জেরুজালেমের প্রায় ৫০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক ইসলামি নিদর্শন শেখ আহমেদ আল-দাজানির মাজার দখল করেছেন ইসরায়েলের এক বসতি স্থাপনকারী। মাজারটিকে তিনি ব্যক্তিগত বাড়িতে রূপান্তর করেছেন।

বৃহস্পতিবার জেরুজালেম গভর্নরেটের গণমাধ্যম দপ্তর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ওই ব্যক্তি মাজারটির মূল তালা ভেঙে ভেতরে নিজের আসবাব নিয়ে ঢুকেছেন। নতুন তালা লাগিয়েছেন। বিদ্যুৎ, পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংযোগের ব্যবস্থা করে সেখানে থাকতে শুরু করেন।

ওই ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী মাজারের ভেতরে থাকা শেখ আহমেদের কবর এবং বাইরের দেয়ালে থাকা পরিচিতি ফলকটিও খুলে ফেলেছেন। ফলকটিতে স্থাপনাটির সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখা ছিল।

মাজার দেখভালের দায়িত্বে থাকা দাজানি পরিবারের এক সদস্য নিয়মিত পরিদর্শনের সময় মাজার দখলের ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারেন। এরপর পরিবারটি দখলদার ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত জেরুজালেম পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করে।

বুধবার ওই বসতি স্থাপনকারীকে মাজার থেকে সরিয়ে দেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে এখনো মাজারের নতুন চাবি দাজানি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। পৌর কর্তৃপক্ষের আচরণকে ‘পরিবারটির মাজারে প্রবেশ ও তত্ত্বাবধানের অধিকারের আরেকটি লঙ্ঘন’ বলে মন্তব্য করেছে জেরুজালেম গভর্নরেট।

জেরুজালেম গভর্নরেট ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক কাঠামোর অংশ। ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকে জেরুজালেম শহরটি দখল করে রেখেছে। জেরুজালেম পৌর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে।

মাজার দখলের ঘটনার জন্য ইসরায়েলি দখলদার কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছে জেরুজালেম গভর্নরেট। এ ঘটনাকে তারা ‘পূর্ণমাত্রার অপরাধ’ এবং ‘জেরুজালেমের আরব, ইসলামি ও খ্রিষ্টান পরিচয় বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে চলমান ঔপনিবেশিক প্রকল্পের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে।

জেরুজালেমের মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় স্থাপনাগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো), ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জেরুজালেম গভর্নরেট।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ র দখল ইসর য় ল

এছাড়াও পড়ুন:

ভোলার ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্কুল পুকুর ভরাট করে বানানো হচ্ছে বহুতল ভবন

ভোলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দুই শতাধিক বছরের পুরোনো বাংলা স্কুলের পুকুর দখল ও ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে সচেতন নাগরিক সমাজ পুকুর ও এর তীর দখলমুক্ত করার আন্দোলন করলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।

গত বছরের ৫ আগস্টের পরেও পুকুরের তীর ভরাট করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, এটি সম্পূর্ণ বেআইনি।

এই পুকুরের পানি শহরের মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় এখানকার পানি দিয়েই আগুন নেভানো হয়। কিন্তু পুকুরটি এখন প্রভাবশালী দখলদারদের কবলে। নিয়মিত দখল ও ভরাটের হুমকিতে জলাশয়টি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। স্থানীয় লোকজনের মতে, এটি শুধু একটি জলাশয় নয়, ভোলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক, যা এখন ধ্বংসের মুখে।

ভোলা শহরের মাঝখানে অবস্থিত শ্যামাচরণ মুখোপাধ্যায়ের পুকুরটি স্থানীয়ভাবে ‘বাংলা স্কুল পুকুর’ নামেই পরিচিত। একসময় এটি ছিল শহরের সবচেয়ে বড় ও গভীর জলাশয়। দুই পাশে পাকা ঘাট, পরিষ্কার পানি, সকাল-বিকেলে সাঁতার—সব মিলিয়ে পুকুরটি ছিল শহরের প্রাণকেন্দ্র। এখন সেই চিত্র বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পুকুরের চারপাশে বহুতল ভবন, দোকানপাট ও অফিস গড়ে উঠেছে। কেউ ইজারা নিয়ে, কেউ প্রভাব খাটিয়ে দখল করে পুকুর দূষিত করছে।

ভোলা পৌর ভূমি কার্যালয়ের নথি অনুযায়ী, ১৯৭৪ সালে চরজংলা মৌজার ১৬৪ নম্বর খতিয়ানের ছয়টি দাগে ১ একর ৩৫ শতাংশ জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে ‘ক’ তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে একটি দাগে পুকুরের জমি ছিল ৯৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং দুটি দাগে তীরে আরও ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ জমি। পুকুর ও তীর মিলে মোট আয়তন ছিল ১ একর ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। বর্তমানে তা কমে প্রায় ৭০ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ জমি দখল বা ভরাট হয়ে গেছে।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের সময় প্রথম আমেনা প্লাজা নির্মাণের মাধ্যমে দখল শুরু হয়। পরে এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ভবনের কিছু অংশ ভাঙা হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম পাঁচ বছরে দক্ষিণ ও পশ্চিম তীর দখল করে একাধিক বহুতল ভবন তোলা হয়। সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার একাধিকবার সীমানা নির্ধারণ করে লাল পতাকা পুঁতলেও অদৃশ্য কারণে সেই সীমানা অতিক্রম করে ভবন উঠে গেছে। সচেতন সমাজের কিছু অংশ দখলদারদের সঙ্গে সমঝোতায় গেলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে।

এই পুকুরের পানি শহরের মানুষ দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। অগ্নিকাণ্ডের সময় এখানকার পানি দিয়েই আগুন নেভানো হয়। কিন্তু পুকুরটি এখন প্রভাবশালী দখলদারদের কবলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভোলার ঐতিহ্যবাহী বাংলা স্কুল পুকুর ভরাট করে বানানো হচ্ছে বহুতল ভবন