যাঁরা লুটপাটের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাঁদের জব্দ করা টাকা ও শেয়ার দিয়ে একটি তহবিল গঠন করবে সরকার। লুটপাটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলো এ তহবিল থেকে টাকা ফেরত পাবে। এই টাকা আমানতকারীদের ফেরত দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। আর ব্যাংকঋণের বাইরে অবৈধ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দরিদ্র জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এর আগে সকালে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বিষয়ে একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার অগ্রগতি পর্যালোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গভর্নর।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বিএফআইইউর প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম।
দেশের বড় ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে আন্তসংস্থা টাস্কফোর্সের আওতাধীন ১১টি টিম। এই দলে রয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), নেতৃত্ব দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছে বিএফআইইউ। এ-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য বৈঠকে তুলে ধরা হয়। শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, সেগুলো হচ্ছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ।
গভর্নর বেশ আগে থেকেই বলে আসছেন, যাঁরা দেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন, তাঁরা শান্তিতে থাকতে পারবেন না। এ বক্তব্য কতটা প্রতিফলিত হয়েছে, জানতে চাইলে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘তাঁরা শান্তিতে আছেন, তা বিশ্বাস করি না। তাঁরা বড় বড় আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছেন। আমরা শুনেছি, এস আলম যে আইনজীবী নিচ্ছেন, তাঁর জন্য বছরে তিন কোটি ডলার ব্যয় হবে। এটা তাঁর শান্তিতে থাকার লক্ষণ নয়। তবে টাকা ফেরত আনতে সময় লাগবে। কারণ, আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এটা এগোবে।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘তারা শান্তিতে নেই। মাঝারি আকারের আরও ১২৫টি অনিয়ম তদন্তের আওতায় আসছে, যারা ২০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ লুট করেছে। আমরা ২০টি বিদেশি আইনি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছি। এখন এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কী কাজ হবে, তার কার্যপরিধি ঠিক করা হচ্ছে।’
জব্দ করা অর্থ ও সম্পদ দিয়ে তহবিল গঠন করা হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, সরকার প্রথমবারের মতো এ ধরনের একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ, জব্দ করা অর্থ ও সম্পদ এরই মধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এ তহবিলের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। প্রয়োজনে আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ব্যাংকের টাকা ব্যাংককে ফেরত দেওয়া হবে। অন্য খাত থেকে যেসব অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, তা জনহিতকর কাজে ব্যয় করা হবে।
কীভাবে এটা সম্ভব হবে, জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ব্যাংকে যে অর্থ আমানত হিসেবে জমা আছে, তা সহজেই পাওয়া পাবে। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের ১২–১৫ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। এই শেয়ার একটি স্ট্র্যাটেজিক বিনিয়োগকারীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। সেখান থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংক পাবে, যা আমানতকারীদের ফেরত দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হবে। এভাবে অর্থ পাওয়া সম্ভব হবে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, যাঁরা তদন্তের আওতায় এসেছেন, তাঁদের ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৬ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশে এবং ৪২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পেরুর প্রেসিডেন্ট নিজের বেতন দ্বিগুণ করায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ
পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তে নিজের মাসিক বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রায় ১০ হাজার ডলার (প্রায় ১২ লাখ ২৬ হাজার টাকা) করায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এই অর্থ দরিদ্র মানুষের জন্য ব্যয় করাই ছিল অধিক যুক্তিযুক্ত।
স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে পেরুর অর্থমন্ত্রী জানান, প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তের নতুন বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬৮ সোলেস (প্রায় ১০ হাজার ৬৭ ডলার), যা দেশটির ন্যূনতম মজুরির প্রায় ৩০ গুণ।
প্রেসিডেন্টের আগের বেতন ছিল ১৫ হাজার ৬০০ সোলেস (প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ডলার), যা ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যালেন গার্সিয়া নির্ধারণ করেছিলেন। এর আগে প্রেসিডেন্টের বেতন ছিল ৪২ হাজার সোলেস।
সরকার বলেছে, লাতিন আমেরিকার ১২টি দেশের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তের আগের বেতন ছিল ১১তম স্থানে, যা শুধু বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি। রয়টার্স সরকারের এ দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। তবে গত বছর রিও টাইমসের এক প্রতিবেদনে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর প্রেসিডেন্টদের বেতন ৩ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ২২ হাজার ডলার বলে উল্লেখ করা হয়।
এই সিদ্ধান্তকে ‘একেবারে রসিকতা’ বলে মন্তব্য করেন রাজধানী লিমায় একটি পত্রিকার স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পেনশনভোগী বাসিন্দা রোলান্দো ফনসেকা। তিনি বলেন, ‘পেরুজুড়ে চরম দারিদ্র্য বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্টের উচিত সবার সামনে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।’
বলুয়ার্তের জনপ্রিয়তা বর্তমানে তলানিতে নেমে এসেছে। সাম্প্রতিক এক জরিপ অনুযায়ী, তাঁর সমর্থন মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। তাঁর পূর্বসূরি পেদ্রো কাস্তিয়ো কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করায় তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং গ্রেপ্তার করা হয়।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বলুয়ার্তে নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে শুরু করে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় তাঁর ভূমিকা নিয়ে তদন্ত হয়েছে। তবে ৬৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পেরুর দারিদ্র্যের হার এখনো প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি, যা করোনা মহামারির সময় বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও জীবনমানে পরিবর্তন আসেনি বলেই মনে করছেন দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির সাধারণ মানুষ।
প্রসঙ্গত, পেরু ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ছয়জন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে, যাঁদের মধ্যে তিনজনই এখন কারাগারে। প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালের জুলাইয়ে। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।