সাগর উত্তাল থাকায় হাসপাতালে নেওয়া যায়নি, সেন্ট মার্টিনে দুই শিশুর মৃত্যু
Published: 22nd, May 2025 GMT
শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয় আট দিন বয়সী শিশু মোহামদ জিশানকে। দ্বীপের একমাত্র ২০ শয্যার হাসপাতালটিতে নেই কোনো চিকিৎসক। তবে শিশুটির লক্ষণ দেখে তাকে দ্রুত টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বলেছিলেন সেখানকার দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী শহিদুল ইসলাম। কিন্তু সাগর উত্তাল থাকায় তাকে টেকনাফের হাসপাতালে আনা যায়নি। গুরুতর অসুস্থ শিশুটির মৃত্যু হয় একরকম চিকিৎসা না পেয়ে।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালে মারা যায় দ্বীপের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ তৈয়ুবের ছেলে জিশান। এ নিয়ে দুই দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে নিতে না পারায় দ্বীপে অসুস্থ হয়ে দুই শিশুর মৃত্যু হলো। গত মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দ্বীপের গুচ্ছগ্রাম ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো.
১৮ মে সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে ‘অফিস সহায়ক দিয়েই চলছে হাসপাতাল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর দ্বীপে বিশেষ একজন স্বাস্থ্য সহকারী পাঠানো হয়। তবে দ্বীপবাসীর দাবি অনুযায়ী এখনো যোগ দেননি চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। নেই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সরঞ্জাম ও ওষুধ। দ্বীপের জন্য কোনো নৌ অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না দ্বীপের ১১ হাজার বাসিন্দা।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সদ্য আসা স্বাস্থ্য সহকারী শহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, আজ আট দিন বয়সী শিশু জিশানের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। সম্ভবত তার নিউমোনিয়া হয়েছিল। তাকে টেকনাফ নেওয়ার জন্য বলা হলেও সাগর উত্তাল থাকায় নেওয়া যায়নি। এর আগে বেলাল নামের আরও এক শিশুর মৃত্যু ঘটে। তীব্র জ্বর আর জন্ডিসের লক্ষণ ছিল শিশুটির। হাসপাতালের আনার পরপরই মারা যায় সে।
আজ সকালে মারা যাওয়া শিশু জিশানের দাদি হাসিনা বেগম বলেন, জ্বর ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিল জিশান। এর মধ্যে সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে নিয়ে গেলেও উন্নত চিকিৎসার জন্য টেকনাফ নিয়ে যেতে বলেন সেখানকার স্বাস্থ্য সহকারী। কিন্তু সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় চিকিৎসার জন্য টেকনাফে নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পাঁচ বছর বয়সী বেলালের জন্ডিস হয়েছিল বলে ধারণা করছেন বাবা মোহাম্মদ আমিন। তিনি বলেন, ‘সাগর উত্তাল থাকার কারণে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ ছিল। ফলে ছেলেটিকে আমরা চিকিৎসাই দিতে পারিনি। আমাদের চোখের সামনেই মারা গেল সে। একটা নৌ অ্যাম্বুলেন্স থাকলে হয়তো ছেলেটা বাঁচত।’
মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিন আবহাওয়া খারাপ থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে কেউ টেকনাফে আসতে পারেননি। টেকনাফ থেকেও কেউ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যেতে পারেননি। আবহাওয়া ভালো হলেই টেকনাফ থেকে যাত্রী ও মালামাল নিয়ে সেন্ট মার্টিনে ট্রলার আসবে বলে জানান সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভারপ্রাপ্ত ইউপির চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্বীপের বাসিন্দা ও পযর্টকদের কথা বিবেচনা করে ২০০২ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পশ্চিম পাড়ায় প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ করা হয়। হাসপাতালটি ২০ শয্যার হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দ্বীপের যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, সেন্ট মার্টিন হাসপাতালে শুধু একজন অফিস সহায়ক ছিলেন। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিশেষ ব্যবস্থায় একজন স্বাস্থ্য সহকারীকে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখন দ্বীপের মানুষকে জরুরি চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। জটিল কোনো রোগী হলে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের সঙ্গে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন তিনি। তবে এর মধ্যে মঙ্গলবার ও আজ বৃহস্পতিবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দুই শিশু মারা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য সহক র প রথম আল চ ক ৎসক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধু ভুলিনি তোমায়, ভুলতেও পারবো না: হানিফ সংকেত
প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। চলচ্চিত্র বা অ্যালবাম নয়, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তেও নিয়মিত পাওয়া যেত এন্ড্রু কিশোরের দরাজ গলার গান। কাজের সূত্রে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক-পরিকল্পক-পরিচালক হানিফ সংকেত ছিলেন তার বন্ধু। আজ এন্ড্রু কিশোর পঞ্চম প্রয়াণ দিবস।
আজ এই প্রয়াণ দিবসে বন্ধুকে ভোলেননি হানিফ সংকেত। এন্ড্রু কিশোরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করেছেন স্মৃতিচারণ।
ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘আজ বন্ধু এন্ড্রু কিশোরের পঞ্চম প্রয়াণ দিবস। যার কাছে গানই ছিলো জীবন-মরণ, গানই ছিলো প্রাণ। এই গানের জন্যই মানুষ তাঁকে ভালোবাসতো, দিয়েছিল ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ উপাধি।
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিশোর যেমন প্রাণ খুলে দরাজ গলায় গাইতে পারতো, তেমনি সবার সঙ্গে প্রাণ খুলে মিশতে পারতো। কিশোরের সঙ্গে আমার সম্পর্ক প্রায় চার দশকেরও বেশি সময় ধরে। একসঙ্গে অনেক আড্ডা দিয়েছি, বহুবার বিদেশে গেছি, এক সঙ্গে থেকেছি। কিশোর ছিল ইত্যাদির প্রায় নিয়মিত শিল্পী।’
সব শেষে তিনি লিখেছেন, ‘একজন আদর্শ শিল্পী, একজন মানবিক মানুষ ছিলো কিশোর। গানের মাধ্যমেই এন্ড্রু কিশোর বেঁচে থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। বন্ধু ভুলিনি তোমায়-ভুলব না-ভুলতে পারবো না। ভালো থেকো, শান্তিতে থেকো।
ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে ২০২০ সালের ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৯ মিনিটে রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দেওয়া এই শিল্পী ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।