্যয় আসন্ন।
শুধু মে মাসেই ছয় মাস থেকে পাঁচ বছর বয়সী ৫ হাজার ১১৯ জন শিশুকে তীব্র অপুষ্টি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে–এপ্রিলের তুলনায় যা ৫০ শতাংশ এবং ফেব্রুয়ারির তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেশি।
ইউনিসেফের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক এদুয়ার বেইগবেদার বলেন, মাত্র ১৫০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ১১২টি শিশুকে তীব্র অপুষ্টির কারণে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। তাদের প্রতিটি মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য ছিল। জীবনরক্ষাকারী খাবার, পানি ও চিকিৎসা সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হয়েছে। এটি একটি মানবসৃষ্ট সংকট, যার মূল্য দিচ্ছে শিশুরা–নিজেদের জীবন দিয়ে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কমপক্ষে ৬৬ জন শিশু ইতোমধ্যে অপুষ্টিতে মারা গেছে।
তারা বলেছে, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে খাদ্য, দুধ ও ওষুধ আটকে দিয়ে ক্ষুধাকে অস্ত্রে রূপান্তর করেছে। এটি একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ।
গাজায় খাদ্য সরবরাহের একমাত্র পথ হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন। বিতরণকেন্দ্রগুলোতে বারবার হামলা ও সুবিধাভোগীদের লক্ষ্য করে গুলির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
আরব-ব্রিটিশ আন্ডারস্ট্যান্ডিং কাউন্সিলের পরিচালক ক্রিস ডয়েল বলেন, ‘জিএইচএফের এই সহায়তা ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অবমাননাকর–এটি মানবিক সহায়তার স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং মানবিকতার মূলনীতিকে উল্টো করে দিয়েছে।’ গাজার এই সংকট আমাদের সামনে একটি গভীর প্রশ্ন তোলে, শুধু একটু খাদ্য, একটু পানি, কিছু ওষুধ– এগুলো কি পৌঁছে দেওয়া খুব কঠিন? যদি উত্তর ‘না’ হয়, তবে এই মৃত্যু ‘মানবসৃষ্ট এবং প্রতিরোধযোগ্য’ আর তখন নীরবতা আর নিরপেক্ষতা দুটিই হয়ে ওঠে যুদ্ধাপরাধে সহযোগিতা। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গল প ইউন স ফ সহ য ত
এছাড়াও পড়ুন:
চিত্র, শব্দ ও সংলাপ একসঙ্গে তৈরি করছে বাইদুর এআই মডেল মিউজস্টিমার
লিখিত প্রম্পট থেকে বাস্তবধর্মী ভিডিও তৈরিতে গুগল ও ওপেনএআইয়ের সঙ্গে দৌড়ে শামিল হয়েছে চীনের প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোও। এরই মধ্যে চীনা সার্চ ইঞ্জিন বাইদু চালু করেছে তাদের প্রথম এআই ভিডিও তৈরির মডেল ‘মিউজস্টিমার’।
চিত্র, সাউন্ড ইফেক্ট ও চীনা ভাষায় সংলাপ তিনটি উপাদান একসঙ্গে তৈরি করার ক্ষমতা রয়েছে মিউজস্টিমার মডেলের। সব উপাদান একে অপরের সঙ্গে সিঙ্ক করে তৈরি হওয়ায় ভিডিওর গুণগত মান হয় উচ্চমাত্রার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজ্ঞাপন, বিপণন বা কনটেন্ট নির্মাণের মতো খাতে এ প্রযুক্তি সময় ও খরচ বাঁচিয়ে দিতে পারে। মূলত ব্যবসায়িক ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে তৈরি এই এআই মডেল স্থিরচিত্র থেকে স্বল্পদৈর্ঘ্য ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম। এ ছাড়া বাইদু তাদের সার্চ প্রযুক্তিতেও এনেছে পরিবর্তন। নতুন সংস্করণে সার্চ হয়েছে আরও স্মার্ট, মাল্টিমোডাল ও ব্যবহারকারীভেদে পারসোনালাইজড।
মিউজস্টিমার একটি ‘ভিশন ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ বা ভিএলএম। এ ধরনের মডেল কম্পিউটার ভিশন ও প্রাকৃতিক ভাষা প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা একসঙ্গে কাজে লাগায়। ফলে ছবি ও লেখার সমন্বিত বিশ্লেষণ করে এমন কাজগুলোতে এই মডেল ব্যবহার করা যায়, যেগুলোতে মাল্টিমোডাল বোঝাপড়ার প্রয়োজন পড়ে। ১০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ফুল এইচডি (১০৮০পি) ভিডিও তৈরি করতে পারে মিউজস্টিমার, যেখানে দৃশ্য, সংলাপ ও শব্দ একসঙ্গে এবং সঠিকভাবে সমন্বিত থাকে। প্রাথমিকভাবে যাঁরা এই মডেল ব্যবহার করেছেন, তাঁরা বলছেন, আউটপুট দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) মিউজস্টিমার দিয়ে তৈরি কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে মডেলটির চিত্রনির্মাণ ও সাউন্ড ডিজাইনের সক্ষমতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাইদু তিনটি স্তরে মিউজস্টিমার চালু করেছে। এগুলো হলো টার্বো, প্রো ও লাইট। প্রতিটি স্তরই মূলত এন্টারপ্রাইজ বা করপোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি। গুগলের ভিও থ্রি কিংবা ওপেনএআইয়ের সোরা সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি হলেও বাইদুর মিউজস্টিমার সেখানে পরিপূর্ণভাবে ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিউজস্টিমারের মাধ্যমে চীনের জেনারেটিভ এআই খাতে প্রতিযোগিতা আরও জোরালো হলো। এরই মধ্যে বাইটড্যান্স, টেনসেন্ট ও আলিবাবার মতো প্রতিষ্ঠান এই খাতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এদিকে গত মে মাসে গুগলের বার্ষিক ডেভেলপার সম্মেলন ‘গুগল আই/ও’তে ‘ভিও থ্রি’ মডেল উন্মোচন করা হয়, যা এর হাইপাররিয়ালিস্টিক ভিডিও তৈরির দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হয়।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস