দেশের হাওরগুলোর বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সরকার বিদ্যমান মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করছে। দূষণ বন্ধে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটন শৃঙ্খলায় আনতে হাওরে সুরক্ষা আদেশ জারি করা হবে। বনায়নের মাধ্যমে হাওরে জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও করছে সরকার।

আজ মঙ্গলবার ‘হাওরের সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এ সেমিনার আয়োজন করে নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরাম নামের একটি সংগঠন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশে সব এলাকার মতো হাওরেও সমস্যার অভাব নেই। এসব সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, বিষয়টা এমন নয়। হাওরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার সংকট নিয়ে শুনে আসছি বহু বছর ধরে, কিন্তু কখনো কোনো সমাধান দেখি না।’

হাওর মূলত একটি মিঠাপানির সমুদ্র। এ রকম অনন্য বাস্তুতন্ত্র পৃথিবীতে বিরল মন্তব্য করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘হাওর এলাকার মানুষের মতামত নিয়েই আগের যে মাস্টারপ্ল্যান (মহাপরিকল্পনা) ছিল, সেটা এখন হালনাগাদ হচ্ছে।’

হাওরে নিয়ন্ত্রণহীন পর্যটনের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘হাওরের পর্যটন এমন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে যাওয়ার কথা ছিল না। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা এখন একটা সুরক্ষা আদেশ প্রস্তুত করছি। ২০১৩ সালের পানি আইনের অধীনে হাওর রক্ষায় সুরক্ষা আদেশের খসড়া প্রস্তুত করছি।’

সুরক্ষা আদেশে পর্যটকের কী করণীয় সেটা উল্লেখ থাকবে বলে জানান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, সুরক্ষা আদেশে বলে দেওয়া থাকবে একজন পর্যটক কী করতে পারবেন আর কী করতে পারবেন না। এটা নিয়ন্ত্রণ নয়, এটাই ইকো ট্যুরিজমের (পরিবেশবান্ধব পর্যটন) প্রসার। আওয়াজ সৃষ্টি করে, গান–বাজনা করে যে ট্যুরিজম সেটাকে কোনোভাবে ইকো ট্যুরিজম বলা যায় না।

যেখান থেকে পর্যটকেরা হাওরে ভ্রমণ শুরু করেন, সেখান থেকে তদারকির জন্য একটা ব্যবস্থা থাকবে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। এ কাজের জন্য জেলা প্রশাসন, হাওর অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও প্রয়োজনে স্বেচ্ছাসেবকদের রাখা হবে বলে জানান তিনি।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, হাওরে স্বাস্থ্যসেবার সংকট নিরসনে ভাসমান হাসপাতাল ও রিভার অ্যাম্বুলেন্স কতটা টেকসই একটি ব্যবস্থা হবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘একটা ভাসমান হাসপাতাল যখন দেব, তখন হাওরে পানি থাকবে মাত্র পাঁচ মাস। বাকি সাত মাস কিন্তু সেখানে রোগী চাইলেও যেতে পারবে না। কীভাবে একটা টেকসই সমাধান করা যায় সেটা নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি।’

দেশের সব হাওর নিয়ে একসঙ্গে কাজ না করে একটা হাওরকে ধরে সেখানে মৎস্য, কৃষি—কোথায় কোথায় নিয়ন্ত্রণ আনা দরকার সেটা নিয়ে কাজ করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে একটা আন্ত সংস্থা সেল গঠন করার কথাও জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা ও সুরক্ষা আদেশের অধীনে এমন একটি সেল গঠন করে সচেতনতামূলক কিছু কাজ শুরু করা যায় কি না, সেটা আমরা চিন্তা করছি।’

আপাতত সুরক্ষা আদেশ টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য করা হচ্ছে জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সুরক্ষা আদেশ আমরা সব হাওরের জন্য করতে পারছি না। কারণ, এটি করতে হলে ল্যান্ড স্পেসিফিকেশন লাগে যেমন দাগ, মৌজা, খতিয়ান ধরে ধরে করতে হয়। ফলে আমরা এখন টাঙ্গুয়ার হাওরে এটা করতে পারব। কারণ, এটি যেহেতু প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা, তার ল্যান্ড স্পেসিফিকেশনটা আমাদের আছে।’

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কিশোরগঞ্জ জেলা সাংবাদিক ফোরাম–ঢাকার সভাপতি এরফানুল হক নাহিদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সাংবাদিক মুহম্মদ মোফাজ্জল। নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী খানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন। সভাপতিত্ব করেন নেত্রকোনা সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি রফিক মুহাম্মদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন পর ব শ র জওয় ন উপদ ষ ট হ ওর র স রক ষ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বড়পুকুরিয়ায় পরিত্যক্ত ডেটোনেটর বিস্ফোরণে কবজি উড়ে গেল শিশুর

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পরিত্যক্ত ডেটোনেটর বিস্ফোরণে এক শিশুর ডান হাতের কবজি উড়ে গেছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহত শিশুর নাম ইলিয়াস হোসেন (১০)। সে কয়লা খনি-সংলগ্ন চৌহাটি গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে। 

জানা যায়, গতকাল দুপুরে কয়লা খনির ডাম্পিং এলাকা থেকে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ইলিয়াস একটি ধাতব বস্তু পেয়ে খেলতে খেলতে তা বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর মোবাইল ফোনের নষ্ট ব্যাটারির সঙ্গে সংযোগ দিলে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ইলিয়াসের ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শিশুর বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ইলিয়াস খনির পাশ থেকে ওই ধাতব জিনিসটি কুড়িয়ে এনে বাড়িতে খেলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে গিয়ে দেখি আমার ছেলের ডান হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে কাতরাচ্ছে। 

স্থানীয়রা জানান, কয়লা খনির পূর্ব পাশে প্রাচীর ঘেঁষে কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা ডাম্পিং এরিয়া রয়েছে। সেখানে খনির বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ফেলা হয়। এলাকার লোকজন সেখানে ঢুকে এসব বর্জ্য থেকে কয়লা সংগ্রহ করে বিক্রি করে। এসব বর্জ্যের সঙ্গে মাঝেমধ্যে বিস্ফোরক ডিভাইসও মেলে। অনেক সময় শিশুরা এগুলো বাড়িতে নিয়ে খেলা করে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এক শ্রমিক জানান, খনির ভূগর্ভে যেসব স্থানে মেশিন দিয়ে কয়লা কাটা সম্ভব হয় না, সেখানে এসব ডেটোনেটর স্থাপন করে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে কয়লা সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে ৫০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হয়।

দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা বলছেন, খনি কর্তৃপক্ষের অসতর্কতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এমন দুর্ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য খনির ব্যবহৃত বিস্ফোরক উপাদান ও পরিত্যক্ত দ্রব্য অপসারণে প্রশাসনের আরও সাবধান হওয়া উচিত।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক বলেন, ডাম্পিং পয়েন্ট থেকে পরিত্যক্ত ডেটোনেটর গ্রামবাসীর সংগ্রহ করার বিষয়টি আগে কেউ আমাদের নজরে আনেনি। ঘটনার পর জানতে পেরেছি, বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ডেটোনেটর বিস্ফোরণের ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত শিশুর চিকিৎসার বিষয়ে খনি কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে এবং তার পাশে থাকবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ