সুরমা ও কুশিয়ারায় ভাঙন ঝুঁকিতে রাস্তাঘাট-স্থাপনা
Published: 23rd, May 2025 GMT
সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মৌসুমি বর্ষণ শুরুর পর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী একটি রাস্তার ওপর নির্মিত সেতু ভেঙে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেটের বালাগঞ্জের সুলতানপুর-খসরুপুর সড়ক।
শুধু রাস্তা ও বসতবাড়ি নয়, নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত যমুনা অয়েলের ডিপো পড়েছে সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে। সম্প্রতি ডিপোর উত্তরের দেয়ালঘেঁষে দেড়শ ফুট জায়গা ভেঙে পড়েছে নদীতে। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডিপোটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুই তীরে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও সিলেট সদরের শতাধিক গ্রামের অবস্থান।
সোমবার দুটি নদীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কারও বসতঘর ভাঙনের মুখে, আবার কারও ঘর বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও রাস্তা ও সেতু ভেঙে গেছে। বালাগঞ্জের ফাজিলপুর এলাকায় রাস্তা ও সেতু দেবে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার লোক। স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর মিয়া জানান, দুই বছর আগে কুশিয়ারায় তাঁর বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে যেখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন সেটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
মনসুর মিয়ার মতো কুশিয়ারার ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়েছেন হামছাপুর গ্রামের ৩০-৩৫টি পরিবার। তাদের মধ্যে ৩টি পরিবার এক বছর ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে ও অন্যরা স্বজনদের বাড়িতে বাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষ চলাচলের রাস্তা কুশিয়ারা ডাইক সম্প্রতি ভেঙে গেছে। বর্ষার আগে মেরামত না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
এদিকে কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উজান গঙ্গাপুর, সুলতানপুর, মানিককোনা, মল্লিকপুরসহ কয়েকটি তীরবর্তী গ্রাম ভাঙনের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে এসব এলাকার একাধিক স্থানে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
জকিগঞ্জে কুশিয়ারার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বড়চালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাগলাজুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বড়চালিয়া গ্রামের নিলুকান্ত পাল ও সুভাষ পাল জানান, ভাঙনে তিনবার বসতঘর সরাতে হয়েছে। বর্তমানে বসতভিটাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
সুপ্রাকান্দি গ্রামের শরীফ উদ্দিন জানান, তাদের বসতবাড়িসহ প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব।
এদিকে সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেট পশ্চিম সদর উপজেলার চানপুর, যোগীরগাঁও, লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, মিরেরগাঁও, ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে এসব গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
কান্দিগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম দর্শা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, অনেক বছর আগে পশ্চিম দর্শা এলাকায় নদীর এক কিলোমিটার ব্লক স্থাপন করা হয়েছিল। সেই এলাকা রক্ষা পেলেও বাকি এলাকা এখন ভাঙনকবলিত।
কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মনাফ বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম সুরমার তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের মুখে। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেও লাভ হয়নি।
সুরমা তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন, বাদেপাশা ইউনিয়ন, শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন ও বুধবারীবাজার ইউনিয়নের অনেক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে বাঘা মাদ্রাসা, এসসি একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আছিরগঞ্জ বাজার, শরিফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, মিরগঞ্জ বাজার হুমকির মুখে রয়েছে।
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিয়ানীবাজারের দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতঘর, হাট-বাজার, চলাচলের রাস্তা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
বালু উত্তোলনে বন্ধে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামবাসী ও স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা পৃথকভাবে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ফাঁড়ির বাজার এলাকায় গত রোববার মানববন্ধন করেন এলাকার লোকজন ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সমকালকে জানান, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত বছর চারটি প্যাকেজে ১ দশমিক ৮০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুশিয়ারার কয়েকটি এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ চলছে। এছাড়া গত বছর বন্যা-পরববর্তী সমীক্ষার পর ১৩শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ত রবর ত ব ল ন হয় নদ র ত র ইউন য ন ন এল ক এল ক য় র ইউন রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
‘অন্তর্বর্তী সরকার বিচারপ্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই’
বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ত্বকী হত্যা মামলার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিচারপ্রক্রিয়া আবার শুরু করলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ নগরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার মিলনায়তন প্রাঙ্গণে ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪৮ মাস উপলক্ষে আয়োজিত মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচিতে ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি এসব কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট প্রতি মাসের ৮ তারিখে এই মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলামের (কাজল) সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহার (জুয়েল) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিশু সংগঠক রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, ন্যাপের জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, সিপিবির শহর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজয় রায় চৌধুরী, বাসদের জেলা সদস্য প্রদীপ সরকার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি মাহমুদ হোসেন ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা।
রফিউর রাব্বি বলেন, নারায়ণগঞ্জে ত্বকীসহ বহু হত্যায় অভিযুক্ত শামীম ওসমান পরিবারসহ পালিয়ে গেলেও তাঁদের দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসী চক্র আজকে বিএনপির বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হয়েছে। নতুন করে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া, গডফাদার তৈরি হচ্ছে। হাটবাজার, ঘাট, পরিবহন, প্রতিটি ক্ষেত্র নতুন করে দখলে গিয়েছে। অভ্যুত্থান–উত্তর বাংলাদেশে জন-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী এখনো বদল ঘটেনি। সরকার মব সৃষ্টিকারী দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, যাঁরা ত্বকীকে হত্যা করেছেন, সেই শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সন্ত্রাসী শাহ নিজাম—তাঁরাই জুলাইয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-শিশুদের ওপর গুলি চালিয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানসহ ঘাতকদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত অভিযোপত্র দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।