বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে বাংলা একাডেমির কার্যক্রমে গুণগত পরিবর্তন এবং সময়োপযোগী সংস্কারের লক্ষ্যে ১৯ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

লেখক, গবেষক ও অনুবাদক ফয়জুল লতিফ চৌধুরীকে কমিটির সভাপতি এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মহাম্মদ আজমকে সদস্য সচিব হিসেবে মনোনীত করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নজরুলের কবিতা সব আন্দোলনে প্রতিবাদের ভাষা হয়ে ওঠে: ড.

আজম

বইমেলায় বাংলা একাডেমির ‘গুণিজন স্মৃতি’ পুরস্কার ঘোষণা

কমিটিকে বাংলা একাডেমির আইন, প্রবিধানমালা, সাংগঠনিক কাঠামো এবং সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর সংস্কার এবং আধুনিকীকরণই এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য। কমিটি প্রয়োজনে অতিরিক্ত সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে এবং একাডেমির মহাপরিচালক কমিটিকে সব ধরনের প্রশাসনিক ও সচিবালয় সহায়তা দেবেন।

একইসঙ্গে, তিন মাসের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করে কমিটিকে তাদের সুপারিশ পেশ করতে বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই কমিটি আলোচনা, বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় খসড়া প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে।

এ কমিটিতে যুক্ত দেশের সাহিত্য, সাংবাদিকতা, গবেষণা ও অনুবাদ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার, অধ্যাপক সালিমুল্লাহ খান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অধ্যাপক সুমন রহমান, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, কবি ও সংস্কৃতিকর্মী ব্রাত্য রাইসু, কবি ও চিত্রনির্মাতা মোহাম্মদ রোমেল, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) মহাপরিচালক মাহবুব মোর্শেদ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক লতিফুল ইসলাম শিবলী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগম,  লেখক অধ্যাপক আ আ মামুন, প্রাবন্ধিক ও গবেষক সাখাওয়াত টিপু কবি, লেখক ও বুদ্ধিজীবী  রিফাত হাসান, কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, কবি ও সাংবাদিক কাজী জেসিন, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক আহমাদ মোস্তফা কামাল, লেখক ও অনুবাদক জাভেদ হুসেন, পিআইবির গবেষণা বিশেষজ্ঞ সহুল আহমদ মুন্না।

বাংলা একাডেমিকে কেবল সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র নয়, বরং একটি প্রাণবন্ত গবেষণা ও সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস এই উদ্যোগের অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য। বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি একাডেমির বর্তমান কাঠামোর কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে ভবিষ্যতের জন্য একটি সুসংগঠিত ও সময়োপযোগী রূপকল্প উপস্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন জানান, সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বাংলা একাডেমিকে যুগোপযোগী এবং কার্যকর প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের জন্য দৃঢ় অঙ্গীকার রয়েছে। একাডেমির অভ্যন্তরীণ কাঠামো, কর্মপরিকল্পনা ও সাংগঠনিক গতিশীলতা নিশ্চিত করতেই এ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্তি।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম এক ড ম র গঠন ক সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবন্ধী শিশুরাও আসুক একীভূত শিক্ষায়

প্রতিবন্ধী শিশুদের মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তাদের জন্য একীভূত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সমাজে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, প্রতিটি বিদ্যালয়েই যেন প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিকভাবে শিখতে পারে, সে জন্য সরকার, উন্নয়ন সংস্থা ও বিভিন্ন শিক্ষাসংশ্লিষ্ট দপ্তরকে টেকসই ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।

গতকাল মঙ্গলবার ইউকেএইডের ইনক্লুসিভ ফিউচারের উদ্যোগে এডিডি, সেন্স, সাইটসেভারস ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘বাড়ি থেকে বিদ্যালয়: প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একীভূত শিক্ষার অগ্রগতি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার আওতায় আনতে বিদ্যালয়গুলোয় সেই কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন। সেখানে সরকারের সমাজ সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সহায়তা থাকতে হবে। তবে এ কাজে চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য দেশে কমিউনিটি–ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালুর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিবার, সমাজ—সব পক্ষের জন্যই সহায়ক হবে। এ সময় এডিডি ইন্টারন্যাশনাল, সেন্স ইন্টারন্যাশনাল ও সাইটসেভারসের ‘শিখব সবাই’ প্রকল্পকে সাধুবাদ জানান তিনি। যুক্তরাজ্যের এফসিডিওর সহযোগিতায় ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্টের (ডিআইডি) আওতায় ইনক্লুসিভ ফিউচার উদ্যোগের অধীনে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বৈঠকে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান। তিনি বলেন, এনজিও বা উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কোনো প্রকল্প শেষ হওয়ার পর সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তাই বিভিন্ন সফল প্রকল্পকে সরকারিভাবে গ্রহণ করে মূলধারায় নেওয়া প্রয়োজন।

বৈঠকে সাইটসেভারসের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও তাঁদের ‘শিখব সবাই’ প্রকল্পের আওতায় গুরুতর ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য নেওয়া বাড়িভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের ইতিবাচক ফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের ফল হিসেবে অনেক গুরুতর প্রতিবন্ধী শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছে এবং তাদের ঝরে পড়া রোধ করা গেছে।

অমৃতা রেজিনা রোজারিও বলেন, তাঁরা স্থানীয় পর্যায়ে দেখিয়েছেন সমন্বিত উদ্যোগে কীভাবে কোনো প্রতিবন্ধী শিশু উপযুক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এটি সরকারের জাতীয় নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাইটসেভারসের গ্লোবাল টেকনিক্যাল লিড হামিশ হিগিংসন বলেন, ‘শিখব সবাই’ নামক ডিজঅ্যাবিলিটি ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (ডিআইডি) প্রকল্পটি ছিল প্রোটোটাইপ ডিজাইনের উদ্যোগ। এখন বাংলাদেশের সুযোগ রয়েছে এই প্রোটোটাইপকে নিজেদের বাস্তবতায় রূপান্তর করার, উন্নয়ন করার, বিস্তৃত করার। এই মডেলকে জেলায়, উপজেলায়, ক্লাস্টারে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব বাস্তবতা অনুযায়ী সেটিকে অভিযোজন করতে হবে।

প্রত্যেক প্রতিবন্ধী শিশুরই শিক্ষা গ্রহণের অধিকার আছে বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনের সামাজিক উন্নয়ন উপদেষ্টা তাহেরা জাবীন। গোলটেবিল বৈঠকে তিনি একীভূত শিক্ষার প্রতি যুক্তরাজ্যে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শুরু থেকেই সহায়তা নিশ্চিত করা, পরিবার ও কমিউনিটির সম্পৃক্ততা এবং বিদ্যালয়ে ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবন্ধী শিশুদের একীভূত শিক্ষার পথে বড় চ্যালেঞ্জ সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বলে বৈঠকে মন্তব্য করেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. সারওয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এখনো অনেক শিক্ষিত মানুষও বিশ্বাস করেন না যে প্রতিবন্ধী শিশুরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা করতে পারে। এই মানসিকতার পরিবর্তনে ব্যাপক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক এ কিউ এম শফিউল আজম বলেন, ‘অনেক শিক্ষক ভাবেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবন্ধী শিশু সমস্যা হতে পারে। এই মানসিকতা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ভিন্নভাবে পড়াতে হবে, সে যেন নিজেকে সেই পরিবেশে স্বাভাবিকভাবে মিশিয়ে নিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

সেন্টার ফর ডিজঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর নাজমুল বারী বলেন, ‘শিশুর প্রতিবন্ধিতার ধরন ও তীব্রতার ভিত্তিতে তার শিক্ষার পদ্ধতিও ভিন্ন হতে হবে। এই প্রেক্ষাপটে হোম বেজড এডুকেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা হিসেবে সামনে এসেছে। আমরা অনেক সময় এমন শিশুদের দেখি, যারা কখনো স্কুলে যাওয়ার স্বপ্নই দেখে না কিংবা দেখার সুযোগ পায় না। তাদের জন্য বাসাভিত্তিক শিক্ষা একটি কার্যকর বিকল্প হতে পারে।’

এডিডি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রোগ্রামের টিম লিডার গোলাম ফারুক হামিম বলেন, বিদ্যালয়গুলোয় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, সেগুলোয় অনেক ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে স্কুলের প্রবেশগম্যতা, ওয়াশ ব্লক ব্যবহার, শ্রেণিকক্ষে বসা, সহায়ক উপকরণের ব্যবহার এবং শিক্ষকের কাছ থেকে পর্যাপ্ত নির্দেশনা গ্রহণ—এসব ক্ষেত্রে এখনো বাস্তবায়নের জায়গায় বড় ফাঁক রয়ে গেছে। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুর শিক্ষাগত ও মানসিক চাহিদা অনুযায়ী আলাদা পরিকল্পনা থাকা জরুরি। দেশের শিক্ষকদের আন্তরিকতা আছে, সরকারিভাবে এটিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হলে তাঁরা আরও উদ্দীপ্ত হবেন।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইটসেভারসের অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন কো–অর্ডিনেটর খন্দকার সোহেল রানা। বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সমন্বিত শিক্ষা) মো. জয়নাল আবেদীন ও সহকারী পরিচালক রুখসানা পারভীন, আইসিইভিআইর বাংলাদেশ প্রতিনিধি খন্দকার জহুরুল আলম, ব্লাইন্ড এডুকেশন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. সাইদুল হক, ইউনিসেফ বাংলাদেশের এডুকেশন ম্যানেজার জন ইকাজু, সাইটসেভারসের প্রোগ্রাম ম্যানেজার লুসি রিভি, স্পন্দনের সিএসটি সদস্য ওয়াদুদ হাসান, আলোর প্রদীপ প্রতিবন্ধী অধিকার সংস্থার (সিরাজগঞ্জ) আল আমিন শেখ, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (নরসিংদী) মাসুদুল হাসান তাপস, নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিরঞ্জন কুমার রায়, সিরাজগঞ্জের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ, ফারুক আজিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নরসিংদীর প্রধান শিক্ষক জয়শ্রী সাহা প্রমুখ। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ