ক্ষুদ্র এক পতঙ্গের ওপর টিকে আছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ
Published: 20th, May 2025 GMT
মানবসভ্যতার ইতিহাসে মৌমাছির সঙ্গে পরিচয় প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই। পবিত্র কোরআন, বেদ, রামায়ণসহ নানা ধর্মগ্রন্থ ও প্রাচীন সাহিত্যে এই উপকারী পতঙ্গের কথা উল্লেখ আছে। মৌমাছির ধারাবাহিক পরিশ্রম, একতা ও আত্মত্যাগ মানুষের জন্য অনুকরণীয়। এক ফোঁটা মধু সংগ্রহে একটি শ্রমিক মৌমাছিকে চষে বেড়াতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০টি ফুলে। এরাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পরাগায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় মৌমাছি একটি নির্ভরযোগ্য জীব। যদি মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যায়, তবে মানুষসহ গোটা প্রাণিকুল বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জাতিসংঘ ২০১৮ সাল থেকে ২০ মে বিশ্ব মৌমাছি দিবস পালন করছে। দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে মৌমাছির গুরুত্ব অনুধাবনের আহ্বান জানানো হয়।
খুলনার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, ‘বিশ্ব মৌমাছি দিবস পালনের উদ্যোগ মৌমাছির গুরুত্ব অনুধাবনে আমাদের সহায়তা করে। বসন্তে যখন গাছে ফুল ফোটে, মৌমাছি ফুলের মৌ–রস ও পরাগরেণু সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ পরাগায়ন ঘটায়।’
গবেষণার তথ্যের বরাত দিয়ে এই অধ্যাপক জানান, ৯০ শতাংশ বন্য ফুল, ৭৫ শতাংশ ফসল ও ৩৫ শতাংশ বৈশ্বিক কৃষির পরাগায়নের পেছনে মৌমাছির ভূমিকা রয়েছে।
বিদেশ রঞ্জন মৃধা আরও বলেন, ‘মৌমাছির সঙ্গে মানুষের গভীর মিল রয়েছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, “যদি মৌমাছি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়, তবে মানুষের জীবন পরবর্তী চার বছরে শেষ হয়ে যাবে।” মৌমাছি ছাড়া মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’
উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের সদস্যসচিব মো.
সুন্দরবনে এখন মৌমাছির চাক থেকে মধু আহরণের মৌসুম চলছে জানিয়ে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এই মৌসুমে বনের গাছে গাছে ফুল আর ডালে ডালে ঝুলে থাকা মৌচাকগুলো সুন্দরবনের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। সুন্দরবনের সঙ্গে মৌমাছির নিবিড় সম্পর্কই ম্যানগ্রোভ বনটিকে হাজার বছর ধরে টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে ভূমিকা রেখে চলেছে। জঙ্গলের গহিনে মৌচাকে মধু জমায় মৌমাছি। আর মৌমাছির কষ্টের ধন ‘মধু’ ভোগ করে মানুষ। আসলে ক্ষুদ্র এই জীবের বিপুল পরিশ্রমের পুরোটা ফল ভোগ করে মানুষ ও পরিবেশ।
সুন্দরবনে গাছের ডালে মৌমাছির চাক। গতকাল সোমবার খুলনার কয়রা উপজেলাসংলগ্ন সুন্দরবনের শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী এলাকায়উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন র
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস