সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি মৌসুমি বর্ষণ শুরুর পর ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী একটি রাস্তার ওপর নির্মিত সেতু ভেঙে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকির মুখে রয়েছে সিলেটের বালাগঞ্জের সুলতানপুর-খসরুপুর সড়ক। 
শুধু রাস্তা ও বসতবাড়ি নয়, নগরীর দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত যমুনা অয়েলের ডিপো পড়েছে সুরমা নদীর ভাঙনের মুখে। সম্প্রতি ডিপোর উত্তরের দেয়ালঘেঁষে দেড়শ ফুট জায়গা ভেঙে পড়েছে নদীতে। দ্রুত ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ডিপোটি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর দুই তীরে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও সিলেট সদরের শতাধিক গ্রামের অবস্থান। 
সোমবার দুটি নদীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, কারও বসতঘর ভাঙনের মুখে, আবার কারও ঘর বিলীন হয়ে গেছে। কোথাও রাস্তা ও সেতু ভেঙে গেছে। বালাগঞ্জের ফাজিলপুর এলাকায় রাস্তা ও সেতু দেবে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার লোক। স্থানীয় বাসিন্দা মনসুর মিয়া জানান, দুই বছর আগে কুশিয়ারায় তাঁর বসতঘর বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে যেখানে বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন সেটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। 
মনসুর মিয়ার মতো কুশিয়ারার ভাঙনে বসতবাড়ি হারিয়েছেন হামছাপুর গ্রামের ৩০-৩৫টি পরিবার। তাদের মধ্যে ৩টি পরিবার এক বছর ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে ও অন্যরা স্বজনদের বাড়িতে বাস করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা গোলাম কিবরিয়া জানান, পূর্ব পৈলনপুর ইউনিয়নের ১২ হাজার মানুষ চলাচলের রাস্তা কুশিয়ারা ডাইক সম্প্রতি ভেঙে গেছে। বর্ষার আগে মেরামত না করলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। 
এদিকে কুশিয়ারায় পানি বাড়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার উজান গঙ্গাপুর, সুলতানপুর, মানিককোনা, মল্লিকপুরসহ কয়েকটি তীরবর্তী গ্রাম ভাঙনের মুখে রয়েছে। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে এসব এলাকার একাধিক স্থানে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। 
জকিগঞ্জে কুশিয়ারার ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে বড়চালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাগলাজুর প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 
বড়চালিয়া গ্রামের নিলুকান্ত পাল ও সুভাষ পাল জানান, ভাঙনে তিনবার বসতঘর সরাতে হয়েছে। বর্তমানে বসতভিটাও ভাঙনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। 
সুপ্রাকান্দি গ্রামের শরীফ উদ্দিন জানান, তাদের বসতবাড়িসহ প্রায় ৩ বিঘা জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। 
এদিকে সুরমা নদীর তীরবর্তী সিলেট পশ্চিম সদর উপজেলার চানপুর, যোগীরগাঁও, লালারগাঁও, তালুকপাড়া, খালপাড়, মিরেরগাঁও, ফতেহপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে এসব গ্রামের ঘরবাড়ি, ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 
কান্দিগাঁও ইউনিয়নের পশ্চিম দর্শা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ জানান, অনেক বছর আগে পশ্চিম দর্শা এলাকায় নদীর এক কিলোমিটার ব্লক স্থাপন করা হয়েছিল। সেই এলাকা রক্ষা পেলেও বাকি এলাকা এখন ভাঙনকবলিত। 
কান্দিগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মনাফ বলেন, তাঁর ইউনিয়নের বেশকিছু গ্রাম সুরমার তীরবর্তী হওয়ায় ভাঙনের মুখে। ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন করেও লাভ হয়নি। 
সুরমা তীরবর্তী গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন, বাদেপাশা ইউনিয়ন, শরিফগঞ্জ ইউনিয়ন, ভাদেশ্বর ইউনিয়ন ও বুধবারীবাজার ইউনিয়নের অনেক স্থাপনা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে বাঘা মাদ্রাসা, এসসি একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আছিরগঞ্জ বাজার, শরিফগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, মিরগঞ্জ বাজার হুমকির মুখে রয়েছে। 
কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বিয়ানীবাজারের দুবাগ, শেওলা ও কুড়ারবাজার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বসতঘর, হাট-বাজার, চলাচলের রাস্তা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। 
বালু উত্তোলনে বন্ধে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের আঙ্গুরা মোহাম্মদপুর গ্রামবাসী ও স্থানীয় কওমি মাদ্রাসা পৃথকভাবে ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। ফাঁড়ির বাজার এলাকায় গত রোববার মানববন্ধন করেন এলাকার লোকজন ও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। 
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সমকালকে জানান, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গত বছর চারটি প্যাকেজে ১ দশমিক ৮০০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুশিয়ারার কয়েকটি এলাকায় ভাঙনরোধের কাজ চলছে। এছাড়া গত বছর বন্যা-পরববর্তী সমীক্ষার পর ১৩শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ত রবর ত ব ল ন হয় নদ র ত র ইউন য ন ন এল ক এল ক য় র ইউন রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত, বাড়িঘরে আগুন

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরে আবুল কাশেম মোতাইত (৪৫) নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের চরমাইঝারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবুল কাশেম স্বেচ্ছাসেবক দলের কুচাইপট্টি ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় অন্তত ১০টি বসতঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে মাছ শিকার ও চরাঞ্চলের খাসজমি দখলে রাখা নিয়ে স্থানীয় মোতাইত ও খাঁ পরিবারের বিরোধ দীর্ঘ দিনের। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাঁদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়। আজ দুপুরে মোতাইত পরিবারের একটি নৌকা নদীতে নামানো নিয়ে খাঁ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঝগড়া হয়। তখন কুচাইপট্টি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম খাঁ পরিবারের সদস্যদের গালাগাল করেন। এ ঘটনার জেরে কুচায়পট্টি সেরু মার্কেট এলাকায় কাশেমের ওপর হামলা করেন কাসেম আলী খাঁর সমর্থকেরা। তাঁকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে যান তাঁরা। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর চরমাইঝারা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ১০টি বসতঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ছয়টি বসতঘর ভাঙচুর করা হয়। খবর পেয়ে গোসাইরহাট থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পুলিশ কাশেমের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

শরীয়তপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আমান মাদবর বলেন, ‘আবুল কাশেম কুচাইপট্টি ইউনিয়নে আমাদের একজন নিষ্ঠাবান নেতা ছিলেন। আমরা জানতে পেরেছি, স্থানীয় বিরোধী পক্ষ তাঁকে হত্যা করেছে।’

হত্যাকাণ্ডের পরই কাশেম আলী খাঁ আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগের বিষয়ে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোসাইরহাট সার্কেল) মোহাম্মদ তানভীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পূর্ববিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের পর দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়ান। তখন বেশ কিছু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কলেজছাত্রের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার, পরিবার বলছে হত্যাকাণ্ড
  • চাঁদপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেল দুইজনের
  • রাজাপুরে বসতঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
  • লোহাগাড়ায় অস্ত্রের মুখে বসতঘরে ডাকাতি, দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম
  • শরীয়তপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহত, বাড়িঘরে আগুন