মঙ্গলবার বিকেলটি ম্যানচেস্টার সিটির জন্য বেশ স্বস্তিরই ছিল। বোর্নমাউথকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন পেপ গার্দিওলার শিষ্যরা। চোটের কারণে আট মাস মাঠের বাইরে থাকা ব্যালন ডি’অরজয়ী রদ্রি এ ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরেছেন। এই স্বস্তির পাশাপাশি বিদায়ের যন্ত্রণায়ও পুড়েছে ইত্তিহাদ স্টেডিয়াম। ক্লাবের সর্বকালের সেরাদের একজন ঘরের মাঠে শেষ ম্যাচ খেলেছেন। সেই কিংবদন্তি কেভিন ডি ব্রুইনাকে বিদায় জানাতে গিয়ে পেপ গার্দিওলার মতো কাঠখোট্টা মানুষও কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়েছেন।
প্রিমিয়ার লিগে গত এক দশক রাজত্ব করেছে সিটিজেনরা। এই এক দশকের শেষ আট মৌসুমে ছয়টি লিগ শিরোপাই জিতেছে সিটি। এ ছাড়া মহাকাঙ্ক্ষিত একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি এফএ কাপ ও পাঁচটি লিগ কাপ জিতেছে তারা। সিটির এই সাফল্যের অন্যতম রূপকার বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। ২০১৫ সালে সিটিতে যোগ দেওয়া এ তারকা সিটির হয়ে মোট ১৬টি ট্রফি জিতেছেন। গার্দিওলা সিটিতে যোগ দিয়েছেন ২০১৬ সালে। গার্দিওলার অধীনে সিটির মিডফিল্ডের রাজা ছিলেন এই ডি ব্রুইনা। তাঁর মতো কার্যকর ও নান্দনিক ফুটবলার সমসাময়িককালে খুব কমই দেখা গেছে। যে কারণে গার্দিওলা তাঁকে সিটির ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের মর্যাদা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, স্প্যানিশ এ কোচের অভিমত, তাঁর দেখা সেরা ফুটবলার অবশ্যই লিওনেল মেসি। আর্জেন্টাইন জাদুকরের পরেই ডি ব্রুইনাকে স্থান দিয়েছেন। সেই প্রিয় শিষ্যকে বিদায় দিতে গিয়ে চেখের জলে ভেসেছেন গার্দিওলা।
ম্যাচের ৬৭ মিনিটে মাতেও কোভাসিচ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে দলের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মিনিট দুয়েকের মধ্যেই কেভিড ডি ব্রুইনাকে তুলে নেন গার্দিওলা। বেলজিয়ান এ তারকা মাঠ ছাড়ার সময় আবেগঘন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়। দর্শকদের হর্ষধ্বনিতে সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের ভালোবাসায় ধীরে ধীরে শেষবারের মতো প্রিয় আঙিনা থেকে বেরিয়ে যান তিনি। আবেগ লুকিয়ে মুখে একচিলতে হাসি ফুটিয়েই মাঠ ছাড়ছিলেন তিনি। কিন্তু ডাগআউটের কাছে যেতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন গার্দিওলা। আবেগ ধরে রাখা তখন সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছিল ডি ব্রুইনার জন্য।
ডি ব্রুইনাকে বিদায় জানাতে আয়োজনের কমতি রাখেনি সিটিজেনরা। ম্যাচ শুরুর আগেই গ্যালারিতে ‘কিং কেভ’ লেখা বিশাল এক টিফো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ম্যাচের পর পুরো স্টেডিয়াম অন্ধকার করে বড় পর্দায় দেখানো হলো তাঁর জন্ম দেওয়া স্মরণীয় মুহূর্তগুলো। সেই অন্ধকার ছিঁড়ে একসময় আলো হয়ে হেঁটে আসেন ডি ব্রুইনা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তখন ডি ব্রুইনাকে অভিবাদন জানাতে দুই পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্লাবের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। ৩৩ বছর বয়সী এ মিডফিল্ডারের অবদানকে স্মরণ রাখতে ইত্তিহাদের বাইরে তাঁর ভাস্কর্য নির্মাণের ঘোষণাও দেয় ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
তখন স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশেষ একটি ভিডিওতে ডি ব্রুইনাকে স্তুতিতে ভাসান ম্যানসিটির বিভিন্ন সময়ের তারকারা। তাদের মধ্যে ছিলেন সার্জিও আগুয়েরো, ফার্নান্দিনহো, রিয়াদ মাহারেজ, ভিনসেন্ট কোম্পানি, লেরয় সানে প্রমুখ তারকা। তাদের বার্তা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন গার্দিওলা, ‘সবাই ছিল সেখানে, খুবই দারুণ। ১০ বছর, অনেক অনেক ম্যাচ, অনেক শিরোপা, অনেক অসাধারণ মুহূর্ত। তাঁর প্রতি ভালোবাসা কতটা ছিল, সেটির কিছুটা আজকে ফুটে উঠেছে।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘দিনটি বেদনার। তাঁর অভাব অবশ্যই অনুভূত হবে। কিছু ফুটবলার আছে, যাদের বিকল্প হয় না। ব্যাপারটি শুধু কিছু গোল কিংবা অ্যাসিস্ট বা অবিশ্বাস্য মুহূর্তের ব্যাপার নয়; এটি হলো সংযোগের ব্যাপার। যেভাবে সে খেলে, লোকে যা ভালোবাসে।’ ডি ব্রুইনাও সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন, ‘আমি সৃষ্টিশীলতা ও আবেগের সঙ্গে খেলার চেষ্টা করেছি। আমি ফুটবল উপভোগ করতে চেয়েছি। আশা করি, সবাই সেটি উপভোগ করেছেন। আর আমার সামনে থাকা মানুষগুলো আমাকে আরও ভালো বানিয়েছে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ভ ন ড ব র ইন ব র ইন ক ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।