ডিএসসিসি-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয় আদালতের রায়ের দুই মাস অতিক্রান্তের পরও ঝুলিয়া থাকা রহস্যজনক। কারণ, এহেন পরিস্থিতিতে একদিকে আদালতের রায় উপেক্ষা করিবার নেতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হইতেছে, অন্যদিকে ইশরাক সমর্থকগণের কর্মসূচিতে নগরবাসী সেবাবঞ্চিত থাকিতেছেন। এমনকি চলাচলের সমস্যাসহ বিবিধ দুর্ভোগ পোহাইতে হইতেছে ডিএসসিসির আওতাবহির্ভূত যাত্রীদেরও।
আমরা জানি, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসি নির্বাচনের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইশরাকের আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল নির্বাচনটির ফল বাতিল, তৎসহিত ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করিয়া রায় প্রদান করেন। উহার এক মাস পর তাঁহাকে মেয়র ঘোষণা করিয়া গেজেটও প্রকাশিত হয়। কিন্তু অদ্যাবধি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তদনুযায়ী ইশরাককে শপথ পাঠের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। এমনকি ইশরাক ও তাঁহার সমর্থকগণ গত ১৪ মে হইতে নগর ভবন অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সম্মুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করিবার পরও মন্ত্রণালয়ের চৈতন্যোদয় হয় নাই। ইশরাকের শপথ প্রতিরোধে হাইকোর্টে দাখিলকৃত রিট আবেদন খারিজ হইবার পরও মন্ত্রণালয়ের অনড় অবস্থানের হেতু কী?
ইশরাক হোসেন ও তাঁহার সমর্থকরা শনিবার হইতে পুনরায় নগর ভবনে অবস্থান গ্রহণ করিয়াছেন। যথারীতি ফটকগুলি তালাবদ্ধ করিয়া তাহারা সকল সেবা কার্যক্রম বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। শুধু উহাই নহে; রবিবারের মধ্যে শপথের বন্দোবস্ত না হইলে কঠোরতর আন্দোলনের হুমকি দিয়াছেন তাহারা। এই আশঙ্কা অমূলক নহে, ডিএসসিসির মেয়র হিসাবে ইশরাকের শপথ গ্রহণ কিংবা আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টির সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাধান না হইলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটিবে, যাহা কোনো পক্ষের জন্যই সুখকর হইবে না। সর্বোপরি নগরবাসীকে ইহার চূড়ান্ত ভুক্তভোগী হইতে হইবে।
ইশরাক হোসেনের শপথ ঘিরিয়া অদ্যাবধি সংঘটিত ঘটনাবলি হইতে প্রতীয়মান, বিএনপি কিংবা ইশরাক সম্ভবত বিষয়টির চূড়ান্ত দেখিয়া ছাড়িবেন। বস্তুত ইতোপূর্বে তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রদত্ত একাধিক পোস্টে বিষয়টি স্পষ্টও করিয়াছেন। বিষয়টি আরও কিছুদিন অনিষ্পন্ন থাকিলে উহা যে নূতন কোনো রাজনৈতিক সমস্যার জন্ম দিবে না– তাহাও নিশ্চিত করিয়া বলা যায় না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুর্ভোগ কেবল নগরবাসীকে নহে, সমগ্র দেশবাসীকেই পোহাইতে হইতে পারে। এহেন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির উদ্ভব এমন এক সময়ে হইয়াছে, যখন যানজটে নগরজীবন ইতোমধ্যে নাকাল হইয়া চলিয়াছে।
জুলাই আন্দোলনের ধাক্কায় বিগত সরকারের সহিত অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তিদের ন্যায় ঢাকার দুই সিটি মেয়রও বিদায় লইবার কারণে নগরবাসী কীরূপ বঞ্চনা ও দুর্ভোগের শিকার হইতেছেন, তাহা অজানা নহে। সরকার এই সকল প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগ করিলেও নগরবাসীর দুর্ভোগ দূর হয় নাই। তাই আদালতের আদেশের বদৌলতে হইলেও অন্তত ডিএসসিসিতে একজন জনপ্রতিনিধি আসীন হইবার যেই সুযোগ আসিয়াছে, সরকারের তাহা গ্রহণ করা উচিত বলিয়া আমরা মনে করি। উপরন্তু অনুরূপ প্রক্রিয়ায় ঘোষিত বিএনপিদলীয় নেতাকেই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে মান্য করিবার পর ইশরাকের বিষয়টি ঝুলাইয়া রাখিবার যুক্তি কী? সরকারের নীতিনির্ধারকগণ দ্রুত বিষয়টি অনুধাবন করিবেন– এই প্রত্যাশা আমাদের।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর স থ ত গ রহণ ক ইশর ক র ড এসস স নগরব স র শপথ সরক র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?
এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?
অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?
তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।
তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।
এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।
এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।