নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে গণমাধ্যমকে সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান
Published: 8th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে গণমাধ্যমকে কৌশলগত ও সংবেদনশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার রাজধানীর সুফিয়া কামাল ভবনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা: নারী সাংবাদিকদের ভাবনা’ শীর্ষক এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম।
ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারী আন্দোলন ও গণমাধ্যম একে অন্যের পরিপূরক। জেন্ডার বৈষম্য দূর করতে না পারলে সহিংসতা বন্ধ হবে না। পরিবর্তনের জন্য গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে, সহিংসতার ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। আইন থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ অপ্রতুল। এই পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে নারী আন্দোলনকে সংগঠিত করার সময় এসেছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম বলেন, গণমাধ্যম কেবল তথ্য পরিবেশন করে না, তা সমাজে দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখে। সহিংসতার ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি গণমাধ্যমকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে।
সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম উপপরিষদের সদস্য ও দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস-এর বিশেষ প্রতিনিধি মুনিমা সুলতানা জানান, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে অন্তত ১৫৫৫ নারী ও কন্যা সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সংগঠনের সিনিয়র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা আফরুজা আরমান জানান, সহিংসতার প্রতিটি ঘটনার পরিসংখ্যানে কন্যাশিশুদের আক্রান্ত হওয়ার হারই বেশি।
সভায় উপস্থিত নারী সাংবাদিকরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সহিংসতার শিকার নারীরাই বারবার নিগৃহীত হচ্ছেন। অনেক সময় বিকৃত তথ্য উপস্থাপিত হওয়ায় তাদের সম্মান ও নিরাপত্তাকে আরও ঝুঁকিতে ফেলে। গণমাধ্যকর্মীদের মধ্যে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন নাদিরা কিরণ, শাহনাজ মুন্নী, আজকের পত্রিকার সেলিনা আক্তার, সমকালের দ্রোহী তারা, সংবাদের নাসরিন গীতি, ভোরের কাগজের সেবিকা দেবনাথ, দেশ রূপান্তরের উম্মুল ওয়ারা সুইটি, কালবেলার রীতা ভৌমিক, দ্য প্রেসেঞ্জারের জাহিদা পারভেজ, ফ্রিল্যান্সার রাফিয়া চৌধুরী, ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের জান্নাতুল রুহি প্রমূখ।
দ্রোহী তারা বলেন, নারীর প্রতি বিদ্বেষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সভা সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রচার ও গণমাধ্যম সম্পাদক মাহফুজা জেসমিন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস