নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা জরুরি
Published: 21st, May 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকার যখন রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে বেশ কটি কমিশন করেছিল, তখন জনমনে যে আশা জেগেছিল, তা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে বলে ধারণা করি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম দফার বৈঠক দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় ক্ষমতার ভারসাম্যসহ মৌলিক প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আগে (জুনের প্রথম সপ্তাহ) দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে পারে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হবে। জুলাই সনদের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টি এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছে।
দেশকে গণতান্ত্রিক ধারায় নিয়ে যেতে যে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, সেটা সব রাজনৈতিক দলই স্বীকার করেছে। কিন্তু সেই সংস্কারের ধরন ও মাত্রা নিয়ে মতভেদ আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন যেসব প্রস্তাব দিয়েছিল, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হ্রাস, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া এবং জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগ নিশ্চিত করা।
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আবার একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হওয়ায় সংসদও তাঁর আজ্ঞাবহ হয়ে পড়ে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের দলের সিদ্ধান্তের বাইরে ভোট দেওয়া দূরের কথা, কথা বলারও সুযোগ নেই। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে এ বিষয়গুলোতে পরিবর্তন আনা জরুরি।
দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সব দল একমত থাকলেও নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে বিরোধ আছে। বিএনপিসহ কয়েকটি দল চায় নিম্নকক্ষের আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষের আসন নির্ধারিত হোক। এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি দল বলেছে, এটি হতে হবে নিম্নকক্ষের ভোটের হারের ভিত্তিতে। অন্যান্য দল এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার পক্ষে থাকলেও বিএনপি তা মানতে নারাজ।
অন্যদিকে বিএনপির ও সহযোগী দলগুলোর মতে, এই সরকার সব সংস্কার করতে পারবে না। একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বৈরাচারী শাসনের পুনরাগমন ঠেকাতে যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন, সেটাই তাদের করা উচিত। এর বাইরে গেলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে; ইতিমধ্যে যার আলামত শুরু হয়ে গেছে। আবার কোনো কোনো দল সংস্কার ও বিচার শেষ করে নির্বাচন করার পক্ষপাতী।
এ অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কাজটি সহজ নয়। তবে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারকে সেই দুরূহ দায়িত্ব থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে এগিয়ে নিতে সংস্কারের প্রয়োজন আছে, কিন্তু সংস্কারের নামে নির্বাচন অহেতুক বিলম্ব করা যাবে না। ইতিমধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ বাড়ছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে, তা আলোচনা করে দ্রুত জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জুলাই বা জাতীয় সনদ নির্বাচনের বিষয়ে এক ধাপ অগ্রগতি বলে মনে করি, যার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের পথনকশা তৈরি হবে। তাঁর সঙ্গে আমরাও আশাবাদী হতে চাই, দ্বিতীয় দফা আলোচনায় নির্বাচন ও সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবে এবং সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দলগ ল র ঐকমত য সরক র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
উপজেলায় অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে নীতিগতভাবে একমত রাজনৈতিক দলগুলো
বিচার ব্যবস্থা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে একমত হয়েছে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো। তবে, এক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থানে যেসব উপজেলা জেলা সদরের নিকটবর্তী সেখানে আদালত স্থাপনের বিপক্ষে দলগুলো।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে দলগুলো নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করে।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা; জনসংখ্যার ঘনত্ব ও বিন্যাস এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন কোন উপজেলায় স্থায়ী আদালত স্থাপন করা প্রয়োজন তা নির্ধারণ করতে হবে।
বর্তমানে যেসব উপজেলায় চৌকি আদালত পরিচালিত হয়, সেগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে সবগুলো চৌকি আদালতকে স্থায়ী আদালতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন, না কি সেক্ষেত্রেও পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বিন্যাসের সুযোগ রয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। বাস্তব পরিস্থিতির নিরিখে উপজেলা সদরে স্থাপিত কোনো আদালতের জন্য একাধিক উপজেলাকে সমন্বিত করে অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করা প্রয়োজন হলে, তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
উপজেলা আদালতগুলোতে সিনিয়র সহকারী জজ ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের বিচারকদের পদায়ন করতে হবে। দেওয়ানি মামলা গ্রহণে সিনিয়র সহকারী জজের আর্থিক এখতিয়ার বাড়িয়ে বাস্তবানুগ করাও প্রয়োজন। আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত করতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দীন আহমেদ বলেন, জেলা সদরের অতি কাছে যেসব উপজেলা সদর রয়েছে সেখানে অধস্তন আদালত প্রয়োজন হবে না। একইসঙ্গে জেলা সদরে উপজেলা অধস্তন আদালতের প্রয়োজন নেই। কোন উপজেলায় অধস্তন আদালত প্রয়োজন তার সংখ্যা নিরূপণের জন্য সমীক্ষার অনুরোধ করেন তিনি।
আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকটি দলের নেতা উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপন করা হলে দুর্নীতি বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন। বিষয়টিতে দ্বিমত জানান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ।
তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত হলে দুর্নীতি বাড়বে এটা ভুল ধারণা। বিচার প্রার্থীকে হয়রানি রোধ করতে বিচারের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে হবে এবং স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত স্থাপনে তাগিদ দেন। প্রয়োজনে সংসদীয় আসনের ভিত্তিতে দ্রুতই অধস্তন আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেন তিনি।
কয়েকটি দলের পক্ষ থেকে আগামী কত বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ করা হবে তা নির্দিষ্ট করার পরামর্শ দেওয়া হয় ঐকমত্য কমিশনকে।
পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালতের সম্প্রসারণের বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে। সেগুলো নিয়ে বিরতির পরে আলোচনা শুরু হবে।
এতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারির বিষয়ে বর্তমান যে বিধান রয়েছে তা ভয়াবহভাবে নাগরিক অধিকারকে সংকুচিত করে এবং আদালতকে এমনভাবে বেঁধে দেয় যে তার পক্ষে কিছুই করার থাকে না। তাই সংবিধানের ১৪১ ক, খ, গ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
জরুরি অবস্থার মেয়াদ ৬০ দিনের বেশি হবে না। জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের দ্বারা নিশ্চিত করা নাগরিক অধিকার স্থগিত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই নাগরিকদের তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য আদালতে যাওয়া বন্ধ করা যাবে না।