Samakal:
2025-07-06@06:11:10 GMT

দুর্যোগে কাজ করবে যে উদ্ভাবন

Published: 5th, July 2025 GMT

দুর্যোগে কাজ করবে যে উদ্ভাবন

শাহেন শাহ। ভূমিকম্প, বন্যা, পাহাড়ধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতি কমাতে ড্রোনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল রাখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। তরুণ এই বাংলাদেশি তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তাঁর এই সাড়া জাগানো উদ্ভাবন নিয়ে কথা বলেছেন সাহসের সঙ্গে। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

ভূ  মিকম্প, বন্যা, পাহাড়ধসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে ব্যাহত হয় উদ্ধারকাজ। এতে বাড়ে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। দুর্যোগকালীন এই ক্ষয়ক্ষতি রোধে ড্রোনের মাধ্যমে নেটওয়ার্ক সচল রাখার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহেন শাহ। ইতোমধ্যে তুরস্কের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক হুরিয়াত, ইংরেজি দৈনিক সাবাহ, প্রধান টিভি চ্যানেল টিআরটি হাব গুরুত্বসহকারে প্রচার করেছে তরুণ এই বাংলাদেশির উদ্ভাবনের খবর। শাহেন শাহ বলেন, ‘ছোটবেলায় যখন বিজ্ঞান বই পড়তাম তখন ভাবতাম, বড় হয়ে বিজ্ঞানী হব। অনেক কিছু আবিষ্কার করব; যা মানুষের কল্যাণে যুগের পর যুগ ব্যবহার হবে।’ লক্ষ্মীপুরে বেড়ে ওঠা ছোট্ট শাহেন শাহর সেই ভাবনা যেন সত্যি হয়েই ধরা দিল! 
উদ্ভাবনের গল্প
২০২২ সালে শাহেন শাহ কাজ শুরু করেন। তিনি চাইতেন এমন কিছু উদ্ভাবন করতে, যা অসংখ্য মানুষের উপকারে আসবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পে প্রচুর মানুষ মারা যায়। খোদ তুরস্কেই ভূমিকম্প কেড়ে নেয় হাজারো প্রাণ। এই বিষয়গুলো শাহেন শাহকে নেটওয়ার্ক সচল রাখার উদ্ভাবনে উৎসাহিত করে। তার এই উদ্ভাবন বিখ্যাত ড্রোনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। শাহেন শাহর উদ্ভাবন তুরস্কের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণা পরিষদ এবং ইলদিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তায় পরিচালিত প্রকল্পে প্রাথমিক ধাপ উতরে গেছে। এখন কেবলই বাস্তবায়নের অপেক্ষা! শাহেন শাহর সঙ্গে আরও ৯ জন যুক্ত আছেন। যারা তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচেলর, মাস্টার্স, পিএইচডিতে অধ্যয়নরত। 
যেভাবে কাজ করে
দুর্যোগের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি। যেখানে দুর্যোগ হবে সেখানে কিছু ড্রোন নির্দিষ্ট দূরত্বে আকাশে উড়বে। তারা নিজেদের মধ্যে কানেক্ট হবে। এই ড্রোনগুলো একটি বেজ স্টেশনের মতো কাজ করবে। ভূপৃষ্ঠে যারা থাকবে তাদের নেটওয়ার্ক সুবিধা দেবে। অনেকটা ওয়াইফাই-এর মতো। এটিই হলো তাঁর উদ্ভাবনের কাজের প্রক্রিয়া।
যত চ্যালেঞ্জ
যে কোনো উদ্ভাবন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। সেই সব চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলার পরেই সত্যিকারের সফলতার দেখা মেলে। ইকুইপমেন্ট, ডিজাইন, এআই অটোমেশন, একটি দেশ বা জায়গা কভার করতে কতগুলো ড্রোন লাগবে সেটি ঠিক করা এমন অনেক কিছু নিয়ে সমস্যার মুখে পড়েছেন শাহেন শাহ। তবে বুদ্ধি করে ঠিকই সমাধান বের করে নিয়েছেন। শাহেন শাহ বলেন, ‘তুরস্ক সরকার তাঁর গবেষণা এবং উদ্ভাবনকে গুরুত্ব সহকারে দেখছে। এটি অচিরেই আলোর মুখ দেখবে!’ 
বাংলাদেশেও ব্যবহার সম্ভব
বাংলাদেশে প্রায়ই বন্যা হয়। গত বছর বন্যায় লক্ষ্মীপুর, ফেনীসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। পুরো নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছিল। এমন অবস্থায় শাহেন শাহর উদ্ভাবন কাজে লাগানো সম্ভব। শাহেন শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার উদ্ভাবিত নেটওয়ার্ক সচল রাখার ব্যবস্থা কার্যকর করা যাবে। এ জন্য বাড়তি কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। এই নিয়েও আমি কাজ করছি।’ 
যেভাবে গেলেন তুরস্কে
২০০৫ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে জিপিএ ফাইভ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন শাহেন শাহ।  বাংলাদেশের ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি ইন আইটি এবং বুয়েট থেকে এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন আইসিটিতে মাস্টার্স করেন। ২০১৫ সালে তুরস্কের সরকারি বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি করতে পাড়ি জমান ইস্তাম্বুলের ইলদিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাঝে দুটি ব্যাংকের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন তিনি। 
আনন্দ-বেদনার গল্প
ছোটবেলা থেকে নতুন কিছু করার প্রবল আগ্রহ শাহেন শাহর। তাতে আসুক যত সমস্যা আর জটিলতা। এসব তিনি একদমই ভয় পাননি। এ জন্য জটিল কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারলে তাঁর খুব ভালো লাগে। একটি আবিষ্কার যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে কাজের জন্য উপযুক্ত হয় তখন তাঁর আনন্দ দেখে কে। অন্যদিকে ড্রোন যখন সেন্সরজনিত সমস্যার জন্য হুট করে মাটিতে আছড়ে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন তাঁর মনটা বিষাদে ভরে ওঠে। কারণ গবেষণার জন্য টাকা তো একবারই পাওয়া যায়। অবশ্য গবেষণায় পকেটের নানা খরচ করেছেন এমন অনেক ঘটনাই আছে তাঁর জীবনে। গবেষণায় সফল হওয়াটাই তাঁর কাছে সবচেয়ে মুখ্য।
যত অর্জন
শাহেন শাহর অন্যতম আবিষ্কার চালকবিহীন গাড়ি। চালক ছাড়াই অন্য সব গাড়ির মাঝে এই গাড়ি দিব্যি চলতে পারে। তাঁর এই কাজে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যোগাযোগের বিলম্বের শর্ত পূরণ করতে পারা এবং সময়টা কমিয়ে নিয়ে আসা। এই বিলম্বটাই ১০০ মিলি সেকেন্ডে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন তিনি। এই কাজের জন্য তিনি স্বর্ণপদক পেয়েছেন; যা ২০২১ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল ইনভেনশন, ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সিবিশনে (আইটেক্স) দেওয়া হয়। গবেষক হিসেবে শাহেন শাহর নাম স্থান পেয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকের নামের তালিকায়। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত এই তালিকায় নাম আছে তাঁর । গবেষণার সাইটেশন সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি করে Stanford University and Elsevier। বর্তমানে তিনি আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ার্সের জ্যেষ্ঠ সদস্য।
আগামীর ভাবনা
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে শাহেন শাহ বলেন, ‘আগামীতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই। দেশের প্রয়োজনে যদি কাজ করার সুযোগ হয়, তাহলে অবশ্যই এগিয়ে আসব।’ তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোন বিষয়ে গবেষণা করলে বেশি আয় করা যাবে, বেশি জনপ্রিয় হওয়া যাবে–নতুন গবেষকদের মধ্যে এমন একটা ঝোঁক দেখা যায়। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, নিজের যেটি পছন্দ, নিজের যেটি ভালো লাগে সেটি নিয়ে কাজ করা উচিত। তাহলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়।’ u
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গল প শ হ ন শ হ বল ন ন টওয় র ক স ত রস ক র র জন য ক জ কর ম কম প সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

কাজে ফিরছেন পপি, খুঁজছেন ভালো গল্প ও চরিত্র

দীর্ঘ বিরতির পর রূপালী পর্দায় ফিরতে যাচ্ছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। সন্তান ও সংসার সামলে এখন আবারও অভিনয়ে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রী।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে পপি বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র থেকে সাময়িক বিরতিতে ছিলাম। এখন আবার কাজের কথা ভাবছি। সন্তান জন্মের পর একটু মুটিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু এখন অনেকটা ঠিক আছি। যেহেতু দীর্ঘ একটা গ্যাপ হয়েছে, তাই যে কোনো কাজ দিয়ে ফিরতে চাই না। ভালো কিছু দিয়েই ফিরতে চাই।”

গত কয়েক বছর ধরেই পপি নিজেকে মিডিয়ার আলোচনার বাইরে রেখেছেন। এই সময় তিনি কাটিয়েছেন পুরোপুরি ব্যক্তিজীবনে মনোযোগ দিয়ে। পরিবার গড়ে তুলেছেন, মা হয়েছেন। এখন তার একমাত্র সন্তান আয়াত ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।

বর্তমানে পপি স্বামী ও সন্তান নিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন। কিছুদিন আগে সেখানে অবকাশ যাপনের কথা নিজেই জানান।

এদিকে পপির অনুপস্থিতির কারণে আটকে আছে একাধিক সিনেমা। এর মধ্যে রয়েছে ‘ভালোবাসার প্রজাপতি’ (পরিচালক: রাজু আলীম), ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ (পরিচালক: আরিফুর জামান আরিফ)।

তবে পপি অভিনীত ‘ডাইরেক্ট অ্যাটাক’ (পরিচালক: সাদেক সিদ্দিকী) সিনেমাটি মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বেশ কয়েকবার মুক্তির তারিখ ঘিরে গুঞ্জন উঠলেও এখনো সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি।

দর্শকের ভালোবাসা পাওয়া এই অভিনেত্রীর প্রত্যাশা যতটা ধামাকা দিয়ে তিনি হারিয়েছিলেন, ততটাই শক্ত কাজ দিয়ে তিনি ফিরবেন। তাই কাজ বাছাইয়ে সময় নিচ্ছেন।

ঢাকা/রাহাত//

সম্পর্কিত নিবন্ধ