বিশ্বের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় বছরের পর বছর নিজ অবস্থান ধরে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যয়ন করে বিশ্বব্যাপী মেধাবীরা কর্মক্ষেত্রে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ২৭ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশি, যাদের বড় অংশ চীনের। এই অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছে। এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র-চীন আধিপত্যের লড়াই প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে।
ট্রাম্প প্রশাসন বৃহস্পতিবার হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন বাতিল ঘোষণা করে। পাশাপাশি বর্তমান বিদেশি শিক্ষার্থীদের অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তরেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হার্ভার্ডের জন্য অর্থ বরাদ্দও বাতিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী ভর্তি, কর্মকর্তা ও কর্মী নিয়োগে নজরদারি করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু এ দাবি মানতে নারাজ হার্ভার্ড। ইতোমধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে বাধা দেওয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বোস্টনে করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপকে আইনের ‘স্পষ্ট লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে চীনের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি। হার্ভার্ডের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬ হাজার ৭০৩ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি হন, যাদের মধ্যে চীনের শিক্ষার্থী ১ হাজার ২০৩ জন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে পুরো যুক্তরাষ্ট্রে চীনের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি। বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার সক্ষমতা হারিয়ে বড় আকারে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার শঙ্কায় হার্ভার্ড। প্রতিবছর টিউশন বাবদ লাখ লাখ ডলার উপার্জন করে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাকারী সংস্থা আইভি লিগকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি পাঠান যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরের সচিব ক্রিস্টি নোয়েম। তাতে বলা হয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর (সেভিস) প্রোগ্রাম সার্টিফিকেশন প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। চিঠিতে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে বলা হয়, ‘একাধিকবার অনুরোধ করার পরও আপনারা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি দপ্তরকে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য সরবরাহ করেননি। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য বৈরী পরিবেশ তৈরি ও হামাসপন্থি সহানুভূতিকে উস্কে দিয়েছেন। ফলে আপনাদের এই বিশেষ সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে চীন সংবেদনশীল তথ্য ও সামরিক প্রযুক্তি হাতিয়ে নেওয়ার কাজে লিপ্ত। বিশেষ করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে; এমনকি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের পক্ষ নিয়েছে।
হাজারো শিক্ষার্থীর পাশে থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপকে বেআইনি বলে অভিহিত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হার্ভার্ডের সভাপতি অ্যালান গার্বার। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রই ক্ষতির মুখে পড়ল। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের সহায়তা করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।
প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতের ক্ষেত্রে চীনের শিক্ষার্থীদের মার্কিন ভিসায় নিষেধাজ্ঞা দেন। চীনা গোয়েন্দা কার্যক্রমের ব্যাপারে সতর্কতাও জারি করা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্পের পদক্ষেপে শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
হার্ভার্ডের কেনেডি স্কুলের চীনের শিক্ষার্থী ফাংঝো জিয়াং বলেন, ঘটনা শোনার পর তিনি হতবাক হয়ে যান। তিনি কখনোই ভাবেননি ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত এতদূর গড়াতে পারে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা হচ্ছে। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অ্যালিস গোইয়ের এএফপিকে বলেন, এই পদক্ষেপের পর বিদেশি শিক্ষার্থীদের কপালে কী আছে, তা কেউ জানে না। বন্ধুরা সবাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
গত মাসে হোয়াইট হাউস সরকারি তহবিলের ওপর ২.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পদক ষ প
এছাড়াও পড়ুন:
গত বছর ধর্ষণের ঘটনা ৫১৬টি, এ বছর ছয় মাসেই ৪৮১টি
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৫২৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনার খবর প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। এর মধ্যে ৫১৬টি ছিল ধর্ষণের ঘটনা। শিশু ধর্ষণের ঘটনা ছিল ৩৬৭টি। তবে এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৪৮১ জন নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৩৪৫টি।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ১৫টি পত্রিকার খবর সংকলন করে নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই ধর্ষণের খবর মাত্র ৩৫টি কম। এ ছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নিজ কার্যালয়ে আনোয়ারা বেগম-মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার চিত্র: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা’ শিরোনামে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
সভায় নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে তুলে ধরা তথ্য–উপাত্ত থেকে আরও জানা যায়, গত ছয় মাসে ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। ধর্ষণের ঘটনার মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ১৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সহিংসতার মধ্যে ধর্ষণের পর সবচেয়ে বেশি খবর প্রকাশিত হয়েছে হত্যার। প্রকাশিত খবর অনুসারে, ৩২০ জন নারী ও কন্যা হত্যার শিকার হয়েছেন। ৫১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৩৪ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছেন।
গত বছর ৫২৮ নারী ও কন্যাকে হত্যার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া ১৮১ জন যৌন নিপীড়ন ও ৪৩ জন উত্ত্যক্তের শিকার হয়েছিলেন। রহস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা, শারীরিক নির্যাতন, সাইবার ক্রাইম, যৌতুকের কারণে নির্যাতন ও হত্যার খবর প্রকাশের আধিক্যও ছিল।
সভায় দুটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য মুনিমা সুলতানা ও সংগঠনের জ্যেষ্ঠ প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান।
প্রতিবেদন দুটিতে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র ও সাংবাদিকদের জন্য করণীয় তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, সমাজের অভ্যন্তরে থাকা নারীর প্রতি বৈষম্যকে দৃশ্যমান করা, নারীর কণ্ঠকে গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ তৈরি, প্রকাশিত সংবাদের মধ্য দিয়ে সবাইকে সচেতন করে তোলা, আইনি সহায়তা পেতে সহায়তা করা এবং সহিংসতার বিপরীতে নারীর জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়ার গল্প তুলে ধরার মধ্য দিয়ে সাংবাদিকেরা সহিংসতার বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেন। এ ভূমিকা আরও জোরেশোরে পালন করতে হবে।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, এখন ‘মব ভায়োলেন্স (উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ সহিংসতা)’ দিয়ে আইন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজকে নারীবিদ্বেষী করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাজে আগেও নারীবিদ্বেষ ছিল। তবে সেটিকে আরও উসকে দেওয়া হচ্ছে।
বিচার চাওয়ার জায়গায়ও বাধা তৈরি করা হচ্ছে অভিযোগ করে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইন সংশোধনের ফলে যৌতুকের কারণে সাধারণ জখমের শিকার নারীদের লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতায় যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, যার যার জায়গা থেকে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদ করতে হবে। সবাই মিলে সোচ্চার হলে পরিবর্তন আসবেই।
সভায় সূচনা বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, সংবাদমাধ্যমে সহিংসতার অনেক খবর স্থান পায় না। প্রকৃত ঘটনা আরও বেশি। এখন আরও নতুন নতুন ধরন ও মাত্রা নিয়ে নারী নির্যাতন হচ্ছে।
সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সহিংসতার ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক দৃষ্টি দিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্যাতনের আসল ঘটনা ছাপিয়ে রাজনীতিই সেখানে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বার্তা সম্পাদক এবং সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিনের সঞ্চালনায় সভায় সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাহনাজ মুন্নী, নাদিরা কিরণ, রীতা ভৌমিক, উম্মুল ওয়ারা সুইটি, জাহিদা পারভেজ, শাহনাজ পারভীন, সেবিকা দেবনাথ, দ্রোহী তারা, রাফিয়া খানম চৌধুরী, জান্নাতুল রুহি, নাসরিন গীতি, সেলিনা আক্তার।
সাংবাদিকদের বক্তব্যে বাসে, পথে চলাচলে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীদের হয়রানির শিকার হওয়া, নারী সাংবাদিকদের চাকরির জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়া, সংবাদমাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নারীদের না থাকা, নারীদের প্রতি সহিংসতার খবর অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করার প্রবণতা ইত্যাদি উঠে আসে।
এ ছাড়া সভায় নারী নির্যাতনের অবনতিশীল পরিস্থিতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা, সবার সম্মিলিত আওয়াজ তোলা এবং গণমাধ্যমকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।